Close
বই নোট লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
বই নোট লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বুধবার, ১৮ মে, ২০২২

বইনোট: ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি

ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি

লেখকঃ- সাইয়েদ আবুল আ‘লা মওদুদী 

অনুবাদঃ- মুহাম্মদ আবদুর রহীম

“ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি” বইটি ১৯৪৫ সালের ২১শে এপ্রিল পূর্ব পাঞ্জাবের পাঠান কোটস্থ দারুল ইসলামে মরহুম মাওলানা সাইয়েদ আবুল আ‘লা মওদুদী (র)-এর একটি বক্তৃতা। 

বইটি দুই ভাগে বিভক্ত 

১. ভূমিকা   

২. মূল আলোচনা 


ভূমিকাঃ 

এতে মৌলিক যে বিষয় আলোচনা করা হয়েছে তা নিম্নরূপ 

- ইসলামী আন্দোলনের চূড়ান্ত লক্ষ্য নেতৃত্বের আমূল পরিবর্তন। 

- ফাসিক আল্লাহদ্রোহী ও পাপিষ্ট লোকদের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব নির্মুল করে আল্লাহর সন্তোষ লাভ। 

- পৃথিবীতে সকল বিপর্যয়ের মূল কারণ অসৎ নেতৃত্ব। 

- অসৎ নেতৃত্ব উৎখাত ও সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং এ উদ্দেশ্যে পরিচালিত আন্দোলনই ইসলামী আন্দোলন। 

- অসৎ নেতৃত্বের ফলাফল ঃ 

- বিশ্বব্যপী অশান্তি 

- জুলুম নির্যাতনের সর্বব্যাপী সয়লাব। 

- নৈতিকতার অবক্ষয় 

- সামাজিক ভাঙন 

- মানব বুদ্ধির আবিষ্কৃত সমগ্র শক্তি ও যন্ত্র মানুষের কল্যাণ ও উন্নতি বিধানের পরিবর্তে ধ্বংস সাধনের কাজে নিয়োজিত হচ্ছে। 

ভূমিকাঃ-  ভূমিকা আবার পাঁচ ভাগে বিভক্ত 

১. চুড়ান্ত লক্ষ্য কি? 

        ক) জাগতিক দৃষ্টিভঙ্গি।

        খ) পরকালীন দৃষ্টিভঙ্গি। 

২. বর্তমান দুনিয়ার চিত্র, 

৩. সমাজ জীবন অশান্তির মুল কারণ, 

৪. দুনিয়াতে সৎ সত্যপ্রিয় মানুষের অভাব নেই, 

৫. করণীয়         

      ক) সৎ মানুষদের ঐক্যবদ্ধ করা।         

      খ) ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।  


মূল আলোচনাঃ-   মূল বক্তব্যে দশটি বিষয় আলোচিত হয়েছে 

১. নেতৃত্বের গুরুত্ব 

২. সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা দ্বীন ইসলামের মূল লক্ষ্য 

৩. নেতৃত্বের ব্যাপারে খোদার নিয়ম 

৪. মানুষের উত্থান-পতন নৈতিক চরিত্রের উপর নির্ভরশীল 

৫. মৌলিক মানবীয় চরিত্রের বিশ্লেষণ 

৬. ইসলামী নৈতিকতা 

৭. নেতৃত্ব সম্পর্কে খোদায়ী নীতির সারকথা 

৮. মৌলিক মানবীয় চরিত্র ও ইসলামী নৈতিক শক্তির তারতম্য 

৯. ইসলালী নৈতিকতার চার পর্যায় 

১০. ভুল ধারনার অপনোদন


১) নেতৃত্বের গুরুত্বঃ- 

- নেতৃত্বের গুরুত্বঃ 

সকল প্রকার ক্রিয়াকার্যের মূলে রয়েছে নেতৃত্বের ভূমিকা। দেশ, জাতি, সমাজ সব কিছুই নেতৃত্বের অধীনে পরিচালিত হয়, এর উপর নির্ভর করে কোন দেশ বা জাতির উন্নতি অগ্রগতি কিংবা পতন। 


সৎ নেতৃত্বের গুরুত্বঃ 

১. সততা ন্যায় নীতি এবং কল্যাণকর কার্যক্রম সুন্দর ও সুচারুরূপে বাস্তবায়িত হয়ে সমাজ সুন্দরের পরশে বিকশিত ও প্রস্ফুটিত হয়। 

২. অসৎ লোক এখানে সৎ হতে বাধ্য। 

৩. অন্যায়, অনাচার, পাপাচার এখানে বিকাশ লাভ করতে পারে না। 


অসৎ নেতৃত্বের পরিণামঃ 

১. সততা, ন্যায় নীতি ও কল্যাণ সমাজ হতে বিদায় নেয় 

২. পাপাচার, অনাচার, অন্যায় দুর্নীতি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। 

৩. সৎভাবে চলতে চাইলেও চলা যায় না। 

      - সমাজের শান্তি অশান্তি শৃংখলা বিশৃংখলা সঠিক নেতৃত্বের উপর নির্ভরশীল।

      - সমাজের প্রতিষ্টিত নেতৃত্ব দ্বারাই অধীনস্থরা প্রভাবিত হতে পারে। 


২) সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা দ্বীন ইসলামের মূল লক্ষ্যঃ- 

দ্বীন ইসলামের মৌলিক দাবী-৩টি 

১. সকল মানুষকে একমাত্র আল্লাহ্র দাস হিসেবে জীবন যাপন করতে হবে। 

২. খোদার দেয়া আইনকেই একমাত্র জীবন বিধান হিসেবে মানতে হবে। 

৩. পৃথিবীর বুক থেকে সকল প্রকার অন্যায়, অশান্তি দূরীভূত করতে হবে। 

- সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা আল্লাহর নির্দেশ। 

- দুনিয়ার সব মানুষ ইচ্ছা এবং অনিচ্ছায় হোক নিরঙ্কুশভাবে আল্লাহর দাস। 

- ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগঠন অপরিহাযর্। 


সৎ নেতৃত্বের সুফলঃ- 

১. মানব সমাজ ব্যবস্থা আল্লাহ কর্তৃক ব্যাপক সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত হবে। 

২. কল্যাণ জনক কাজের ব্যাপারে প্রসার লাভ করবে। 

৩. অসৎ লোকগুলো সৎ থাকতে বাধ্য হবে। 

৪. সমাজে অন্যায় ও অবিচার নিঃশেষ না হলেও ফুলে ফলে বিকশিত হবে না। 


অসৎ নেতৃত্বের কুফলঃ- 

১. মানব সমাজ ব্যাবস্থা অন্যায় এবং অসৎ পথে পরিচালিত হবে। 

২. অন্যায় ও পাপ ফুলে ফলে বিকশিত হবে। 

৩. রীতি নীতি আচার, অনুষ্ঠান বিপর্যস্থ হবে। 

৪. সৎ পথে চলাই নয় বরং এপথে দাড়িয়ে থাকাই কষ্টকর হবে।

৫. পৃথিবী মাটি, বাতাস, বায়ু সৎ নেতৃত্বকে অস্বীকার করবে। 


৩) নেতৃত্বের ব্যাপারে আল্লাহর নিয়মঃ- 

১. আল্লাহ গোটা বিশ্ব একটি সুনির্দিষ্ট নিয়মের অধীনে সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবীর সকল কিছুই সেই স্থায়ী বিধানের অনুসারী। 

২. শুধু কামনা বাসনা থাকলেই কাজ হবে না। একজন কৃষকের ভূমিকা। 

৩.   নৈতিক চরিত্রের উন্নতি সাধন করলেই আল্লাহ নেতৃত্ব দিবেন  

৪.   যোগ্যতার বিকাশ সাধন।   


৪) মানুষের উত্থান পতন নৈতিক চরিত্রের উপর নির্ভরশীলঃ- 

- মানুষের সামষ্টিক সাফল্য বস্তুনিষ্ঠ ও নৈতিক শক্তির উপর নির্ভরশীল। 

- মানুষের জীবনে মূল সিদ্ধান্তকারী শক্তি হচ্ছে নৈতিক শক্তি। 

- মানুষকে মানুষ বলাহয় তার নৈতিক গুনের জন্য। 

- নৈতিকতার প্রধান দুটি দিক 

       ১. মৌলিক মানবিক চরিত্র 

       ২. ইসলামী নৈতিক চরিত্র 


৫) মৌলিক মানবীয় চরিত্রের বিশ্লেষণঃ-  

সৎ ও অসৎ, পবিত্র-অপবিত্র ইত্যাদি প্রশ্নের উর্দ্ধে থেকে দুনিয়ার সফলতা লাভের জন্য অপরিহার্য গুনগুলি মৌলিক মানবীয় গুণ। 

- এর উপর মানুষের নৈতিক সত্তার ভিত্তি স্থাপিত হয়। 

-  উদ্দেশ্য সাধনের জন্য মৌলিক মানবীয় গুন অবশ্য প্রয়োজন। 


মৌলিক মানবীয় গুণাবলির তিনটি স্তর 

১. মৌলিক গুণ। 

২. ভদ্রতামূলক স্বভাব!।

৩. পূর্ণতাদানকারী গুণ। 


 মৌলিক গুণ

১. ইচ্ছা শক্তি 

২. সিদ্ধান্তগ্রহণ শক্তি 

৪. প্রবল বাসনা 

৫. উচ্চাশা 

৬. নির্ভীক সাহস 

৭. সহিষ্ণুতা 

৮. দৃঢ়তা 

৯. ত্যাগী মনোভাব 

১০. কৃচ্ছতা সাধন 

১১. বীরত্ব 

১২. সহনশীলতা 

১৩. পরিশ্রমপ্রিয়তা 

১৪. উদ্দেশ্যের আকর্ষণ, নিজের হৃদয়াবেগ 

১৫. উৎসর্গ করার প্রবণতা 

১৬. সতর্কতা 

১৭. দূরদৃষ্টি ও অন্তর্দৃষ্টি 

১৮. বোধ শক্তি ও বিচার ক্ষমতা 

১৯. পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন ও তদনুযায়ী নিজেকে গড়ে তোলা 

২০. অনুকূল কর্মনীতি গ্রহণ 

২১. অন্যান্য মানুষকে আকৃষ্ট করা 

২২. প্রভাব সৃষ্টি 

২৩. কাজে লাগানোর ক্ষমতা 


ভদ্রতামূলক গুনঃ 

১. আত্মসম্মান জ্ঞান 

২. দয়া-অনুগ্রহ 

৩. বদান্যতা 

৪. সহানুভূতি 

৫. সু-বিচার 

৬. নিরপেক্ষতা 

৭. হৃদয় মনের প্রসারতা/বিশালতা 

৮. দৃষ্টির উদারতা 

৯. সত্যবাদীতা 

১০. সত্যপ্রিয়তা 

১১. বিশ্বাস পরায়নতা 

১২. ন্যায়নিষ্ঠা 

১৩. ওয়াদাপূর্ণ করা 

১৪. বুদ্ধিমত্তা 

১৫. সভ্যতা 

১৬. পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা 

১৭. আত্মসংযম  


পূর্ণতাদানকারী গুণাবলীঃ

- সমাজের সমগ্র কিংবা অধিকাংশ মানুষই একটি সামগ্রিক লক্ষ্যকে নিজেদের চরম লক্ষ্যরূপে গ্রহণ করবে।  

- সে লক্ষ্যকে তার ধন-সম্পদ, প্রাণ, সন্তান হতেও অধিক ভালবাসবে। 

- পরস্পরের মধ্যে প্রেম ভালবাসা ও সহানুভূতির মনোভাব প্রবল হবে। 

- সুসংগঠিত ও সংঘবদ্ধ থাকবে। 

- আত্মদান 

- ভাল-মন্দ নেতা নির্বাচনের বুদ্ধি বিবেচনা 


৬) ইসলামী নৈতিকতাঃ 

- মৌলিক মানবীয় চরিত্রের বিশুদ্ধকারী ও পরিপূরক। 

- ইসলাম মৌলিক মানবীয় চরিত্রকে সঠিক ও নির্ভুল কেন্দ্রের সাথে যুক্ত করে। 

- ইসলাম মৌলিক মানবীয় চরিত্রকে সুদৃঢ় করে দেয় এবং চরম প্রান্তসীমা পর্যন্ত এর ক্ষেত্র ও পরিধি সম্প্রসারিত করে। 

- উন্নত নৈতিকতার একটি অতি জাঁকজমকপূর্ণ পর্যায় রচনা করে দেয়। এর ফলে মানুষ সৌজন্য ও মাহাত্ম্যের এক চুড়ান্ত ও উচ্চ পর্যায়ে আরোহণ করে থাকে। 


৭) নেতৃত্ব সম্পর্কে আল্লাহর নীতির সারকথাঃ- 

১. নেতৃত্ব দানের ব্যাপারে আল্লাহ্র নিয়ম ও রীতি স্থায়ী (সৃষ্টি থেকে ধবংস পর্যন্ত) 

২. আল্লাহ তায়ালা নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের চাবিকাঠি এমন একটি দলের হাতে ন্যস্ত করেন যারা 

      ক. ইসলামী নৈতিকতা ও মৌলিক মানবীয় চরিত্রে ভূষিত। 

      খ. জাগতিক কার্যকারণ ও জড় উপায়-উপাদান প্রয়োগকারী। 

      গ. সুসংগঠিত দল।


নেতৃত্বের ব্যবস্থায় মৌলিক পরিবর্তন সৃষ্টির শর্তঃ 

- জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে ও বিভাগে, প্রত্যেক কদমেপদক্ষেপে কাফের ও ফাসেকী শক্তির সাথে দ্বন্দ্ব ও প্রত্যক্ষ মোকাবিলা করতে হবে। 

- সত্য-প্রতিষ্ঠার বন্ধুর পথে সকল প্রকার কুরবানী দিতে হবে। 

- সত্য প্রীতির ঐকান্তিক নিষ্ঠা। 

- নিজের অপ্রতিভ যোগ্যতাও প্রমাণ করতে হবে। 

       ১. মৌলিক মানবীয় গুনাবলী, ইসলামী নৈতিকতা এবং জাগতিক উপায় উপাদান প্রয়োগকারী সুশৃংখল দল থাকলে তারা নেতৃত্বে যাবে। 

     ২. উপরোক্ত গুনাবলী না থাকলে তাহলে মৌলিক মানবীয় গুনাবলী ও জাগতিক উপায় উপাদান প্রয়োগকারী সুশৃংখল দল থাকলে তারা নেতৃত্বে যাবে। 

       ৩. তাও যদি না থাকে তাহলে জাগতিক উপায় উপাদান প্রয়োগকারী সুশৃংখল দল থাকলে তারা নেতৃত্বে যাবে। 


৮) মৌলিক মানবীয় চরিত্র ও ইসলামী নৈতিক শক্তির তারতম্যঃ- 

নৈতিক শক্তি বলতে মানবীয় চরিত্র হলে জাগতিক ও উপায় উপাদান বস্তুগত শক্তি অবশ্যই প্রয়োজনীয়। তবে, নৈতিক শক্তি বলতে মৌলিক মানবীয় চরিত্র ও ইসলামী নৈতিকতা বুঝালে বৈষয়িক ও জড় শক্তির অভাব পূরণ করা যায়। সাধারণ ক্ষেত্রে পূর্ণ সফলতার জন্য শুধু মৌলিক মানবীয় চরিত্রের ক্ষেত্রে ১০০% জড় শক্তির প্রয়োজন। তবে, ইসলামী ও মৌলিক মানবীয় চরিত্রের সমন্বয় হলে ২৫% জড় শক্তিই যথেষ্ট। ইসলামী ও মৌলিক মানবীয় চরিত্রের সমন্বয় না হলে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হবে না। 


৯) ইসলামী নৈতিকতার চার পর্যায়ঃ- 

(১) ঈমান: ঈমান ইসলামী জিন্দেগীর প্রাথমিক ভিত্তি প্রস্তর- যেমন খোদার প্রতি ঈমান। 

(২) ইসলাম: ইসলাম হচ্ছে ঈমানের বাস্তব অভিব্যক্তি, ঈমানের কর্মরূপ। ঈমান ও ইসলামের মধ্যে সম্পর্ক বীজ ও বৃক্ষের মধ্যে সম্পর্কের ন্যায়। মনের মধ্যে ঈমান থাকা অবস্থায় ইসলামের কাজ না করা একেবারে অসম্ভব।

(৩) তাকওয়া: তাকওয়া হচ্ছে মনের সে অবস্থা যা খোদার গভীর ভীতি ও প্রবল দায়িত্ব অনুভূতির দরূন সৃষ্টি হয়। 

(৪) ইহসান: ইহসান হচ্ছে আল্লাহ তার রাসুল এবং ইসলামের সাথে মনের গভীর ভালবাসা দু:চ্ছেদ্য বন্ধন ও আত্মহারা প্রেমপাগল ভাবধারা যা একজন মুসলমানকে ইসলামের জন্য আত্মোৎসর্গকৃত করে দেয়। 


১০) ভুল ধারনার অপনোদনঃ- 

(১) আল্লাহ নবীকে প্রেরন করেছেন কেন? নবী প্রেরণের উদ্দেশ্য এই যে, খোদার দাসত্ব বিমুখতা, ধর্মহীনতা, খোদার আনুগত্য করে চলার প্রতি উপেক্ষা, নিজের মনগড়া নিয়ম-বিধানের অনুসরন এবং খোদার সম্মুখে জওয়াব দিহি করার অনিবার্যতা সম্পর্কে অবিশ্বাস এই গুলোকে মুলোচ্ছেদ করা। 

(২) অকৃত্রিম ঈমানদারের উদাহরণ। 

(৩) বার্ষিক ইসলাম পালন কারীর উদাহরণ। 

আম্বিয়ায়ে কেরাম আগমনের উদ্দেশ্যঃ

- মানুষের মধ্যে আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্য করে চলার অকৃত্রিম নিষ্ঠা সৃষ্টি করা। 

- আল্লাহর সামনে জবাবদিহি সৃষ্টি করার প্রতি সন্দেহাতীত বিশ্বাস সৃষ্টি করা। 


মূল লক্ষ্যঃ 

১. উন্নত নৈতিক চরিত্রের বিকাশ সাধন। 

২. সুষ্ঠু মূলনীতির ভিত্তিতে মানব জীবনের পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করা। 

৩. মঙ্গল ও কল্যাণের স্বতঃস্ফুর্ত ফল্গুধারা প্রবাহিত করা  

৪. অন্যায় ও পাপের সকল উৎস বন্ধ করা। 


- আম্বিয়ায়ে কেরামের আগমনের একমাত্র উদ্দেশ্য সম্বলিত গুণাবলী সর্বাগ্রে অর্জন করতে হবে। বাহ্যিক দিকের সংস্কার প্রথমত উক্ত গুণাবলীর অনিবার্য পরিণাম স্বভাবতই সম্পন্ন হবে। 

- তারপরও কোন অসম্পূর্ণতা থাকলে ক্রমিক অধ্যায় সমূহ অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গেই তা পূর্ণতা লাভ করবে, তাতে সন্দেহ নেই।

শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৯

বইনোটঃ ইসলামী নেতৃত্বের গুনাবলী | আল্লামা খুররম জাহ্ মুরাদ


ইসলামী নেতৃত্বের গুনাবলী

খুররম জাহ্ মুরাদ

•লেখক পরিচিতি
- নাম : ইঞ্জিনিয়ার খুররম জাহ্ মুরাদ
- পিতার নাম : মঞ্জুর আলী মুরাদ
- মাতার নাম : বেগম আনতুল হাই
- ১৯৩২ সালের ভারতের মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভূপালে
MED ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, করাচী থেকে গ্রাজুয়েশন
- যুক্তরাষ্ট্রের ভিনেটা ইউনিভার্সিটি থেকে সিভিলে পোস্ট গ্রাজুয়েশন
- ইসলামী জমিয়তে তালাবা, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন
- ১৯৫৭ সালে ACE (Associate Council Engineer) এর এমডি হিসেবে বাংলাদেশে আসেন
- ১৯৬০-৭০ পর্যন্ত তিনি ঢাকা মহানগরী জামায়াতের আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন
- ১৯৭০ সালে লন্ডনের দাওয়াতুল ইসলাম ট্রাস্টে যোগদান করেন
- কাবা শরীফের সম্প্রসারণ কাজে তিনি আত্মনিয়োগ করেন এবং তার নামে কাবা শরীফে বাবে খুররম মুরাদ নামে একটি দরজা আছে
- ১৯৯৬ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের নায়েবে আমীরের দায়িত্ব পালন করেন।

বিষয়বস্তুঃ

করাচীতে জামিয়াতুল ফালাহর উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে “নেতা ও শিক্ষক হিসেবে নবী করিম (সাঃ)” শিরোনামে তার সীরাত ও আদর্শের আলোচনা করতে হয়। আর এ আলোচনা ই পরবর্তিতে বই আকারে বের হয়।

•প্রথমতঃ
ইসলামী আন্দোলনে নেতার গুনাবলী কেমন হওয়া প্রয়োজন তা লেখক রাসুল (সাঃ) এর জীবনের আলোকে উপস্থাপন করেছেন। মুলতঃ রাসুল (সাঃ) এর নেতা হিসেবে কি গুনাবলী ছিল তাই তিনি তুলে ধরেছেন।

•মুল বইটিতে ৫ টি অধ্যায়


০১. রাসুল (সাঃ) এর আদর্শ।

০২. রাসুল (সাঃ) এর দাওয়াত ও দাওয়াতের উদ্দেশ্য।

০৩. নবী পাক (সাঃ) এবং দাওয়াতে দ্বীন।

০৪. বিরুদ্ধবাদীদের সাথে রাসুল (সাঃ) এর আচরন।

০৫. আন্দোলনের সাথীদের সাথে রাসুল (সাঃ) এর আচরন।

প্রথম অধ্যায়

রাসুল (সাঃ) এর আদর্শ

১- আদর্শ নেতা ও শিক্ষক।
২- কোরআন ও সীরাতে রাসুলের (সাঃ) সম্পর্ক।
৩- কোরআনে সীরাত অধ্যায়ের পন্থা।

আদর্শ নেতা ও শিক্ষক:
১- রাসুল (সাঃ) হলেন সিরাজাম মুনীরা -আহযাব-৪৬ নূহ-১৬ নাবা-১৩
২- রুহ ও আত্মার জন্য পরিতুষ্টির স্থান নেতা ।
৩- আমল ও কর্মের জন্য আদর্শ।
৪- আদর্শ শিক্ষক।
৫- শিক্ষাদানই রিসালাতের বুনিয়াদী দায়িত্ব।
৬- রাসুল (সাঃ) কে জীবন কাফেলার সেনাপতি বানাতে হবে

কোরআন ও সীরাতে রাসুলের (সাঃ) সম্পর্ক:
১- সর্বোত্তম সীরাত গ্রন্থ হলো কোরআন মাজীদ।
২- কুরআন সীরাতের নিখুত বর্ণনা আর সীরাত কুরআনের জীবন্ত মডেল।
৩- কোরআন পড়তে হবে শব্দের পরিবর্তে আমলী জীবনে।
৪- সীরাতের আলোচনা হবে কুরআনের আলোকে।


কোরআনে সীরাত অধ্যায়ের পন্থা:
-কোরআনে যেসব হেদায়াত ও হুকুম এবং বিধান দেয়া হয়েছে , সেগুলো নবী (সাঃ) ও তার সাথী মুমিনদের বলা হয়েছে।
-যে সব স্থানে “ইয়া আইউহান্নাস” আছে তা সমস্থ মানুষকে বুঝানো হয়েছে।
-ঘটনাবলী যেখানে আছে সেখানেই সীরাতের আলোচনা।
-কোরআন অধ্যয়নের মাধ্যমে আমরা দেখি রাসুল (সাঃ) ইজতিহাদ করেছেন।

দ্বিতীয় অধ্যায়

রাসুল (সাঃ) এর দাওয়াত ও দাওয়াতের উদ্দেশ্য

১. দাওয়াতের সম্পর্ক আল্লাহর সাথে -আলাক-১-৫ ইউনুস-৩৫
২. আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করা হয় - মুদ্দাস্সির।
৩. আল্লাহর বন্দেগীর প্রাধান্য - আনআম -১০৩
৪. মিথ্যা খোদাদের বিরুদ্ধে জিহাদ।
৫. দাওয়াতের হেফাজত -ইউনুস-১৫
৬. দাওয়াতের সকল অংগের প্রতি লক্ষ্যারোপ।

তিনটি পদ্ধতিতে দাওয়াত দানঃ

১. আল্লাহর ভয় প্রদর্শন
২. আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়া।
৩. আল্লাহর সু-সংবাদ দেওয়া।

তৃতীয় অধ্যায়ঃ 

নবী পাক (সাঃ) এবং দাওয়াতে দ্বীন

গুরু দায়িত্বের অনুভুতি ও সার্বক্ষনিক ব্যাকুলতা

১. আল্লাহর কাজ মনে করার ধরন।
২. মালিকের তত্বাবধানে।
৩. মর্যাদা ও যিম্মাদারীর অনুভূতি।
৪. দুর্বহ কালাম।
৫. সার্বক্ষনিক ধ্যান ও পেরেশানী।

স্বীয় প্রস্তুতিঃ এই কাজ গুলো করার জন্য

১. কোরআনের সাথে নিবিড় সম্পর্ক।
২. জ্ঞান লাভের তীব্র আকাংখা।
৩. কিয়ামুল লাইল ও তারতীলুল কোরআন।
৪. যিকরে ইলাহী।
৫. সবর।

চতুর্থ অধ্যায়ঃ 

বিরুদ্ধবাদীদের সাথে রাসুল (সাঃ) এর আচরন

১. মৌখিক বিরোধীতা
২. মোকাবিলা এবং জেহাদ
৩. উত্তম নৈতিকতা
৪. মন্দের জবাব ভালো দিয়ে
৫. তায়িফের ঘটনা

৫ম অধ্যায়ঃ 

আন্দোলনের সাথীদের সাথে রাসুল (সাঃ) এর আচরন

১. রাউফুর রাহীম-
২. মর্যাদা অনুভূতি ও নিবিড় সম্পর্ক।
৩. তা’লীম ও তাযকিয়া।
৪. পর্যবেক্ষন ও ইহতেসাব।
৫. যোগ্যতা ও সামর্থ অনুযায়ী আচরন।
৬. কোমলতা ও সহজতা।
৭. ক্ষমা ও মার্জনা।
৮. বিনয়।

মনোবাসনাঃ 

সর্বশেষ লেখকের মনোবাসনা পেশের মাধ্যমে উপসংহার টানা হয়েছে।

তিনটি বিষয়ে রাসুল (সাঃ) গুরুত্ব দিতেন-

১. মনোবৃত্তিতে ইখলাস।
২. সম্পদ কোরবানীর প্রবল আগ্রহ।
৩. জীবনের লক্ষ্যবিন্দু আখেরাত।

- সম্পদ কোরবানীর মাধ্যমে মনকে পরীক্ষা করা যায়।
- সম্পদ ব্যাতীত আন্দোলন চলেনা।