Close

রবিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৯

দারসুল কোরআনঃ সূরা আল হুজরাত ১ম রুকু


👉সূরা আল হুজরাত, ১-১৩ নং আয়াত:-
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تُقَدِّمُوا۟ بَيْنَ يَدَىِ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ۖ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌۭ ١
 يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تَرْفَعُوٓا۟ أَصْوَٰتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ ٱلنَّبِىِّ وَلَا تَجْهَرُوا۟ لَهُۥ بِٱلْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ أَن تَحْبَطَ أَعْمَـٰلُكُمْ وَأَنتُمْ لَا تَشْعُرُونَ ٢
 إِنَّ ٱلَّذِينَ يَغُضُّونَ أَصْوَٰتَهُمْ عِندَ رَسُولِ ٱللَّهِ أُو۟لَـٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ ٱمْتَحَنَ ٱللَّهُ قُلُوبَهُمْ لِلتَّقْوَىٰ ۚ لَهُم مَّغْفِرَةٌۭ وَأَجْرٌ عَظِيمٌ ٣
 إِنَّ ٱلَّذِينَ يُنَادُونَكَ مِن وَرَآءِ ٱلْحُجُرَٰتِ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ ٤
 وَلَوْ أَنَّهُمْ صَبَرُوا۟ حَتَّىٰ تَخْرُجَ إِلَيْهِمْ لَكَانَ خَيْرًۭا لَّهُمْ ۚ وَٱللَّهُ غَفُورٌۭ رَّحِيمٌۭ ٥
 يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِن جَآءَكُمْ فَاسِقٌۢ بِنَبَإٍۢ فَتَبَيَّنُوٓا۟ أَن تُصِيبُوا۟ قَوْمًۢا بِجَهَـٰلَةٍۢ فَتُصْبِحُوا۟ عَلَىٰ مَا فَعَلْتُمْ نَـٰدِمِينَ ٦
 وَٱعْلَمُوٓا۟ أَنَّ فِيكُمْ رَسُولَ ٱللَّهِ ۚ لَوْ يُطِيعُكُمْ فِى كَثِيرٍۢ مِّنَ ٱلْأَمْرِ لَعَنِتُّمْ وَلَـٰكِنَّ ٱللَّهَ حَبَّبَ إِلَيْكُمُ ٱلْإِيمَـٰنَ وَزَيَّنَهُۥ فِى قُلُوبِكُمْ وَكَرَّهَ إِلَيْكُمُ ٱلْكُفْرَ وَٱلْفُسُوقَ وَٱلْعِصْيَانَ ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلرَّٰشِدُونَ ٧
 فَضْلًۭا مِّنَ ٱللَّهِ وَنِعْمَةًۭ ۚ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌۭ ٨
 وَإِن طَآئِفَتَانِ مِنَ ٱلْمُؤْمِنِينَ ٱقْتَتَلُوا۟ فَأَصْلِحُوا۟ بَيْنَهُمَا ۖ فَإِنۢ بَغَتْ إِحْدَىٰهُمَا عَلَى ٱلْأُخْرَىٰ فَقَـٰتِلُوا۟ ٱلَّتِى تَبْغِى حَتَّىٰ تَفِىٓءَ إِلَىٰٓ أَمْرِ ٱللَّهِ ۚ فَإِن فَآءَتْ فَأَصْلِحُوا۟ بَيْنَهُمَا بِٱلْعَدْلِ وَأَقْسِطُوٓا۟ ۖ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلْمُقْسِطِينَ ٩
 إِنَّمَا ٱلْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌۭ فَأَصْلِحُوا۟ بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ ۚ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ ١٠
 يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا يَسْخَرْ قَوْمٌۭ مِّن قَوْمٍ عَسَىٰٓ أَن يَكُونُوا۟ خَيْرًۭا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَآءٌۭ مِّن نِّسَآءٍ عَسَىٰٓ أَن يَكُنَّ خَيْرًۭا مِّنْهُنَّ ۖ وَلَا تَلْمِزُوٓا۟ أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا۟ بِٱلْأَلْقَـٰبِ ۖ بِئْسَ ٱلِٱسْمُ ٱلْفُسُوقُ بَعْدَ ٱلْإِيمَـٰنِ ۚ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّـٰلِمُونَ ١١
 يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱجْتَنِبُوا۟ كَثِيرًۭا مِّنَ ٱلظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ ٱلظَّنِّ إِثْمٌۭ ۖ وَلَا تَجَسَّسُوا۟ وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا ۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًۭا فَكَرِهْتُمُوهُ ۚ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ تَوَّابٌۭ رَّحِيمٌۭ ١٢
 يَـٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَـٰكُم مِّن ذَكَرٍۢ وَأُنثَىٰ وَجَعَلْنَـٰكُمْ شُعُوبًۭا وَقَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوٓا۟ ۚ إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ ٱللَّهِ أَتْقَىٰكُمْ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌۭ ١٣

👉বঙ্গানুবাদঃ
১. মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ ও রাসুলের চেয়ে অগ্রগামী হয়োনা এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু শুনেন ও জানেন।
২. হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের আওয়াজ রাসূলের আওয়াজের চেয়ে উচু করোনা এবং উচ্চস্বরে নবীর সাথে কথা বলোনা যেরুপ তোমরা নিজেরা পরস্পর বলে থাকো। এমন যেন না হয় যে; তোমাদের অজান্তেই তোমাদের সব কাজকর্ম ধ্বংস হয়ে যায়।
৩. যারা আল্লাহর রাসূলের সামনে তাদের কন্ঠ নিচু রাখে তারাই সে সব লোক আল্লাহ যাদের অন্তরকে তাকওয়ার জন্য বাছাই করে নিয়েছেন। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহা পুরস্কার।
৪. হে নবী, যারা আপনাকে ঘরের বাইরে থেকে ডাকাডাকি করতে থাকে তাদের অধিকাংশই নির্বোধ।
৫. যদি তারা আপনার বের হয়ে আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধারন করত তবে তাদের জন্য মঙ্গলজনক হতো। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
৬. হে ঈমানদারগণ, যদি কোন ফাসেক তোমাদের কাছে কোন খবর নিয়ে আসে তাহলে তা অনুসন্ধান করে দেখ। এমন যেন না হয় যে, না জেনে শুনেই তোমরা কোন গোষ্ঠীর ক্ষতি করে বসবে এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে।
৭. ভালো করে জেনে রাখ আল্লাহর রাসূল তোমাদের মাঝে রয়েছেন। তিনি যদি বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই তোমাদের কতা মেনে নেন তবে তোমরাই অনেক সমস্যার মধ্যে পড়ে যাবে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদের মধ্যে ঈমানের প্রতি ভালবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছেন এবং তা তোমাদের কাছে পছন্দনীয় করে দিয়েছেণ। পক্ষান্তরে কুফরী, পাপাচার ও অবাধ্যতাকে ঘৃনিত করে দিয়েছেন।
৮. আল্লাহর দয়া ও মেহেরবাণীতে এসব লোকই সৎপথের অনুগামী। আল্লাহ জ্ঞানী ও কুশলী।
৯. যদি মুমিনদের দুই দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর চড়াও হয়, তবে তোমরা আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে; যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি ফিরে আসে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে ন্যায়ানুগ পন্থায় মীমাংসা করে দিবে এবং ইনছাফ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ ইনছাফকারীদেরকে পছন্দ করেন।
১০. মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। অতএব, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে-যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।
১১. মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম।
১২. মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।
১৩. হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন।
👉নামকরণঃ ৪র্থ আয়াত থেকে গৃহীত।
👉নাযিল হওয়ার সময়কালঃ বিভিন্ন বর্ণনা ও সুরার বিষয়বস্তু থেকে বোঝা যায় এ সুরা বিভিন্ন পরিবেশ ও ক্ষেত্র নাযিল হওয়া হুকুম আহকাম ও নির্দেশ সমূহের সমষ্টি। বিষয়বস্তু সাদ্যৃশ্যের কারনে এগুলোকে এখানে একত্রিত করা হয়েছে।
৪র্থ আয়াত সম্পকে ঘটনা –
একবার বনী তামিম গোত্রের কিছু লোক রাসূল (সা:) এর নিকট উপস্থিত হয়। এই গোত্রের শাসনকর্তা নিয়োগ সম্পর্কিত আলোচনা চলছিল। হযরত আবু বকর (রা:) রা’কা ইবনে হাকিমের নাম এবং হযরত উমর (রা:) আকরা ইবনে হাফসের নাম প্রস্তাব করেন। হযরত আবু বকর (রা:) এবং হযরত উমর (রা:) এর মধ্যে চলমান এ আলোচনা এক পর্যায়ে কথা কাটাকাটিতে উন্নীত হয়ে উভয়ের কন্ঠস্বর উচু হয়ে যায় (বুখারী)।
হিজরী ৯ম সন এ প্রতিনিধি দলের আগমনের সময়। আলোচ্য আয়াতসমূহের অবতরণ সম্পর্কে কুরতুযীর ভাষ্য অনুযায়ী ৬টি ঘটনা বর্ণিত আছে। সব ঘটনা নির্ভুল।
৬ষ্ঠ আয়াত সম্পর্কে ঘটনাঃ
মুসনাদে আহমাদের বরাত দিয়ে ইবনে কাসীর –
বনী মুস্তালিক গোত্রের সরদার হারেস ইবনে মেরাব ইসলাম গ্রহণের পর রাসুল (সা:) তাকে যাকাত প্রদানের আদেশ দিলেন। তিনি যাকাত প্রদানে স্বীকৃত হলেন এবং তারা গোত্রে যারা ইসলাম গ্রহণ করবে তাদের যাকাত আদায় করে জমা করে রাখবেন বললেন এবং রাসূল (সা:) কে একটি নিদিষ্ট তারিখে যাকাতের অর্থ নেবার জন্য কোন দুত পাঠাতে বললেন। কিন্তু নির্ধারিত তারিখ পার হয়ে গেলেও দুতের দেখা না পেয়ে হারেস আশংকা করলেন রাসূল (সা:) কোন কারনে তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন এবং একথা তিনি ইসলাম গ্রহনকারী নেতৃস্থানীয় লোকদের কাছে প্রকাশ করে রাসূল (সা:) এর সাথে সবাই মিলে দেখা করার ইচ্ছা করলেন। এদিকে রাসূল নির্ধারিত তারিখে ওলীদ ইবনে ওকবা কে প্রেরণ করলেও তিনি পথিমধ্যে ধারনা করেন এই গোত্রের লোকদের সাথে তার পুরাতন শত্র“তা আছে। তাকে একা পেয়ে হত্যা না করে ফেলে। তিনি ফিরে আসেন এবং রাসূল (সা:) কে বলেন তারা যাকাত দিতে অস্বীকার করেছে এবং আমাকে হত্যা করার ইচ্ছা করেছে। রাসূল (সা:) রাগান্বিত হয়ে খালিদ ইবনে ওলীদের নেতৃত্বে একদল মুজাহিদ প্রেরণ করেন। অত:পর তা জানতে পেরে হারেস রাসূল (সা:) কে বলেন তিনি ওলীদকে দেখেনইনি।
কোন কোন রেওয়ায়েতে আছে – ওলীদ ইবনে ওকবা (রা:) নির্দেশ অনুযায়ী বনু মুস্তালিক গোত্রে পৌছেন। গোত্রের লোকেরা অভ্যর্থনা জানানোর উদ্দেশ্যে বস্তি থেকে বের হয়ে আসে। ওলীদ সন্দেহ করে তারা বোধ হয় পুরাতন শত্র“তার কারনে তাকে হত্যা করতে আসছে। তিনি সেখান থেকে ফিরে এসে এ ধারনা ব্যক্ত করলে রাসূল (সা:) খালিদ ইবনে ওলীদ কে ঘটনা পর্যবেক্ষনের নির্দেশ দিলেন। তিনি ফিরে এসে সংবাদ দিলেন তারা ঈমানের উপর অটল রয়েছে/যাকাত দিতে প্রস্তুত।
ওলীদ ইবনে উকবা মক্কা বিজয়ের সময় মুসলমান হয়েছিলেন।
তাই এটি স্পষ্ট যে এ যুগের বেশীর ভাগ অংশই মাদানী যুগের শেষ পর্যায়ে নাজিলকৃত।
👉আলোচ্য বিষয়ঃ
এ সুরার বিষয়বস্তু হলো মুসলমানদেরকে এমন আদব-কায়দা, শিষ্টাচার ও আচরন শিক্ষা দেয়া যা তাদের ঈমানসুলভ স্বভাব-চরিত্র ও ভাবমূর্তির উপযুক্ত ও মানানসই।
 প্রথম পাঁচ আয়াতে আল্লাহ ও তার রাসূলের সাথে আদব কায়দা শিক্ষা দেয়া হয়েছে।
 এরপর নির্দেশ দেয়া হয়েছে প্রতিটি খবর বিশ্বাস করা এবং সে অনুযায়ী কর্মকান্ড করে বসা ঠিক নয়।
 মুসলমানদের দুটি দল যদি কোন সময় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে সে ক্ষেত্রে অন্য মুসলমানদের কর্মনীতি।
 মুসলমানদেরকে কিছু খারাপ বিষয় থেকে আতœরক্ষার নির্দেশ দেয়া হয়েছে-
★একে অপরকে ঠাট্রা-বিদ্রুপ করা
★বদনাম উপহাস করা
★উপনামে ডাকা
★গোপন বিষয় খোজাখুজি
 সবশেষে বলা হয়েছে- ঈমানের মৌখিক দাবী প্রকৃত জিনিস নয় বরং সরল মনে আল্লাহ ও রাসূলকে মানা, কার্যত অনুগত থাকা এবং কুরবানী।
১. প্রথম আদব – আল্লাহ ও রাসূলের চেয়ে অগ্রগামী না হওয়া। এটা ঈমানের প্রাথমিক ও মৌলিক দাবী।
 নিজের মতামত ও ধ্যান ধারনাকে আল্লাহ রাসূলের সিদ্ধান্তের চেয়ে অগ্রাধিকার দিতে পারেনা এবং বিভিন্ন ব্যাপারে স্বাধীন মতামত পোষন করতে পারেনা।
 সুরা আহযাবের ৩৬ আয়াতে এরুপ নির্দেশ আল্লাহ ও তার রাসূল যে বিষয়ে ফয়সালা করে দিয়েছেন সে বিষয়ে আলাদা কোন ফয়সালা করার ইখতিয়ার কোন ঈমানদারের জন্য আর অবশিষ্ট থাকে না।
 এ নির্দেশটি শুধু ব্যক্তিগত নয় বরং মুসলমানদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য (সরকার, বিচারালয়, পার্লামেন্ট) সহীহ সনদে বর্ণিত হাদীসঃ
মুয়ায ইবনে জাবালকে ইয়েমেনের বিচারক করে পাঠানোর সময় নবী (সা:) তাকে জিজ্ঞেস করলেন “তুমি কিসের ভিত্তিতে ফয়সালা করবে?” তিনি বললেন- “আল্লাহ কিতাব অনুসারে।” নবী (সা:) বললেন যদি কিতাবে না পাওয়া যায় তিনি জবাব দিলেন আল্লাহ রাসূলের সুন্নাতের সাহায্য নেব? নবী (সা:) বললেন যদি সেখানে না পাও তিনি জবাব দিলেন তাহলে আমি নিজে ইজতেহাদ করব। তাই আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আল্লাহর কিতাবই সর্বপ্রথম উৎস এবং তারপরই হাদীসের স্থান। এবং এক্ষেত্রে নিজেদের মতামতকে প্রাধান্য দিলে বোঝাপড়া হবে আল্লাহর সাথে।
২. যারা রাসূল (সা:) এর মজলিশে যাতায়াত করত তাদেরকে এ আদব শিক্ষা দেয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্যে তার সাথে কথা বলার সময় যেন তার মর্যাদার দিকে লক্ষ্য রাখা হয়।
 এক্ষেত্রে যখনই নবী (সা:) এর আলোচনা করা হয় এবং তার হাদীস বর্ণনা করা হয় তখন পরবর্তী সময়ের লোকদের অনুরুপে শিষ্টতা বজায় রাখা দরকার
 এছাড়া নিজের চাইতে উচ্চ মর্যাদার লোকদের সাথে কথা বলার শিষ্টতা এখানে শিক্ষা দেয়া হয়েছে।
 ইসলামে রাসূলের ব্যক্তিসত্ত্বার মর্যাদা এ আয়াত থেকে বোঝা যায়। রাসূলের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে সামান্য শিথিলতায় সারা জীবনের সঞ্চিত পুজি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। নবীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা না করা মূলত আল্লাহর প্রতি করা না করার পর্যায়ভুক্ত।
৩. অর্থ্যাৎ যে হৃদয়ে রাসূলের মর্যাদা নেই সে হৃদয়ে তাকওয়া থাকতে পারেনা। যারা বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে তারা রাসূলের প্রতি তাদের পক্ষ থেকে যথাযথ মর্যাদা প্রদর্শন করে।

৪. আরবের সে পরিবেশে যেখানে সাধারন ভাবে মানুষ কোন প্রকার শিষ্টাচারের শিক্ষা পায়নি তাদের অনেকেই সময়ে সময়ে রাসূলের সাথে সাক্ষাতের জন্য হাজির হতো তার হুজরার চারিদিকে ঘুরে ঘুরে বাইরে থেকেই তাকে ডাকতো। স্বভাবগত কারনেই রাসূল (সা:) এসব সহ্য করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করলেন।

৫. অর্থ্যাৎ চিৎকার না করে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করলে রাসূল নিজেই এসে তাদের সাথে সাক্ষাত করতেন। এ আয়াতে এ ভুলের পুনরাবৃত্তি না করার জন্য তাগিদ দিয়েছেন।
৬. অধিকাংশ মুফাস্সিরের মতে এটি ওলীদ ইবনে ওকবা ইবনে আবা মুআ’ইত সম্পর্কে নাযিল হয়েছে।
হারেস ইবনে মেরার (উম্মুখ মুমিনিন হযরত জুয়াইরিয়ার পিতা) এক প্রতিনিধি দল নিয়ে রাসূলের দরবারে হাযির হন।
হযরত উম্মে সালামা বর্ণিত হাদীসে পুরো ঘটনাটি এভাবে বর্ণিত হয়েছে। ইসলামের নাজুক পরিস্থিতিতে যখন একটি ভিত্তিহীন সংবাদকে কেন্দ্র করে এত বড় ভুল সংঘটিত হতে যাচ্ছিল সে মুহুর্তে আল্লাহ এ মৌলিক নির্দেশ দিলেন যে, যখন এমন কোন খবর পাওয়া যাবে যার ভিত্তিতে বড় রকমের কোন ঘটনা সংঘটিত হতে পারে তখন তা বিশ্বাস করার পূর্বে বার্তাবাহক কেমন ব্যক্তি তা যাচাই করতে হবে।
 যার বাহ্যিক অবস্থা দেখেই প্রতীয়মান হয় যে বার্তাবাহক নির্ভরযোগ্য নয় (ফাসেক) তবে প্রাপ্ত সংবাদ অনুযায়ী কাজ করার পূর্বে তা যাচাই করা দরকার।
 যার চরিত্র ও কর্ম নির্ভরযোগ্য নয় এমন কোন সংবাদদাতার সংবাদের উপর ভিত্তি করে কোন, ব্যক্তি, জাতি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা ইসলামী সরকারের জন্য বৈধ নয়।
হাদীস শাস্ত্রবিদগণ এ প্রেক্ষিতে ‘জারহ ও তা’দীল’ এর নীতি উদ্ভাবন করেছেন।
 যাতে যাদের মাধ্যমে নবী (সা:) এর হাদীস পরবর্তী বংশধরদের নিকট পৌছেছিল তাদের অবস্থা যাচাই করা যায়।
 তাছাড়া সাক্ষ্য আইনের ক্ষেত্রে নীতি হলো এমন কোন ব্যাপারে ফাসেক ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহনযোগ্য হবেনা যা দ্বারা শরীয়তের কোন নির্দেশ প্রমানিত হয় কিংবা কোন মানুষের উপর কোন অধিকার বর্তায়।
তবে সাধারন পার্থিব ব্যাপারে প্রতিটি খবর অনুসন্ধান এবং সংবাদাতার নির্ভরযোগ্যতা জরুরী নয়। কারন আয়াতে গুরুত্বপূর্ণ খবর বলা হয়েছে।
৭. বন্ধু মুসতালিক গোত্র সম্পর্কে ওয়ালীদ ইবনে উকরার খবরের ভিত্তিতে নবী (সা:) তাদের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ গ্রহন করতে দ্বিধান্বিত ছিলেন। কিন্তু কিছু সাহাবী তৎক্ষনাৎ তাদের বিরুদ্ধে আক্রমন করার জন্য নবী (সা:) কে পীড়াপীড়ি করছিল। এ প্রেক্ষিতে এই আয়াত।
৮. অর্থ্যাৎ কতিপয় লোক তাদের অপরিপক্ক সিদ্ধান্ত জানালেও মুসলমানদের গোটা জামায়াত ভুল করেনি। মুমিনদের সঠিক পথের উপর কায়েম থাকার কারন হচ্ছে আল্লাহ তার দয়া ও মেহেরবানীতে ঈমানী আচরনকে তাদের জন্য প্রিয় ও হৃদয়গ্রাহী করে দিয়েছেন এবং নাফরমানী আচরনকে ঘৃনিত করে দিয়েছেন।
আয়াতের দুটি অংশে দুটি ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে। “যারা বনু মুসতালিকের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর জন্য পীড়াপীড়া করছিল তাদের কথা বলা হয়েছে।”
“কথা বলা হয়েছে যারা নিজেদের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার ব্যাপারে পীড়াপীড়ি করেনি। বরং ঈমানের দাবীর উপর ছিলেন।
তবে তারা ঈমানের প্রতি অটল ছিলনা একথা বলা হয়নি, বরং শিথিলতার কথা বলা হয়েছে। তাই তিনি (আল্লাহ) প্রথমে এর ভুল ও কুফল তুলে ধরেছেন।
৯. আল্লাহর অনুগ্রহ ও মেহেরবানী কোন ভাগ বাটোয়ারা নয়। তিনি এ বিরাট নেয়ামত জ্ঞান যুক্তির ভিত্তিতে দান করেন।

👉ব্যাখ্যাঃ

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

১. হে ঐ সব লোকযারা ঈমান এনেছো। তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূল থেকে এগিয়ে যেও না। আর আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ সব কিছু শুনেন ও জানেন।

 

 

 

·   لَا تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ – আল্লাহ ও তাঁর রসূলের চেয়ে অগ্রগামী হয়ো না৷

— ঈমানের প্রথম ও মৌলিক দাবী হচ্ছেঃ যে আল্লাহকে নিজের মালিক হিসাবে মানে এবং রাসূল সা.কে জান্নাতের পথ প্রদর্শক হিসাবে গ্রহণ করেতাহলে তাকে তার এই ঈমানের উপর সত্যবাদীতা প্রমাণ করতে হবে এই ভাবে যে,

ক. নিজ মতামত ও ধ্যান-ধারণাকে কখনো আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের সিদ্ধান্তের চেয়ে অগ্রাধিকার দেবে না।

খ. বিভিন্ন ব্যাপারে স্বাধীন মতামত পোষণ করতে পারবে না।

গ. সিদ্ধান্ত গ্রহণে সব সময় আগে দেখে নেবে যেএই ব্যাপারে আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ কি।

— لَا تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ-” আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অগ্রগামী হয়ো না৷” মানেঃ

          তার আগে আগে চলবে না।

          পেছনে পেছনে চলো ৷

          তার আনুগত্য হয়ে থাকো ৷

          নির্দেশ দাতা হয়োনাআনুগত্যকারী হও।

– সূরা আহযাবে  একই কথা বলা হয়েছে একটু নরম ভাবেঃ  وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ ۗ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِينًا  যখন আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোনো বিষয়ের ফায়সালা দিয়ে দেন তখ কোনো মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীর সেই ব্যাপারে নিজে ফায়সালা করার কোনো অধিকার নেই৷ আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নাফরমানী করে সে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত হয়৷ (আয়াতঃ ৩৬)

— অর্থাৎ ঈমানদার নিজেদের ব্যাপারে কখনো আপনা থেকে অগ্রগামী হয়ে কোন বিষয় ফায়সালা করবেনা। বরং তার দেখা উচিত যেসংশ্লিষ্ট ব্যাপারে আল্লাহর কিতাব বা রাসূলের সুন্নাহতে কি নির্দেশনা রয়েছে।

— এটি ইসলামী আইনের একটি মৌলিক দফা। অগ্রগামী না হওয়ার এই নির্দেশ কেবল ব্যক্তিগত ব্যাপারে নয়বরং সামাজিক ব্যাপারেও প্রযোজ্য। প্রযোজ্য সরকারবিচারালয় এবং পার্লামেন্ট সব কিছুতে।

— মুয়াজ বিন জবল রা.কে যখন ইয়ামানের শাসনকর্তা নিয়োগ করে পাঠানো হয়েতখন নবী সা প্রশ্ন করেছিলেনঃ তুমি কিসের ভিত্তিতে ফায়সালা করবেতিনি জবাব দিলেনঃ “আল্লাহর কিতাব অনুসারে” ৷ নবী ( সা) বললেনঃ যদি কোন বিষয়ে কিতাবুল্লাহর মধ্যে হুকুম না পাওয়া যায় তাহলে কোন জিনিসের সাহায্য নেবেতিনি জবাব দিলেন আল্লাহর রসূলের সুন্নাতের সাহায্য নেব৷ তিনি বললেনঃ যদি সেখানেও কিছু না পাওতিনি বললেনঃ তাহলে আমি নিজে ইজতিহাদ করবো৷ একথা শুনে নবী ( সা) তার বুকের ওপর হাত রেখে বললেনঃ সে আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করছি যিনি তাঁর রসূলের প্রতিনিধিকে এমন পন্থা অবলম্বন করার তাওফীক দান করেছেন যা তার রসূলের কাছে পছন্দনীয় ৷

— মুসলিম বিচারক আর অমুসলিম বিচারকের মধ্যকার মূল পার্থক্য তুলে ধরে এমন বস্তু হচ্ছেঃ নিজের ইজতিহাদের চেয়ে আল্লাহর কিতাব ও রসূলের সুন্নাতকে অগ্রাধিকার দেয়া এবং হিদায়াত লাভের জন্য সর্বপ্রথম এ দুটি উৎসবের দিকে ফিরে যাওয়া

— আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আল্লাহর কিতাবই যে সর্বপ্রথম উৎস এবং তারপরই যে রসূলের সুন্নাত- এ ব্যাপারে চূড়ান্ত ঐকমত্য প্রতিষ্ঠীত ৷

ব্যক্তির কিয়াস ও ইজতিহাদ তো দূরের কথা গোটা উম্মতের ইজমাও এ দুটি উৎসের পরিপন্থী কিংবা তা থেকে স্বাধীন হতে পারে না ৷

— নবী (সাঃ) হযরত যায়েদের (রা) জন্য হযরত যয়নবের (রা) সাথে বিয়ের পয়গাম দিয়েছিলেন এবং হযরত যয়নব ও তার আত্মীয়রা তা নামঞ্জুর করেছিলেন৷ ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণনা করেছেননবী (সাঃ) যখন এ পয়গাম দেন তখন হযরত যয়নব (রা) বলেনঃ أنا خير منه  لا أرضاه لنفسي  وأنا  أيم قريش “আমি বংশীয় দিক দিয়ে তার থেকে উত্তম” “আমি অভিজাত কুরাইশ পরিবারের মেয়েতাই আমি তাকে নিজের জন্য পছন্দ করি না৷” তাঁর ভাই আবদুল্লাহ ইবনে জাহশও (রা) এ ধরনের অসম্মতি প্রকাশ করেছিলেন এর কারণ ছিল এই যেহযরত যায়েদ নবী (সাঃ) এর আযাদ করা গোলাম ছিলেন এবং হযরত যয়নব ছিলেন তাঁর ফুফু (উমাইমাহ বিনতে আবদুল মুত্তালিব)-এর কণ্যা৷ এত উঁচু ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়েতাও আবার যাতা পরিবার নয়নবীর নিজের ফুফাত বোন এবং তার বিয়ের পয়গাম তিনি দিচ্ছিলেন নিজের আযাদ করা গোলামের সাথে একথা তাদের কাছে অত্যন্ত খারাপ লাগছিল৷ এ অবস্থায় এ আয়াত নাযিল হয়। এ আয়াত শুনতেই হযরত যয়নব ও তাঁর পরিবারের সবাই নির্দ্বিধায় আনুগত্যের শির নত করেন৷ এরপর নবী (সাঃ) তাদের বিয়ে পড়ান৷ তিনি নিজে হযরত যায়েদের (রা) পক্ষ থেকে ১০ দীনার ও ৬০ দিরহাম মোহরানা আদায় করেন কনের কাপড় চোপড় দেন এবং কিছু খাবার দাবারের জিনিসপত্র পাঠান৷

·  وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ – আল্লাহকে ভয় করো৷ আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও জানেন।

– অর্থাৎঃ এই নির্দেশনার ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। যদি তোমরা কখন এই নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে মুক্ত ও স্বেচ্ছাচারী হওয়ার নীত গ্রহণ করো কিংবা নিজ মতামতকে অগ্রাধিকার দাও। তাহলে মনে রেখোআল্লাহ দেখছেন-তিনি বুঝাপড়া করবেন। 

– একদিন রাসূল (সা.) আবু দারদা (রাঃ) কে আবু বকর (রাঃ) এর অগ্রে চলতে দেখে সর্তক করে বললেনঃ তুমি কি এমন ব্যক্তির অগ্রে চল যিনি ইহকাল ও পরকালে তোমার চেয়ে শ্রেষ্ঠতিনি আরও বললেনঃ দুনিয়াতে এমন কোন ব্যক্তির উপর সুর্যোদয় ও সুর্যাস্ত হয়নি যে পয়গম্বরদের পর হযরত আবু বকর থেকে উত্তম ও শ্রেষ্ঠ। (রুহুল বয়ান)

·  আমরা কি করি?

– আমরা দ্বীনের জন্য লম্বা লম্বা বক্তব্য দেই। কিন্তু আমল করার বিষয় যখন আসেতখন ভূলে যাই।

– আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে আল্লাহ ও তার রাসূলের নির্দেশনা দেখিনা।

– আমরা খুব সামান্য সমস্যায় পড়ে রুখসতের তরিকা গ্রহণ করি।

– আমরা চাকুরীর জন্য ওয়াস্তা খোঁজিজরিমানা মাফ করানোর জন্য ওয়াসতা খোঁজিজাওয়াজাতের কাজ করার জন্য খরচ যা লাগবেতা সমস্যা নয় অফার দিয়ে ওয়াস্তা খোঁজি।

– আমরা দ্বীন সম্পর্কে খুব কম জানি। অথচ আমাদের বক্তব্যে তা মনে হয়না।

– আমরা বড় বড় মাওলানাদের সমালোচনা করি। মাত্র ২/১টি বাংলা বই পড়ে আমরা মহা পন্ডিত। মনে করিঃ যাহা জানার তা কেবল আমি জানি অথবা আমাদের সংগঠনের লোকে জানে।

– আমরা ফেইসবুক চালাই মন্তব্য করি-আমার সংগঠনের দৃষ্টিভংগী দেখিনা।

– সংগঠনের সমালোচনার জবাবে আমি সমালোচনা করি। কিন্তু আমার সংগঠনে একজন জবাব দেয়ার দায়িত্বে আছেনতা মনে রাখিনা।

– আমরা মুজিবুর রহমান মনজুর ১৪ গোষ্ঠী উদ্ধার করি। কিন্তু এ ব্যাপারে আমীরে জামায়াত বলেছেনঃ আমরা এই সম্পর্কে কোন কথা বলবো না। পক্ষেও নাবিপক্ষেও না।

– আমরা চলার সময় দায়িত্বশীলকে সামনে দেই না।

– দায়িত্বশীল রেখে আমরা মন্তব্য করা শুরু করি।

 

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَرْفَعُوا أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ وَلَا تَجْهَرُوا لَهُ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ أَن تَحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ وَأَنتُمْ لَا تَشْعُرُونَ

২. হে মুমিনগণতোমরা নিজেদের আওয়াজ রাসূলের আওয়াজের চেয়ে উচু করোনা এবং উচ্চস্বরে নবীর সাথে কথা বলোনা যেরুপ তোমরা নিজেরা পরস্পর বলে থাকো। এমন যেন না হয় যেতোমাদের অজান্তেই তোমাদের সব কাজকর্ম ধ্বংস হয়ে যায়।

·  يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَرْفَعُوا أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ وَلَا تَجْهَرُوا لَهُ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ – হে মু’মিনগণ! নিজেদের আওয়ায রসূলের আওয়াযের চেয়ে উঁচু করো না এবং উচ্চস্বরে নবীর সাথে কথা বলো নাযেমন তোমরা নিজেরা পরস্পর বলে থাকো৷ 

– এ বক্তব্যে মাধ্যমে রাসূল সা. এর মজলিসে উঠাবসা ও যাতায়াতের আদব-কায়দা ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া হয়েছে।

– নবীর সাথে সাক্ষাত বা কথাবার্তার সময় নবীর স্টেটাস তথা তাঁর সম্মান ও মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রাখার জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে। যেমনঃ

ক. কারো কন্ঠ যেন নবীর কন্ঠ থেকে উচ্চ না হয়।

খ. তাকে সাধারণ মানুষের মতো এড্রেস করা যাবেনা।

– নবী এখন নাই। কিন্তু তার মজলিস আছে। তাই যে সব মাহফিলে কুরআন বা হাদীসের আলোচনা হয় তখন সেই সব মাহফিলেও এমনি আদব রক্ষা করতে হবে।

– নবীর অবর্তমানে নবীর কাজ যারা করছেনতাদের মধ্যে যারা নবীর আন্দোলনের দায়িত্বশীলতাদের সাথে আচরণ কিভাবে হবেএই আয়াতে সে হেদায়াত দেয়া হয়েছে।

– সম্মাণিত লোকের সাথে কিভাবে কথা বলতে হবেতার নসিহত এখানে পাওয়া যায়।
·  أَن تَحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ وَأَنتُمْ لَا تَشْعُرُونَ-এমন যেন না হয় যেতোমাদের অজান্তেই তোমাদের সব কাজ-কর্ম ধ্বংস হয়ে যায়৷
– আয়াতের এই অংশে রাসূল সা. এর ব্যক্তিসত্তার মর্যাদা ও অবস্থান উপস্থাপিত হয়েছে।
– দুনিয়াতে যত সম্মাণিত লোক হোকতার সাথে বেয়াদবী যেমন কুফুরী হবে নাতেমনি শাস্তি যোগ্য হবেনা। কিন্তু রাসূলের সাথে বেয়াদবী শাস্তিযোগ্য অপরাধ ও যা কুফুরী এবং গোনাহ।

– রাসূলের প্রতি সম্মাণ প্রদর্শনে অবহেলাআল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শনে অবহেলার পর্যায়ভূক্ত।

– ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্বশীলদের প্রতি অসম্মাণও একই পর্যায়ে পড়ে।
 
إِنَّ الَّذِينَ يَغُضُّونَ أَصْوَاتَهُمْ عِندَ رَسُولِ اللَّهِ أُولَٰئِكَ الَّذِينَ امْتَحَنَ اللَّهُ قُلُوبَهُمْ لِلتَّقْوَىٰ ۚ لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ عَظِيمٌ
 ৩. যারা আল্লাহর রাসূলের সাথে কথা বলার সময় নিজেদের আওয়াজ নিচু রাখেতারা আসলে ঐসব লোকআল্লাহ যাদের অন্তর তাকওয়ার জন্য যাচাই করে নিয়েছেন। তাদের জন্য রয়েছে মাগফিরাত ও মহান বদলা।
·  إِنَّ الَّذِينَ يَغُضُّونَ أَصْوَاتَهُمْ عِندَ رَسُولِ اللَّهِ أُولَٰئِكَ الَّذِينَ امْتَحَنَ اللَّهُ قُلُوبَهُمْ لِلتَّقْوَىٰ  যারা আল্লাহর রসূলের সামনে তাদের কণ্ঠ নিচু রাখে তারাই সেসব লোকআল্লাহ যাদের অন্তরকে তাকওয়ার জন্য বাছাই করে নিয়েছেন৷ 
– মানেঃ
** আল্লাহ ও তার রাসূলের সম্মাণের প্রতি তারাই লক্ষ রাখবেযারা আল্লাহর পরীক্ষায় পাস করেছে। পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ দিয়েছে যেতাদের অন্তরে তাকওয়া রয়েছে।
** যে দিলের মাঝে রাসূলের জন্য মর্যাদাবোধ নাইসে দিলে তাকওয়া নাই।
** রাসূলের সামনে বড় গলায় কথা বলাঃ অন্তরে তাকওয়া না থাকার প্রমাণ।
** দায়িত্বশীলের সামনে বড় গলায় কথা বলাঃ অন্তরে তাকওয়া না থাকার প্রমাণ।
·  لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ عَظِيمٌ– তাদের রয়েছে ক্ষমা ও বড় পুরস্কার৷
·  এ ব্যাপারে একটা কাহিনী আছেঃ একবার বনী তামিম গোত্রের কিছু লোক রাসূল (সা.) এর নিকট উপস্থিত হয়। এই গোত্রের শাসনকর্তা নিয়োগ সম্পর্কিত আলোচনা চলছিল। হযরত আবু বকর (রাঃ) রা’কা ইবনে হাকিমের নাম এবং হযরত উমর (রাঃ) আকরা ইবনে হাফসের নাম প্রস্তাব করেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) এবং হযরত উমর (রাঃ) এর মধ্যে চলমান এ আলোচনা এক পর্যায়ে কথা কাটাকাটিতে উন্নীত হয়ে উভয়ের কন্ঠস্বর উচু হয়ে যায়। (বুখারী)
·  উচ্চ স্বরে কথা না বলা প্রসংগেঃ
** এ আয়াত নাযিলের পর হযরত আবুবকর (রাঃ) আরজ করলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ আল্লাহর কসম! এখন মৃত্যু পর্যন্ত আপনার সাথে কানাকানির অনুরুপে কথা বলব। (বায়হাকী)
** হযরত উমর (রাঃ) এরপর থেকে এত আস্তে কথা বলতেন যেপ্রায়ই পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হতো। (সেহাহ)
** হযরত সাবেত ইবনে কায়সের কন্ঠস্বর স্বভাবগতভাবেই উচু ছিল। এ আয়াত নাযিলের পর তিনি ভয়ে সংযত হলেন এবং কন্ঠস্বর নিচু করলেন। (দুররে মনসুর)
** কাযী আবু বকর ইবনে আরাবী (রহঃ) বলেন রাসূল (সা.) এর সম্মান ও আদব তার ওফাতের পরও জীবদ্দশার ন্যায় ওয়াজিব।
** কোন কোন আলেম বলেন তার কবরের সামনে উচ্চস্বরে কথা বরা আদবের খেলাফ। যে মজলিসে হাদীস পাঠ হয় সেখানে হট্টগোল করা বে-আদবী।
** কন্ঠস্বর উচু করলে আমল বিনষ্ট হবে কেনসৎকর্ম বিনষ্ট করাঃ ১) কুফরী ২) ঈমান ইচ্ছাধীন কাজ কুফরীও ইচ্ছাধীন কাজ
** কিন্তু আয়াতে বলা হয়েছে। সুতরাং এখানে কুফরীর শাস্তি কিভাবে হতে পারে। মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহঃ) তার বায়ানুল কুরআনে এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন – রাসূলের কন্ঠ থেকে উচু হলে বিনষ্ট হওয়ার আশংকা রয়েছে কারন রাসূল কষ্ট পাবেন।
 ·  আমরা কি করি?
** দায়িত্বশীলদের যে একটা শরয়ী মর্যাদা আছেতা আমরা ভূলে যাই।
** বৈঠকে কথা বলা আমার অধিকার মনে করি-তাই যেমন খুশী তেমন বলি।
** আমিরে জামায়াতের নসিহত হচ্ছেঃ আমরা অধিকারের কথা ভূলে যেতে হবেদায়িত্বের কথা স্মরণে রাখতে হবে।
** আমরা বৈঠকে অনুমতি ছাড়া কথা বলি।
** একজন কথা বলেছেসাথে সাথে আমি জবাব দেই। অথচ আমাকে জবাব দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়নি।
** বৈঠকে আমরা দুইজন কথা বলি। আমাদেরকে কথা থামাতে হয়।
** দায়িত্বশীলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
** বৈঠকে আপনাকে কথা বলার সুযোগ দেয়া দায়িত্বশীলের কর্তব্য। সে কর্তব্য উনি পালন না করলে তার জবাবদিহি উনি করবেন। কিন্তু উনার কর্তব্য পালনে আপনি তাকে জোর করতে পারেন না।
** বৈঠকের অধিকাংশের মতামতের আলোকে দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত দেবেন। কিন্তু উনি বাধ্য নন। অধিকাংশের মত নয়এমন সিদ্ধান্ত দেয়ার অধিকারও দায়িত্বশীলের রয়েছে। এমন অবস্থায়ও দায়িত্বশীলের আনুগত্য করতে হবে।
** কোন অবস্থায়ই দায়িত্বশীলের উপরের মুরব্বীয়ানা করা যাবেনা।
** দায়িত্বশীলের সাথে যখন কথা বলবেনতখন হিসাব করবেনঃ কে কথা বেশী বলেছে। আপনি না দয়িত্বশীল। মনে রাখবেনঃ বলবেন কমশুনবেন বেশী। আপনার কথা কম হতে হবেদায়িত্বশীলের কথা বেশী হতে হবে 
 
إِنَّ الَّذِينَ يُنَادُونَكَ مِن وَرَاءِ الْحُجُرَاتِ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ 
৪. (হে রাসূল) যারা আপনাকে হুজরার বাহির থেকে ডাকাডাকি করে তাদের বেশীর ভাগ লোকেরই কান্ডজ্ঞান নেই।

 ·  إِنَّ الَّذِينَ يُنَادُونَكَ مِن وَرَاءِ الْحُجُرَاتِ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ  – হে নবী! যারা তোমাকে গৃহের বাইরে থেকে ডাকাডাকি করতে থাকে তাদের অধিকাংশই নির্বোধ৷

·  এ ব্যাপারে একটা কাহিনী আছেঃ نزلت هذه الآيات الكريمة، في أناس من الأعراب، الذين وصفهم الله تعالى بالجفاء، وأنهم أجدر أن لا يعلموا حدود ما أنزل الله على رسوله، قدموا وافدين على رسول الله صلى الله عليه وسلم، فوجدوه في بيته وحجرات نسائه، فلم يصبروا ويتأدبوا حتى يخرج، بل نادوه: يا محمد يا محمد، [أي: اخرج إلينا]، فذمهم الله بعدم العقل، حيث لم يعقلوا عن الله الأدب مع رسوله واحترامه، كما أن من العقل وعلامته استعمال الأدب.

   ইমাম বগাভী (রহঃ) কাতাদাহ (রাঃ) এর রেওয়ায়েতক্রমে বর্ণনা করেন বনু তামীমের লোকগণ দুপুরের সময় মদীনায় উপস্থিত হয়েছিল। তখন রাসূল (সা.) কোন এক হুজরায় বিশ্রামরত ছিলেন। তারা ছিল বেদুঈন এবং সামাজিকতার রীতি নীতি থেকে অজ্ঞ। তারা হুজরার বাইরে থেকেই ডাকাডাকি শুরু করলঃ হে মুহাম্মদ আমাদের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে আসুন” (মাযহারা)

   সাহাবী ও তাবেয়ীগণ তাদের আলেমদের সাথেও অনুরুপ ব্যবহার করতেন।

   হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে- আমি যখন কোন আলেম সাহাবীর কাছে থেকে কোন হাদীস লাভ করতে চাইতাম তখন তার গৃহে পৌছে ডাকাডাকি বা দরজার কড়া নাড়া থেকে বিরত থাকতাম এবং দরজার বাইরে বসে অপেক্ষা করতাম। তিনি যখন নিজেই বাইরে আসতেন তখন আমি তার নিকট হাদীস জিজ্ঞেস করতাম। তিনি দেখে বলতেন হে রাসূলুল্লাহর চাচাত ভাই আমাকে আপনি কড়া নেড়ে সংবাদ দিলেনা কেন। উত্তরে বলতাম-আল্লাহর নির্দেশ তাদের বাইরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর। হযরত আবু ওবায়দা (রহঃ) বলেন আমি কোনদিন কোন আলেমের দরজায় গিয়ে কড়া নাড়া দেইনি বরং অপেক্ষা করেছি যেতিনি নিজেই বাইরে আসলে সাক্ষাত করব। (রুহুল মা’আনী)

   শিষ্টাচার শিক্ষা দিলেন।

   হে মুহাম্মদ বলে ডাকা নয়।

   আমরা নাম ধরে না ডেকে অন্য ভাবে ডাকবো।

   কারো বাসায় গেলেউনি বের হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। যাওয়ার আগে ফোন করে যাবেন বা আগে এপোয়েন্টম্যান্ট নিয়ে যাবেন।

   দায়িত্বশীল রোবট ননতিনিও রক্তে মাংসে মানুষ। তারও ব্যক্তিগত সুবিধা – অসুবিধাচাওয়া পাওয়াবিশ্রাম ইত্যাদির জরুরত আছে।

   আমার পাঠচক্র ও মেহমান-উনারা অবাঞ্চিত ননকিন্তু এই সময়ের জন্য অবাঞ্চিত।

   এ্যাপোয়েন্টম্যান্ট নিয়ে হোক আর এমনি এমনি যাওয়া হোকসর্বাবস্তায় আদব হচ্ছেঃ আপনি কারো ঘরে প্রবেশ করতে সালামের মাধ্যমে অনুমতি চাইবেন। ৩বার সালাম দিয়েও উত্তর না পেলে ফিরে আসবেন।

   আল কুরআনের নির্দিশঃ সূরা নিসাঃ ২৭  يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّىٰ تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَىٰ أَهْلِهَا ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ

   একজন সাহবীর প্রশ্নঃ মায়ের ঘরে ঢুকার আগে কি অনুমতি লাগবে?

   মায়ের ঘরে ঢুকতে অনুমতি লাগলেবোনের ঘরে ঢুকতে অনুমতি লাগবে কিনা?

    শাশুড়ির ঘরে ঢুকতে অনুমতি লাগলেশালীর ঘরে ঢুকতে অনুমতি লাগবে কিনা?

    আপনি দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে শুধু অভিযোগ দেবেন না। যারা জীবনে ব্যর্থতারা অভিযোগ করে। সফল ব্যক্তিরা অভিযোগ না করে শুকরিয়া আদায় করে।

 وَلَوْ أَنَّهُمْ صَبَرُوا حَتَّىٰ تَخْرُجَ إِلَيْهِمْ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُمْ ۚ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

৫. যদি আপনার বের হওয়া পর্যন্ত তারা সবর করে থাকতোতাহলে সেটা তাদেরই জন্য ভাল হতো। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও মেহেরবান।

·  وَلَوْ أَنَّهُمْ صَبَرُوا حَتَّىٰ تَخْرُجَ إِلَيْهِمْ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُمْ– যদি তারা তোমার বেরিয়ে আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করতো তাহলে তাদের জন্য ভাল হোত৷

    নবী সা. এর সাহাবী যারা তার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ছিলতারাঃ

** ইসলামী আদব-কায়দাভদ্রতাও শিষ্টাচারের প্রশিক্ষণ লাভ করেছিলেন।

** সবসময় নবীর ( সা) সময়ের প্রতি লক্ষ রাখতেন ৷ কারণ তিনি আল্লাহর কাজে কতটা ব্যস্ত জীবন যাপন করেন সে ব্যাপারে তাদের পূর্ণ উপলব্ধি ছিল ৷

** ক্লান্তিকর ব্যস্ততার ভেতরে কিছু সময় তার আরামের জন্যকিছু সময় অধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য এবং কিছু সময় পারিবারিক কাজকর্ম দেখা-শোনার জন্যও অবশ্যই থাকা প্রয়োজন ৷

** তারা নবীর সাথে দেখা করার জন্য এমন সময় গিয়ে হাজির হতো যখন তিনি ঘরের বাইরেই অবস্থান করতেন।

** তাঁকে মজলিসে না-ও পেতো তাহলে তাঁর বেরিয়ে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতো ৷

** অত্যাধিক প্রয়োজন ছাড়া তাঁকে বাইরে আসার জন্য কষ্ট দিতো না ৷

    আরবের সে পরিবেশে যেখানে সাধারণভাবে মানুষ কোন প্রকার শিষ্টাচারের শিক্ষা পায়নি সেখানে বারবার এমন সব অশিক্ষিত লোকেরা নবীর ( সা) সাথে সাক্ষাতের জন্য এসে হাজির হতো যাদের ধারণা ছিলঃ

** ইসলামী আন্দোলন ও মানুষকে সংশোধনের কাজ যারা করেন তাদের কোন সময় বিশ্রাম গ্রহণের অধিকার নেই।

** রাতের বেলা বা দীনের বেলা যখনই ইচ্ছা তাঁর কাছে এসে হাজির হওয়ার অধিকার তাদের আছে ৷

** তাঁর কর্তব্য হচ্ছেযখনই তারা আসবে তাদের সাক্ষাত দানের জন্য তিনি প্রস্তুত থাকবেন ৷

    এ প্রকৃতির লোকদের মধ্যে সাধারণভাবে এবং আরবের বিভিন্ন অংশ থেকে আগত লোকদের মধ্যে বিশেষভাবে এমন কিছু অজ্ঞ অভদ্র লোকও থাকতো যারা নবীর ( সা) সাথে সাক্ষাত করতে আসলে কোন খাদেমের মাধ্যমে ভিতরে খবর দেয়ার কষ্টটাও করতো না ৷

    নবীর (সা) পবিত্র স্ত্রীদের হুজরার চারদিক ঘুরে ঘুরে বাইরে থেকেই তাঁকে ডাকতে থাকতো ৷সাহাবীগণ হাদীসে এ ধরনের বেশ কিছু ঘটনা বর্ণনা করেছেন ৷

    লোকজনের এ আচরণের রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খুব কষ্ট হতো ৷কিন্তু স্বভাবগত ধৈর্যের কারণে তিনি এসব সহ্য করে যাচ্ছিলেন।

    শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করলেন এবং এ অবশিষ্ট কর্মনীতির জন্য তিরস্কার করে লোকজনকে এ নির্দেশনা দান করলেন যে,

** যখন তারা তাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্য এসে তাঁকে পাবে নাতখন চিৎকার করে তাঁকে ডাকার পরিবর্তে ধৈর্যের সাথে বসে সে সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবে যখন তিনি নিজেই তাদেরকে সাক্ষাতদানের জন্য বেরিয়ে আসবেন ৷

 

·  وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ – আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু৷

** ভূলের যদি পুনরাবৃত্তি না করা হয়তবে অতীতের সকল গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করবেন।

** আল্লাহ যে ক্ষমা করবেনএটা আপনার আমার কৃতিত্ব নয়বরং তার দয়া।

** অতএবআমরা দায়িত্বশীলদের সময়সূচীকে বিবেচনায় রাখবো।

** যখন তখন কারো বাসায় যাবো না।

** আগে না জানিয়ে যাবো না।

** টেলিফোন করার সময় নজর রাখবোঃ

১. নামাযের সময় কি না?

২. ঘুমের সময় কিনা?

৩. উনি এই সময়ে সাধারণতঃ ব্যস্ত থাকেন কি না?

 

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا أَن تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَىٰ مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ

 ৬. হে ঐসব লোক যারা ঈমান এনেছো! যদি কোন ফাসেক লোক তোমাদের কাছে কোন খবর নিয়ে আসেতাহলে এর সত্যতা যাচাই করে নিও। এমন যেন না হয় যেতোমরা না যেনে কোন কাওমের ক্ষতি করে বসো এবং তারপর যা করেছোসে জন্য আফসোস করতে থাকো।

·  ﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا أَن تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَىٰ مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ﴾  হে ঈমান গ্রহণকারীগণযদি কোন ফাসেক তোমাদের কাছে কোন খবর নিয়ে আসে তাহলে তা অনুসন্ধান করে দেখ৷ এমন যেন না হয় যেনা জেনে শুনেই তোমরা কোন গোষ্ঠীর ক্ষতি করে বসবে এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে৷

·  এ ব্যাপারে একটা কাহিনী আছেঃ

*** মুসনাদে আহমাদের বরাত দিয়ে তাফসীর ইবনে কাসীরঃ

** বনী মুস্তালিক গোত্রের সরদার হারেস ইবনে মেরাব ইসলাম গ্রহণের পর রাসুল (সা.) তাকে যাকাত প্রদানের আদেশ দিলেন।

** তিনি যাকাত প্রদানে স্বীকৃত হলেন এবং তারা গোত্রে যারা ইসলাম গ্রহণ করবে তাদের যাকাত আদায় করে জমা করে রাখবেন বললেন।

** রাসূল (সা.) কে একটি নিদিষ্ট তারিখে যাকাতের অর্থ নেবার জন্য কোন দুত পাঠাতে বললেন।

** কিন্তু নির্ধারিত তারিখ পার হয়ে গেলেও দুতের দেখা না পেয়ে হারেস আশংকা করলেন রাসূল (সা.) কোন কারনে তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন।

** একথা তিনি ইসলাম গ্রহনকারী নেতৃস্থানীয় লোকদের কাছে প্রকাশ করে রাসূল (সা.) এর সাথে সবাই মিলে দেখা করার ইচ্ছা করলেন।

** এদিকে রাসূল নির্ধারিত তারিখে ওলীদ ইবনে ওকবা কে প্রেরণ করলেন।

** ওলীদ ইবনে ওকবা (রাঃ) নির্দেশ অনুযায়ী বনু মুস্তালিক গোত্রে পৌছেন। গোত্রের লোকেরা অভ্যর্থনা জানানোর উদ্দেশ্যে বস্তি থেকে বের হয়ে আসে।

** ওলীদ সন্দেহ করে তারা বোধ হয় পুরাতন শত্রুতার কারণে তাকে হত্যা করতে আসছে।

** তিনি ফিরে আসেন এবং রাসূল (সা.) কে বলেন তারা যাকাত দিতে অস্বীকার করেছে এবং আমাকে হত্যা করার ইচ্ছা করেছে।

** রাসূল (সা.) রাগান্বিত হয়ে খালিদ ইবনে ওলীদ কে ঘটনা পর্যবেক্ষনের নির্দেশ দিলেন।

** খালিদ ইবনে ওলীদের নেতৃত্বে একদল মুজাহিদ প্রেরণ করেন। তিনি ফিরে এসে সংবাদ দিলেন তারা ঈমানের উপর অটল রয়েছে এবং যাকাত দিতে প্রস্তুত। অতঃপর তা জানতে পেরে হারেস রাসূল (সা.) কে বলেন তিনি ওলীদকে দেখেনইনি।

** ওলীদ ইবনে উকবা মক্কা বিজয়ের সময় মুসলমান হয়েছিলেন।তাই এটি স্পষ্ট যে এ যুগের বেশীর ভাগ অংশই মাদানী যুগের শেষ পর্যায়ে নাজিলকৃত।

·  এ আয়াত আমাদেরকে কি শিখালো?

** বড় ধরণের ঘটনা ঘটে যেতে পারেএমন ধরণের খবরের ক্ষেত্রে খবর প্রদানকারী ব্যক্তিকে যাচাই করে দেখতে হবে।

** খবর প্রদানকারী যদি ফাসেক হয়তার বাহ্যিক অবস্থা দেখেই বুঝা যাবে যেতার কথা নির্ভর যোগ্য নয়। এমন অবস্থায় প্রকৃত ঘটনা অনুসন্ধান করতে হবে।

** শরীয়ার হুকুম হচ্ছেঃ যার চরিত্র ও কর্ম নির্ভরযোগ্য নয়এমন সংবাদদাতার সংবাদ গ্রহণ করে কোন ইসলামী সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ বৈধ নয়।

** এই নীতির ভিত্তিতে হাদীস সহীহ কি নাতা যাচাই করার জন্য হাদীস বিশারদগন ‍”জারহ ও তাদীল” নীতি  উদ্ভাবন করেন।

** ফকীহরা নীতি গ্রহণ করেছেন যেএমন কোন ব্যাপারে ফাসেক ব্যক্তির সাক্ষ গ্রহণযোগ্য হবে না যার দ্বারা শরীয়াতের কোন নির্দেশ প্রমাণিত হয় কিংবা কোন মানুষের ওপর কোন অধিকার বর্তায় ৷

পণ্ডিতগণ একমত যেসাধারণ পার্থিব ব্যাপারে প্রতিটি খবরই যাঁচাই ও অনুসন্ধান করা এবং খবরদাতার নির্ভরযোগ্য হওয়ার ব্যপারে নিশ্চিত হওয়া জরুরী নয় ৷  সাধারণ এ খুঁটিনাটি ব্যাপারে এ নীতি খাটে না ৷

👉শিক্ষাঃ
১) ধর্মীয় আলেমদের ক্ষেত্রে এ বিধান কার্যকর কারন তারা পয়গম্বরদের উত্তরাধিকারী।
– একদিন রাসূল (সা:) আবু দারদা (রা:) কে আবু বকর (রা:) এর অগ্রে চলতে দেখে সর্তক করে বললেন: তুমি কি এমন ব্যক্তির অগ্রে চল যিনি ইহকাল ও পরকালে তোমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ? তিনি আরও বললেন: দুনিয়াতে এমন কোন ব্যক্তির উপর সুর্যোদয় ও সুর্যাস্ত হয়নি যে পয়গম্বরদের পর হযরত আবু বকর থেকে উত্তম ও শ্রেষ্ঠ। (রুহুল বয়ান)
২) উচ্চ স্বরে কথা না বলাঃ
এ আয়াত নাযিলের পর –
 হযরত আবুবকর (রা:) আরজ করলেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ আল্লাহর কসম! এখন মৃত্যু পর্যন্ত আপনার সাথে কানাকানির অনুরুপে কথা বলব। (বায়হাকী)
 হযরত উমর (রা:) এরপর থেকে এত আস্তে কথা বলতেন যে, প্রায়ই পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হতো। (সেহাহ)
 হযরত সাবেত ইবনে কায়সের কন্ঠস্বর স্বভাবগতভাবেই উচু ছিল। এ আয়াত নাযিলের পর তিনি ভয়ে সংযত হলেন এবং কন্ঠস্বর নিচু করলেন। (দুররে মনসুর)
 কাযী আবু বকর ইবনে আরাবী (রহ:) বলেন রাসূল (সা:) এর সম্মান ও আদব তার ওফাতের পরও জীবদ্দশার ন্যায় ওয়াজিব। কোন কোন আলেম বলেন তার কবরের সামনে উচ্চস্বরে কথা বরা আদবের খেলাফ। যে মজলিসে হাদীস পাঠ হয় সেখানে হট্টগোল করা বে-আদবী।
 কন্ঠস্বর উচু করলে আমল বিনষ্ট হবে কেন?
 সৎকর্ম বিনষ্ট করে-
১) কুফরী ২) ঈমান ইচ্ছাধীন কাজ কুফরীও ইচ্ছাধীন কাজ।
কিন্তু আয়াতে বলা হয়েছে। সুতরাং এখানে কুফরীর শাস্তি কিভাবে হতে পারে।
মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ:) তার বায়ানুল কুরআনে এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন – রাসূলের কন্ঠ থেকে উচু হলে বিনষ্ট হওয়ার আশংকা রয়েছে কারন রাসূল কষ্ট পাবেন।
৩) হুজরার বাইরে থেকে ডাকাডাকি করাঃ
– ইমাম বগাভী (রহ:) কাতাদাহ (রা:) এর রেওয়ায়েতক্রমে বর্ণনা করেন বনু তামীমের লোকগণ দুপুরের সময় মদীনায় উপস্থিত হয়েছিল। তখন রাসূল (সা:) কোন এক হুজরায় বিশ্রামরত ছিলেন। তারা ছির বেদুঈন এবং সামাজিকতার রীতি নীতি থেকে অজ্ঞ। তারা হুজরার বাইরে থেকেই ডাকাডাকি শুরু করল।
– “হে মুহাম্মদ আমাদের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে আসুন” (মাযহারা)
সাহাবী ও তাবেয়ীগণ তাদের আলেমদের সাথেও অনুরুপ ব্যবহার করতেন।
হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত আছে- আমি যখন কোন আলেম সাহাবীর কাছে থেকে কোন হাদীস লাভ করতে চাইতাম তখন তার গৃহে পৌছে ডাকাডাকি বা দরজার কড়া নাড়া থেকে বিরত থাকতাম এবং দরজার বাইরে বসে অপেক্ষা করতাম। তিনি যখন নিজেই বাইরে আসতেন তখন আমি তার নিকট হাদীস জিজ্ঞেস করতাম। তিনি দেখে বলতেন হে রাসূলুল্লাহর চাচাত ভাই আমাকে আপনি কড়া নেড়ে সংবাদ দিলেনা কেন। উত্তরে বলতাম- আল্লাহর নির্দেশ তাদের বাইরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর।
হযরত আবু ওবায়দা (রহ:) বলেন আমি কোনদিন কোন আলেমের দরজায় গিয়ে কড়া নাড়া দেইনি বরং অপেক্ষা করেছি যে, তিনি নিজেই বাইরে আসলে সাক্ষাত করব। (রুহুল মা’আনী)

আরো কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাঃ

– সিদ্ধান্ত গ্রহণের মূল উৎস হচ্ছেন আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল। তাই বাকী সব সিদ্ধান্ত হবে সেই উৎসের ভিত্তিতে।

– চলা ফেরায় যেমন দায়িত্বশীলের আগে চলা যাবেনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণেও দায়িত্বশীলের আগে যাওয়া যাবেনা-পাশ কাঠিয়ে যাওয়া যাবে না।

– রাসূলের মজলিসে তথা কুরআন হাদীসের আলোচনা হয় এমন বৈঠকে অথবা বৈঠক চলাকালীন এর আশে পাশে কথা বলা যাবেনা।

– দায়িত্বশীলের সামনে উচ্চ কন্ঠে কথা বলা যাবেনা। দায়িত্বশীলের কথার উপরে কথা বলা যাবেনা।

– কারো সাথে দেখা করতে এ্যাপোয়েন্টম্যান্ট নিয়ে দেখা করতে হবে। টেলিফোন করতে সময় জ্ঞান থাকা চাই।

– বড় বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে এ সংক্রান্ত তথ্য ভাল ভাবে যাচাই করে নিতে হবে।



সংগৃহীত, সংকলিত ও ঈষৎ পরিমার্জিত।