👉🏿হাদীসের গুরুত্বঃ এখানে ইসলামের এমন পাঁচটি বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যা বাদ দিলে ইসলামী সমাজের অস্তিত্বই কল্পনা করা যায় না। ইসলামের যে লক্ষ্য উদ্দেশ্য তাও ব্যর্থ হতে বাধ্য। ইসলামের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন ইসলামী রাষ্ট্র ছাড়া সম্ভব নয়।
👉🏿হাদিসের ব্যাখ্যাঃ
হাদীসটির শুরুতেই রাসূল (সা:) আলাহ কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে এ আদেশ দিয়েছেন।
১. জামায়াত বদ্ধ হওয়াঃ মূল শব্দ অর্থ হচ্ছে বিক্ষিপ্ত কোন বস্তুকে একত্রিত করা। এ থেকে অর্থ দল, জামায়াত, সংগঠন।
অর্থঃ “তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকতেই হবে যারা মানবজাতিকে কল্যানের পথে ডাকবে। (আল ইমরান-১০৪)
কোরআনের ভাষায় – সংগঠন
১)“তোমরা সংঘবদ্ধ ভাবে আলাহর রজ্জুকে আকড়ে ধর ও পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়োনা।” (আল ইমরান-১০৩)
২)“আর যে ব্যক্তি আলাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারন করবে সে অবশ্যই সত্য ও সঠিক পথ প্রদর্শিত হবে। (আল ইমরান-১০১)
৩)“আলাহ তায়ালা তো সেই সব লোকদেরকে ভালবাসেন যারা তার পথে এমনভাবে কাতারবন্দী হয়ে লড়াই করে যেন তারা সীসা ঢালা প্রাচীর।” (সফ-৪)
৪)“তোমরা সেসব লোকের মতো হয়োনা যারা বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে গেছে এবং স্পষ্ট ও প্রকাশ্য নির্দেশ পাওয়ার পরও মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে, তাদের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।” ( আল ইমরান-১০৫)
ইসলামী সংগঠনের বৈশিষ্ট্যঃ ইসলামী সংগঠনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ৩টি।
ক. ইসলামী নেতৃত্ব
খ. ইসলামী কর্মী বাহিনী
গ. ইসলামী পরিচালনা বিধি।
ক. ইসলামী নেতৃত্বঃ
ইসলামী নেতৃত্বকে খলিফা, ইমাম ও আমীর হিসেবে বলা হয়। কুরআনী একটি পরিভাষা হলো উলিল আমর।
ইসলামের নামে ……. খুলে তার প্রধান হয়ে বসলেই তাকে ইসলামী নেতৃত্ব বলে না।
ইসলামী নেতৃত্ব কোন পদের নাম নয়।
ইসলামী কর্মীবাহিনী কর্তৃক নির্বাচিত একটি পদ।
নেতৃত্বের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্যঃ
জ্ঞানের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্বঃ রাসূল (সা:) বলেন- “জনগণের নেতা হবে সে যে আলাহর কিতাব সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞান রাখে।” (মিশকাত)
উন্নত আমলঃ “তোমাদের মধ্যে সেই সম্মানী যে আলাহকে ভয় করে।” (আল কুরআন)
নম্র ব্যবহারঃ “যে ব্যক্তি আলাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন ভালো ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।” (বুখারী)
ধৈর্য্যঃ “নিশ্চয়ই আলাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে থাকেন। (বাকারা)
সাহসিকতা; রাসূল (সা:) বলেন, “যে ব্যক্তি আলাহকে ভয় করে দুনিয়ার সবকিছু তাকে ভয় করে আর যে আলাহকে ভয় করেনা দুনিয়ার সবকিছু তাকে ভয় দেখায়। পরিশ্রম প্রিয়তা। কর্মীদের মাঝে ইনসাফ কায়েম।
পরামর্শ ভিত্তিক সিদ্ধান্তঃ
সৎ কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করা। কোন বিষয়ে তোমার মত সুদৃঢ় হয়ে গেলে আলাহর উপর ভরসা করো। (আল ইমরান)
ইসলামী নেতৃত্বের জবাবদিহিতাঃ
1. জনগনের কাছে।
2. আলাহর কাছে।
খ. ইসলামী কর্মী বাহিনীঃ বৈশিষ্ট্য দুটি
১. নেতার কথা মন দিয়ে শুনবে
২. তার আদেশ মেনে চলবে।
১) “হে ঈমানদারগণ! তোমরা রাসূলকে সম্বোধন করে রায়িনা বলোনা বরং তোমরা বল উনযুরনা এবং তার কথা মন দিয়ে শোন। (বাকারা-১০৪)
ভালো আদেশের আনুগত্য-
“নেতা যে পর্যন্ত কোন পাপকাজের আদেশ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার আদেশ শোন ও মেনে নেয়া প্রত্যেকটি মুসলমানের জন্য ফরজ তা তার পছন্দ হোক বা অপছন্দ হোক। তবে সে যদি কোন পাপকাজের আদেশ দেয় তবে তার আদেশ কোন বা আনুগত্য করা যাবেনা।” (বুখারী-মুসলিম)
২. “হে মূমিনগন তোমরা আলাহর আনুগত্য করো, রাসূলের আনুগত্য করো এবং তোমাদের নেতার আনুগত্য করো।” (নিসা-৫৯)
রাসূল (সা:) বলেন : “যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল সে আলাহর আনুগত্য করল। যে আমার হুকুম অমান্য করল সে আলাহর হুকুম অমান্য করল। যারা আমীরের আনুগত্য করল তারা আমার আনুগত্য করল। আর যারা আমীরের আদেশ অমান্য করল তারা প্রকৃতপক্ষে আমার আদেশ অমান্য করল।” (বুখারী-মুসলিম)
“পাপ কাজে কোন আনুগত্য নেই, আনুগত্য কেবল ভালো কাজের ব্যাপারে।” “আমীর যদি কালো কুৎসিত হাবশী কৃতদাসও হয়, যার মাধা আঙ্গুরের মতো সে যদি নির্দিষ্ট সীমার ভেতর থেকে নেতৃত্ব দেয় তবে অবশ্যই তার আনুগত্য করতে হবে।” (আল-হাদীস)
৩. ইসলামী পরিচালনা বিধিঃ
পরিচালনা মৌলিক উৎস দুটি- কোরআন, সুন্নাহ।
কোরআন সমস্ত সমস্যা সমাধানের জন্য সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বিধান।
“শাসন হুকুমের অধিকার একমাত্র আলাহর। তার নির্দেশ তোমরা আলাহ ছাড়া আর কারো দাসত্ব ও আনুগত্য করতে পারবে না।” (ইউসুফ-৪০)
“রাসূল তোমাদের জন্য যেসব বিধি বিধান ও আইন-কানুন এনেছেন তা গ্রহণ করো এবং যেসব বিষয়ে নিষেধ করেছেন তা থেকে দূরে থাকো।” (হাশর-৭) “যারা আলাহর বিধান দিয়ে বিচার ফায়সালা করেনা তারাই কাফের।” (মায়েদা-৪৫)
৪. হিজরতঃ চতুর্থ কাজ হলো হিজরত করা। হিজরত অর্থ- ত্যাগ করা, কোন জিনিস বা স্থান ত্যাগ করা, সম্পর্কচ্ছেদ করা।
পরিভাষায়ঃ একমাত্র আলাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে দারুল হরর থেকে দারুল ইসলামে প্রবেশ করা।
রাসূল (সা:) বলেন-
“শরীয়তের নিষিদ্ধ কাজ সমূহ পরিত্যাগ করা।”
৫. আলাহর পথে জিহাদঃ
জিহাদ অর্থ- সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, কঠোর পরিশ্রম, চুড়ান্ত সাধনা ইত্যাদি।
পারিভাষিক- আলাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে তার দ্বীনকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা চালানোর জিহাদ বলে।
জিহাদ সম্পর্কে কোরআন-
“জিহাদ তোমাদের উপর ফরজ করা হয়েছে যদিও তা তোমাদের নিকট রহস্য মনে হচ্ছে।”
“আলাহর পথে জিহাদ কর যেমন জিহাদ করা উচিত।” (হাজ্জ-৭৮)
“ঈমানদাররা লড়াই করে আলাহর পথে আর কাফিররা লড়াই করে তাগুতের পথে।” (নিসা-৭৬)
রাসূল (সা:) বলেন-
“যে ব্যক্তি জিহাদ করল না, জিহাদের চিন্তা ভাবনাও করলনা; আর এ অবস্থায় মৃত্যু বরন করল সে যেন মুনাফিকের মৃত্যু বরন করল।” (মুসলিম)
জিহাদ কখনও ফরজে আইন, কখনও ফরজে কিফায়া।
শিক্ষাঃ
১. ইসলাম কখনই এককভাবে পালনের নিমিত্তে অবতীর্ণ নয় বরং জামায়াতদ্ধতার মধ্য দিয়ে ব্যক্তি জীবনে পালনীয় বিষয়।
২. যোগ্য নেতৃত্ব, আদেশ ও আনুগত্যের ভারসাম্য ইসলামী সংগঠনের প্রাণ।
৩. জিহাদের মাধ্যমে সমাজ বিপব এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য।