Close
ইসলামী আন্দোলন লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
ইসলামী আন্দোলন লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শনিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৩

দারসুল হাদীস : হযরত উমর রা. বর্নিত নিয়তের গুরুত্ব সংক্রান্ত হাদীস

দারসুল হাদীস : হযরত উমর রা. বর্নিত নিয়তের গুরুত্ব সংক্রান্ত হাদীস
দারসুল হাদীস
নিয়তের গুরুত্ব সংক্রান্ত হাদীস
عَنْ عُمَرَ بْن الْخَطَّابِ (رض) عَلَى الْمِنْبَر يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ )صلعم( يَقُولُ إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ وَإِنَّمَا لأَمْرِئ مَّا نَوَى فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيبُهَا أَوْ إِلَى اِمْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا فَهَجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ الَيْهِ (بخاری)
অনুবাদ: আমীরুল মু'মিনীন হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি মিম্বারের উপর উঠে বলেছিলেন: আমি রাসূলূল্লাহ (সা)-কে বলতে শুনেছি, যাবতীয় কাজের ফলাফল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। প্ৰত্যেক ব্যক্তি তাই পাবে যা সে নিয়ত করেছে। কাজেই যার হিজরত দুনিয়ার কোন স্বার্থ হাসিলের জন্য কিংবা কোন রমণীকে বিবাহ করার নিয়তে হয়েছে, তার হিজরত সে উদ্দেশ্যেই হয়েছে। (সহীহ বুখারী-০১)

শব্দার্থ : عَنْ : হতে। يَقُولُ : তিনি বলেছেন। إِنَّمَا : নিশ্চয়ই । الْأَعْمَالُ : কর্মসমূহ। بِالنِّيَّاتِ : নিয়তসমূহ (বহুবচন)। لأَمْرِئ : প্রত্যেক মানুষের জন্য। مَّا: যা। نَوَى: সে নিয়ত করল। فَ: অতঃপর। مَنْ: যে (ব্যক্তি)। هِجْرَتُهُ : তার হিজরত। كَانَتْ : ছিল। إِلَى : প্রতি, দিকে । دُنْيَا : পৃথিবী। يُصِيبُهَا : সে তা লাভ করবে। اِمْرَأَةٍ : স্ত্রী লোক । يَنْكِحُهَا : সে তাকে বিবাহ করবে। هَاجَرَ : সে হিজরত করল। مَنْ: যে ব্যক্তি। كَانَتْ : সে (স্ত্রী) ছিল। هَجْرَتُهُ: তার হিজরত। الَيْهِ: তার দিকে।

ব্যাখ্যাঃ আলোচ্য হাদীসখানায় নিয়তের গুরুত্ব, আমল ও হিজরত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। মুসলমানদের প্রত্যেকটি কাজে নিয়তের বিশুদ্ধতা থাকা অত্যাবশ্যক। প্রতিটি কর্ম আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা) সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই করা উচিত । কোন কাজে বিশুদ্ধ নিয়ত না থাকলে সে কাজ আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই আল্লাহর নিকট কোন কাজের পুরস্কার পেতে হলে প্রত্যেকটি কাজে নিয়তের বিশুদ্ধতা থাকা অপরিহার্য । এমনকি হিজরতের মত গুরুত্বপূর্ণ দীনি কাজেও নিয়তের বিশুদ্ধতা না থাকলে তা আল্লাহর নিকট গ্রহণীয় হবে না এবং তার প্রতিদান পাওয়া যাবে না । আল্লাহ তা'য়ালা কাজের সাথে বান্দার অন্তরের অবস্থাও দেখতে চান ।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رض قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلعم إِنَّ اللهَ لَا يَنْظُرُ إلى صُوَرِكُمْ وَأَمْوَالِكُمْ وَلَكِنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ وَاعْمَالِكُمْ- مسلم
হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (সা) বলেছেন: “আল্লাহ তা'য়ালা তোমাদের সৌন্দর্য ও সম্পদের দিকে লক্ষ্য করেন না, বরং তোমাদের অন্তর ও কাজের দিকে লক্ষ্য করেন।” (মুসলিম)
বিশুদ্ধ নিয়ত প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন : “আর তাদেরকে হুকুম করা হয়েছে যে তারা যেন একনিষ্ঠ হয়ে আন্তরিকভাবে আল্লাহর দীন পালনের মাধ্যমে একমাত্র তাঁরই ইবাদত করে।” (সূরা আল-বাইয়িনাহঃ ৫)
“আপনি বলুন, তোমরা তোমাদের মনের কথা গোপন রাখ অথবা প্ৰকাশ কর, তা সবই আল্লাহ জানেন”। (সূরা আলে-ইমরান : ২৯)
মুসলিম শরীফের অন্য একটি হাদীসে বলা হয়েছে, “কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম এমন ব্যক্তির বিচার করা হবে, যিনি আল্লাহর পথে শহীদ হয়েছেন। তাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে হাজির করে তার প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত যাবতীয় নি'য়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে । সে ঐ সব নি'য়ামত প্রাপ্তি ও ভোগের কথা স্বীকার করবে । অতঃপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে তুমি আমার এসব নি'য়ামত পেয়ে কি করেছো? সে উত্তরে বলবে আমি আপনার পথে লড়াই করতে করতে শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়েছি। আল্লাহ বলবেন : তুমি মিথ্যা বলেছো। তুমি বীর খ্যাতি অর্জনের জন্য লড়াই করেছো এবং সে খ্যাতি তুমি দুনিয়াতে পেয়েছো । অতঃপর তাকে উপুড় করে পা ধরে টেনে হেচড়ে দোযখে নিক্ষেপ করার হুকুম দেয়া হবে এবং এভাবে সে দোযখে নিক্ষিপ্ত হবে। এরপর আল্লাহর দরবারে এমন এক ব্যক্তিকে হাজির করা হবে যে দীনের জ্ঞান অর্জন করেছে, দীনের জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছে এবং আল-কুরআন পড়েছে। তাকে তার প্রতি প্ৰদত্ত নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে। সে ঐ সব নিয়ামত প্রাপ্তি ও ভোগের কথা স্বীকার করবে। অতঃপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তুমি আমার এসব নি'য়ামত পেয়ে কি করেছো? সে বলবে আমি দীনি ইল্‌ম অর্জন করেছি, তা অপরকে শিক্ষা দিয়েছি এবং আপনার সন্তুষ্টির জন্য আল-কুরআন পড়েছি। আল্লাহ বলবেন তুমি মিথ্যা বলেছো । তুমি আলেম খ্যাতি লাভের জন্য ইল্‌ম অর্জন করেছো। তুমি কারীরূপে খ্যাত হওয়ার জন্য আল-কুরআন পড়েছো । সে খ্যাতি তুমি দুনিয়াতে পেয়েছো। তারপর ফয়সালা দেয়া হবে, অতঃপর তাকে উপুড় করে পা ধরে টেনে হেচড়ে দোযখে নিক্ষেপ করার হুকুম দেয়া হবে এবং এভাবেই সে দোযখে নিক্ষিপ্ত হবে ।

এরপর হাজির করা হবে এমন এক ব্যক্তিকে যাকে আল্লাহ সচ্ছলতা ও নানা রকম ধন-সম্পদ দান করেছেন। তাকে তার প্রতি প্রদত্ত নি'য়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে । সে ঐ সব নিয়ামত প্রাপ্তি ও ভোগের কথা স্বীকার করবে। অতঃপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তুমি আমার এসব নি'য়ামত পেয়ে কি করেছো? সে বলবে আমি আপনার পছন্দনীয় সব খাতেই আমার সম্পদ খরচ করেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছো । তুমি দাতারূপে খ্যাতি লাভের জন্যেই দান করেছো । তারপর ফয়সালা দেয়া হবে। অতঃপর তাকে উপুড় করে পা ধরে টেনে হেচড়ে দোযখে নিক্ষেপ করা হবে এবং এভাবেই সে দোযখে নিক্ষিপ্ত হবে। (মুসলিম) কাজেই বুঝা গেল যারা দুনিয়ার স্বার্থ লাভের নিয়তে কাজ করবে তারা দুনিয়াই লাভ করবে আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কাজ করবে তারা দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতে সাফল্য লাভ করবে ।

গ্রন্থ পরিচিতিঃ সহীহ আল-বুখারী।

হাদীস বিশারদগণ হিজরী তৃতীয় শতাব্দীর প্রথমার্ধে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের বিক্ষিপ্ত হাদীসসমূহ 'মুসনাদ' আকারে লিপিবদ্ধ করেন। পরবর্তীকালে মুহাদ্দিসগণ যাচাই-বাছাই করে (সহীহ) বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থ লিখার কাজে হাত দেন। এর ফলশ্রুতিতে হিজরী তৃতীয় শতাব্দীর মাঝামাঝি ও শেষার্ধে বিশ্ব বিখ্যাত ‘সিহাহ সিত্তা' বা ছয়খানি বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থ জগতবাসীর কাছে উপস্থাপন করা হয় । এ গ্রন্থগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা অধিক বিশুদ্ধতম অমর হাদীস গ্রন্থ হচ্ছে ‘সহীহুল বুখারী' ।

ইমাম বুখারী (র) এ গ্রন্থের প্রণেতা । তাঁর পূর্ণ নাম হলো মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল ইবনে ইবরাহীম ইবনে মুগীরা ইবনে বারদিযবাহ আল-যু‘ফী আল-বুখারী। তিনি ১৯৪ হিজরী ১৩ই শাওয়াল বুখারা নগরীতে জন্মগ্ৰহণ করেন। তিনি অসাধারণ স্মৃতিশক্তির অধিকারী ছিলেন। অতি অল্প বয়সে পবিত্র কুরআনকে মুখস্থ করেন। তিনি হাফিযে হাদীস ছিলেন । তিনি নিজেই বলেন : ‘তিন লক্ষ’ হাদীস তাঁর মুখস্থ ছিল। তাছাড়া তিনি ছয় লক্ষ হাদীস থেকে যাচাই-বাছাই করে ১৬ বছরে এ গ্রন্থখানি সংকলন করেন। যার মধ্যে ৭,৩৯৭ তাকরারসহ ও তাকরার ছাড়া ২,৫১৩টি হাদীস স্থান পেয়েছে।

হাদীস সংকলনের পূর্বে ইমাম বুখারী (র) গোসল করে দু'রাকাত সালাত আদায় করে ইসতিখারা করার পর এক একটি হাদীস লিপিবদ্ধ করেছেন । সকল মুহাদ্দিসগণের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মতে, সকল হাদীস গ্রন্থের মধ্যে বুখারী শরীফের মর্যাদা সবচেয়ে বেশী । তাই বলা হয় :
آصَحُ الْكُتُبِ بَعْدَ كِتَابِ اللَّهِ تَحْتَ السَّمَاءِ صَحِيحُ الْبُخَارِي.
“আল্লাহর কিতাবের পর আসমানের নিচে সর্বাধিক সহীহ গ্রন্থ হচ্ছে সহীহুল বুখারী ।” (মুকাদ্দামা ফতহুল বারী ওয়া উমদাতুল কারী)

ইমাম বুখারী (র) সহজ-সরল, বিনয়ী, দয়ালু উন্নত চারিত্রিক গুণসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি নিজেই বলেন, “আমি জীবনে কোন দিন কারো কোন গীবত করিনি।” এই মহা মনীষী ২৫৬ হিজরী ১লা শাওয়াল ঈদুল ফিতর ভোর রাতে ইনতিকাল করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

রাবী পরিচিতি : হযরত উমর (রা)। মূল নাম : উমর । উপনাম : আবু হাফস। উপাধি ঃ আল-ফারুক। পিতার নাম : খাত্তাব । মাতার নাম : হানতামা বিনতে হাশেম ইবনে মুগিরা । জন্মগ্রহণ ঃ হযরত উমর (রা) হিজরতের ৪০ বছর পূর্বে রাসূল (সা)-এর জন্মের ১৩ বছর পর ৫৮৩ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন ।

প্রাথমিক জীবন : প্রাথমিক জীবনে হযরত উমর (রা) পিতা-মাতার আদরে লালিত-পালিত হন। পিতার উট চরাতে সাহায্য করেন। যৌবনের প্রারম্ভে যুদ্ধবিদ্যা, কুস্তি, বক্তৃতা এবং নসবনামা শিক্ষা লাভ করে আত্ম-প্রত্যয়ী যুবক হিসাবে বেড়ে ওঠেন।

ইসলাম গ্রহণ : তিনি নবুওয়াতের ৬ষ্ঠ সালে ইসলাম গ্রহণ করেন । তাঁর পূর্বে ৩৯ জন পুরুষ ইসলাম গ্রহণ করায় তাকে নিয়ে ৪০ জন পূর্ণ হয়। অতঃপর প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচারের কাজ শুরু হয়। রাসূল (সা) তাঁকে ফারুক উপাধিতে ভূষিত করেন। (উসদুল গাবা)

খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ : হযরত আবু বকর (রা)-এর ইনতিকালের পর হিজরী ১৩ সালের ২৩ জমাদিউল উখরা মোতাবেক ২৪শে আগষ্ট ৬৩৪ সালে খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর খিলাফত কাল ছিল ১০ বছর ৬ মাস। তাঁর শাসনামলে সর্বাধিক রাজ্য জয় হয়। বিজিত রাজ্যের সংখ্যা ছিল ১০৩৬। তিনি সর্বপ্রথম হিজরী সন প্রবর্তন করেন। সামরিক কেন্দ্রসমূহ প্রতিষ্ঠা, কাজীর পদ সৃষ্টি ও বিধর্মীদের অধিকার সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন। মূল কথা তিনিই ইসলামী রাষ্ট্র বাস্তব ভিত্তির উপর স্থাপিত করেন। (তাবাকাতে ইবনে সা'দ)

হাদীস বর্ণনার সংখ্যা : তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা ৫৩৯ খানা। বুখারী শরীফে এককভাবে ৯ খানা ও মুসলিম শরীফে এককভাবে ১৫ খানা । উভয় গ্রন্থে সর্বমোট ২৪ খানা হাদীস সন্নিবেশিত হয়েছে । তিনি বিপুল সংখ্যক হাদীস সংগ্রহ করেন ও লিপিবদ্ধ করে রাজ্যের বিভিন্ন শাসকদের নিকট প্রেরণ করেন। জনসাধারণকে হাদীস শিক্ষা দানের জন্য তিনি বড় বড় সাহাবীদেরকে বিভিন্ন রাজ্যে পাঠান। সেখানে তারা হাদীসের প্রশিক্ষণ দেন ও হাদীস শাস্ত্রের বিজ্ঞ বিজ্ঞ মুহাদ্দিস তৈরী করেন ।

ইমাম যাহ্বী বলেন, “হাদীস, রিওয়ায়াতের ব্যাপারে তিনি মুহাদ্দিসগণের জন্য মজবুত নীতিমালা প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন।” রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকায় তাঁর হাদীস বর্ণনার সংখ্যা কম। তাছাড়া তিনি হাদীস সংকলনের ক্ষেত্রে এ আশংকায় জড়িত হয়ে পড়েন যে সুসংঘবদ্ধ ও সংকলিত হাদীস গ্রন্থ জনসাধারণের হাতে পৌঁছলে তারা কুরআনের তুলনায় হাদীসকে বেশী গুরুত্ব দিয়ে বসতে পারে ৷

শাহাদাত লাভ : হিজরী ২৩ সালের ২৪শে জিলহাজ্জ বুধবার মসজিদে নববীতে নামাযের ইমামতি করার সময় মুগীরা বিন শু'বার দাস আবু লু'লু’ বিষাক্ত তরবারি দ্বারা আঘাত করলে আহত অবস্থায় তিন দিন অতিবাহিত করার পর ২৭শে জিলহাজ্জ শনিবার শাহাদাত লাভ করেন । (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর । (তাবাকাতে ইবনে সা'দ )

হাদীসের পটভূমি : এ হাদীসের একটি ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ ও উপলক্ষ্য রয়েছে। তা হলো, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) নবুওয়াত প্রাপ্তির পর মক্কার লোকদেরকে দীনে হকের প্রতি আহ্বান করলে কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠি সে কাজে বাধা দেয়। আল্লাহর বাণী তথা দীনে হকের দাওয়াত গণ-মানুষের কর্ণ কুহরে পৌঁছে দেয়ার জন্য রাসূলে করীম (সা) তাঁর সঙ্গী-সাথীদেরকে নিয়ে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেন এবং অন্যান্য সকল মুসলমানকে চতুর্দিক থেকে হিজরত করে মদীনায় উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেন। তখন নিষ্ঠাবান সকল মুসলমানগণ হিজরত করে মদীনায় হাজির হন। তাদের মধ্যে উম্মে কায়েস বা কায়েলা নামের একজন মহিলা ছিলেন। একজন পুরুষ উক্ত মহিলাকে বিবাহ করার জন্য মদীনায় হিজরত করেন । কিন্তু হিজরতের ব্যাপারে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ পালন ও সাওয়াব লাভ করার দিকে তার বিন্দুমাত্র লক্ষ্য ছিল না । আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টির জন্য হিজরত না করায় তাঁর হিজরত গ্রহণযোগ্য হয়নি । অনুরূপভাবে প্রত্যেক কাজে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টির নিয়ত না থাকলে তা আল্লাহর কাছে গৃহীত হবে না। তাই হিজরতের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ ও কষ্টকর আমলের মধ্যেও যদি নিয়তের বিশুদ্ধতা না পাওয়া যায় তাহলে তাতেও কোন প্রতিদান পাওয়ার আশা করা যায় না ৷

হাদীসে উল্লেখিত মহিলার পরিচয় : যাকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে এক ব্যক্তি মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেছিলেন, তার নাম হলো- কায়েলা, তার উপনাম উম্মে কায়েস, আর যে পুরুষ লোকটি তাকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে হিজরত করেছিলেন তার নাম জানা যায় নাই ৷ তবে তাকে মুহাজিরে উম্মে কায়েস বলা হত। সম্ভবতঃ একজন সাহাবীর পরিচয়ের সাথে তার কাজের মিল না থাকায় তার নাম উল্লেখ করা হয় নাই । (উমদাতুল কারী)

হাদীসটির গুরুত্ব : ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় নিয়তের গুরুত্ব অপরিসীম নিয়তের এ হাদীসখানা ইসলামের একটি মূল ফর্মূলা হিসেবে গণ্য ৷ এতে অল্প শব্দে অধিক অর্থ নিহিত রয়েছে। কারো কারো মতে ইসলাম সম্পর্কিত ইলমে এর গুরুত্ব এক-তৃতীয়াংশ ।

আল্লামা ইমাম খাত্তাবী (র) বলেন, সকল কাজের পরিশুদ্ধতা ও তার ফলাফল লাভ নিয়ত অনুযায়ী হয়। কেননা নিয়তই মানুষের কাজের দিক নির্ণয় করে। বিশুদ্ধ ছয়খানা হাদীসের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হাদীস গ্রন্থ বুখারী শরীফের সর্ব প্রথমে ইমাম বুখারী (র) নিয়তের হাদীসখানা উপস্থাপন করেছেন। আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী (র) বলেন, ইমাম মালেকের মুওয়াত্তা ব্যতীত অন্যান্য সকল হাদীস গ্রন্থে নিয়তের এ হাদীসটি উদ্ধৃত হয়েছে । হযরত উমর (রা) তাঁর প্রত্যেক ভাষণের সূচনাতে এ হাদীসখানা পাঠ করে নিয়তের বিশুদ্ধতার কথা স্মরণ করিয়ে দিতেন। নিয়তের অর্থ : নিয়তের আভিধানিক অর্থ- BINI, iii ইচ্ছা, স্পৃহা, মনের দৃঢ় সংকল্প ইত্যাদি । শরীয়াতের দৃষ্টিতে- আল্লাহ তা'য়ালার সন্তোষ লাভ ও তাঁর আদেশ পালনের উদ্দেশ্যে কোন কাজ করার দিকে হৃদয় মনের লক্ষ্য আরোপ ও উদ্যোগকে নিয়ত বলে ।

ফতহুর রব্বানী গ্রন্থকার বলেন :
تَوَجُهُ الْقَلْبِ جَهَةَ الْفِعْل ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللَّهِ تَعَالَى وَاِمْتِتَالاً لأمره. “আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ ও তাঁর আদেশ পালনার্থে কোন কাজের দিকে মনের ঐকান্তিক আগ্রহ ও অভিপ্রায় প্রয়োগ করা।” (ফতহুর রব্বানী ২য় খণ্ড পৃ. ১৭) আল্লামা ইমাম খাত্তাবী (র) বলেন :
هُوَ قَصْدُكَ الشَّيْئَ بِقَلْبِكَ وَتَحَرِّى الطلبِ مِنْكَ.
“মনে কোন কাজ করার সদিচ্ছা পোষণ করা এবং উহা বাস্তবায়নের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করাকে নিয়ত বলা হয়।” নূরুল ইযা গ্রন্থকার বলেন :
النَّيَّةُ هُوَ قَصْدُ الْقَلْبِ عَلَى الْفِعْل.
“কাজের উপর মনের ইচ্ছা পোষণ করাকে নিয়ত বলা হয় ।” প্রত্যেকটি কাজের শুরুতেই নিয়ত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ক্ষেত্রে আল্লামা ইমাম বায়যাবী (র) তাঁর মতামত নিম্নের ভাষায় ব্যক্ত করেন :
إِنْبِعَاتُ الْقَلْبِ نَحْوَ مَا يَرَاهُ مُوَافِقًا لِغَرْضِ مِّنْ جَلْبٍ نَفْعِ أَوْ دَفْعِ ضَرَرِ
حَالاً أَوْ مَالاً.
“বর্তমান কিংবা ভবিষ্যতের কোন উপকার লাভ বা কোন ক্ষতি প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে অনুকূল কাজ করার জন্যে মনের উদ্যোগ ও উদ্বোধনকেই নিয়ত বলে।” (উমদাতুল কারী ১ম খণ্ড ৬৩ পৃঃ) মোটকথা কোন কাজের পিছনে যে উদ্দেশ্য মানব মনে ক্রিয়াশীল থাকে, চাই তা ভাল কাজ হউক কিংবা মন্দ কাজ, তাকেই ‘নিয়ত' নামে অভিহিত করা হয় ৷

ইবাদতমূলক কাজে নিয়তের গুরুত্ব

ইবাদত বুনিয়াদী পর্যায়ে দু'প্রকার। যথা—

১ । মাকসুদা বা মূল ইবাদত;
২। গায়রে মাকসুদা বা সহায়ক ইবাদত ।

১। ইবাদতে মাকসুদা: যে ইবাদতের দ্বারা সওয়াব পাওয়ার সাথে সাথে দায়িত্ব মুক্তির উদ্দেশ্যও নিহিত থাকে তাকে ইবাদতে মাকসুদা বা মূল ইবাদত বলে । যেমন- নামায, রোযা, হজ্জ ইত্যাদি ।

২। ইবাদতে গায়রে মাকসুদা : যে ইবাদত মূল ইবাদতের সহায়ক । যে ইবাদত দায়িত্ব মুক্তির উদ্দেশ্যে করা হয় না বরং উহা মাকসুদা বা মূল ইবাদতের সহায়ক বা মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত হয়। যেমন- অযু, তায়াম্মুম। ইহা সরাসরি ইবাদত নয় বরং সালাত উহার উপর নির্ভরশীল আর নামাযের জন্য উহা সহায়ক বা মাধ্যমও বটে ।

ইমামদের মতভেদঃ

ইমাম শাফি'ঈ, মালেক ও আহমদ (র) প্রমুখ মনীষীগণ বলেন, ইবাদতে মাকসুদা বা গায়রে মাকসুদা যে ধরনের ইবাদতই হোক না কেন, উহার বিশুদ্ধতার জন্য নিয়ত করা পূর্বশর্ত । আল্লাহর বাণী :
وَمَا أُمِرُوا إِلا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ.
“আর তাদেরকে হুকুম করা হয়েছে যে তারা যেন একনিষ্ঠ হয়ে আন্তরিকভাবে আল্লাহর দীন পালনের মাধ্যমে একমাত্র তারই ইবাদত করে।” (সূরা আল-বাইয়িনা : ৫)
আল্লাহ তা'য়ালা কুরআনে নিয়তের বিশুদ্ধতার কথা উল্লেখ করে বলেন : إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا وَأَصْلَحُوا وَاعْتَصَمُوا بِاللهِ وَاخْلَصُوا دِينَهُمْ لِلهِ.
“তবে তাদের মধ্যে যারা তওবা করবে ও নিজেদের কার্যাবলী সংশোধন করে নিবে ও আল্লাহর রজ্জু শক্ত করে ধারণ করবে এবং একমাত্র আল্লাহর জন্যই নিজেদের দীনকে খালেস করে নিবে।” (সূরা আন-নিসা : ১৪৬)
إِنَّمَا صِحَّةُ الْأَعْمَال بِالنِّيَّاتِ.
“আমল ও ইবাদতের বিশুদ্ধতা একনিষ্ঠভাবে নিয়তের উপরই নির্ভরশীল ।” হানাফী ইমামগণ বলেন, ইবাদতে সাওয়াব প্রাপ্তি নিয়তের উপর নির্ভরশীল। তাদের মতে বর্ণিত হাদীসে Liii শব্দের পরে । শব্দটি উহ্য রয়েছে। মূল বাক্য ছিল এরূপ : Lil “ইবাদতের সওয়াবের প্রাপ্তি নিয়তের উপর নির্ভরশীল ।”

গায়েরে মাকসুদা দুরস্ত হওয়ার জন্য নিয়তের প্রয়োজন নেই । কেননা, নিয়ত ব্যতিরেকেই শুদ্ধ হয়ে যাবে, কিন্তু সওয়াব পাওয়া যাবে না । উহা নিয়ত ও ইরাদার মধ্যে পার্থক্য কোন কাজের পিছনে যে উদ্দেশ্য মানব মনে ক্রিয়শীল থাকে, চাই তা ভাল হোক বা মন্দ হোক তাকেই নিয়ত বলা হয় । আর শুধু কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করার নাম হলো ইরাদা ।

হিজরত অর্থ

হিজরত অর্থ- ত্যাগ করা, সম্পর্কচ্ছেদ করা, ছেড়ে দেয়া, কোন জিনিস ত্যাগ করা, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যাওয়া ইত্যাদি । (আল-ওয়াসীত : ২/৯৭৩)
শরীয়তের পরিভাষায়-নিজের জন্মভূমি পরিত্যাগ করে দীন ও ঈমান রক্ষার নিমিত্তে ‘দারুল হরব' থেকে ‘দারুল ইসলামে' প্রস্থান করাকে শরীয়তে হিজরত বলে ।
ইবনে হাজার আসকালানির (র) মতে, “আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা পরিত্যাগ করাকে হিজরত বলে ।”
একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে 'দারুল হরব' থেকে ‘দারুল ইসলামে' প্রস্থান করাকে হিজরত বলে। যেমন— নবী করীম (সা) ও সাহাবায়ে কিরাম (রা) দীন ও ইসলামের নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে মক্কাভূমি (দারুল হরব) পরিত্যাগ করে মদীনা (দারুল ইসলাম) চলে গিয়েছিলেন । সুতরাং সে চলে যাওয়াকে হিজরত নামে অভিহিত করা হয় । তাছাড়া শরীয়তের নিষিদ্ধ কাজসমূহকে পরিত্যাগ করাকেও হিজরত বলে ।

হিজরতের বিধান : হিজরতের বিধান পরিবেশ পরিস্থিতির আলোকে কিয়ামত পর্যন্ত জারী থাকবে। এ বিধানটির উপর মুসলমানদের বহুবিদ কল্যাণ নিহিত আছে। এ দিকে লক্ষ্য রেখেই মহানবী (সা) নিম্নের হাদীসখানা বর্ণনা করেছেন :
لاَ تَنْقَطِعُ الْهَجْرَةُ حَتَّى لا تَنْقَطِعَ التَّوْبَةُ وَتَنْقَطِعُ التَّوْبَةُ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا.
“তওবা করার অবকাশ থাকা পর্যন্ত হিজরতের ধারা বা সিলসিলা বন্ধ হবে না। আর তওবার অবকাশও বন্ধ হবে না পশ্চিম দিকে সূর্য উদিত না হওয়া পর্যন্ত ।” (আবু দাউদ)

গোটা বিশ্বের যে কোন স্থানে যে কোন সময় দীন ও ঈমান হিফাযত করার জন্য হিজরতের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে । বর্তমান বিশ্বে যেভাবে মুসলমানদের উপর দেশে দেশে নির্যাতন চলছে তাতে হিজরত করার অপরিহার্যতা আরো ব্যাপক করে তোলে । এমনকি কোন স্থানে বা দেশে অন্ততঃ নিজের ব্যক্তিগত জীবনে ইসলামী বিধি-বিধান পালন করা অসম্ভব হয়ে পড়লে, তখন নিরাপদ স্থানে হিজরত করার বিধান আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে । (লোমাআত)

শিক্ষা
১। সকল কাজের ফলাফল নিয়তের উপর নির্ভরশীল
২। মুসলমানদের সকল কাজের পূর্বে নিয়তকে বিশুদ্ধ করে নেয়া উচিত ।
৩। দীন ও ঈমানের হিফাযতের জন্য প্রয়োজনে হিজরত করতে হবে।
৪ । সকল কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হওয়া অপরিহার্য।
৫। শরীয়ত বিরোধী কোন কাজ ভাল নিয়তেও করা জায়েয নয় ।


-সংকলিত ও ঈষৎ পরিমার্জিত।

বৃহস্পতিবার, ৯ মার্চ, ২০২৩

বইনোট: ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক | লেখক: খুররম জাহ মুরাদ

ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক

খুররম জাহ্ মুরাদ

☆ লেখক পরিচিতি:
- নাম : ইঞ্জিনিয়ার খুররম জাহ্ মুরাদ
- পিতার নাম : মঞ্জুর আলী মুরাদ
- মাতার নাম : বেগম আনতুল হাই
- ১৯৩২ সালের ভারতের মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভূপালে
MED ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, করাচী থেকে গ্রাজুয়েশন
- যুক্তরাষ্ট্রের ভিনেটা ইউনিভার্সিটি থেকে সিভিলে পোস্ট গ্রাজুয়েশন
- ইসলামী জমিয়তে তালাবা, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন
- ১৯৫৭ সালে ACE (Associate Council Engineer) এর এমডি হিসেবে বাংলাদেশে আসেন
- ১৯৬০-৭০ পর্যন্ত তিনি ঢাকা মহানগরী জামায়াতের আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন
- ১৯৭০ সালে লন্ডনের দাওয়াতুল ইসলাম ট্রাস্টে যোগদান করেন
- কাবা শরীফের সম্প্রসারণ কাজে তিনি আত্মনিয়োগ করেন এবং তার নামে কাবা শরীফে বাবে খুররম মুরাদ নামে একটি দরজা আছে
- ১৯৯৬ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের নায়েবে আমীরের দায়িত্ব পালন করেন।


☆ প্রাথমিক কথাঃ

    ঐতিহাসিকভাবে একথা সত্য যে, প্রাক ইসলামী যুগে মানুষে মানুষে কোন ভাতৃত্বের বন্ধন ছিলনা। বিভিন্ন গোত্র, দল, খান্দানে বিভক্ত ছিল। ছিল পরস্পরের রক্ত পিপাসু ও জানমাল ইজ্জতের দুশমন। এমতবস্থায় শত্রুতা ভুলে সুসম্পর্ক ও ভ্রাতৃত্বের মহান শিক্ষা দিয়েছিল হযরত মুহাম্মদ (সা)।
    যার প্রভাবে সর্বকালের সবচেয়ে বিশৃঙখল জাতি সর্বশ্রেষ্ট জাতিতে রূপান্তরিত হতে পেরেছিল। প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল একটি আদর্শ রাষ্ট্র, আর তা সম্ভব হয়েছিল কেবলমাত্র পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বের সুস্পষ্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। সুতরাং বলা যায় ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য এমন একটি ঔষধ তথা পারস্পরিক সুসম্পর্ক ও ভ্রাতৃত্ববোধের জাগরণ অতিব প্রয়োজন।


☆ মৌলিক আলোচনাঃ

প্রকৃত পক্ষে আলোচ্য বিষয় হচ্ছে তিনটি

১. প্রয়োজনীয় গুনাবলী
২. ধ্বংস ও দুর্বলকারী উপাদান এবং তা থেকে বাঁচার উপায়
৩. যে সমস্ত গুণাবলী সম্পর্ককে মজবুত ও উন্নত করে


☆ বইটির ৪টি ভাগে রয়েছেঃ
    ১. পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তি, তার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
    ২. চরিত্রের প্রয়োজনীয়তা ও তার মৌলিক বৈশিষ্ট্য
    ৩. সম্পর্ককে বিকৃতি থেকে রক্ষা করার উপায়
    ৪. সম্পর্ককে দৃঢ়তর করার পন্থা।



১. পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তি তার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

১. সম্পর্কের ভিত্তি ও মর্যাদা
(ক) সম্পর্কের প্রকৃতি
(খ) ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের সম্পর্ক একটি আদর্শিক সম্পর্ক
(গ) এটা কোন হালকা বা ঠুনকো সম্পর্ক নয়। গভীর ও প্রগার ভালবাসা এবং স্থিতিশীলতার সমন্বয়ে রচিত।

২. ভ্রাতৃত্ব ঈমানের অপরিহার্য দাবি
(ক) পারস্পরিক সম্পর্কের উপর গোটা জীবন ওতপ্রোত ভাবে জড়িত এজন্য ঈমান মুমিনদেরকে সকল মানুষদের সাথে সাধারণ ভাবে এবং পরস্পরের সাথে বিশেষ ভাবে সম্পর্ক স্থাপনের নির্দেশ দেয়।
(খ) আর এ সম্পর্ককে আদল ও ইহসানের উপর প্রতিষ্ঠা করার জন্য একটি পূর্নাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার দিক নির্দেশনা দেয়।

৩. বিশ্বব্যাপী ইসলামী বিপ্লবের জন্য ভ্রাতৃত্ব অপরিহার্য
(ক) ঈমানের লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্বব্যাপী ইসলামী বিপ্লব সৃষ্টি
(খ) বিপ্লবের জন্য একটি সুদৃঢ়, স্থিতিশীল ও ভ্রাতৃত্বসূলভ সম্পর্ক অপরিহার্য।
(গ) এ সম্পর্কের প্রকৃতি হবে শীসা ঢালা প্রাচীরের ন্যায়।

৪. ভ্রাতৃত্বের দাবি তার গুরুত্ব ও ফলাফল
(ক) ভ্রাতৃত্বের দাবি হচ্ছে সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্ক, বন্ধুত্ব, রহমত ও ভালবাসার সম্পর্ক
(খ) ভ্রাতৃত্বের গুরুত্ব, রাসুলের বানী-“তোমরা ততোক্ষণ পর্যš Íমুমিন হবে না, যতোক্ষণ না পরস্পরকে ভালোবাসবে” (মুসলিম-আবু হুরায়রা)
(গ) ভ্রাতৃত্বের ফলাফল-  ঈমান পূর্ন হবে  আখেরাতের সফলতা

৫. আখিরাতে ভ্রাতৃত্বের সুফল
(ক) আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপন কারীরা আরশের ছায়াতলে থাকবেন
(খ) সম্পর্ক স্থাপন কারীদের জন্য নূরের মিম্বর তৈরি হবে।

৬. পারস্পরিক সম্পর্কের গুরুত্ব
(ক) কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য এক ঈমানের ভিত্তিতে পারস্পরিক ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপন ইসলামী আন্দোলনের জন্য গুরুত্বপূর্ন
(খ) পারস্পরিক সম্পর্কের বিকৃতি গোটা দ্বীনকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়।


২. চরিত্রের প্রয়োজনীয়তা ও তার মৌলিক বৈশিষ্ট্য

১. কল্যান কামনা-
কল্যাণ কামনার প্রকৃতি মানদন্ড হচ্ছে যে, মানষ নিজের জন্য যা পছন্দ করবে তার ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করবে। তাই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীগণ পরস্পরকে ভালবাসবে এবং কল্যাণ কামনা করবে যে রুপ সহোদর ভাইয়ের কল্যাণ কামনা করা হয়।

২. আত্মত্যাগ
একজন মুসলমান তার ভাইয়ের জন্য শুধু নিজের পছন্দই করেনা বরং নিজের উপর অগ্রাধিকার দেয়। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীগণ নিজের প্রয়োজনকে মুলতবী রেখে অপরের প্রয়োজন মেটাবেন।

৩. আদল (সুবিচার)
ক) লোকদের অধিকারের ক্ষেত্রে সমতা ও ভারসাম্য কজায় রাখা
খ) প্রত্যেকের অধিকার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে।

৪. ইহ্সান (সদাচরণ)
ক) ইহসান অর্থ হল সম্পর্কের সৈান্দর্য ও পূর্নতা দান করা।
খ) সম্পর্কের ক্ষেত্রে আদল যদি অপ্রীতি ও তিক্ততা থেকে রক্ষা করে তবে ইহসান তাতে মাধুর্য ও সম্প্রীতি সৃষ্টি করে।

৫. রহমত
ক) রহমতের এ গুণই ব্যক্তিকে জনপ্রিয় করে তোলে এবং সাধারণ লোকদেরকে তার প্রতি আকৃষ্ট করে।
খ) রাসুলের বানী- “যারা রহম করে, রহমান তাদের প্রতি রহম করেন। তোমরা দুনিয়াবাসীর প্রতি রহম করো, যেন আসমানবাসী তোমাদের রহম করেন।”

৬. মার্জনা
ইসলামী আন্দোলনের কর্মীগণ পরস্পর একে অন্যের দোষত্রুটি মার্জনা করবে। কারণ যারা দুনিয়ার জীবনে ক্ষামা করে দেবেন। তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। তাদেরকে আল্লাহতায়ালার ক্ষমা ও মার্জনার তীতি গ্রহণ করা উচিৎ।

৭. নির্ভরতা
মোমিনগন একে অন্যের উপর যেন নির্ভর করতে পারে। অর্থাৎ তার সমস্ত গোপন বিষয়াদির ব্যাপারেও পূর্ণ নিশ্চয়তার সাথে প্রকাশ করতে পারে অন্যের কাছে। আর এটাই হল ভ্রাতৃত্বের দাবি।

৮. মূল্যোপলব্ধি
মানুষ তার এ সম্পর্কের গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে এতটুকু অবহিত হবে, যাতে করে এর সঠিক মূল্যটা সে উপলব্ধি করতে পারে। আর এটা তখনি সম্ভব হবে যখন সে কোন μমেই তার এ সম্পর্ক ছিন্ন করতে সম্মত হবেনা।


৩. সম্পর্ককে বিকৃতি থেকে রক্ষা করার উপায়

১. অধিকারে হস্তক্ষেপ-
একজন মুসলমানের কর্তব্য হচ্ছে তার ভাইয়ের অধিকারের মধ্যে কোন একটি অধিকার ও হরণ করার অপরাধ যাতে সে অপরাধ না হয় তার প্রতিকারের দিকে দৃষ্টি রাখা। রাসুল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি কসম খেয়ে কোন মুসলমানের হক নষ্ট করেছে, আল্লাহ নিঃসন্দেহে তার প্রতি জাহান্নামকে অনিবার্য এবং জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন।

২. দেহ ও প্রানের নিরাপত্তা-
কোন মুসলিম ভাইয়ের দেহ প্রাণের নিরাপত্তার জন্য একজন অন্যের জন্য সর্বদা প্রস্তত থাকবে। । রাসুল (সা.) বলেন, “মুসলমানকে গালি দেয়া ফাসেকী আর তার সঙ্গে লড়াই করা হচ্ছে কুফরী।” (বুখারী, মুসলিম)

৩. কটুভাষা ও গালাগাল -
কোন ভাইকে সাক্ষাতে গালাগাল করা তার সঙ্গে কটু ভাষায় কথা বলা এবং ঠাট্রা বিদ্রুপ করা সম্পূর্ন নাজায়েজ। রাসুল (সা.) বলেন, “কোন কটুভাষি ও বদ স্বভাব বিশিষ্ট ব্যক্তি জান্নাত প্রবেশ করবেনা।”

৪. গীবত -
গীবত হচ্ছে মানুষ তার ভইয়ের সামনে নয় বরং তার পেছনে বসে নিন্দা করা।

৫. ছোগলখোরী -
গীবতের একটি বিশেষ রূপ হল ছোগলখোরী। রাসুল (সা.) বলেন, “ছোগলখোর জান্নতে যাবেনা।”

৬. শরমিন্দা করা .-
আপন ভাইকে তারা সাক্ষাতে বা অন্য লোকের সামনে তার দোষত্রুটি জন্য লজ্জা দেওয়া এবং এভাবে অপমাননা করা শরমিন্দার অন্তর্ভুক্ত। রাসুল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি তার ভাইকে তার গুনাহের জন্য লজ্জা দিল তার দ্বারা সেই গুনাহ কাজ না হওয়া পর্যন্ত সে মৃত্যুবরণ করবেনা।” রাসুল (সা.) আরো বলেন, “তাদেরকে কোন দোষ বা গুনাহের লক্ষ্য বানিয়ে শরমিন্দা ও অপমানীত করেনা।”

৭. ছিদ্রান্বেষণ -
কোন ভাইয়ের দোষত্রুটি খুজে বেড়ানোই ছিদ্রান্বেষণ করা। । রাসুল (সা.) বলেন, “মুসলমানদের দোষ খুঁজে বেড়িয়োনা। কারণ, যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন দোষ ও গুনাহ খুঁজতে থাকে, আল্লাহতার গোপন দোষ ফাঁস করতে লেগে যান। আর আল্লাহযার দোষ প্রকাশ করতে লেগে যান, তাকে তিনি অপমান করেই ছাড়েন-সে তার ঘরের মধ্যেই লুকিয়ে থাকুক না কেন।”

৮. উপহাস করা -
ঠাট্রা বিদ্রুপের মাধ্যমে একে অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করা। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, “হে ঈমানদারগণ, কোন সম্প্রদায় অপর কোনো সম্প্রদায়কে ঠাট্রা করোনা, সম্ভবতঃ সে তার চাইতে শ্রেষ্ঠ হবে। আর কোন নারী অপর কোন নারীকে ঠাট্রা করো না, সম্ভবত সে শ্রেষ্ঠ হবে তার চাইতে।” (সুরা হুজরাত ১১)

৯. তুচ্ছ জ্ঞান করা .-
অপর ভাইকে তুচ্ছ জ্ঞান করা মারাত্মক গুনাহের কাজ। রাসুল (সা.) বলেন, “কোন মুসলমান অপর মুসলমানকে রা অপমান করবে আর না তুচ্ছ জ্ঞান করবে।”

১০. নিকৃষ্ট অনুমান .-
প্রত্যক্ষ জ্ঞান ছাড়া কোন মুসলমান যদি তার ভাই সম্পর্কে অহেতুক সন্দেহ করে তবে তাহাই নিকৃষ্ট অনুমান। অনুমান করে কথা বলা গুনাহের কাজ। এ সম্পর্কে আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, “হে ঈমানদারগন, বহু অনুমান থেকে তোমরা বেঁচে থাকো, নিঃসন্দেহে কোন-কোন অনুমান হচ্ছে গুনাহ।” (সুরা হুজরাত ১২)
রাসুল (সা.) বলেছেন, “তোমরা অনুমান পরিহার করো, কেননা অনুমান হচ্ছে নিকৃষ্টতম মিথ্যা কথা।” (বুখারী,মুসলিম; আবু হুরায়রা রা.)

১১. অপবাদ .-
গীবতের চেয়েও মারাত্মক অপরাধ হল অপরের কাছে এক ভাই সম্পর্কে মিথ্যা বলা যে দোষ এর মধ্যে সে নেই। এ সম্পর্কে আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, “যারা মুসলমান পুরুষ ও মুসলমান নারীর প্রতি মিথ্যা অপবাদ চাপিয়ে কষ্ট দেয়, তারা আপন মাথায় ‘বুহ্তান’ ও স্পষ্ট গুনাহ চাপিয়ে নিলো।” (সুরা আহযাব. ৫৮)

১২. ক্ষতিসাধন .-
মুমিনদের লক্ষ্য রাখা অতিব প্রয়োজন যে, তার দ্বারায় যেন অন্যের ক্ষতি সাধন না হয়। হাদিসে ক্ষতি সাধন কারীকে অভিশপ্ত বলা হয়েছে।

১৩. মনোকষ্ট .-
মুসলমানদের অবশ্যই চলা-ফেরা, কথা-বার্তায় সতর্ক থাকতে হবে যে, তার দ্বারা যেন কেউ মনোকষ্ট না পায়। কারণ এর দ্বারা সম্পর্ক নষ্ট হয়।

১৪. ধোকাঁ দেওয়া .-
কথা বার্তা বা লেনদেনে আপন ভাইকে ধোঁকা দেয়া বা মিছে কথাবলা সম্পর্কে মুসলমানদেরকে অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, “সব চাইতে বড় খিয়ানত হচ্ছে এই যে, তুমি তোমার ভাইকে কোনো কথা বললে সে তোমাকে সত্যবাদী মনে করলো; অথচ তুমি তাকে মিথ্যা কথা বললে।” (তিরমিযী; সুফিয়ান বিন আসাদ)

১৫. হিংসা .-
হিংসা বা পরশ্রীকাতরতা এক ঘৃণ্য ব্যাধি। এই মারাত্মক ব্যাধির প্রভাবে লোকদের ঈমান বিপন্ন হয়ে পড়ে। হিংসার মূলে কতগুলো জিনিস থাকে। যেমন বিদ্বেষ, শত্রুতা, ব্যক্তিগত অহমিকা, অপরের সর্ম্পকে হীনমন্নতা অপরকে অনুগত করার প্রেরনা ইত্যাদি। রাসুল (সা.) বলেছেন, “তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থাক । কারন আগুন যেমন লাকড়িকে খেয়ে ফেলে, হিংসা ঠিক তেমনি নেকী ও পুণ্যকে খেয়ে ফেলে।”


৪. সর্ম্পকে দৃঢ়তর করার পন্থা

১. মান ইজ্জতের নিরাপত্তা .-
এক মুসলমানের জন্য আরেক মুসলমানের মান ইজ্জতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এটা সম্ভব হলে আন্তরিকতা গড়ে উঠে।

২. দুঃখ কষ্টে অংশগ্রহণ .-
মুমিণগন হচ্ছে একটি দেহ। দেহের এক অংশে যদি আঘাত প্রাপ্ত হয়। তবে অন্য অংশ ও তেমন কষ্ট অনুভব করে। ঠিক তেমনি এক মুসলমান অপর মুসলমানের দুঃখ কষ্টে শরীক থাকবে।

৩. সমালোচনা ও নসীহত .-
নিজের দোষ একটি নিজের চোখে ধরা পড়েনা। তাই মুমিনগন একে অপরকে গঠন মুলক সমালোচনা ও নছিহতের মাধ্যমে সংশোধন করতে হবে। কারণ হাদীসে বলা হয়েছে এক মুসলমান অপর মুসলমানের আয়না স্বরূপ।

৪. মোলাকাত .-
একতা সত্য যে পরস্পর অধিক সাক্ষাতের ফলেই এক জন মানুষের সাথে আরেক জন মানুষের বন্ধন টিকে থাকে। সুতারাং মোলাকাতের গুরুত্ব অপরিসীম।

৫. রুগ্ন ভাইয়ের পরিচর্যা .-
কোন ব্যক্তি যদি রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে তবে তার সেবা শুশ্রুসার প্রয়োজন হয়। ফলে বন্ধুত্বের বন্ধন আরো দৃঢ হয়। রাসুল (সা.)বলেন “যখন সে রোগাক্রান্ত তাকে সেবা কর ”।

৬. আবেগের বহি.প্রকাশ .-
কোন মানুষের মধ্যে কারো প্রতি প্রেম ভালবাসা থাকলে তা আবেগের মাধ্যমে বহি.প্রকাশ পাবে। এভাবে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে।

৭. প্রীতি ও খোশ-মেজাজের সাথে মুলাকাত .-
পরিচ্ছন্ন মন দিয়ে সাক্ষাতে কথা বলার সময় মিষ্টি কথা বলার এবং ঠাট্রা বিদ্রুপ ও উপহাস থেকে দূরে থাকা। রাসুল (সা.) বলেছেন, “নেক কাজের ভেতর কোনোটাকে তুচ্ছ জ্ঞান করো না, যদি তা আপন ভাইয়ের সাথে তোমার হাস্যোজ্জ্বল সাক্ষাৎ করার তূল্যও হবে।” (মুসলিম; আবু যর রা.)

৮. সালাম .-
পারস্পরিক সর্ম্পক বৃদ্ধিতে সালামের বিকল্প নেই। সালামের মাধ্যমে অন্ধকার দূরীভূত হয়। এজন্য রাসুল (সা.) বলেন, “পারস্পর সালাম বিনিময় কর।”

৯. মুছাফাহ .-
মুছাফাহর মাধ্যমে পারস্পরিক ভালোবাসা ও হৃদয়াবেগ প্রকাশের দ্বিতীয় মাধ্যম। অর্থাৎ সালামের গোটা ভাবধারাই এদ্বারা পূর্নতাপ্রাপ্ত হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, “মুছাফাহার দ্বারা তোমাদের পারস্পরিক সালামের পূর্ণতাপ্রাপ্তি ঘটে।” (তিরমিযী; আবু উমালাহু রা.)

১০. উৎকৃষ্ট নামে ডাকা .-
কাউকে তার পছন্দনীয় ভাষায় সম্বোধন করলে সে খুশী হয়। আন্তরিকতা চলে আসে। পক্ষান্তরে উপনামে বা বিকৃত নামে ডাকলে মন খারাপ করে সম্পর্ক নষ্ট হয়।

১১. ব্যক্তিগত ব্যাপারে ঔৎসুক্য .-
আন্তরিক ভালোবাসার একটি অন্যতম তাকিদ হচ্ছে, নিজের ব্যক্তিগত ব্যাপারের ন্যায় আপন ভাইয়ের ব্যক্তিগত ব্যাপারেও ঔৎসুক্য পোষণ করা। রাসুল (সা.) বলেছেন, “এক ব্যক্তি যখন অন্য ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে, তখন তার কাছে থেকে তার নাম, তার পিতার নাম এবং তার গোত্র-পরিচয় জিজ্ঞেস করে নিবে। কারণ এরদ্বারা পারস্পরিক ভালোবাসার শিকড় অধিকতর মজবুত হয়।” (তিরমিযী, ইয়াজিদ বিন নাআমাহ রা.)

১২. হাদীয়া .-
সম্পর্ক বৃদ্ধির অতি উত্তম পন্থা হল মাসে মাসে উপহার দেওয়া। রাসুল (সা.) বলেছেন, “একে অপরকে হাদিয়া পাঠাও, এরদ্বারা পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে এবং হৃদয়ের দূরত্ব ও শত্রুতা বিলীন হয়ে যাবে।” (মুয়াত্তা মালিক; আত্বা)

১৩. শোকর-গোজারী .-
অপরের ভালোবাসা উপলব্ধিকে প্রকাশ করার জন্যে শোকর-গোজারী হচ্ছে একটি উত্তম পন্থা। রাসুল (সা.) বলেছেন, “কেউ যখন তাঁর খেদমতে কিছুপেশ করতে তিনি শুকরিয়ার সাথে তা গ্রহণ করতেন এবং কেউ তার কোন কাজ করে দিলে সেজন্যে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেন।

১৪. একত্রে বসে আহার .-
আন্তরিকতা, ভালবাসা প্রকাশের একটি চমৎকার পন্থা হল একত্রে বসে আহার করা। নবী কারীম (সা.)-এর কাছে কোন খাবার জিনিস থাকলে অথবা কোথাও থেকে কিছু আসলে তিনি গোটা মজলিসকে তাতে শরীক করতেন।

১৫. দোয়া .-
একজন আরেকজনের জন্য দোয়া করলে যদি সে ব্যক্তি তা দেখতে পায় তবে সে মুগ্ধ হয়। তভাবে আলাহর কাছে প্রার্থনার মাধ্যমে সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়।

১৬. সুন্দরভাবে জবাব দেয়া .-
পারস্পরিক কথা বার্তায় কোন প্রশ্নের জবাব সুন্দর ভাবে দেয়া যায়। রাসুল (সা.) বলেছেন, “দুইজন প্রেমিকের মধ্যে সেই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ, যে তার ভাইয়ের প্রতি অধিক ভালোবাসা পোষণ করে।”

১৭. আপোষ রফা এবং অভিযোগে খন্ডন .-
কোন ব্যাপারে মনো মালিন্য হলে আপোষে করে নেয়া এবং অভিযোগ খন্ডন করা। অভিযোগ থেকে বাচতে হলে করনীয়-
প্রথমতঃ অভিযোগের সুযোগ না দেওয়া,
দ্বিতীয়তঃ দরাজদিল হওয়া উচিত,
তৃতীয়তঃ অভিযোগ লালন না করে তার ভাইয়ের নিকট প্রকাশ করা উচিত,
চতুর্থতঃ অভিযোগে অসন্তুষ্ট না হয়ে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত,
পঞ্চমতঃ অভিযোগ জানবার সঙ্গে সঙ্গেই আত্মসংশোধনের চেষ্টা করা,
ষষ্ঠতঃ অভিযোগ স্বীকার করলে তাকে ক্ষমা করে দিতে কোনরূপ কার্পন্য না করা।

১৮. প্রভুর কাছে তাওফিক কামনা .-
বন্ধুত্ব, ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসার সম্পর্ক হচ্ছে ঈমানের একটি বুনিয়াদী শর্ত। একজর ভাই আরেকজন ভাইয়ের জন্য আলাহর নিকট বিনীতভাবে মুনাজাত করা উচিত। আলাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, “হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে এবং আমাদের সেই সব ভাইকে ক্ষমাদান কর যারা আমাদের পূর্বে ঈমান এনেছে এবং আমাদের দিলে ঈমানদার লোকদের জানে কোন হিংসা ও শত্রুতাভাব রেখো না। হে আমদের প্রভু! তুমি বড়ই অনুগ্রহ সম্পন্ন এবং করুণাময়।” 

মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

দারসুল হাদীস: হযরত আবদুর রহমান ইবনে সামুরা রা. বর্ণিত নেতা নির্বাচন সংক্রান্ত হাদীস

দারসুল হাদীস: আবদুর রহমান ইবনে সামুরা রা. বর্ণিত নেতা নির্বাচন সংক্রান্ত হাদীস

দারসুল হাদীস: 
হযরত আবদুর রহমান ইবনে সামুরা রা. বর্ণিত নেতা নির্বাচন সংক্রান্ত হাদীস

আরবী ইবারতঃ

عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ ابْن سَمُرَةَ (رض) قَالَ قَالَ لِي رَسُوْلُ اللَّهِ (صلعم) لَا تَسْئل الْإِمَارَةَ فَإِنَّكَ إِنْ أَعْطِيْتَهَا عَنْ مُسْئَلَةٍ وكُلَتْ إِلَيْهَا وَإِنْ أَعْطِيتَهَا عَنْ غَيْر مَسْئَلَةٍ أُعِنْتَ عَلَيْهَا. (بخاری، مسلم)

বাংলা অনুবাদঃ হযরত আবদুর রহমান ইবনে সামুরা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা) আমাকে বললেন : তুমি নেতৃত্বের পদপ্রার্থী হবে না । কারণ, তুমি যদি তা চেয়ে নাও তবে তোমাকে ঐ পদের বোঝা দেয়া হবে (দায়িত্ব পালনে তুমি আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না)। আর যদি প্ৰাৰ্থনা ছাড়াই তোমাকে ঐ পদ দেয়া হয়, তবে তুমি ঐ পদের দায়িত্ব পালনে (আল্লাহর) সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। (বুখারী, মুসলিম)


শব্দার্থঃ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ ابْنِ سَمُرَةَ (رض) : হযরত আবদুর রহমান ইবনে সামুরা (রা) হতে বর্ণিত। قَالَ : সে বলল। لِي : আমাকে । لَا تَسْئل : তুমি চেয়ে নেবে না। الْإِمَارَةَ : নেতৃত্ব। فَإِنَّكَ إِنْ أَعْطِيْتَهَا : নিশ্চয়ই তোমাকে উহা দেয়া হবে। عَنْ مَّسْئَلَةٍ : তুমি চাওয়ার কারণে । وَكَلَتْ إِلَيْهَا : তোমাকে ঐ পদের বোঝা চাপানো হবে। غَيْر مَسْئَلَةٍ : প্রার্থনা ব্যতীত। ُعِنْتَ عَلَيْهَا : তাতে তুমি আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত হবে ।

গ্রন্থ পরিচিতিঃ আলোচ্য হাদীসখানা বুখারী ও মুসলিম শরীফ থেকে চয়ন করা হয়েছে। বুখারী ও মুসলিম শরীফের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা:
হাদীস বিশারদগণ হিজরী তৃতীয় শতাব্দীর প্রথমার্ধে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের বিক্ষিপ্ত হাদীসসমূহ ‘মুসনাদ' আকারে লিপিবদ্ধ করেন। পরবর্তীকালে মুহাদ্দিসগণ যাচাই-বাছাই করে (সহীহ) বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থ লিখার কাজে হাত দেন। এর ফলশ্রুতিতে হিজরী তৃতীয় শতাব্দীর মাঝামাঝি ও শেষার্ধে বিশ্ব বিখ্যাত সিহাহ সিত্তা' বা ছয়খানি বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থ জগতবাসীর কাছে উপস্থাপন করা হয় । এ গ্রন্থগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা অধিক বিশুদ্ধতম অমর হাদীস গ্রন্থ হচ্ছে ‘সহীহ্ আল-বুখারী'।
☆সহীহ্ আল-বুখারী: 
ইমাম বুখারী (র) এ গ্রন্থের প্রণেতা। তাঁর পূর্ণ নাম হলো মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল ইবনে ইবরাহীম ইবনে মুগীরা ইবনে বারদিযবাহ আল-যু’ফী আল-বুখারী। তিনি ১৯৪ হিজরী ১৩ই শাওয়াল বুখারা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অসাধারণ স্মৃতিশক্তির অধিকারী ছিলেন। অতি অল্প বয়সে পবিত্র কুরআনকে মুখস্থ করেন। তিনি হাফিযে হাদীস ছিলেন । তিনি নিজেই বলেন : “তিন লক্ষ’ হাদীস তাঁর মুখস্থ ছিল। তাছাড়া তিনি ছয় লক্ষ হাদীস থেকে যাচাই-বাছাই করে ১৬ বছরে এ গ্রন্থখানি সংকলন করেন। যার মধ্যে ৭,৩৯৭ তাকরারসহ ও তাকরার ছাড়া ২,৫১৩টি হাদীস স্থান পেয়েছে। হাদীস সংকলনের পূর্বে ইমাম বুখারী (র) গোসল করে দু'রাকাত সালাত আদায় করে ইসতিখারা করার পর এক একটি হাদীস লিপিবদ্ধ করেছেন। সকল মুহাদ্দিসগণের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মতে, সকল হাদীস গ্রন্থের মধ্যে বুখারী শরীফের মর্যাদা সবচেয়ে বেশী ।
☆সহীহ্ আল-মুসলিম:
সহীহ্ আল-মুসলিম গ্রন্থের প্রণেতা হলেন ইমাম মুসলিম (র), যার পূর্ণ নাম আবুল হোসাইন মুসলিম বিন হাজ্জাজ আল কুশাইরী আন-নিশাপুরী। তিনি খুরাসানের প্রসিদ্ধ শহর নিশাপুরে ২০৪ হিজরী ২৪শে রজব জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবকাল থেকেই তিনি হাদীস শিক্ষায় আত্মনিয়োগ করেন। ২১৮ হিজরীতে ১৪ বছর বয়সে হাদীস সংগ্রহের জন্য তিনি হিজায, ইরাক, মিশর, বাগদাদ, সিরিয়া ইত্যাদি মুসলিম জাহানের ইলম শিক্ষার কেন্দ্রভূমিসমূহে ভ্রমণ করেন। তিনি সে কালের জ্ঞানসাগর ও যুগ শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ইমাম বুখারীর সান্নিধ্য লাভ করেন। ইমাম মুসলিম (র) সরাসরি ওস্তাদগণের থেকে শ্রুত তিন লক্ষ হাদীস হতে যাচাই-বাছাই করে (তাহযীবুল আসমা ১০ম খণ্ড) দীর্ঘ ১৫ বছর সাধনা ও গবেষণা করে এ শ্রেষ্ঠ গ্রন্থখানি সংকলন করেন । এতে তাকরারসহ হাদীস সংখ্যা ১২,০০০ । তাকরার বাদে হাদীস সংখ্যা ৪,০০০ মাত্র। (তাদরীবুর রাবী) সমসাময়িক মুহাদ্দিসগণ এ গ্রন্থকে বিশুদ্ধ ও অমূল্য সম্পদ বলে উল্লেখ করেছেন। আজ প্রায় বার শত বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও সহীহ্ মুসলিমের সমমানের কোন গ্রন্থ রচিত হয়নি।
বুখারী ও মুসলিম শরীফকে একত্রে ‘সহীহাইন’ বলা হয়।

রাবী পরিচিতিঃ

হযরত আবদুর রহমান ইবনে সামুরা (রা)। নাম : আবদুর রহমান । পিতার নাম : সামুরা। নসবনামা : আবদুর রহমান ইবনে সামুরা ইবনে হাবীব ইবনে আবদে শামস ইবনে আবদে মানাফ ইবনে কুসাই । কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন রাসূলের বংশধর। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তার নাম ছিল আবদুল কাবা । ইসলাম গ্রহণের পর রাসূল (সা) তার নাম রাখেন আবদুর রহমান । তিনি ছিলেন একজন আরব সেনাপতি । ইসলাম গ্রহণের পর তিনি আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠা ও প্রসারে তাঁর বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হন। খলীফা উসমানের (রা) খিলাফতকালের পরবর্তী বছরগুলোতে সিজিস্তানে সর্বপ্রথম সেনাপতিরূপে নিযুক্ত হন। তিনি দক্ষতার সাথে যারাজ ও যামীন-ই দাওয়ার জয় করেন এবং কিরমান এর শাসনকর্তার সাথে সন্ধি স্থাপন করেন। পরবর্তীতে তাঁকে সিজিস্তানের শাসনভার অর্পণ করা হয় । আমীর মুয়াবিয়া (রা) যিয়াদকে বসরার ওয়ালী নিযুক্ত করার পর আবদুর রহমান ইবনে সামুরাকে ক্ষমতা থেকে অপসারিত করেন। তিনি ফিরে আসেন এবং ৬৭০ সালে বসরায় ইনতিকাল করেন । পরবর্তীকালে তার বংশধরগণ বসরায় একটি শক্তিশালী ও প্রভাবশালী গোত্রের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন । (আল-বালাযুরী ফুতহুল বুলদান )

হাদীসের ব্যাখ্যাঃ
ইসলামী রাষ্ট্রে কোন পদে প্রার্থী হওয়া বা নিজকে প্রার্থীরূপে দাঁড় করানোর অধিকার ইসলাম কাউকে দেয়নি। কারণ নেতৃত্ব চেয়ে নেওয়ার মত খারাপ প্রবণতা লোভ থেকে সৃষ্টি হয়। লোভ মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। এজন্যেই রাসূল (সা) বলেছেন, নেতৃত্ব চেয়ে নিলে তাতে আল্লাহর রহমত ও সাহায্য পাওয়া যায় না। আর আল্লাহর রহমত ও সাহায্য ছাড়া কোন কাজ সুচারুরূপে আঞ্জাম দেওয়া মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় । সাধারণ কাজের চেয়ে নেতৃত্বের দায়িত্ব বেশী কঠিন। প্রার্থনা ব্যতীত যে নেতৃত্ব লাভ হয়, তাতে আল্লাহর রহমত থাকে । সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে আল্লাহ তা'য়ালা এই নেতাকে সাহায্য করেন, ফলে সহজেই তিনি নিজের দায়িত্ব পালন করতে পারেন। আল্লাহর রাসূল (সা) পদপ্রার্থীদেরকে কোন পদের উপযুক্ত মনে করতেন না এবং তাদেরকে সে পদে অধিষ্ঠিত করতেন না। এ সত্যতা আমরা নাসায়ী শরীফের একটি হাদীসে দেখতে পাই যা হযরত আবু মূসা আশয়ারী (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা)-এর নিকট আগমন করি, আমার সাথে আশয়ারী গোত্রের দু'ব্যক্তি ছিলেন। তারা রাসূলের (সা)-এর নিকট রাষ্ট্রীয় পদে চাকুরী প্রার্থনা করেন, কিন্তু রাসূল (সা) তাদেরকে বলে দেন, যারা নিজেরা রাষ্ট্রীয় পদের নেতৃত্ব চায় তাদেরকে আমরা নেতৃত্ব দেই না বা নেতৃত্ব লাভে সাহায্যও করি না । অতঃপর রাসূল (সা) আমাকে ইয়ামেনে গভর্নর করে পাঠালেন অপর আর একটি হাদীসে রাসূল (সা) বলেন :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ (رض) قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ (صلعم) تَجِدُونَ مِنْ خَيْرٍ النَّاسِ أَشَدُّهُمْ كَرَاهِيَةً لِهَذَا الْأمْر حَتَّى يَقَعَ فِيْهِ. (بخاری، مسلم)
“হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। রাসূল (সা) বলেছেন : “যারা পদকে ভীষণভাবে অপছন্দ করে । অতঃপর যখন তাতে সংশ্লিষ্ট হয়, তখন তোমরা তাদেরকে সর্বোত্তম লোক হিসেবে পাবে।” (বুখারী, মুসলিম)

ইসলামের দৃষ্টিতে নেতৃত্বের পরিবর্তনঃ

প্রত্যেক মুসলিম জনগোষ্ঠির ওপর তাদের নেতা বা রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচন করা ফরয। এ প্রসঙ্গে ইমাম জুরযানী বলেন :
أَنْ نَصَبَ الْإِمَامِ مِنْ آتِمِّ مَصَالِحِ الْمُسْلِمِينَ وَاعْظَمِ مَقَاصِدِ الدِّينِ. “ইমাম বা রাষ্ট্রপ্রধান নিয়োগ মুসলমানদের কল্যাণ সাধনের পূর্ণতম ব্যবস্থা এবং দীন ইসলামের সর্বোচ্চ লক্ষ্যে সর্বাধিক মাত্রায় বাস্তবায়ন।”

আকাইদে নাসাফী গ্রন্থকার বলেন :
“মুসলিম জনগোষ্ঠির জন্য একজন ইমাম অবশ্যই থাকতে হবে। ইহা অপরিহার্য। তিনি আইন কানুনসমূহ কার্যকর করবেন, শরীয়ত নির্দিষ্ট হৃদ জারি করবেন, বিপদ-আপদের সকল দিক বন্ধ করবেন, বহিঃশত্রুর আক্রমণ বন্ধের লক্ষ্যে সেনাবাহিনীকে সুসজ্জিত ও সদা প্রস্তুত করে রাখবেন। যাকাত গ্রহণ ও বণ্টন করবেন, বিদ্রোহী, দুষ্কৃতিকারী, চোর, ঘুষখোর, সন্ত্রাসী ও ডাকাত-ছিনতাইকারীদের কঠিন শাসন ও দমন করবেন। জুম'আ ও ঈদের সালাতসমূহ কায়েম করবেন, লোকদের ঝগড়া-বিবাদ মীমাংসা করবেন। মানুষের অধিকার প্রমাণের জন্য (বিচার ব্যবস্থা চালু করবেন সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন। অভিভাবকহীন দুর্বল, অক্ষম বালক- বালিকাদের বিবাহের ব্যবস্থা করবেন। জাতীয় সম্পদ জনগণের মধ্যে বণ্টন করে দেবেন। (আকাঈদে নাসাফীঃ ৩৩৮ পৃঃ)

অসৎ নেতৃত্ব পরিবর্তনের উদ্দেশ্য হচ্ছে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা। আর খিলাফত প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর দীনকে প্রতিষ্ঠা করা ।
هِيَ خِلافَةُ الرَّسُوْل فِي إِقَامَةِ الدِّيْنِ.
“নেতৃত্ব হলো দীনকে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপারে রাসূল (সা)-এর উত্তরাধিকারিত্ব।” (কিতাবুল মাওয়াকিফ)
আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠা, উহার প্রচার ও প্রসার এবং মানবতার কল্যাণ সাধনের জন্য সমাজে সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য। তাই সমাজের লোকদেরকে সুসংগঠিত হয়ে অসৎ ও খোদা বিমুখ লোকদের নেতৃত্বকে উৎখাত করে সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল স্তরে ঈমানদার, খোদাভীরু ও যোগ্য লোকদের হাতে সে নেতৃত্ব তুলে দিতে হবে। যখন সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে তখন তোমাদেরকে আল্লাহর দীনের উপর অটল থাকতে হবে। আল্লাহর বাণী :
فَاصْبِرْ لِحُكُم رَبِّكَ وَلاَ تُطِعْ مِنْهُمْ اثِمًا أَوْكَفُورًا. 
“অতঃপর তোমার প্রভুর হুকুম, নির্দেশ ও কর্তৃত্বের উপর অটল, অবিচল হয়ে থাকো, আর তাদের কোন এক একজন পাপিষ্ঠ অবিশ্বাসীর আনুগত্য ও করো না । (সূরা-আদ্-দাহার : ২৪)

اِنَّ اللهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْآمَنَتِ إِلَى أَهْلِهَا.
“হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় আমানত উপযুক্ত ব্যক্তিদের হাতে অর্পণ করার নির্দেশ দিচ্ছেন।” (সূরা-আন্ নিসা : ৫৮)

এ আয়াতের তাফসীরে মুফতী মুহাম্মদ শফী (র) বলেন : রাষ্ট্রীয় যত পদ ও মর্যাদা আছে, সবই আল্লাহর আমানত । এসব পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিরা আমানতদার। রাষ্ট্রীয় পদে নিয়োগের জন্যে যোগ্য ব্যক্তির সন্ধান করা অবশ্য কর্তব্য। রাষ্টীয় পদের সাথে জনগণের অধিকার জড়িত, তাই সেটাও আমানতের অন্তর্ভুক্ত। এসব আমানতের অধিকারী সেসব লোক যারা নিজেদের যোগ্যতা, দক্ষতা ও সমর্থনের দিক থেকে সর্বোত্তম, আর বিশ্বস্ততা ও রাষ্ট্রীয় আমানত রক্ষার দিক থেকে অগ্রগণ্য । এদের ছাড়া কাউকে রাষ্ট্রীয় আমানত অর্পণ করা হলে আমানতের মর্যাদা রক্ষিত হবে না।” (শরীয়তের দৃষ্টিতে ভোট)

আল্লামা সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী (র) বলেন : “বনি ঈসরাঈল সম্প্রদায়ের একটি বড় অপরাধ ছিল তারা তাদের পতনের যুগে দায়িত্বপূর্ণ পদ অযোগ্য, অসৎ, সংকীর্ণমনা, দুশ্চরিত্র, দুর্নীতিপরায়ণ, খিয়ানতকারী ও ব্যভিচারী লোকদের হাতে অর্পণ করেছিল। আর এসব অসৎ নেতৃত্বের কারণে গোটা জাতি অনাচারে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল । (সংক্ষিপ্ত)

অথচ আল্লাহর আদেশ হচ্ছে, “এমন লোকের (নেতৃত্ব) আনুগত্য করো না যার অন্তরকে আমি আমার স্মরণ থেকে গাফিল করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির দাসত্ব করে এবং যার কার্যক্রম উগ্র ও উদাসীন।” (সূরা আল-কাহাফ ২৮)

এ আলোচনা দ্বারা বুঝা গেল যে, যোগ্য লোকদেরকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করা ফরয। আর এ জন্যই অসৎ নেতৃত্ব উৎখাত করে, সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শামিল হওয়া অপরিহার্য।

অনৈসলামিক রাষ্ট্রে নেতা নির্বাচনঃ

যেখানে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত নেই সেখানে কোন ইসলামী দল দেশের সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থী দাঁড় করিয়ে ভোট প্রার্থনা করলে তা জায়েয ৷ কারণ, ইহা জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহর অংশ বিশেষ । আল্লাহর দীন কায়েমের জন্য যখন যে পদ্ধতি অবলম্বন করা প্রয়োজন তা শরীয়তের সীমার মধ্যে থেকে করলে তাতে কোন দোষ নেই । তাছাড়া জনগণের সামনে না আসলে কি করে সৎ ও অসৎ নেতৃত্বের পার্থক্য বুঝতে পারবে । আল্লাহর বাণী : “হে ঈমানদারগণ ! তোমরা সুবিচার প্রতিষ্ঠার পক্ষে শক্ত হয়ে দাড়াও, আল্লাহর জন্য সাক্ষ্যদাতা হয়ে দাড়াও।” (সূরা-নিসা : ১৩৫) “হযরত ইউসুফ (আ) বললেন, আমাকে দেশের যাবতীয় ধন-সম্পদের উপর দায়িত্বশীল বানিয়ে দাও, আমি অধিক সংরক্ষণকারী ও বিষয়টি সম্পর্কে আমি অধিক অবহিত। (সূরা ইউসুফ : ৫৫)

ইহা এক প্রকার জিহাদ যাকে ভোটের জিহাদ বা ভোট যুদ্ধ বলে । এ জিহাদে প্রার্থী হয়ে এবং ভোট দিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে । যার উদ্দেশ্য হবে- !
مَنْ قَاتَلَ لِتَكُونَ كَلِمَةَ اللهِ هِيَ الْعُلْيَا فَهُوَ فِي سَبِيْلِ اللهِ.
“যে আল্লাহর বাণীকে সমুন্নত করার জন্য লড়াই করে সে-ই আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে।” (বুখারী)
কুরআন হাদীসের এ আলোচনা থেকে বুঝা যায় আল্লাহর বাণীকে সমুন্নত রাখার জন্যই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়া একান্ত জরুরী। রাসূল (সা) মদীনায় রাষ্ট্র প্রধান হওয়ায় এবং দেশের সকল কর্তৃত্ব তাঁর হাতে থাকায় আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠা করা সহজ হয়। আর খুলাফায়ে রাশেদা ও তাঁর পদাংক অনুসরণ করেন ।

নির্বাচনে অংশ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তাঃ

যে কোন মুসলিম অধ্যুষিত দেশে দেশ পরিচালনা কিংবা আইন প্রবর্তনের জন্যে নির্বাচনের মাধ্যমে যদি তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তা হলে আল্লাহ তা'য়ালার আইন বাস্তবায়ন ও রাসূল (সা)-এর আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে যোগ্য, সৎ, খোদাভীরু ও আমানতদার লোকদেরকে নির্বাচিত করার জন্য ঐ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানী, সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ব। যদিও বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতি ইসলাম সম্মত নয় তথাপি মুসলিম রাষ্ট্রে ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে নির্বাচন পদ্ধতিকে অন্তর্বর্তীকালীন বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করা ছাড়া উপায় নাই। (শরীয়তের দৃষ্টিতে ভোট, মুফতী মুহাম্মদ শফী র.)

ইসলামী দলে নেতা নির্বাচনঃ
ইসলামী রাষ্ট্রের কোন পদে প্রার্থী হওয়া বা নিজেকে প্রার্থীরূপে দাঁড় করানোর অধিকার কারো নেই। সেভাবেই ইসলামী দলেও কোন পদের জন্য প্রার্থী হওয়া যায় না। কিন্তু পদের জন্য অন্য কোন ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করা জায়েয। তাতে নিজের লোভের কোন প্রকাশ থাকে না। ব্যক্তির নিজের প্রার্থী হওয়ার অর্থ হলো নিজেকে বড় মনে করা, যা ইসলামে না জায়েয। কিন্তু দলের পক্ষ হতে ইসলামী সংগঠনের নেতাকে ঐ গঠনতন্ত্র অনুসারে দলের কর্মীগণ স্বাধীনভাবে নির্বাচন করেন। নির্বাচিত হওয়ার পর সে দায়িত্ব পালন করা ফরয। ইসলামী দল কোন ব্যক্তিকে যোগ্য হিসেবে নির্বাচন অথবা মনোনীত করলে সে ক্ষেত্রে তার আপত্তি করার কোন সুযোগ থাকবে না এবং দুর্বলতাও প্রদর্শন করা যাবে না । তখন দলের দায়িত্ব পালন করা অপরিহার্য ।

ইসলামী নেতৃত্ব কোন পদের নাম নয়, ইহা দায়িত্বের নাম। কাজেই দায়িত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ববান লোক নিয়োগ করা জরুরী । এ প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসূল (সা) বলেন : “লোকদের ইমাম বা নেতা হবেন সে ব্যক্তি, যে তাদের মধ্যে কুরআনের জ্ঞান সবচেয়ে বেশী রাখেন, এ ব্যাপারে যদি সকলে সমান হয়, তাহলে হাদীস সম্পর্কে অধিক জ্ঞানী ব্যক্তি ইমাম হবেন, যদি এ বিষয়েও সকলে সমান হয় তবে তাদের মধ্যে যে সকলের আগে হিজরত করেছেন। এ ক্ষেত্রে সমান হলে বয়সে প্রবীণ ব্যক্তি ইমামতি করবেন। কোন ব্যক্তি যেন অপর ব্যক্তির প্রভাবাধীন এলাকায় ইমামতি না করে এবং তার বাড়ীতে তার অনুমতি ব্যতীত তার জন্য নির্দিষ্ট আসনে না বসে। (মুসলিম, মুসনাদে আহমদ)

বুঝা গেল রাষ্ট্র প্রধানকে
১ । নামাযের ইমামতি করার যোগ্যতা থাকতে হবে ।
২। কুরআনের জ্ঞান থাকতে হবে।
৩। সুন্নাহ তথা ইসলামের পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকতে হবে ।
৪ । হিজরতে অগ্রগামী অর্থাৎ নির্দেশ পালনে অগ্রসর হতে হবে ।
৫। বয়সে প্রবীণ হতে হবে ।

শরীয়তে নামায ও রাষ্ট্রীয় ইমামতিতে একই গুণাবলী নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। নামাযের ইমামতি রাষ্ট্রীয় ইমামতির প্রশিক্ষণ দেয়। এ কারণেই ইসলামী সংগঠন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচনের জন্যে নিম্নের গুণাবলীকে প্রাধান্য দেয় ।
১. দীনি ইলম অর্থাৎ সর্বাধিক জ্ঞানী ব্যক্তি। যার ইসলামী সংগঠন পরিচালনার যথেষ্ট জ্ঞান থাকবে ।
২. খোদাভীরু অর্থাৎ তাকওয়াবান । যিনি সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর আনুগত্য করে চলেন।
৩. রাসূলের আনুগত্য অর্থাৎ সুন্নাহ মোতাবেক সার্বিক কাজ পরিচালনা করবেন ।
৪. আমানতদার অর্থাৎ যিনি হবেন সকল কাজের ও সম্পদের আমানত রক্ষায় সচেষ্ট ব্যক্তি
৫. উন্নত আমল অর্থাৎ তাঁর আমল-আখলাক হবে সবচেয়ে উন্নত ও অনুসরণীয় ।
৬. অনড় মনোবল অর্থাৎ কাপুরুষ, ভীরু নয়; অনড় মনোবলের অধিকারী।
৭. কর্মে দৃঢ়তা অর্থাৎ যার কর্মে দৃঢ়তা আছে, যিনি অস্থিরতা ও হীনমন্যতায় ভোগেন না ।
তাছাড়া যিনি সাহসী, পরিশ্রমী, ইনসাফগার, ধৈর্যশীল, পরামর্শ গ্রহণের ও জবাবদিহিতার মানসিকতাসম্পন্ন, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, বিশ্লেষণ শক্তি, উদ্ভাবন শক্তি, প্রশস্ত চিত্ততা, সুন্দর ব্যবহার, মেজাজের ভারসাম্য, সাংগঠনিক প্ৰজ্ঞা ও সাংগঠনিক শৃংখলা বিধানের যোগ্যতা রাখেন ।

দারসের শিক্ষাঃ

১। ইসলামী রাষ্ট্র বা দলে পদ প্রার্থী হওয়া যায় না ।
২। কোন পদের জন্য লালায়িত হওয়া উক্ত পদের জন্য অযোগ্যতার শামিল ।
৩। কোন পদ জবর দখল করলে তাতে আল্লাহর সাহায্য পাওয়া যাবে না ।
৪। জনগণের পক্ষ থেকে কোন দায়িত্ব অর্পিত হলে তা পালন করা কর্তব্য।
৫। না চেয়ে দায়িত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হলে তার জন্য আল্লাহর সাহায্য পাওয়া যাবে।

বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

দারসুল কুরআন: মু'মিনদের গুণাবলী। সূরা আল মু'মিনুন এর ১ম রুকু (১ থেকে ১১ নং আয়াত)

দারসুল কুরআন: মু'মিনদের গুণাবলী
সূরা আল মু'মিনুন, 
 সুরা নং-২৩, আয়াত নং- ১ থেকে ১১ 

الرَّحِيمِ بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ 1

 الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَشِعُونَ 2

 وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ 3

 وَالَّذِينَ هُمْ لِلرَّكوة فَعِلُونَ 4

 وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَفِظُونَ 5

 إِلَّا عَلَى أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَةٌ 6

 فَمَنِ ابْتَغَى وَرَاءَ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْعُدُونَ 7

 وَالَّذِينَ هُم لاَمُنْتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَعُونَ 8

 وَالَّذِينَ هُمْ عَلَى صَلوتِهِمْ يُحَافِظُونَ 9

 أولئك هم الورثونه 10

 الَّذِينَ يَرِثُونَ الْفِرْدَوْسَهُمْ فِيهَا خَلِدُونَ 11 .

সরল অনুবাদ: ইরশাদ হচ্ছে 
(১) অবশ্যই (সেই সব) মু'মিনেরা সফলকাম হয়ে গেছে, 
(২) যারা তাদের নামাযে বিনয়ী-নম্র। 
(৩) যারা ৰাজে বা বেহুদা কথা-কাজ থেকে দূরে থাকে, 
(৪) যারা তাযকিয়া বা পরিশুদ্ধির ব্যাপারে কর্মতৎপর। 
(৫) এবং যারা তাদের যৌনাঙ্গকে (অবৈধ ব্যবহার থেকে) হেফাজত করে। 
(৬) তবে তাদের স্ত্রীদের এবং অধিনস্থ দাসীদের বেলায় (যৌনাঙ্গ) হেফাজত না করলে তারা তিরস্কৃত হবে না। 
(৭) তবে কেউ যদি এদের ছাড়া অন্য কাউকে (যৌনক্ষুধা মেটার জন্য) কামনা করে, তবে (এক্ষেত্রে) তারা হবে সীমালংঘনকারী। 
(৮) আর যারা তাদের আমানত এবং প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে হুশিয়ার থাকে। 
(৯) এবং যারা তাদের নামায সমূহকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে। 
(১০) তারাই (অর্থাৎ এসব গুণের অধিকারীরাই) হবে উত্তরাধিকারী। 
(১১)  তারা শীতল ছায়াঢাকা উদ্যানের (অর্থাৎ জান্নাতুল ফেরদাউসের) উত্তরাধিকারী হবে এবং তাতে তারা চিরকাল থাকবে । 

সূরার নামকরণঃ অত্র সূরার প্রথম আয়াত قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ এর ‘আল-মু’মিনুন' শব্দ থেকে এ সূরার নামকরণ করা হয়েছে। যদিও নামকরণের ক্ষেত্রে সব বিষয়ের সাথে মিল রেখে শিরোনাম হিসেবে উল্লেখ করা হয় না । কিন্তু এই সূরার ১ম থেকে ১১ নং আয়াত পর্যন্ত একই সাথে মু'মিনদের বৈশিষ্ট সম্পর্কে যেসব গুণের কথা পেয়ে বর্ণনা করা হয়েছে, তাতে দেখা যায় যে, এই সূরার বিষয়ের সাথে নামকরণের বেশ মিল আছে।

নাযিল হবার সময়কাল: সূরার বর্ণনাভঙ্গী এবং বিষয়বস্তু থেকে প্রমাণ হয় যে, এটি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মাক্কী জীবনের মাঝামাঝি সময় নাযিল হয়েছিলো। বিধায় সুরাটি মাক্কী। হযরত ওমর (রাঃ) এর এক উক্তি থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। হযরত উরওয়া ইবনে যুবাইর এর বর্ণিত হাদীস থেকে জানা যায়— এ সময় হযরত উমর (রাঃ) সবেমাত্র ঈমান এনেছিলেন। আর হযরত উমরের ইসলাম কবুলের সময় ছিলো রাসূল (সাঃ) এর নবুওয়াতের ষষ্ঠ বছরের শেষের দিকে। এ হাদীসে হযরত উমর (রাঃ) নিজে বলেন : “এ সূরাটি তার সামনেই নাযিল হয়েছে। তিনি নবী করীম (সাঃ) এর উপর ওহী নাযিলের যে বিশেষ অবস্থা সৃষ্টি হয় তা দেখতে পান। পরে নবী করীম (সাঃ) যখন সেই অবস্থা থেকে অবসর পেলেন, তখন তিনি আমাদেরকে বললেন : “এইমাত্র আমার প্রতি এমন দশটি আয়াত নাযিল হয়েছে, যদি কেউ তার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে পারে তবে সে নিঃসন্দেহে জান্নাতে চলে যাবে।” অতঃপর তিনি এই সূরার প্রাথমিক আয়াতগুলো তেলাওয়াত করে শুনালেন। (আহমদ, তিরমিযী, নাসায়ী ও হাকেম।) 

সূরাটি নাযিলের সময় মক্কায় রাসূল (সাঃ) এর সাথে কাফেরদের প্রচণ্ড দ্বন্দ্ব চলছিলো। তবে তখনো কাফেরদের যুলুম নির্যাতনের মাত্রা চরম পর্যায়ে পৌঁছেনি । তাছাড়া সূরাটি নাযিলের সময় মক্কায় চরম দুর্ভিক্ষও চলছিলো।

বিষয়বস্তু : এই সূরাটির মূল বিষয়বস্তুই হচ্ছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর আনুগত্য । তিলাওয়াতকৃত ১১টি আয়াতের মূল বিষয় হচ্ছে, যেসব লোক এই নবীর কথা মেনে নেবে, তাদের মধ্যে এসব গুণ সৃষ্টি হবে। আর নিঃসন্দেহে এসব লোকেরাই দুনিয়া এবং আখিরাতে কল্যাণ লাভ করবে ।

সূরার বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও শ্রেষ্ঠত্ব : মুসনাদে আহমদ কিতাবের এক বর্ণনায় হযরত উমর ফারুক (রাঃ) বলেন : রাসূল (সাঃ) এর উপর যখন ওহী নাযিল হতো, তখন পাশের লোকজনের কানে ঘন্টার ধ্বনি বা মৌমাছির গুঞ্জনের মতো আওয়াজ হতো। একদিন তাঁর কাছে এমনি ধরনের আওয়াজ পেয়ে আমরা সদ্যপ্রাপ্ত ওহী শুনার জন্য থেমে গেলাম ৷ ওহীর বিশেষ অবস্থা শেষ হলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কেবলামুখী হয়ে বসে গেলেন এবং এই দোআ পাঠ করতে লাগলেন :

اللهمَّ زِدْنَا وَلَا تَنْقُصْنَا وَأَكْرِمْنَا وَلَا تَهَنَا وَأَعْطِنَا وَلَا تَحْرِمُنَا وَأَيْرُنَا وَلَا تُؤْثِرُ عَلَيْنَا وَارْضَ عَنَا وَارْضَنَا

“হে আল্লাহ আমাদের বেশী বেশী দাও- কম দিও না। আমাদের সম্মান বাড়িয়ে দাও- লাঞ্ছিত করো না। আমাদেরকে দান করো মাহরূম করো না। আমাদেরকে অন্যের উপর অধিকার দাও- অন্যদেরকে অগ্রাধিকার দিয়ো না এবং আমাদের প্রতি রাযি-খুশী থাকো আর আমাদেরকে তোমার রাযীতে রাযী করো।” এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদেরকে বললেন : এখনই আমার উপর যে দশটি আয়াত নাযিল হয়েছে। যে কেউ যদি এ আয়াতগুলো পুরোপুরি পালন করে, তবে সে সোজা জান্নাতে চলে যাবে এরপর তিনি এই সূরার ১ম দশটি আয়াত তেলাওয়াত করলেন ।

ইমাম নাসায়ী তাঁর কিতাবের তাফসীর অধ্যায়ে ইয়াযীদ ইবনে বাবনুস থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি একবার হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর চরিত্র কেমন ছিলো? তিনি (আয়েশা) বলেছিলেন : তাঁর চরিত্র আল কুরআনে বর্ণিত আছে। অতঃপর তিনি এই দশটি আয়াত তেলাওয়াত করে বললেন : এগুলোই ছিলো রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর চরিত্র। (ইবনে কাসীর)

শানে নুযুল : অত্র সূরা বিশেষ করে এই আয়াতগুলো নাযিলের সময় প্রেক্ষাপট ছিলো এই যে, এ সময় একদিকে মক্কার কাফের সর্দারেরা ইসলামী দাওয়াতের চরম বিরোধী ছিলো। তাদের ব্যবসা-বানিজ্য ছিলো উন্নতমানের এবং চাকচিক্য পূর্ণ। তাদের টাকা-পয়সা, অর্থ-সম্পদ ছিলো প্রচুর । দুনিয়া স্বাচ্ছন্দের সব উপায় উপকরণ তাদের নাগালের মধ্যে ছিলো। আর অপরদিকে ছিলো ইসলামের অনুসারী রাসূলের সংগী-সাথীরা । এদের মধ্যে কিছু লোক যারা স্বচ্ছল ছিলো এবং তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যা আগে থেকেই সাফল্য মণ্ডিত হচ্ছিলো। কিন্তু ইসলামের দাওয়াত কবুল করার ফলে কাফেরদের চরম বিরোধিতার কারণে তাদেরকে খারাপ অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়েছিলো। এতে কাফের সর্দারেরা নিজেদেরকে বেশী সফল ও সার্থক বলে দাবী করতো এবং নবীর অনুসারীদেরকে বিফল ও ব্যর্থ মনে করতো। তখন আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করলেন, নিশ্চয়ই কল্যাণ বা সফলতা লাভ করেছে ইসলামের দাওয়াত কবুলকারী রাসূলের অনুসারীরা । আর কাফেরেরা দুনিযায় যে সফলতা এবং স্বার্থকতার দাবী করছে, এটাই প্রকৃত সফলতা ও স্বার্থকতা নয়, বরং আখেরাতের সফলতাই হলো প্রকৃত এবং স্থায়ী সফলতা ।

ব্যাখ্যাঃ قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ - “অবশ্য অবশ্যই ঈমান গ্রহণকারী - লোকেরা কল্যাণ বা সফলতা লাভ করেছে।”

মু'মিন কারাঃ এখানে ঈমান কবুলকারী বা মু'মিন বলে সেসব লোকদের বুঝানো হয়েছে, যারা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর দাওয়াত কবুল করেছে, তাঁকে যারা নিজের মুর্শিদ বা পথ প্রদর্শক ও নেতা হিসেবে মেনে নিয়েছে এবং তাঁর উপস্থাপিত জীবন যাপনের নিয়ম-পদ্ধতি অনুসরণ করে চলতে প্রস্তুত হয়েছে।

‘ফালাহ’ শব্দের মানে-কল্যাণ, সাফল্য এবং স্বাচ্ছন্দ। এটা (খুশরান) বা ক্ষতি বা ব্যর্থতার বিপরীত। সাফল্য শব্দটি কুরআন এবং হাদীসে ব্যাপক ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আযান ও একামতে প্রতিদিন পাঁচবার প্রতিটি মুসলমানকে ডাকা হয়। এর প্রকৃত অর্থ হলো প্রত্যেক মনোবাঞ্ছা পূরণ হওয়া এবং প্রতিটি কষ্ট দূর হওয়া। এ শব্দটি সংক্ষিপ্ত হলেও এর অর্থ সুদূর দুনিয়ার কোন মানুষ বা শক্তির পক্ষে মানুষের প্রতিটি মনোবাঞ্ছা পূরণ করা এবং প্রতিটি কষ্ট বিদূর করা সম্ভব নয়। এটা পারেন একমাত্র বিশ্ব জাহানের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহ তাবারাকাওয়া তাআলা ।

পুরোপুরিভাবে সফলতা লাভ করা দুনিয়াতে কোনভাবেই সম্ভব নয় । এটা একমাত্র আখেরাতে জান্নাত লাভের মাধ্যমেই হতে পারে। কুরআন এবং হাদীসে যেখানেই এই ‘ফালাহ' বা সফলতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে- তা চিরস্থায়ী আখেরাতের সফলতার কথাই বলা হয়েছে। এখানেও মক্কার কাফের সর্দারদের দুনিয়ার ধন-সম্পদ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের উত্তরত্তর সফলতার বড়াই এর পরিপেক্ষিতে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন : তোমরা দুনিয়ার যে সফলতা এবং স্বার্থকতার বড়াই করছো এটাই প্রকৃত সফলতা বা স্বার্থকতা নয় । তোমাদের এই সফলতা ক্ষণস্থায়ী। বরং মুমিন লোকদের জন্য আখেরাতের যে সফলতা সেটাই হচ্ছে প্রকৃত এবং চিরস্থায়ী সফলতা । বর্তমানে আমাদের সমাজেও অনুরূপ লোক দেখা যায়। প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক ও ব্যবসা-বাণিজ্যের উত্তরত্তর উন্নতির জন্য এবং নিজের সন্তানদের লেখা-পড়ার ভাল ফলাফল ও দামী চাকুরী পাবার কারণে নিজেকে সফল হয়েছে বলে বড়াই করে। অথচ আখেরাতের জন্য সে কোন কাজই করে না। তাদের দুনিয়ায় এ ধরনের বড়াই পরকালে কোনো কাজেই আসবে না। বরং তারাই ব্যর্থ এবং ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর যারা মুমিন, ইসলামের পথে চলার জন্য দুনিয়ায় বাধাগ্রস্ত হয়ে কষ্টের মধ্যে জীবন-যাপন করতে হয়েছে, বাতিলের বিরোধিতা এবং হামলার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং চাকুরী-বাকরী ক্ষতি হয়েছে, প্রকৃত পক্ষে তারাই আখেরাতে নেয়ামতে ভরা জান্নাত লাভের মাধ্যমে চিরস্থায়ী সফলতা লাভ করবে ।

আল-কুরআনে অন্যত্র সূরা আ'লায় সাফল্য লাভের ব্যবস্থা পত্র দিতে গিয়ে বলা হয়েছে - قَدْ أَفْلَحَ مَنْ تَزَكَّى অর্থাৎ “যে নিজেকে পাপ কাজ থেকে পবিত্র রেখেছে সেই সফলকাম হয়েছে।” এর সাথে সাথে আরও ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে, পরিপূর্ণ সফলতা লাভের জায়গা আসলে দুনিয়া নয় পরকাল । যে সফলতা কামনা করে, তার কাজ শুধু দুনিয়া নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকা নায়। এ সম্পর্কে সূরা আ'লায় আরো বলা হয়েছে— بَلْ تُؤْثِرُونَ الْحَيُوةَ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ وَابْقى

(হে মানুষ!) “তোমরা দুনিয়াকেই পরকালের উপর অগ্রাধিকার দিচ্ছো । অথচ দুনিয়ার তুলনায় পরকালের জীবন অতি উত্তম এবং স্থায়ী।” সুতরাং পরিপূর্ণ এবং স্থায়ী সফলতা তো একমাত্র পরকালে জান্নাতেই পাওয়া যেতে পারে- দুনিয়া এর স্থান নয়। তবে দুনিয়াতেও আল্লাহ্ তাআলা তাঁর প্রকৃত বান্দাদের মনের প্রশান্তির মাধ্যমে সফলতা দান করে থাকেন ৷

মু'মিনদের সাতটি গুণ:-

আলোচ্য আয়াতসমূহে আল্লাহ তাআলা সেই সব মু'মিনদেরকে সফলতা দানের ওয়াদা করেছেন যাদের মধ্যে সাতটি গুণ রয়েছে। সর্ব প্রথম গুণ হচ্ছে ঈমানদার হওয়া। কিন্তু এটা বুনিয়াদী ও মৌলিক বিষয় বিধায় এটাকে এই সাতটি গুণের মধ্যে শামিল না করে পর পর সাতটি গুণ বর্ণনা করা হয়েছে । নীচে সেগুলো ধারাবাহীকভাবে আলোচনা করা হলোঃ

প্রথম গুণঃ الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَشِعُونَ  অর্থাৎ "যারা তাদের নামাযে বিনয়ী-নম্র।” নামাযে ‘খুশূ’ বলতে বিনয়-নম্র হওয়া বুঝায় ৷ ‘খুশূর’ আভিধানিক অর্থ স্থিরতা। শরীয়াতের পরিভাষায় এর মানে অন্তরে স্থিরতা থাকা; অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো কিছুর কল্পনা অন্তরে ইচ্ছাকৃতভাবে না করা এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও স্থির থাকা; অর্থাৎ অনর্থক নড়াচড়া না করা । (বয়ানুল কুরআন)। তাছাড়া এর আরো অর্থ হলো কারও সামনে বিনয়াবনত হওয়া, বিনীত হওয়া, লুণ্ঠিত হওয়া, নিজের কাতরতা ও অক্ষমতা প্রকাশ করা ইত্যাদি ।

দিলের ‘খুশূ’ হয় তখন, যখন কারও ভয়ে ও দাপটে দেল ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে উঠে। আর দেহের ‘খুশৃ’ এভাবে প্রকাশ পায় যে, কারও সামনে গেলে তার মাথা নীচু হয়ে যায়, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ শিথিল হয়ে পড়ে, চোখের দৃষ্টি নতো হয়ে আসে, গলার স্বর ক্ষীণ হয়ে যায় । ভীত সন্ত্রস্ত হবার সেসব লক্ষণই বেশী প্রকাশ হয়ে পড়ে যখন কোনো ব্যক্তি কোনো মহাশক্তির প্রচণ্ড দাপটের অধিকারী কোনো সত্তার সামনে হাজির হয়। আর নামাযে ‘খুশূ’ বলতে বুঝায় মন ও দেহের অনুরূপ অবস্থা সৃষ্টি হওয়াকে । কেননা নামাযী তার মহাশক্তিধর প্রভুর সামনে হাজির হয় ।

নামাযে বিনয় ও একাগ্রতা বা খুশু-খুজু পয়দা হবার জন্য নামাযের বাহ্যিক কাজেরও বেশ প্রভাব রয়েছে। ইসলামী শরীয়াতে নামাযের যেগুলো নিয়ম-নীতি ও কায়দা-কানুন হিসেবে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে, তা যথাযত ভাবে নিষ্ঠার সাথে আদায় করলে মনের একাগ্রতা বা খুশূ সৃষ্টির জন্য সাহায্য করে। আবার সেসব কাগুলো ঠিকমত না করলেও নামাযের একাগ্রতা ও খুশূ সৃষ্টিতে বাধা দেয় ৷

নামাযের যেসব বাহ্যিক কাজ নামাযের একাগ্রতা বা খুশূ পয়দায় বাধা সৃষ্টি করে তা হলোঃ

→ নামাযের মধ্যে নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে খেলা বা নড়া-চড়া করলে নামাযের একাগ্রতা বা খুশূ নষ্ট হয়ে যায়। এ সম্পর্কে হাদীসে বলা হয়েছে- একবার নবী করীম (সাঃ) এক ব্যক্তিকে নামাযের মধ্যে মুখের দাড়ী নিয়ে খেলা করতে দেখে বললেন :

لَوْ خَشِعَ قَلْبَهُ خَشِعَتِ جَوَارِحِه

“যদি এ লোকটির দেলে খুশূ থাকতো তাহলে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপরেও খুশূ বা স্থিরতা থাকতো।” (মাযহারী)

→ নামাযে এদিক ওদিক তাকালে নামাযের একাগ্রতা বা খুশূ নষ্ট হয়ে যায়। বুখারী এবং তিরমিযী শরীফের হাদীসে হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি নবী করীম (সাঃ) কে নামাযে এদিক ওদিক তাকানো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করায় রাসূল (সাঃ) বললেন :

هُوَ اِخْتِلَاسُ يَخْتَلِسُهُ الشَّيْطَانُ مِنْ صَلَاةِ الْعَبْدِ “এটা নামাযীর (মনোযোগের) উপর শয়তানের থাবা ।”

→ নামাযে ছাদ বা আকাশের দিকে তাকালে নামাযের একাগ্রতা বা খুশূ . নষ্ট হয়ে যায়। এ সম্পর্কে হাদীসে উল্লেখ আছে। হযরত জাবির বিন সামুর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন :

لَيَنْتَهِينَ أَقْوَامٌ يَرْفَعُونَ اَبْصَارَهُمْ إِلَى السَّمَاءِ فِي الصَّلَاةِ أَوْلَا تَرْجِعُ إِلَيْهِمُ

“লোকেরা যেনো নামাযে তাদের চোখকে আকাশমুখী না করে। (কেননা তাদের চোখ) তাদের দিকে ফিরে নাও আসতে পারে।” (অর্থাৎ নামাযের একাগ্রতা বা খুশূ নষ্ট করে দিবে।)” (মুসলিম)।

→ নামাযে হেলা-দোলা করা ও নানা দিকে ঝুকে পড়লে নামাযের

একাগ্রতা বা খূশূ নষ্ট হয়ে যায়।

→ পরনের জামা-কাপড় বারবার গুটানো বা ঝাড়া কিংবা তা নাড়াচাড়া করলে নামাযের একাগ্রতা বা খুশূ নষ্ট হয়ে যায়।

→ সিজদায় যাবার সময় বসার জায়গা বা সিজদাহর জায়গা বারবার পরিষ্কার করলে নামাযের একাগ্রতা নষ্ট হয়ে যায়। (তবে ক্ষতিকারক হলে একবার সরানো যাবে )

এসম্পর্কে হাদীসে উল্লেখ রয়েছে, হযরত আবু যর গিফারী (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে মহানবী (সাঃ) বলেছেন :

إِذَا قَامَ أَحَدُكُمْ فِي الصَّلَاةِ فَلَا يَمْسَحِ الْحَصَى فَإِنَّ

الرَّحْمَةَ تُوَاجِهة

“কোন ব্যক্তি যেন নামাযের অবস্থায় (সিজদাহর জায়গা হতে) কংকর না সরায়। কেননা আল্লাহর রহমত নামাযী ব্যক্তির সামনে প্রসারিত হয়। (আহমদ, নাসায়ী, তিরমিযী, আবু দাউদ, ও ইবনে মাযাহ) ।

→ একটানা ভাবে গর্দান খাড়া করে দাঁড়ানো, খুব কর্কর্ষ সূরে কোরআন পাঠ করা কিংবা গীতের সূরে কেরআত পাঠ করলে নামাযের খুশূ বা বিনয়তা নষ্ট হয়ে যায় ।

জোরে জোরে হাই এবং ঢেকুর তোললে, ইচ্ছা করে গলা খেকাড়ী বা কাশি দিলে নামাযের একাগ্রতা নষ্ট হয়। হাদীসে আছে, হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ التَّنَانُ مِنَ الشَّيْطَانِ، فَإِذَا تَشَاءَبَ أَحَدُكُمْ فَلْيَكْظِمْ مَا

اسْتَطَاعَ

“নামাযে হাই উঠে শয়তানের প্রভাব থেকে । যদি কারো হাই উঠে তবে সে যেনো সাধ্যমত হাই প্রতিরোধ করে।” (মুসলিম, তিরমিযী)।

→ খুব তাড়াহুড়ো করে নামায আদায় করলে নামাযের বিনয়তা বা একাগ্রতা থাকে না। এ সম্পর্কে “হযরত আবু হুরাইরা বর্ণিত হাদীসে মহানবী (সাঃ) ‘মুখতাসির' (অর্থাৎ নামাযের কাজগুলোকে হাল্কা ও ঝটপট) রূপে নামায পড়তে নিষেধ করেছেন । ”

→ নামাযের রুকু, সিজদাহ, কিয়াম, বৈঠক সঠিকভাবে আদায় না করলে নামাযের একাগ্রতা নষ্ট হয়। হাদীসে আছে “নোমান ইবনে মোররাহ বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবীদের জিজ্ঞেস করলেন : মদখোর, ব্যভিচারী ও চোর সম্পর্কে তোমাদের মতামত কি? তারা বললেন : আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি (সাঃ) বললেন : ওগুলো কবীরা গোনাহ এবং এর সাজাও খুব। (এবার শুনে নাও) সবচেয়ে জঘন্য চুরি হলো সেই চুরি যে ব্যক্তি নামাযে চুরি করে। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, নামাযে আবার চুরি কিভাবে হয় হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন : যে নামাযে রুকু ও সেজদাহ্ ঠিকমত করে না” (মালেক, আহমদ, দারেমী, মেসকাত )

→ নামাযীর সামনে পর্দায় কোন ছবি বা সিনারী থাকলে নামাযের খুশূ বা একাগ্রতা নষ্ট করে দেয়। “হযরত আনাস (রাঃ) বলেন : হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর একটি কাপড়ের পর্দা ছিলো তিনি তা ঘরের একদিকে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন । এতে নবী করীম (সাঃ) বললেন : তুমি এ পর্দাটি আমার সামনে থেকে সরিয়ে রাখো । কারণ এর ছবিগুলো সর্বদা আমার নামাযের ক্ষতি (অর্থাৎ একাগ্রতা নষ্ট) করে।” (বুখারী)

অন্তরের যেসব কাজ নামাযের খুশূ বা একাগ্রতা নষ্ট করে তাহলো :

→ নামাযের মধ্যে জেনে শুনে অপ্রাসংগিক কথা-বার্তা চিন্তা বা খেয়াল করলে নামাযের একাগ্রতা নষ্ট হয়ে যায়। তবে অনিচ্ছাসত্ত্বে কোনো চিন্তা ভাবনা মনে জাগলে তা জাগতে পারে। মানুষের এটা স্বাভাবিক ব্যাপার । কেননা শয়তান মানুষের মনে আসওয়াসা দিয়ে নামাযের একাগ্রতা নষ্ট করার জন্য সদাসর্বদা চেষ্টায় নিয়োজিত থাকে। এ সম্পর্কে মহানবী (সাঃ) হাদীসে বলেন : “নামাযের জন্য যখন আযান দেয়া হয় তখন শয়তান পিঠ ফিরিয়ে বাতকর্ম করতে করতে পালাতে থাকে- যাতে সে আযানের ধ্বনি না শুনতে পায়। অতঃপর যখন আযান শেষ হয়ে যায় তখন সে ফিরে আসে। আবার যখন একামত বলা হয় তখন সে পিঠ ফিরিয়ে পালাতে থাকে এবং যখন একামত শেষ হয়ে যায় তখন ফিরে আসে ও মানুষের মনে (একাগ্রতা নষ্ট করার জন্য) খটকা দিতে থাকে। সে বলে : অমুক বিষয়ে খেয়াল করো, অমুক অমুক বিষয়ে খেয়াল করো- যেসব বিষয় তার মনে ছিলো না। অবশেষে নামাযী এরূপ (অমনোযোগী) হয়ে যায় যে, সে বলতে পারে না কত রাকাআত নামায পড়েছে।” (আবু হুরাইরা, বুখারী, মুসলিম)।

নামাযে অন্তরের খুশূ বা একাগ্রতা সৃষ্টির জন্য যেসব কাজ করতে হবে-

→ নামাযে সব সময় আল্লাহ তাআলাকে হাজির-নাজির জানতে হবে। নামাযী যখন নামাযে দাঁড়বে তখন সে মনে করবে যেনো সে আল্লাহর সামনে হাজির হয়েছে। এ সম্পর্কে “হাদীসে জিবরীলে” “ইসান' সম্পর্কে মহানবী (সাঃ) কে জিবরাঈল (আঃ) প্রশ্ন করলে, তার প্রতিউত্তরে তিনি বলেন :

أَنْ تَعْبُدَ اللهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ “তুমি এভাবে আল্লাহর ইবাদাত (নামায আদায়) করবে, যেন তুমি স্বয়ং আল্লাহ তাআলাকে দেখতে পাচ্ছো; আর যদি তোমার পক্ষে এটা সম্ভব না হয়, তবে তুমি অবশ্যই মনে করে নিবে যে, আল্লাহ তোমাকে সর্বক্ষণ দেখছেন।” (হযরত উমর, মুসলিম)।

→ নামাযে যেসব দোআ-কালাম পড়া হয় তা অন্তর থেকে পড়তে হবে। স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করে ধীর-স্থিরভাবে পড়তে হবে। নামাযে অন্য মনস্ক হয়ে গেলে যখনই খেয়াল হবে তখনই মনকে পুনরায় নামাযের মধ্যে আনতে হবে। সদাসর্বদা এ চেষ্টা অব্যহত রাখতে হবে ।

→ নামাযে মনোনিবেশ বা খুশূ সৃষ্টি করার জন্য নামাযীর দৃষ্টি সেজদার দিকে থাকবে। এ সম্পর্কে হাদীসে মহানবী (সাঃ) বলেন : “হে আনাস! যেখানে তুমি সেজদাহ্ দেবে সেই জায়গাতেই তোমার দৃষ্টি রাখবে । ” (বায়হাকী, মেশকাত)

→ নামাযে মনোনিবেশ সৃষ্টির জন্য নামাযে যা পড়া হবে তার অর্থ নিজের ভাষায় জানতে হবে। দোআ-কালামের মানে জানলে স্বাভাবিকভাবেই নামাযে মনের একাগ্রতা সৃষ্টি হবে ৷

মুমিনদের গুণাবলীর প্রথম গুণ নামাযে খুশূ বা বিনয়ী বা একাগ্রতার বিষয়টি এতো দীর্ঘ আলোচনার কারণই হলো একজন মু'মিন বান্দার প্রথম গুণই হবে নামায। আর নামাযের রূহ বা প্রাণই হলো নামাযে খুশূ-খুজু বা একাগ্রতা। যদি তা না হয় তাহলে নামায পড়াই হবে কিন্তু আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। এজন্য আমাদের নামায পড়তে হলে খুশু-খুজুর সাথেই নামায আদায় করতে হবে ।

দ্বিতীয় গুণঃ وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ অর্থাৎ “যারা বেহুদা বা অপ্রয়োজনীয় কথা এবং কাজ থেকে দূরে থাকে ।” মুমিনদের দ্বিতীয় গুণ হলো তারা বেহুদা, অপ্রয়োজনীয় ও অকল্যাণকর কথা, কাজ এবং চিন্তা থেকে দূরে থাকে ।

اللَّغْوِ'লাগয়ুন' বলা হয় এমন প্রতিটি কাজ এবং কথাকে যা অপ্রয়োজনীয়, অর্থহীন এবং নিষ্ফল । যেসব কথা এবং কাজের কোনই ফল নেই; উপকার নেই, যা থেকে কল্যাণবহ ফলও লাভ করা যায় না। যার কোনো প্রয়োজন নেই, যা হতে কোনো ভালো উদ্দেশ্য হাসিল করা যায় না- এসবই অর্থহীন, বেহুদা ও বাজে জিনিস ।

مُعْرِضُونَ মানে যদিও দূরে থাকা । কিন্তু এতে শব্দটির পূর্ণ অর্থ বুঝায় না। আয়াতটির পূর্ণ অর্থ হলো : তারা বাজে, বেহুদা কাজ বা জিনিসের দিকে লক্ষ্য করে না। সেদিকে যায় না। যেখানে এ ধরনের কাজ বা কথা হয় সেদিকে আকৃষ্ট হয় না। সেখানে যাওয়া হতে দূরে থাকে। সে কাজে অংশগ্রহণ করে না, পরহেয করে, পাশ কেটে চলে যায়, কোথাও কখনও মুখোমুখী হয়ে পড়লেও নিজেকে বাঁচানোর জন্য এড়িয়ে চলে যায়। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন :

وَإِذَا مَرُّوا بِاللَّغْوِ مَرُّوا كِرَامًا

“তারা যদি এমন কোনো স্থানে যেয়ে পড়ে যেখানে বেহুদা অর্থহীন বাজে কাজ বা কথা হচ্ছে, তা হলে সেখান থেকে তারা নিজের মান সম্মান রক্ষা করে চলে যায়।” (ফুরকান-৭২)

আসলে মুমিন ব্যক্তির জন্য জীবনের প্রতিটি মূহুর্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সে প্রতিটি সময় হিসাব-নিকাশ করে চলে। কেননা আল্লাহ তাআলা তার প্রতিটি মূহুর্তের হিসাব নেবেন। মুমিনের জন্য প্রতিটি মূহুর্ত একজন পরিক্ষার্থীর মতো মূল্যবান। পরীক্ষার্থী যেমন পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র হাতে পাবার পর পরীক্ষায় আশানুরূপ ফলাফল লাভের জন্য প্রতিটি প্রশ্নের যথাযত উত্তর দেবার মাধ্যমে প্রতিটি মূহুর্তকে কাজে লাগায়, সে আজেবাজে কথা লিখে বা চিন্তা করে সময় কাটায় না। অনুরূপভাবে একজন মুমিন ব্যক্তিও দুনিয়ার এ জীবনের প্রতিটি মূহুর্তকে সঠিকভাবে ও যথাযতভাবে কাটায়। সে চিন্তা করলে কল্যাণকর চিন্তা করে, কথা বললে কল্যাণকর ও গ্রহণযোগ্য কথা বলে, কাজ করলে উপকারী কাজ করে । সে গীবত, পরনিন্দা, পরচর্চা ও চোগলখোরী করে বেড়ায় না । সে হাটে-বাজারে, দোকানে বা রাস্তায় বসে বাজে আড্ডা দেয় না । সে বাজে বা অশ্লীল কোন কাজ করে না। সে গল্প করে, কিন্তু অর্থহীন অশ্লীল গল্প-গুজব করে না। সে হাসি-তামাসা ও রসিকতা করে, কিন্তু তাৎপর্যহীন হাসি-তামাসা ও রসিকতা করে না। সে বিতর্ক করে, কিন্তু অশ্লীল কথা ব্যবহার করে ঝগড়া বিবাদ করে না। সে যে সমাজে গান-বাজনা, রং-তামাসা, অশ্লীল গালি-গালাজ, অন্যায় অভিযোগ, মিথ্যা দোষারোপ, লজ্জাহীন কথা-বার্তার চর্চা হয় সেই সমাজ তার জন্য গাত্রদাহ এবং আযাব বলে মনে হয়। এসব ব্যক্তিদের সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেন : “মানুষ যখন অনর্থক এবং অপ্রয়োজনীয় বিষয়াদি ত্যাগ করে তখন তার (দ্বীন) ইসলাম সৌন্দর্যমণ্ডিত হতে থাকে।” একারণেই আয়াতে একে কামেল মুমিনদের বিশেষ গুণ বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে।

এসব বান্দাদের জন্য জান্নাতে আল্লাহ্ তাআলার অসংখ্য নিয়ামতের মধ্যে একটি বড় নিয়ামত হলো-

لا تَسْمَعُ فِيهَا لَاغِيَهُ

“সেখানে তারা কোনো প্রকার অর্থহীন বাজে কথা-বার্তা শুনতে পাবে না।” (সূরা গাশিয়া )


তৃতীয় গুণঃ وَالَّذِينَ هُمْ لِلرَّكوة فَعِلُونَ অর্থাৎ “যারা যাকাত বা পবিত্রতার কাজে কর্মতৎপর।” ‘যাকাত’ দেয়া এবং ‘যাকাতের' পন্থায় কর্মতৎপর হবার মধ্যে অর্থের দিক দিয়ে বেশ পার্থক্য রয়েছে। এই আয়াতে মুমিনদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে কুরআনের প্রচলিত প্রচলিত যাকাত আদায় এর কথা না বলে لِلرَّكوة فَعِلُونَ বলে বিশেষ ধরনের কথা বলা হয়েছে । এটা বলার পেছনে বেশ তাৎপর্য রয়েছে।

আরবী ভাষায় ; শব্দের দু'টি অর্থ— একটি ‘পবিত্রতা' আর অপরটি ‘বৃদ্ধি’। অর্থাৎ একটা জিনিসের উন্নতি লাভের পথে যেসব বাধা-বিপত্তি আছে, তা দূর করা এবং উহার মূল জিনিসকে বৃদ্ধি করা। এ দুটি ধারণার সমন্বয়ে 'যাকাত' সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা সৃষ্টি হয়।

আর ইসলামী পরিভাষায় উহার ব্যবহার হয় দু'টি অর্থে। একটি সেই মাল-সম্পদ, যা পবিত্রতা অর্জনের জন্য হিসাব করে আলাদা করা হয় । আর দ্বিতীয়টি খোদ এই পবিত্রতা অর্জনের কাজ। যদি يُؤْتُونَ الزَّكوة বলা হয়, তবে তার অর্থ হবে, তারা পবিত্রতা অর্জনের জন্য নিজের মাল-সম্পদের একটা অংশ দেয়। এতে শুধু মাল দেয়া পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থকে । কিন্তু যদি বলা হয় لِلرَّكوة فَعِلُونَ তবে তার অর্থ হবে তারা পবিত্রতা বা তাকিয়ার বিধানের কাজ করছে। এতে কেবলমাত্র যাকাত আদায় করার অর্থই বুঝাবে না; বরং এর মানে ব্যাপক অর্থে বুঝাবে। যেমন-

* সে তার মন ও দেহের পবিত্রতা অর্জন করে ।

* সে তার চরিত্রের পবিত্রতা অর্জন করে ।

* সে তার জীবনের পবিত্র-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করে । 

* সে তার পরিবারকে পবিত্র বা তাকিয়া করে ।

* সে সমাজ এবং রাষ্ট্রকে তাকিয়ার কাজে ভূমিকা রাখে ।

* আর সে তার ধন-সম্পদেরও যাকাত আদায়ের মাধ্যমে ধন-সম্পদের পবিত্রতা অর্জন করে । ইত্যাদি ।

মোট কথা মুমিন ব্যক্তি সে তার ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং ধন-সম্পদের পবিত্রতা বা পরিশুদ্ধির কাজে আত্মনিয়োগ করে। এক কথায় সে নিজেকেও পবিত্র করে এবং অন্য লোককেও পবিত্র করার কাজ আঞ্জাম দেয়। আল্লাহ তাআলা সূরা আ'লায় বলেন :

قَدْ أَفْلَحَ مَنْ تَزَكَّىٰ ۚ وَذَكَرَاسُمَ رَبِّهِ فَصَلَّى অর্থাৎ “কল্যাণ ও সফলতা লাভ করলো সে, যে পবিত্রতার কাজ করলো এবং নিজের রবের নাম স্মরণ করে নামায পড়লো।” 

আল্লাহ্ তাআলা সূরা শামসে আরও বলেনঃ قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَكَّهَا هِ ْ অর্থাৎ “সফলকাম হলো সে, যে নিজের নফসকে পবিত্র বা তাকিয়া করলো। আর ব্যর্থ হলো সে, যে নিজেকে কলুষিত করলো ।

তবে আলোচ্য আয়তটি এ দু'টি আয়াত থেকে বেশী অর্থপূর্ণ। কেননা এ দু'টি আয়াতে শুধুমাত্র নিজের নফসের পবিত্রতা অর্জনের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। আর আলোচ্য আয়াতে নিজের এবং গোটা সমাজ জীবনের পবিত্রতা বা পরিশুদ্ধির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে ।


চতুর্থ গুণঃ وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَفِظُونَ অর্থাৎ “যারা তাদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে।” মুমিনদের চতুর্থ গুণ বা বৈশিষ্ট্য হলো তারা নিজেদের স্ত্রী এবং অধীনস্থ দাসীদের ছাড়া সব রকমের নারী ভোগ থেকে যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে ।

حَفِظُونَ এর দু'টি অর্থ রয়েছে- (১) নিজের দেহের লজ্জাস্থানকে ঢেকে রাখে, উলঙ্গপনাকে প্রশ্রয় দেয় না এবং নিজের লজ্জাস্থানকে অপর লোকের সামনে প্রকাশ করে না।  (২) তারা নিজেদের পবিত্রতা ও সতীত্বকে রক্ষা করে। 

اِلَّا عَلى اَزْوَاجِهِمْ أوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ ملومين  অর্থাৎ “তবে যদি তারা তাদের স্ত্রী এবং মালিকানাধীন দাসীদের সাথে যৌন কামনা পূরণ করে তবে তারা তিরস্কৃত হবে না।” তবে এখানে একটা ইঙ্গিত আছে যে, এই প্রয়োজনকে প্রয়োজনের সীমার মধ্যে রাখতে হবে- জীবনের লক্ষ্য বানানো যাবে না। মাঝখানে একথা বলার আসল উদ্দেশ্য হলো- লজ্জাস্থানের ‘হেফাজত' করার কথা বলার ফলে যে ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়েছিল তা দূর করা। অতীতকাল থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত এক শ্রেণীর লোক আছে যারা যৌন শক্তিকে একটা খারাপ কাজ মনে করে । তারা মনে করে দ্বীনদার এবং পরহেজগার লোকদের জন্য এ খারাপ কাজ করা ঠিক নয়। যদি “সফলকামী ঈমানদার লোকেরা নিজেদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে” এই কথা বলেই ক্ষান্ত হতো তা হলে প্রচলিত এই ভূল ধারণাকে সাপোর্ট দেয়া হতো। তাই মাঝখানে আল্লাহ তাআলা একথা বলে এটা পরিস্কার করে দিয়েছেন যে, নিজের স্ত্রীদের এবং শরীয়ত সম্মত অধীনস্থ দাসীদের সাথে যৌন খাহেস পূরণ করলে কোনো দোষের কাজ হবে না।

فَمَنِ ابْتَغَى وَراءَ ذلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْعُدُونَ “বিবাহিত স্ত্রী অথবা শরীয়ত সম্মত দাসীর সাথে শরীয়াতের নিয়মানুযায়ী যৌন কামনা-বাসনা পূরণ করা ছাড়া কামপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করার আর কোনো পথ বৈধ নয়। আর যারা একাজ করে তারাই হবে সীমালংঘনকারী।” যেমন-

* যিনা যেমন হারাম, তেমনি হারাম নারীকে বিয়ে করাও যিনার মধ্যে গণ্য হবে ।

* স্ত্রী অথবা দাসীর সাথে হায়েয-নেফাস অবস্থায় কিংবা অস্বাভাবিক পন্থায় সহবাস করা হারাম ।

* পুরুষ অথবা বালক অথবা জীব-জন্তুর সাথে যৌন ক্ষুধা মিটানো হারাম।

* অধিকাংশ তাফসীরবিদদের মতে হস্ত মৈথুনও এর অর্ন্তভূক্ত। 

* তাছাড়া যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি করার মতো কোনো অশ্লীল কাজ করা। এসব কিছুই সীমালংঘনের মধ্যে গণ্য হবে।

وَالَّذِينَ هُم لاَمُنْتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَعُونَ অর্থাৎ “যারা তাদের আমানতসমূহ এবং ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে।”

এখানে পঞ্চম ও ষষ্ঠ দু'টি গুণের কথা বলা হয়েছে।


পঞ্চম গুণঃ لاَمُنْتِهِمْ ‘আমানাত' শব্দটির অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক। এর আভিধানিক অর্থে এমন প্রতিটি বিষয় শামিল, যার দায়িত্ব কোনো ব্যক্তি বহন করে এবং সে বিষয়ে কোনো ব্যক্তির উপর আস্থা রাখা যায় ও ভরসা করা যায়। এখানে অনেক বিষয় জড়িত বিধায় 'আমানাত' শব্দটি বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে।

এতে দু' ধরনের আমানত সংক্রান্ত কথা বলা হয়েছে।

(১) হক্‌কুল্লাহ্ বা আল্লাহ্র হক সংক্রান্ত আমানত ।

(২) হক্‌কুল ইবাদ বা বান্দার হক সংক্রান্ত আমানত ৷


হুক্কুল্লাহ বা আল্লাহর হক সংক্রান্ত আমানত হলো-

(১) খেলাফত বা প্রতিনিধি সংক্রান্ত আমানাত। আল্লাহ তাআলা মানব জাতিকে তার খেলাফতের দায়িত্বের আমানাত দিয়ে পঠিয়েছেন। আল্লাহ্ সূরা বাকারায় বলেন- “নিশ্চয় আমি (মানুষকে) আমার প্রতিনিধি হিসাবে (দুনিয়াতে) পাঠাতে চাই।” সুতরাং আল্লাহ্ এই খিলাফতের আমানত রক্ষা করা প্রতিটি বান্দার জন্য বড় ধরনের দায়িত্ব।

(২) শরীয়াতে আরোপিত সকল ফরয ও ওয়াজিব যেমন- নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি আল্লাহ্র হক । বিধায় তা ঠিকমত পালন করা এবং যাবতীয় হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা হলো আল্লাহ্র হকের আমানত ৷

বান্দার হক বা অধিকার সংক্রান্ত আমানত হলো-

(১) টাকা-পয়সার আমানত। যদি কেউ কারো কাছে টাকা-পয়সা আমানাত হিসেবে জমা রাখে তাহলে তা ঠিকমত হেফাজাত করা এবং চাওয়ামাত্র কোন প্রকার গড়িমসি না করে তাৎক্ষণিক ফেরৎ দেয়া ।

(২) ধন-সম্পদের আমানাত। যদি কেউ কারো কাছে কোন ধন-সম্পদ বা জমি জায়গার দলিলপত্র গচ্ছিত রাখে, তাহলে তা ঠিকমত হেফাজত করা এবং তা ব্যবহার না করা (হ্যাঁ যদি দাতা ব্যবহার করার অনুমতি দেয় তবে ব্যবহার করা যাবে।) এবং চাওয়ামাত্র টালবাহানা না করে তা ফেরৎ দেয়া । 

(৩) গোপন কথার আমানত। কেউ যদি কাউকে বিশ্বাস করে কোনো গোপন কথা বলে, তাহলে তা গোপন রাখাই হলো কথার আমানত হেফাজত করা।

যদি কেউ কারো গোপন কথা ফাঁস করে দেয় তার পরিণতি সম্পর্কে মহানবী (সাঃ) বলেনঃ “যে ব্যক্তি তার অপর কোন ভাইয়ের গোপন কথা প্রকাশ করে দেয় তাহলে আল্লাহ তাআলাও কিয়াতের দিন তার গোপন তথ্য ফাঁস করে দেবেন।”

(৪) মজুর, শ্রমিক এবং চাকুরী জীবিদের জন্য যে সময় এবং কাজ নির্দ্ধারণ করে দেয়া হয় তা যথাযতভাবে পালন করা তার দায়িত্বের আমানত । এর মধ্যে নিজের কাজ করা এবং সময় দেয়া আমানতের খেয়ানত । কামচুরি এবং সময় চুরি বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। এ ব্যাপারে তাকে আল্লাহ্র কাছে জবাবদিহি করতে হবে। মহানবী (সাঃ) বলেন :

وَعَبْدُ الرَّجُلُ رَاعٍ عَلى مَالِ سَيّدِهِ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْهُ

অর্থাৎ “কোনো লোকের চাকর বা কর্মচারী তার মালিকের সম্পদ এবং দায়-দায়িত্বের রক্ষক এবং সে তার দায়িত্ব সম্পর্কে (কিয়ামতের দিন আল্লাহ্র কাছে) জিজ্ঞাসিত হবে।” (বুখারী, মুসলিম)

(৫) দায়-দায়িত্বের আমানাত। সাংগঠনিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে যার যে দয়িত্ব আছে তা যথাযতভাবে পালন করা তার জন্য আমানাত । প্রতিটি দায়িত্বের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। রাসূল বলেনঃ

اَلَا كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعْيَتِهِ فَالِاِمَامُ الَّذِى عَلَى النَّاسِ رَاعٍ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعْيَتِهِ

“সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমরা প্রত্যেকেই (আল্লাহ্র দরবারে) আপন আপন দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। রাষ্ট্র নায়ক যিনি তিনি তার অধিনস্থদের এবং তার দায়-দায়ত্বের রক্ষক । তিনি তার দায়-দায়িত্ব এবং অধিনস্থ নাগরিকদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন।” (বুখারী, মুসলিম)

(৬) সংগঠন বা সমাজের কোন সম্পদের আমানত। যদি কোন নেতার কাছে সংগঠনের বা সমাজের কোনো সম্পদ থাকে সেটা রক্ষণাবেক্ষণকরা তার জন্য বড় ধরনের আমানাত । সুতরাং এই সম্পদের যতেচ্ছা ব্যবহার না করে তা যথাযতভাবে ব্যবহার এবং সংরক্ষণ করতে হবে।

(৭) গণতান্ত্রিক দেশে ভোটারদের ভোটের বা মতামতের আমানত । এই ভোটের ক্ষমতা যথাযত এবং যথা যায়গায় প্রয়োগ করা ভোটের বা মাতামতের আমানাত। এটা আমরা গুরুত্ব না দিলেও আমরা ভোটের বা মতামতের ক্ষমতা যার পক্ষে প্রয়োগ করলাম সে যদি কল্যাণকর কাজ করে তবে তার প্রতিদান আল্লাহর কাছে পাওয়া যাবে। আবার যদি সেই প্রতিনিধি অন্যায় এবং খোদাদ্রোহী কাজ করে তবে তারও অন্যায়ের শাস্তির অংশ ভোগ করতে হবে।

মোট কথা মু'মিনের জন্য প্রতিটি বিষয়ের আমানাত সঠিকভাবে হেফাজত বা সংরক্ষণ করা ঈমানের পরিচয়। যদি কেউ আমানাত রক্ষা করতে ব্যর্থ হয় তার সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেন : “তার ঈমান নেই যার মধ্যে আমানাতদারী নেই।” (বায়হাকী)


ষষ্ঠ গুণ : َعَهْدِ ওয়াদা বা অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতি পালন করা। অঙ্গীকার দু'ধরনের হতে পারে । :

প্রথমতঃ দ্বিপাক্ষিক চুক্তি, অর্থাৎ যে চুক্তির মধ্যে দু'টি পক্ষ থাকে এবং উভয় পক্ষই একটা বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়। তবে উভয়েরই সেই চুক্তি পালন করা অপরিহার্য। কেউ এর খেলাপ করলে তা বিশ্বাসঘাতকতা বা প্রতারণার মধ্যে গণ্য হবে ।

দ্বিতীয়তঃ অঙ্গীকার, ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি। অর্থাৎ একতরফাভাবে একজন অন্যজনকে কোনো কিছু দেবার বা কোনো কাজ করে দেবার ওয়দা করা । এরূপ ওয়াদা পূর্ণ করাও শরীয়তের দৃষ্টিতে জরুরী এবং অপরিহার্য। হাদীসে আছে-“ওয়াদা এক প্রকার ঋণ।” ঋণ আদায় করা যেমন অতীব জরুরী তেমনি ওয়াদা পূরণ করাও জরুরী ।

তবে যদি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বা একতরফা ওয়াদা কোন কারণে পালন করতে সমস্য দেখা দেয় তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাথে আলাপ করে তার সম্মতির ভিত্তিতে রিভিউ করা বা সময় বাড়িয়ে নেয়া ওয়াদা খেলাপের মধ্যে গণ্য হবে না ।

আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কাজে-কামে ওয়াদা করে থাকি, যেমন- পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি, স্বামী-স্ত্রীর সাথে একে অপরে ওয়াদা করে থাকি, যাকে আমরা খুবই হালকা করে দেখে থাকি। যদি এই ওয়াদা পূরণ করা না হয়, তাহলে প্রতারণার পর্যায়ে পড়ে যাবে। তাছাড়া চাকরী-বাকরী, লেন-দেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, সাংগঠনিক এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন কাজে ওয়াদা করে থাকি যা পালন করা অবশ্যকরণীয় কর্তব্য। অথচ দেখা যায় প্রতিনিয়ত এরকমের অসংখ্য ওয়াদা করা হচ্ছে এবং তার খেলাফও করা হচ্ছে। এর মূল কারণ হলো ওয়াদা পালনের যে গুরুত্ব রয়েছে তার সম্পর্কে চেতনা কম। অথচ এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যা দ্বীনদারীর সাথে সম্পৃক্ত। এ ব্যাপারে মহানবী (সাঃ) বলেন :

وَلَا دِينَ لِمَنْ لَا عَهْدِ لَهُ

অর্থাৎ “তার দ্বীনদারী নেই যার ওয়াদা ঠিক নেই।” (বায়হাকী) 


সপ্তম গুণঃ وَالَّذِينَ هُمْ عَلَى صَلوتِهِمْ يُحَافِظُونَ অর্থাৎ “যারা তাদের নামাযে যত্নবান।” নামাযে যত্নবান হবার অর্থ হলো নামাযের পাবন্দী করা এবং প্রত্যেক মোস্তাহাব ওয়াক্তে আদায় করা। (রুহুল মা'আনী

এখানে صَلوةٌ শব্দটি বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ এখানে পাঁচ ওয়াক্তের নামায বোঝানো হয়েছে। যেগুলো মোস্তাহাব অর্থাৎ আওয়াল ওয়াক্তে যথাযতভাবে পাবন্দী সহকারে আদায় করা বোঝায়।

মু'মিনদের গুণাবলীর মধ্যে প্রথমে বলা হয়েছে, তারা নামায বিনয়ের সাথে মনোনিবেশ সহকারে আদায় করে। তাই এখানে صَلوةٌ শব্দটি একবচন ব্যবহার করা হয়েছে । অর্থাৎ এখানে নামাযের জাত হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তাই সে নামায ফরয অথবা ওয়াজিব কিম্বা সুন্নত অথবা নফল নামায হোক— নামায মাত্রেরই প্রাণ হচ্ছে বিনয়-নম্রভাবে আদয় করা । এখানে নামাযসমূহের 'সংরক্ষণ' হলো- নামাযের বাইরের এবং ভিতরের যাবতীয় নিয়ম নীতি যথাযতভাবে পালন করা । যেমন-

* নামাযের পূর্বশর্তগুলো যেমন- শরীর, পোশাক, নামাযের স্থান (জায়নামায) ইত্যাদি পাক-পবিত্র হওয়া।

* সময় মতো মোস্তাহাব ওয়াক্তে, অর্থাৎ আওয়াল ওয়াক্তে নামায পড়া ৷

হাদীসে রাসূল (সাঃ) বলেন : الْوَقْتُ الْاَوَّلَ مِنَ الصَّلوةِ رِضْوَانُ اللهِ وَالْوَقْتُ الْأَخِرُ عَفْرُ اللهِ

অর্থাৎ “নামায ওয়াক্তের প্রথম সময়ে আদায় করলে আল্লাহ্র সন্তোষ লাভ করা যায় এবং শেষ সময় আদায় করলে আল্লাহ্র ক্ষমা পাওয়া যায় (অর্থাৎ শেষ ওয়াক্তে নামায পড়লে সন্তুষ্টি পাওয়া যায় না, কেবল গুনাহ থেকে বাঁচা যায় মাত্র)।” (তিরমিযী)

* মসজিদে জামায়াতের সাথে নাময আদায় করা। হযরত ওমর (রাঃ) لَا صَلوةَ إِلَّا بِالْجَمَاعَةِ বলেন : করে অর্থাৎ “জামায়াত ছাড়া নামায কল্পনা করা যায় না।”

* শুদ্ধ, ধীর স্থির ভাবে দোআ-কালাম পাঠ করা ৷

* নামাযের রোকন যেমন- রুকু, সিজদাহ্, কিয়াম এবং বৈঠক ইত্যাদি মনোযোগের সাথে ধীর-স্থিরভাবে আদায় করা ।

* খুশূ-বিনয়-নম্র এবং মনোনিবেশ সহকারে নামায আদায় করা। 

* ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে নামায প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নামাযের হেফাজত করা । মুয়াত্তা ইমাম মালেকের হাদীসের কিতাবে আছে, হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি তাঁর সমস্ত গভর্ণরদের কাছে এই মর্মে নির্দেশ জারি করেছিলেন যে,

اِنَّ اَهُم أُمُورِكُمْ عِنْدَى الصَّلَوةُ فَمَنْ حَفِظَهَا وَحَافَظَ عَلَيْهَا حَافِظَ دِيْنَهُ وَمَنْ صَيْعُهَا فَهُوَ لِمَا سِوَاهَا أَضْيَعُ

অর্থাৎ “তোমাদের যাবতীয় দায়-দায়িত্বের মধ্যে নামাযই হলো আমার কাছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং যে সাবধানতার সাথে নিজের নামায আদায় করলো এবং (অন্যদের) নামাযের তত্ত্বাবধান করলো সে যেনো তার পূর্ণ দ্বীনের হেফাজাত করলো। আর যে নামাযের খেয়াল রাখলো না তার পক্ষে অন্যান্য দায়িত্ব পালনে খেয়ানত আদৌ অসম্ভব কিছু নয়।”

সর্বপরি নামায হেফাজাত করা না করার মধ্যে আখেরাতের মুক্তির এবং ধ্বংসের কারণ রয়েছে। এ সম্পর্কে মহানবীর হাদীস। একদিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নামাযের হেফাজাত সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন : “যে লোক নামায সঠিকভাবে হেফাজাত করবে, তার এ নামায কিয়ামতের দিনে তার জন্যে আলো, দলীল ও মুক্তির কারণ হবে এবং যে তা সঠিকভাবে হেফাজাত করবে না, তার জন্যে নামায কিয়ামতের দিনে আলো, দলীল কিংবা মুক্তির কারণ হবে না। আর ঐ ব্যক্তি হাশরের দিনে কারুন, ফেরাউন ও উবাই ইবনে খালফের ন্যায় কাফেরদের সাথে উঠবে (আহমদ, দারেমী, বায়হাকী)


এখানে বিবেচ্য বিষয় এই যে, মুমিনদের সাতটি গুণ নামায দিয়েই শুরু করা হয়েছে এবং নামায দিয়েই শেষ করা হয়েছে। এতে বুঝা যায় যে, নামায এমন একটি ইবাদাত যা পরিপূর্ণভাবে এবং পাবন্দী ও নিয়ম-নীতির সাথে আদায় করলে অন্যান্য যাবতীয় গুণগুলো আপনা-আপনি নামাযির মধ্যে সৃষ্টি হতে থাকবে ।

আলোচ্য আয়াতগুলোতে চিন্তা করলে দেখা যায়, উল্লিখিত সাতটি গুণের মধ্যে আল্লাহ্ ও বান্দার যাবতীয় হক বা অধিকার এবং এ সম্পর্কিত সব বিধি-বধান প্রবৃষ্ট হয়ে গেছে। যেসব ব্যক্তি এসব গুণে গুণান্বিত হয়ে যাবে এবং এতে অবিচল অটল থাকবে সে কামেল মুমিন হবে এবং ইহকাল ও পরকালের সাফল্যের হকদার হয়ে যাবে ।


أولئِكَ هُمُ الْنُورِثُونَ الَّذِيْنَ يَرِثُونَ الْفِردَوسَ هُم فِيْهَا خَالِدُونَ

উল্লিখিত সাতটি গুণে গুণান্বিত লোকদেরকে এই আয়াতে জান্নাতুল ফেরদাউসের ওয়ারীশ বা উত্তরাধীকারীর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এখানে এজন্য উত্তরাধীকারী বলা হয়েছে যে, মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তি যেমন উত্তরাধিকরীদের জন্য প্রাপ্য ও অনিবার্য হয়ে যায় তেমনি এসব গুণের অধিকারী মুমিন ব্যক্তিদের জন্য জান্নাত প্রবেশও সুনিশ্চিত হয়ে যায় ৷ আল্লাহ্ তাআলা এখানে জান্নাতের কথা বলতে গিয়ে জান্নাতুল ফেরদাউসের কথা বলেছেন। জান্নাতের যে আটটি স্তর রয়েছে তার মধ্যে সর্বউত্তম স্তর হচ্ছে জান্নাতুল ফেরদাউস। যেহেতু মুমিনদের এই সাতটি গুণ বিশেষ গুণ সে কারণে তাদের জন্য বিশেষ জান্নাত “ফেরদাউসের” ওয়াদা করেছেন । রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজের জন্য এবং তার উম্মতদেরকে জান্নাত কামনার জন্য

উত্তম জান্নাত চাওয়ার বাণী শিখিয়ে দিয়ে বলেছেন : اللهمَّ اِنّى اَسْتَلْكَ الْجَنَّةُ الْفِرْدَوُش

“হে আল্লাহ্! আমি তোমার কাছে জান্নাতুল ফেরদাউস কামনা করছি।”


শিক্ষাঃ সূরা মু'মিনুনের প্রথম ১১টি আয়াতের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে যেসব শিক্ষা পাওয়া যায় তা হলোঃ

* ঈমানদার হবার জন্য ঈমানের যেসব শর্ত রয়েছে তা যথাযতভাবে মানতে হবে। অর্থাৎ অন্তরে বিশ্বাস, মুখে স্বীকৃতি এবং বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগ করতে হবে।

* যে নামাযই হোক না কেনো তা আল্লাহকে হাজির নাজির জেনে খুশূ-খুজু ও মনোযোগের সাথে ধীর-স্থিরভাবে আদায় করতে হবে।

* আজে-বাজে এবং অকল্যাণকর কথা, কাজ এবং চিন্তা থেকে দূরে থেকে কল্যাণকর এবং আখেরাতমুখী কথা, কাজ, ও চিন্তা করতে হবে। প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর স্মরণে অতিবাহিত করতে হবে।

* ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও ধন-সম্পদের পবিত্র ও পরিশুদ্ধির জন্য আত্মনিয়োগ করতে হবে ।

* অবৈধ পথে যৌনক্ষুধা না মিটিয়ে বৈধ স্ত্রীর সাথে বৈধ পথে যৌন চাহিদা মিটাতে হবে। তবে একে জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য বানানো যাবে না। তাছাড়া যৌন সুড়সুড়ি সৃষ্টি হয় এমন কোনো কাজে বা পরিবেশে নিজেকে জড়ানো যাবে না । বেহায়াপনা ও অশ্লীল কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে। জেনার যে মূল দরজা পর্দা, তা ঠিকমত মেনে চলতে হবে।

* আল্লাহর পক্ষ থেকে হোক আর মানুষের পক্ষ থেকে হোক আমানত সমূহ যথাযতভাবে সংরক্ষণ করতে হবে ।

* দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হোক আর একপক্ষ থেকে ওয়াদা হোক তা যথাযতভাবে মেনে চলতে হবে এবং ওয়াদা ও চুক্তি মতো আদায় করতে হবে।

* পাঁচ ওয়াক্ত নামায হেফাজতের জন্য নিজে যথাযতভাবে যথা সময়ে জামায়াতের সাথে মনোনিবেশ সহকারে নামায আদায় করতে হবে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ভাবে নামায প্রতিষ্ঠার জন্য বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

* সর্বপরি উপরোক্ত আমলগুলো বিশুদ্ধ নিয়্যাত এবং নিষ্টার সাথে কেবলমাত্র আল্লাহকে রাজী-খুশী করে জান্নাতুল ফেরদাউস পাবার আশায় করতে হবে। সাবধান থাকতে হবে যাতে করে মনের মধ্যে কোনোভাবেই রিয়া বা লোক দেখানোর মনোভাব সৃষ্টি না হয়।


দারসুল কুরআন: মু'মিনদের গুণাবলী
সূরা আল মু'মিনুন,
সুরা নং-২৩, আয়াত নং- ১ থেকে ১১

সংকলনেঃ ইমাম হোসেন আরমান (আরমানের খেরোখাতা)
ফেইসবুকে- www.facebook.com/Arman005.Blog

মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর, ২০২২

সংক্ষেপে সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী (র.) এর পূর্ণাঙ্গ জীবনী

সংক্ষেপে সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী (র.) এর পূর্ণাঙ্গ জীবনী

মাওলানা মওদূদী (: একটি জীবন একটি ইতিহাস

বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিন্তানায়ক ইসলামি আন্দোলনের বিপ্লবী সিপাহসালার মাওলানা সাইয়্যেদ আবুল 'লা মওদূদী (ابو الاعلی مودودی) (Sayyid Abul A'la Maududi) (র.) ছিলেন ইসলামি জাগরনের অগ্রপথিক তাঁর সমগ্র জীবন অতিবাহিত হয় একদিকে কঠোর শ্রম, সাধনা, অগাধ জ্ঞানচর্চা গবেষণায় এবং অপরদিকে বিশ্বমানবতার কাছে দ্বীন ইসলামকে তার প্রকৃতরূপে উপস্থাপনায় যেমন তাকে উপস্থাপন করেছে কুরআনুল কারীম তারপর ইসলামকে যারা বুঝলো এবং সত্য বলে গ্রহণ করল তাঁদের কাছে তাঁর দা'ওয়াত ছিলো ইসলামের ছাঁচে গোটা জীবন গড়ে তোলার, বাতিল ব্যবস্থা ভেঙ্গে চুরমার করে ইসলামী জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দুর্বার সংগ্রাম করার তার জন্য তাঁকে হাসিমুখে বরণ করতে হয়েছে অজস্র কটূক্তি, অমূলক অভিযোগ, অপবাদ এবং বিশেষ শ্রেণির পক্ষ থেকে ফতোয়ার অবিরল গোলাবর্ষণ বারবার তাঁকে যেতে হয়েছে কারার অন্তরালে, এমনকি ফাঁসির মঞ্চে অন্ধকার সংকীর্ণ কঠুরীতে

সর্বশেষ নবীর পর আর কোনো নবী আসবেন না বলেই আল্লাহ যুগে যুগে উম্মাতে মুহাম্মদির মধ্যেই এমন ব্যক্তি পয়দা করে এসেছেন যারা শেষ নবীর শিক্ষাকে সঠিকরূপে আবার মানব জাতির সামনে তুলে ধরার মহান দায়িত্ব পালন করেছেন প্রসঙ্গে রাসুল (সা:) ঘোষণা করেছেন:- “প্রতি শতাব্দীর শুরুতে আল্লাহ তা'য়ালা এই উম্মতের জন্য এমন ব্যক্তি পাঠাবেন যিনি উম্মতের দীনকে নতুন করে পূন:জীবত করবেন (আবু দাউদ)

ইকামতে দ্বীন ইসলামের পুনরুজ্জীবনে মাওলানা মওদূদী (:) এর অবদান যে কত বিরাট, সে কথার বলিষ্ঠ বাস্তব সাক্ষী তাঁর রচিত তাফসির গ্রন্থ বিপুল ইসলামি সাহিত্য আর বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া ইসলামি আন্দোলনের রুপরেখা

 

মাওলানার জন্ম বংশ পরিচয়:

সাইয়্যেদ আবুল 'লা মওদূদী () ১৯০৩ সালে ২৫ শে সেপ্টেম্বর, হিজরি সন ১৩২১ সালের ৩রা রজব ভারতের হায়দারাবাদ রাজ্যের (বর্তমানে অন্ধ্র প্রদেশ) দাক্ষিণাত্যের আওরঙ্গবাদ শহরে জন্মগ্রহন করেন তাঁর পিতার নাম সাইয়্যেদ আহমেদ হাসান, যিনি পেশায় একজন আইনজীবী ছিলেন মাওলানার মায়ের নাম রুকাইয়া বেগম মাওলানা (রহ:) আল হুসাইন ইবনু আলীর (রা) বংশের বিয়াল্লিশতম পুরুষ পাক- ভারতের সুফি দরবেশ হযরত খাজা মুইনুদ্দীন চিশতীর সাথে মওদুদীর (রহ:) খান্দানের সম্পর্ক আছে হিজরি ৩য় শতাব্দীতে হযরত আলী-ফাতেমীয় বংশের একটি শাখা আফগানিস্তানের হিরাট শহরের সন্নিকটে যে স্থানে বসবাস শুরু করেন, সে স্থানটির পরবর্তিতে নাম হয়চিশত বংশের খ্যাতিনামা ওয়ালীয়ে বয়ুর্গ শাহ সুফি আবদাল চিশতী (:) ইমাম হাসানের বংশধর ছিলেন তিনি ৩৫৫ হিজরিতে ইন্তিকাল করেন পরবর্তিতে একই বংশের খাজা কুতুবুদ্দিন মওদূদী চিশতী (:) ভারতবর্ষের চিশতীয়া পীরগণের আদিপীর ছিলেন মওদূদী -খান্দানের উদ্ভব তাঁরই নাম অনুসারে তিনি ৫৭২ হিজরিতে ইন্তিকাল করেন আবুল 'লা চিশতি (:) এর নাম অনুসারে মাওলানা মওদূদীর পিতা জনৈক বুজুর্গের পরামর্শমতো নাম রাখেন সাইয়্যেদ আবুল 'লা মওদূদী


মাওলানার বাল্যকাল :

মাওলানা মওদুদী (:) এর বাবা ছিলেন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত একজন আইনজীবী তিনি খুব কমই ধর্ম কর্মের প্রতি খেয়াল রাখতেন কিন্তু যখন জনৈক বুজুর্গ হাসান মওদূদী কে বলেছিলেন, “দেখ, আল্লাহর ফযলে তোমার একটি পুত্রসন্তান হবে তার নাম রাখবে আবুল 'লা মওদূদী কারন এই নামে একজন প্রসিদ্ধ কামেল পীর তোমাদের পূর্বপুরুষ হিসেবে সর্বপ্রথম ভারতে এসেছিলেন মাওলানা মওদূদীর জন্মের বছর পূর্বে বাবা উক্ত বুজুর্গের নসিহত শোনার পর মনের মধ্যে এক বিপ্লবী পরিবর্তন এনেছিল পরবর্তিতে পুত্রের জন্মের মাত্র এক বছর পর তিনি সংসারত্যাগী হয়ে খোদার প্রেমে পাগল হয়েছিলেন

বাল্যকাল থেকেই মাওলানা মওদূদী তাই ইসলামি পরিবেশে বড় হতে থাকেন শিশু মওদূদীর কচি হৃদয়ে ইসলামি ভাবধারাপূর্ণ চিত্র অঙ্কিত হলো পিতার স্বপ্ন ছিলো মওদূদীকে একজন আলেমে দীন বানাবেন, তাই তিনি অন্যান্য বালকদের মতো তাঁকে হাতছাড়া করেননি সাধারণের সাথে মেলামেশা গল্পগুজবে নৈতিকতা ভদ্রতা রক্ষা করে চলবার ব্যাপারে তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছিল পিতা শিশু মওদূদীকে উন্নত চরিত্র গঠনের জন্য বিশেষভাবে চেষ্টা করেছিলেন দুষ্ট অসৎ সংসর্গে মিশে তার চরিত্র যাতে কলুষিত না হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতেন

পিতা তার ছেলেকে মাতৃভাষা উর্দু যত্ন করে আয়ত্ত্বে রাখাতেন পুত্রের ভাষার বিশুদ্ধতা রাখার জন্য বাইরে মিশতে দিতেন না !

 

মাওলানার শিক্ষাজীবন:

মাওলানা মওদূদীর পিতা সাইয়্যেদ আহমেদ হাসানের ইচ্ছা ছিল তার ছেলেকে বড় আলেমে দীন বানাবেন তাই তিনি ছোটবেলা থেকেই শিশু পুত্রের শিক্ষক ছিলেন মাওলানা মাত্র বছর বয়সেই বর্ণমালা শিখে ফেলেন বয়স বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার জন্য গৃহশিক্ষক রাখা হয় তাঁর জন্য সে সময় মাওলানার পরিবারের মাতৃভাষা ছিল উর্দু বাবা তার ছেলেকে বিশুদ্ধ মাতৃভাষা শিখতে যথেষ্ট উদ্যোগী ছিলেন তিনি নিজে ছেলের সামনে বিশুদ্ধ প্রাঞ্জল উর্দু ভাষা বলতেন যাতে ছেলের ভাষাও বিশুদ্ধ থাকে

বছর বয়স পর্যন্ত মাওলানা মওদূদীকে বাড়িতেই বিদ্যাচর্চা করানো হয় সময়ে তিনি আরবি ব্যাকরণ, সাহিত্য এবং ফেকাহ-শাস্ত্রের বিভিন্ন প্রাথমিক পুস্তকাদি শেষ করেন পরবর্তীতে মওদূদীর ওস্তাদ মৌলভী নাজীমুল্লাহ হুসাইনীর পরামর্শে তাঁকে আওরংগাবাদের ফোরকানিয়া (উচ্চ) মাদ্রাসায় রুশদিয়া মানের শেষ বর্ষ ৮ম শ্রেনীতে সরাসরি ভর্তি করানো হয় সময় তাঁর বয়স ছিল ১১ বছর ১৯১৬ সালে মাওলানা মাদ্রাসা ফোরকানিয়া থেকে ম্যাট্রিকুলেশান মানের পরীক্ষায় পাশ করেন সময় তাঁর মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ছিলেন মোল্লা দাউদ তাদের শিক্ষার মাধ্যম ছিলো উর্দু তবে রসায়ন, পদার্থ, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান, গণিত, ইতিহাস, ভুগোল প্রভৃতি বিষয়েও তখন পড়ানো হতো প্রখ্যাত আলেম আল্লামা শিবলী নোমান পরিচালিত এসব শিক্ষা-ব্যবস্থায় কোরআন-হাদিস, ফেকাহ, আরবি সাহিত্যের ব্যাকরণ-সহ বিজ্ঞানও পড়ানো হতো তখন ম্যাট্রিককে মৌলভী, ইন্টামেডিয়েটকে মৌলভী আলেম, আর ডিগ্রি কলেজ কে দারুল উলুম বলা হতো ম্যাট্রিকের পর হায়দারাবাদ কলেজে ভর্তি হওয়ার পর বাবার অসুস্থতায় তাঁর প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার ইতি ঘটে

 

মাওলানার কর্মজীবন:

পিতার অসুস্থতার কারণে ১৯১৬ সালে দারুল উলুমের পড়াশুনা বাদ দিয়ে হায়দারাবাদ থেকে অসুস্থ পিতাকে নিয়ে ভূপালে চলে আসেন পিতার অসচ্ছলতা অসুস্থতায় পরিবারের অর্থনৈতিক হাল ধরার জন্য মাওলানা মওদূদী ১৯১৮ সালেমাসিক মদিনাপত্রিকায় চাকুরী নেন সম্পাদকীয় স্টাফের একজন সদস্য হিসেবে তখন তাঁর বড় ভাই সাইয়্যেদ আবুল খায়ের মওদূদী বিজনৌর থেকে প্রকাশিতমাসিক মদিনা' পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন তবে চাকুরীর দুই মাস পরেই সেখান থেকে চলে আসেন দিল্লিতে পরে ১৯১৮ সালেই জব্বলপুরের জনৈক তাজউদ্দিন নামক ব্যক্তিরসাপ্তাহিক তাজ' পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব নেন মাওলানা মওদূদীসহ তার বড় ভাই কিন্তু কিছুদিন পর পত্রিকাটি অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যায় মাওলানা দিল্লি ছেড়ে ভূপালে চলে যান ১৯২০ সালে 'তাজ পত্রিকা' আবার চালু হলে মাওলানাকে সম্পাদক নিযুক্ত করা হয় তখন তার বয়স মাত্র ১৭ বছর মওদূদীর নিরলস প্রচেষ্টায় সাপ্তাহিকতাজ’ ‘দৈনিক তাজ' পরিণত হয় কিন্তু ব্রিটিশ-বিরোধী নিবন্ধ প্রকাশ করায় পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায় সময় মাওলানার বাবা সাইয়্যেদ হাসান ইন্তিকাল করেন ১৯২০-এর শেষে মাওলানা দিল্লিতে চলে আসেন ১৯২১ সালে পরিচিত হন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের মুফতি কিফায়েতউল্লাহ মাওলানা আহমেদ সাঈদের সাথে তখন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দমুসলিমপত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নিলে মাওলানাকে এর সম্পাদক নিযুক্ত করা হয় ১৯২৩ সালে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে গেলে মাওলানা আবার ভূপালে আসেন, ১৯২৫ সালে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দআল জমিয়তনামে একটি পত্রিকার প্রকাশনা শুরু করলে মাওলানাকে পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত করা হয় ১৯২৬ সালে তিনি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন যখন স্বামী বিকেকানন্দ নিহত হয় তখন তার বয়স ছিল ২৬ বছর তিনি তখন জমিয়তের সদস্য ছিলেন না; তবে যোগ্যতা বলেই সম্পাদক নিযুক্ত হন এই পত্রিকার সম্পাদক থাকা কালে ১৯২৬ ১৯২৭ সালে ২৪ কিস্তিতে তার জ্ঞানগর্ভ লেখাআল জিহাদু ফিল ইসলামলিখে জিহাদ সম্পর্কে মুসলিমদের ধারণা পরিষ্কার করেন যা হিন্দু নেতাদের ইসলাম সম্পর্কে বিরোধিতার প্রতিবাদের হাতিয়ার ছিল ১৯২৮ সালে জমিয়তে উলামায় হিন্দ All India National Congress এর রাজনেতিক স্ট্যান্ডের প্রতি সমর্থন জানালে মাওলানা তাদের পত্রিকাআল জমিয়ত”-এর সম্পাদকের পদ থেকে ইস্তফা দেন সময় তিনি বিভিন্ন ইসলামি গবেষকদের গ্রন্থসমূহ অধ্যয়ন করতে থাকেন ১৯৩২ সালে আবু মুহাম্মদ মুসলিহ নামের এক ব্যক্তি হায়দারাবাদ থেকেমাসিক তরজুমানুল কুরআননামে একটি পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নিলে মাওলানাকে সম্পাদক নিযুক্ত করা হয় সময় তার বয়স ছিল ২৯ বছর অল্পকালের মধ্যেই তিনি পত্রিকার মালিকানা নিয়ে নেন পত্রিকাটিকে ইসলামি জাগরণের নকিব বলা হয় ১৯৩৬ সালের পরে মাওলানা . আল্লামা ইকবালের পরামর্শে হয়দারাবাদ ছেড়ে পাঞ্জাবে যাবেন বলে ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক বিভাগের প্রধান মানাকি আহসান মাওলানাকে ২৮০০ রুপি মাসিক বেতনে ইসলামিয়াতের অধ্যাপক পদে নিযুক্ত করতে প্রস্তাব দেন মওলানা তা প্রত্যাখ্যান করেন ১৯৩৯ সালে ৭ই সেপ্টেম্বর মাওলানা লাহোর ইসলামিয়া কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন তবে তিনি বেতন নিতে রাজি হননি পরে ১৯৪০ সালে চাকুরি ছেড়ে দেন

 

মাওলানার চেহারা সৌন্দর্য:

তিনি লম্বা ছিলেন না তেমন খাটোও ছিলেন না পরিপুষ্ট দেহের অধিকারী ছিলেন লালচে সাদা রঙের প্রশস্ত চেহারা বড়ই আকর্ষনীয় ছিল চেয়ে থাকার মতো চেহারা ছিল দাড়ি সুন্দর মানানসই ছিল তাঁর বড় দুটি চোখ চেহারাকে আরও আকর্ষনীয় করেছিল তিনি চশমা পড়তেন মুখের চেহারার সাথে চশমাও জুতসই মানাতো তাঁর মুখমণ্ডল চাপা ছিলো না মুখমণ্ডল ভর্তি স্থল মাংস মুখকে সতেজ গোলাকৃতি দিয়েছিল তাঁর চোখের ভ্রু আকর্ষনীয় ছিলো অধ্যাপক গোলাম আযম বলেন, “তিনি সৈয়দ বংশের লোক ছিলেন সীরাত বইতে রাসুল (সা:)-এর চেহারা মুবারকের যে বর্ণনা-পেয়েছি তার সাথে যতটুকু মিল মাওলানার চেহারায় পেয়েছি বলে আমার মনে হয়েছে এতটা মিল আর কারো চেহারায় দেখিনি মাওলানা মওদূদীর ব্যক্তিগত অভ্যাস, আচার-আচরণ, বলার ভঙ্গি, চলার ধরন, পোশাক- পরিচ্ছেদ, তাঁর বৈঠকখানার অনাড়ম্বর সাঁজ, তাঁর গোছানো-টেবিল ইত্যাদি কোনোটিই চমৎকার সুন্দর বলে স্বীকার না-করে পারা যায় না মাওলানার পরিণত বয়সে যখন দাড়ি পেকে যায় তখন তিনি সাদাই রেখেছেন কোনো কালার করেননি মাওলানার চুল ছিল রাসুল (:)-এর তিন স্টাইলের একটির মতো পিছনের দিকের চুল কানের লতি পর্যন্ত মাওলানা পাঞ্জাবি, কোর্তা, কোট-সহ আধুনিক ইসলামিক নেতার মতো জুতসই পোশাক পরিধান করতেন তাঁর পোশাকে তাঁর সৌন্দর্য ফুটে উঠতো তিনি বড় খাড়া মখমলের টুপি পরিধান করতেন যা তাঁর মাথার সাথে মানানসই হতো

 

মাওলানার পরিবারিক জীবন :

১৯৩৭ সালে মাওলানা ৩৪ বছর বয়সে বিয়ে করেন দিল্লির এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারেদারুল ইসলামেহিজরত করার এক বছর পূর্বে ১৯৩৭ সালের ৫ই মার্চ মাওলানা সাইয়েদ বংশের এক মেয়ে মাহমুদা বেগমকে বিয়ে করেন মাওলানার স্ত্রী ছিলেন ইংলিশে অত্যন্ত পন্ডিত মহিলা তিনি ছেলেবেলায় দিল্লির এক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়াশুনা করতেন তিনি বালিকা-থাকা অবস্থায় বাইসাইকেল চালানো জানতেন মাওলানার সাথে তাঁর বিয়ে হওয়ার সময় দেনমোহর নিয়ে দরকষাকষি হয়েছিল মাওলানা অতি উচ্চাকাঙ্খী মোহরানা ধার্য্য না করে বরং তার সাধ্য অনুযায়ী-অল্প টাকা দেনমোহর হিসেবে দিতে চান এবং তা নগদ বুঝিয়ে দিয়ে বিয়ে করে নিয়ে আসেন মাওলানার চার ছেলে তিন মেয়ে

 

বিকেলের আসর:

মাওলানার বাড়িতে তাঁর জীবদ্দশায় প্রত্যেকদিন আসর- মাগরিব বিকেলের আসর বসত তাঁর বাড়ির উঠানে ফুলবাগানে ঘেরা একটি জায়গায় ঘাসের উপর মখমলের চাদর বিছিয়ে এই আসরে-আসা লোকজন বসতেন এখানেই মাওলানার ইমামতিতে আসর মাগরিরের নামাজ হতো এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে, ইউরোপ, আফ্রিকা, আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে লোকজন আসতেন তাঁকে দেখতে প্রশ্ন করে উত্তর নিতে -সময় তাঁরা বিভিন্ন জটিল জটিল প্রশ্ন করতেন আর মাওলানার নির্ভুল সহজ-সাবলীল উত্তর শুনে মুগ্ধ হতেন তাঁদের প্রশ্নগুলো ছিল ইসলাম, বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি, দর্শন, সমাজ, সংস্কৃতি, পরিবারিক জীবনাচার, সরকার, সম্পদ ইত্যাদি নিয়ে একবার উড়োজাহাজ বিষয়ে কথা উঠলে মাওলানা এমনভাবে উড়োজাহাজ সম্পর্কে বলেন যেন তিনি একজন বিমান- প্রকৌশলী তিনি যাবতীয় কলকজ্জা, তার গঠন, যান্ত্রিক ক্রিয়া সম্পর্কে ব্যাখ্যা প্রদান করেন, এতে শ্রোতাগণ মুগ্ধ-মনে শুনতে থাকেন একবার ইসরাইলের প্রসঙ্গে কথা উঠলে তখন তাদের আদ্যোপান্ত ইতিহাস, তাদের যুদ্ধকৌশল, তাদের গুপ্তচর বৃত্তি এমনভাবে বর্ণনা করলেন যে, শ্রোতাগণ মনে করলেন যে, তাঁরা কোনো ইসরাইলী পন্ডিতের মুখেই কিছু শুনছেন মাওলানারশেষ বিকেলের আসরবইটি পড়লে এমন সব প্রশ্নের উত্তর খুজে পাওয়া যায় যে-প্রশ্নগুলো আমাদের মনে প্রতিনিয়ত ঘুরপাক খায় কিন্তু কেনো লেখকের বই পড়ে উত্তর পাওয়া যায় না আব্বাস আলী খানের মতে, তিনি -যুগের বিশ্বকোষ বা ইনসাইক্লোপিডিয়া ছিলেন

 

 

সালভিত্তিক একনজরে মাওলানার জীবনপঞ্জি

১৯০৩ সালের ২৫ শে সেপ্টেম্বর ভারতের হায়দারাবাদের আওরঙ্গবাদ শহরে জন্ম গ্রহন করেন

১৯০৬-১৯১৩ সাল গৃহে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন

১৯১৪ সালে ১১ বছর বয়সে মৌলভী পরীক্ষায় পাশ

১৯১৬ সালে দারুল উলুম হায়দারাবাদে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য ভর্তি

১৯১৭ সালে পিতার অসুস্থতায় শিক্ষাজীবন বন্ধ করে ভুপালে অবস্থান

১৯১৮ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সেমাসিক মদিনা' পত্রিকার সম্পাদক

১৯১৮ সালে খিলাফত আন্দোলনে যোগদান

১৯১৯ সালে আঞ্জুমানে ইয়ানতে নযরবন্দানে ইসলাম এর সক্রিয় সদস্য

১৯২০ সালে জব্বলপুরেদৈনিক তাজ' পত্রিকার সম্পাদনার ভার গ্রহণ

১৯২১ সালে দিল্লি গমন ইংরেজি, আরবি, হাদিস, ফেকাহও তাফসীর অধ্যয়ন

১৯২২ সালে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম এর মুসলিম পত্রিকার সম্পাদক

১৯২৩ সালে মুসলিম পত্রিকা বন্ধ হলে ভুপালে গমন গভীর অধ্যয়ন শুরু

১৯২৪ সালেহামদর্দআলজমিয়তপত্রিকায় সম্পাদনার ভার গ্রহন

১৯২৫ সালে মাওলানা আহমদ সাঈদেরআলজমিয়ত' পত্রিকার প্রধান সম্পাদক

১৯২৭ সালে ২৪ বছর বয়সেআল জিহাদ ফিল ইসলামগ্রন্থ প্রনয়ন

১৯২৮ সালে জমিয়ত কংগ্রেসকে সমর্থন করায় তাঁদের পত্রিকা থেকে ইস্তফা

১৯৩০ সালে হায়দারাবাদে প্রত্যাবর্তন এবংইসলাম পরিচিতগ্রন্থ রচনা

১৯৩১ সালে বই লেখনীতে আত্মনিয়োগ

১৯৩২ সালে হায়দারাবাদ থেকেমাসিক তরজুমানুল কোরআনপ্রকাশ

১৯৩৩ সালেইসলামী তাহযিব আওর ইসকে ওসুল মুবাদিগ্রন্থ প্রনয়ন

১৯৩৩ সালেইসলামী সংস্কৃতির মর্মকথা তাকদীরের হাকিকতগ্রন্থ প্রণয়ন

১৯৩৩-৩৮ সালেইসলাম পাশ্চাত্য সভ্যতার দ্বন্দ্বগ্রন্থ প্রণয়ন

১৯৩৩-৩৮ সালে তাফহীমাত ১ম,২য় খণ্ড গ্রন্থ প্রণয়ন

১৯৩৪-৩৫ সালে ইসলামি দাওয়াত জনসম্মুখে তুলে ধরার সূচনা

১৯৩৫ সালে স্বামী-স্ত্রীর অধিকার ইসলামের দৃষ্টিতে জন্মনিয়ন্ত্রন গ্রন্থ প্রণয়ন

১৯৩৬ সালে কবি আল্লামা ইকবালের সাথে মত বিনিময়ের সূচনা

১৯৩৬ সালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা খসড়া প্রনয়ন

১৯৩৬-৩৭ সালে ইসলাম পরিচিতি, সুদ, পর্দা গ্রন্থ প্রণয়ন

১৯৩৮ সালে হায়দারাবাদ থেকে পূর্ব পঞ্জাবের পাঠান কোর্টে হিজরত

১৯৩৮ সালে পাকিস্তানের স্বপ্ন দ্রষ্টা কবি আল্লামা ইকবালের পরামর্শে দারুল ইসলাম প্রতিষ্ঠা

১৯৩৮ সালে আল্লামা ইকবালের সাথে প্রথম সাক্ষাৎ

১৯৩৯ সালেমুসলমান আওর মওজুদা সিয়াসী কাশামাকাশপ্ৰবন্ধ প্ৰকাশ

১৯৩৮ সালেইসলাম জাতিয়তাবাদগ্ৰন্থ প্ৰকাশ

১৯৩৮ সালে হাকীকত সিরিজের গ্রন্থ প্রকাশ

১৯৩৯ সালে তাজদীদ এইয়ায়ে দ্বীন, ইসলামী ইবাদতের পর তাহককী গ্রন্থ রচনা

১৯৩৯ সালে ইসলামের রাজনৈতিক মতবাদ ইসলামী ইবাদতের মর্মকথা রচনা

১৯৪০ সালে মুসলিম লীগের ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা খসড়া প্রণয়ণ কমিটির সদস্য

১৯৪০ সালে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়েইসলামী বিপ্লবের পথ' শীর্ষক আলোচনা

১৯৪০ সালেইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলনগ্রন্থ প্রণয়ন

১৯৪১ সালের ২৬ শে আগষ্ট ৭৫ জন লোক নিয়েজামায়াতে ইসলামীপ্রতিষ্ঠা

১৯৪১ সালের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জামায়াতের আমির নির্বাচিত

১৯৪১ সালেকুরআনের চারটি পরিভাষা” “ইসলাম জাহিলিয়াতপ্রণয়ন

১৯৪১ সালেনয়ানেজামে তালিম” “অর্থনৈতিক সমস্যার ইসলামী সমাধানরচনা

১৯৪১ সালেএকটি সত্যনিষ্ঠ দলের প্রয়োজনগ্রন্থ রচনা

১৯৪২ সালে জামায়াতের কেন্দ্রীয় অফিস লাহোর থেকে দারুল ইসলামে স্থানান্ত

১৯৪২-৪৭ সালেরাসায়েল মাসায়েলএবংশান্তির পথ গ্রন্থপ্ৰকাশ

 ১৯৪৩ সালে বিখ্যাত আন্দোলনমুখী তাফসীর গ্রন্থতাফহীমুল কোরআনরচনা শুরু

১৯৪৩ সালেএকমাত্র ধর্মইসলমী আইনে মুরতাদের শাস্তিগ্ৰন্থ প্রণয়ন

১৯৪৪ সালেইসলামের নৈতিক দৃষ্টিকোনশিরকের হাকীকতগ্ৰন্থ প্ৰণয়ন

১৯৪৫ সালেতাওহীদের হাকিকত” “সমাজতন্ত্র ইসলামগ্রন্থ রচনা

১৯৪৪-৪৬ সালে ইসলামী আন্দোলনকে সুসংগঠিত সুদৃঢ়করনের উদ্যোগ

১৯৪৬ সালেসত্যের সাক্ষ্য” “ইসলামী দাওয়াত কর্মনীতিগ্ৰন্থ প্ৰকাশ

১৯৪৭ পাকিস্তান ভারত ভাগ হওয়ার পর জামায়াতও দুই ভাগ হয়ে যায়

১৯৪৭ সালে ২৪০ জন নিয়ে জামায়াতে ইসলামী হিন্দ ৩৮৫ জন রুকন নিয়ে জমায়াতে ইসলামী পাকিস্তান গঠন

১৯৪৭ সালের শেষের দিকে জমিয়তে তালাবা (ছাত্রসংগঠন) প্রতিষ্ঠা হয়

১৯৪৭ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ফলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় অফিস শহরে স্থানান্তর

১৯৪৭ সালে রিক্তহস্ত ছিন্নমূল অসহায় মুহাজিরিনের জন্য পুনর্বাসনের উদ্যোগ

১৯৪৭ সালে রেডিও পাকিস্তান থেকে কুরবানির উপর মাওলানার প্রথম বেতার ভাষণ

১৯৪৭ সালে জামায়াতে ইসলামীর দাওয়াত ভাঙ্গা গড়া তাকওয়ার হাকীকত রচনা

১৯৪৮ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাস পরে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শুরু

১৯৪৮ সালে জানুয়ারী পাকিস্তান আইন কলেজে ভাষণে ইসলামি দাবি পেশ

১৯৪৮ সালে মার্চ ভাষনে ইসলামি শাসনব্যবস্থার জন্য দফা দাবি পেশ।

১৯৪৮ সালে ইসলামি শাসনের দাবিতে সভা সমাবেশ জনমত গঠনে অভিযান

১৯৪৮ সালে মওলানা কাশ্মীরের জিহাদকে হারাম বলেছেন বলে মিথ্যা অভিযোগ

১৯৪৮ সালের ১২ অক্টোবর মাওলানাকে সহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার কারাগারে প্রেরণ।

১৯৪৯ সালের ১২ মার্চ জামায়াতের আন্দোলনের ফলে সরকারের আদর্শ প্রস্তাব প্রকাশ

১৯৪৯ সালে - মে জামায়াতের প্রথম নিখিল পাকিস্তান সম্মেলন

১৯৪৯-৫০ সালেসুদ -২য় খণ্ডভূমি মালিকানার বিধানগ্রন্থ প্রনয়ন

১৯৪৯-৫০ সালেজাতীয় মালিকানাপাকিস্তান আওরাত দুরাহেগ্রন্থ রচনা

১৯৫০ সালের ২৮ শে মে মাওলানার কারামুক্তি

১৯৫০ সালে সারাদেশে জনসভায় বক্তৃতা দান

১৯৪৫ সালেতাওহীদের হাকিকত” “সমাজতন্ত্র ইসলামগ্রন্থ রচনা

১৯৪৪-৪৬ সালে ইসলামী আন্দোলনকে সুসংগঠিত সুদৃঢ়করনের উদ্যোগ

১৯৪৬ সালেসত্যের সাক্ষ্য” “ইসলামী দাওয়াত কর্মনীতিগ্ৰন্থ প্ৰকাশ

১৯৪৭ পাকিস্তান ভারত ভাগ হওয়ার পর জামায়াতও দুই ভাগ হয়ে যায়

১৯৪৭ সালে ২৪০ জন নিয়ে জামায়াতে ইসলামী হিন্দ ৩৮৫ জন রুকন নিয়ে জমায়াতে ইসলামী পাকিস্তান গঠন

১৯৪৭ সালের শেষের দিকে জমিয়তে তালাবা (ছাত্রসংগঠন) প্রতিষ্ঠা হয়

১৯৪৭ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ফলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় অফিস শহরে স্থানান্তর

১৯৪৭ সালে রিক্তহস্ত ছিন্নমূল অসহায় মুহাজিরিনের জন্য পুনর্বাসনের উদ্যোগ

১৯৪৭ সালে রেডিও পাকিস্তান থেকে কুরবানির উপর মাওলানার প্রথম বেতার ভাষণ

১৯৪৭ সালে জামায়াতে ইসলামীর দাওয়াত ভাঙ্গা গড়া তাকওয়ার হাকীকত রচনা

১৯৪৮ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাস পরে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শুরু

১৯৪৮ সালে জানুয়ারী পাকিস্তান আইন কলেজে ভাষণে ইসলামি দাবি পেশ

১৯৪৮ সালে মার্চ ভাষনে ইসলামি শাসনব্যবস্থার জন্য দফা দাবি পেশ।

১৯৪৮ সালে ইসলামি শাসনের দাবিতে সভা সমাবেশ জনমত গঠনে অভিযান

১৯৪৮ সালে মওলানা কাশ্মীরের জিহাদকে হারাম বলেছেন বলে মিথ্যা অভিযোগ

১৯৪৮ সালের ১২ অক্টোবর মাওলানাকে সহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার কারাগারে প্রেরণ।

১৯৪৯ সালের ১২ মার্চ জামায়াতের আন্দোলনের ফলে সরকারের আদর্শ প্রস্তাব প্রকাশ

১৯৪৯ সালে - মে জামায়াতের প্রথম নিখিল পাকিস্তান সম্মেলন

১৯৪৯-৫০ সালেসুদ -২য় খণ্ডভূমি মালিকানার বিধানগ্রন্থ প্রনয়ন

১৯৪৯-৫০ সালেজাতীয় মালিকানাপাকিস্তান আওরাত দুরাহেগ্রন্থ রচনা

১৯৫০ সালের ২৮ শে মে মাওলানার কারামুক্তি

১৯৫০ সালে সারাদেশে জনসভায় বক্তৃতা দান

১৯৬১ সালে আফ্রিকা সফরে সরকারের বাঁধা প্রদান

১৯৬১ সালে হাদিস অমান্য কারীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম

১৯৬২ সালে মক্কায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইসলামি সম্মেলনে যোগদান

১৯৬২ সালে বিশ্বরাবেতায়ে আলমে ইসলামিপ্রতিষ্ঠার রুপরেখা দান

১৯৬২ সালে রাবেতায়ে আলম প্রতিষ্ঠা আজীবন সদস্য নির্বাচিত (কমিটির)

১৯৬৩ সালে লাহোরে নিখিল পাকিস্তান জামায়াত এর সম্মেলন বন্ধে সরকারের ব্যর্থ চেষ্টা

১৯৬৩ সালে লাহোরে সম্মেলনে বক্তৃতা কালে গুলিবর্ষন জামায়াত কর্মীর শাহাদাত

১৯৬৪ সালে ৪ঠা জানুয়ারি জামায়াত নিষিদ্ধ মাওলানা সহ সূরা সদস্যগণ গ্রেপ্তার

১৯৬৪ সালে ১৯ শে জানুয়ারি জামায়াতের সকল রেকর্ডপত্র বাজেয়াপ্ত করণ

১৯৬৪ সালে জামায়াতের বিরুদ্ধে সরকারি প্রচারনা তীব্রকরণ

১৯৬৪ সালে ২৫ শে জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সরকারের পদক্ষেপ বেআইনী ঘোষণা

১৯৬৫ সালে মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যলয়ের বৈঠকে অংশগ্রহনের পূর্বে পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত

১৯৬৫ সালে ভারত কর্তৃক পাকিস্তান আক্রমন রেডিও পাকিস্তানে জিহাদের উপর মওলানার ৬টি ভাষণ

১৯৬৫ সালে যুদ্ধে জামায়াতের পক্ষ থেকে উদ্ধাস্তুদের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকার ত্রান

১৯৬৬ সালে লাহোরে সর্বদলীয় জাতীয় সম্মেলনে তশখন্দ চুক্তির সমালোচনা

১৯৬৬ সালে আলোচিত অনবদ্য গ্রন্থখিলাফত রাজতন্ত্ররচনা

১৯৬৬ সালে মাওলানার পূর্ব পাকিস্তান সফর দেশের সমস্যা নিরুপণ

১৯৬৬ সালে রাবেতা আলমে ইসলামির বৈঠকে কাশ্মীর নিয়ে মাওলানার পুস্তিকা বিতরন।

১৯৬৭ সালে ঈদের চাঁদ দেখা নিয়ে মাওলানা-সহ জন খ্যাতনামা আলেম গ্রেপ্তার

১৯৬৭ সালে ১৯ শে জানুয়ারি গ্রেপ্তারের পর কয়েকদিন গুম করে রাখা হয়

১৯৬৮ সালে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে মাওলানার লন্ডন গমন

১৯৬৮ সালে লন্ডনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মুসলমানদের উদ্দেশ্য করে মাওলানার ... ভাষণ

১৯৬৮ সালে UK ইসলামিক মিশনে বিশ্বের সকল দেশের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে মাওলানার ভাষণ

১৯৬৯ সালে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে আইয়ুব খান কতৃর্ক গোলটেবিলে বৈঠকে যোগদান

১৯৬৯ সালে ২২ ফেব্রুয়ারি ছাত্রসমাবেশে বলেন, আল্লাহ ছাড়া সামরিক শক্তিকে ক্ষমতাচ্যুত করা আন্দোলনের মাধ্যমে কঠিন

১৯৬৯ সালে মরক্কো ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সম্মেলনে যোগদান

১৯৭০ সালে ১৭ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানে নবম সফর

১৯৭০ সালে মাওলানা ঘোষিতশওকাতে ইসলাম দিবসপালিত

১৯৭০ সালে ১৮ জানুয়ারি মাওলানার ঢাকার পল্টন সমাবেশে হামলায় জন ছাত্র নিহত ৫০০ জনের বেশি আহত

১৯৭০ সালে / যায়দার পার্কে শেষ বিকেলের আসরে ছুরি হাতে যুবকের মাওলানাকে হত্যার চেষ্টা

১৯৭০ সালের ২৮ জুন মাওলানার ঢাকায় ১০ম সফর এটাই শেষ সফর

১৯৭০ সালে পাকিস্তানের প্রথম জাতীয় পরিষদ নির্বাচন জামায়াত-সহ সকল দলের অংশগ্রহন

১৯৭১ সালে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির (আওয়ামীলীগ-মুজিব) হাতে ক্ষমতা দিতে বিবৃতি

১৯৭৪ সালে ফেব্রুয়ারিতে লাহোরে ইসলামি সম্মেলনে রাষ্ট্রপ্রধানের অংশগ্রহনে যোগদান ভাষণ

১৯৭২ জুন মাসে বিখ্যাত তফসির গ্রন্থ তাফহীমুল কুরআন রচনা সমাপ্ত

১৯৭২ অবিরাম অসুস্থতার কারনে জামায়াতে ইসলামীর আমিরের পদ থেকে ইস্তফা

১৯৭৪ সালে ইসলামি সম্মেলনে মুসলিম শাসকদের উদ্দেশ্যে মেমোরেন্ডাম পেশ ১২ দফা

১৯৭৪ সালে এপ্রিলে সস্ত্রীক USA সফর, ইসলামি ব্যক্তিদের সাক্ষাৎ সম্মেলনে।

১৯৭৭ সালের ৪ঠা জুলাই সেনাপ্রধান জিয়াউলের ক্ষমতা গ্রহণ, ইসলামি বিধান প্রবর্তনের পদক্ষেপ

১৯৭৭ সালে ৬ষ্ঠ প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক ছিলেন মওদূদীর অনুপ্রাণিত ব্যাক্তি

১৯৭৯ সালে কিং ফয়সাল এ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন এবং প্রাপ্ত সমুদয় অর্থ ইসলামি গবেষণায় দান

১৯৭৯ সালে ছেলে ডা. আহমদ ফারুক মওদূদীর সাথে স্বস্ত্রীক চিকিৎসার জন্য USA গমন

১৯৭৯ সালের ৪ঠা আগষ্ট পেটের আলসার অপারেশন হয় সুস্থ হন

১৯৭৯ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর হঠাৎ হার্ট এটাক করেন

১৯৭৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মিলার ফ্লাওয়ার হাসপিটালে ইন্তিকাল করেন

১৯৭৯ সালের মৃত্যু পর্যন্ত তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর

১৯৭৯ সালের ২৬ শে সেপ্টেম্বর সকাল ১০ টায় গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে জানাযা

১৯৭৯ সালের ২৬ শে সেপ্টেম্বর - যাইলদার পার্কের বাসগৃহের সামনে দাফন

 

 

মাওলানার কিছু মূল্যবান বাণী

আমি অতীত বর্তমানের কারো কাছ থেকে দ্বীনকে বুঝবার চেষ্টা না করে সর্বদা কোরআন সুন্নাহ থেকে বুঝবার চেষ্টা করেছি অতএব খোদার দ্বীন আমার প্রত্যেক মুমিনের কাছ থেকে কি দাবি করে- কথা জানার জন্যে দেখার চেষ্টা করি না যে, অমুক বুযুর্গ কি বলেন কি করেন বরঞ্চ শুধু দেখার চেষ্টা করি যে, কোরআন কি বলে এবং তার রাসূল (সাঃ) কি করেছেন

-আবুল আলা মওদূদী

 

আমরা প্রকৃতপক্ষে এমন একটা দল তৈরি করতে চাই, যারা একদিকে দ্বীনদারী পরহেযগারীতে পারিভাষিক দ্বীনদার মুত্তাকী থেকে হবে অধিকতর অগ্রসর এবং অপরদিকে দুনিয়ার ব্যবস্থাপনা চালানোর জন্যে সাধারণ দুনিয়াদার থেকে হবে অধিকতর যোগ্যতা ক্ষমতাসম্পন্ন সৎ লোকের এমন একটা দল গঠিত হওয়া উচিত, যারা লোকগুলো হবে খোদাভীরু, নিষ্ঠাবান বিশ্বস্ত আর তারা ভূষিত হবে খোদার মনঃপূত চরিত্র গুণাবলীতে তাঁর সাথে তাঁরা দুনিয়ার কাজ- কারবার বুঝতে পারবে দুনিয়াদারদের থেকে অধিকতর ভালোভাবে

-আবুল 'লা মওদূদী

 

আমার আমার সহকর্মী বন্ধুদের কাছে যখনই কথা পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, আমরা চুল বরাবর কোরআন সুন্নাহ থেকে সরে পড়েছি, তখন ইনশাআল্লাহ দেখবেন যে, আমরা হকের দিকে ফিরে যেতে এক মুহুর্তও ইতস্তত করব না কিন্তু আপনারা যদি হক বাতিলের কষ্টিপাথর খোদার কিতাব রাসূলের সুন্নাতের পরিবর্তে কোন ব্যক্তিকে করেন, তাহলে আপনারা নিজেদেরকে নিজেদের ভবিষ্যত ব্যক্তির উপরেই সোপর্দ করুন এর পূর্ণ অধিকার আপনাদের কাছে অতঃপর খোদার কাছে এরুপ জবাব দিবেন, ‘হে খোদা, আমরা আমাদের দ্বীনকে তোমার কিতাব তোমার রাসূলের সুন্নাতের পরিবর্তে অমুক অমুক লোকের উপরে ছেড়ে দিয়েছিলাম' আপনাদের জবাব যদি আপনাদেরকে খোদার কাছ থেকে বাঁচাতে পারে, তাহলে তা সন্তুষ্ট চিত্তে করতে থাকুন

-আবুল 'লা মওদূদী

 

কাজ যদি আমরা দোকানদারীর মনোভাব নিয়ে করে থাকি, তাহলে আমাদের উপরে এবং আমাদের কারবারের উপরে হাজার হাজার লা'নত আর যদি এটা ঐকান্তিকতার সাথে খোদার দ্বীনের খেদমত হয়, তাহলে আমাদের উপরে প্রত্যেকের খুশী থাকা উচিত যে, কাজ সে শুধু একাই করছে না বরং অন্যান্যরাও এতে লিপ্ত আছেন আমাদের কাজ হচ্ছে এই যে, আমরা তাকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করব না বার বার আমরা তার কাছে যাব, যাতে আল্লাহ তার মনকে ফিরিয়ে দেন

- আবুল 'লা মওদুদী

 

দ্বীনকে যেভাবে বিকৃত করা হচ্ছে, তা যদি আমি মেনে নিই এবং কিছু লোক আমাকে যেভাবে দেখতে চায়, আমি যদি তা হয়ে যাই, তাহলে এমন অপরাধী হবো যে, আল্লাহর কাছে আমাকে কঠিন জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে সেদিন আমাকে কেউ সাহায্য করতে আসবে না অতএব আমি তাদের ঠাট্টা-বিদ্রুপের পাত্র হওয়াকে শ্রেয় মনে করি আখেরাতে নিজেকে বিপন্ন করা থেকে

-আবুল 'লা মওদূদী


খোদা সাক্ষী আছেন, কোন ব্যক্তি অথবা দলের প্রতি আমার কোন শত্রুতা নেই আমি শুধু সত্যের বন্ধু এবং মিথ্যার দুশমন যা আমি সত্য মনে করেছি, তার সত্যতার যুক্তিও পেশ করেছি যা মিথ্যা মনে করেছি, তারও যুক্তি উপস্থাপন করেছি যিনি আমার সাথে একমত নন, তিনি যুক্তি দিয়ে আমার ভুল ধরে দিলে, আমি আমার মত পরিবর্তন করতে পারি এখনো কিছু লোক এমন আছেন, যাঁরা শুধু জন্যে ক্রোধান্বিত হয়ে পড়েন যে, তাঁর অথবা তাঁদের প্রিয় নেতার বিরুদ্ধে কিছু বলা হয়েছে অথচ তাদের বিবেচ্য এটা নয় যে, যা বলা হয়েছে তা সত্য না মিথ্যা এরূপ লোকের ক্রোধবহ্নিকে আমি কোন পরোয়া করি না আমি তাঁদের গালির জবাব দেবো না এবং আমার পথ থেকে বিচ্যুত হবো না

 

-আবুল 'লা মওদূদী

আমার স্পষ্টবাদিতা নিশ্চয়ই সব মহাত্মার কাছে কটু লাগবে, যারা মানুষকে সত্যের দ্বারা যাচাই করার পরিবর্তে সত্যকে মানুষের দ্বারা যাচাই করতে অভ্যস্ত এর জবাবে আরো কিছু গালি খাবার জন্যে আমি নিজকে প্রস্তুত রেখেছি

-আবুল 'লা মওদূদী

 

আমার বড় দুঃখ হয়, মুসলমানদের নৈতিক অধঃপতন বর্তমানে এমন চরমে পৌছেছে যে, খোদার আইন-ভঙ্গকারীরা সদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে অপরদিকে যারা রাব্বুল আলামীনের আইন মেনে চলে অপরকে চলতে বলে, আজ তাঁরাই হচ্ছে লাঞ্ছিত অপমানিত

-আবুল 'লা মওদূদী

 

খোদার ফযলে আমি ভাবাবেগে কোন কাজ করিনি আমার বক্তৃতায় যা কিছু বলেছি, তার প্রতিটি শব্দ পরিমাপ করে বলেছি কথা চিন্তা করে যে, এর হিসাব খোদার কাছে দিতে হবে, কোন বান্দার কাছে নয় আমি নিশ্চিত যে, সত্যের বিপরীত একটি শব্দও আমি বলিনি যা কিছু বলেছি, তা দ্বীনের খেদমতের জন্যে ছিল একান্ত অপরিহার্য আমার আশংকা হয়েছিলো যে, কথা বলার জন্যে নয়, বরং না বলার জন্যে আমাকে খোদার কাছে দায়ী হতে হবে

-আবুল 'লা মওদূদী

 

আমি তাদের মধ্যে নই, যারা মিথ্যা প্রচারণা, ব্যক্তিগত কোন্দল এবং গালাগালি করাকে নিজেদের পেশা বানিয়ে নিয়েছে বুযুর্গানে কওমের পাগড়ি বহনকারী এবং রাজনৈতিক মতভেদকে ব্যক্তিগত শত্রুতায় পরিবর্তনকারীদের আচরণ আমি সর্বদাই ঘূর্ণার চোখে দেখে এসেছি আমাকে যাঁরা জানেন, তাঁরা সত্যটিও জানেন"

-আবুল 'লা মওদূদী

 

আমি বসে গেলে দাঁড়িয়ে থাকবে কে?”

(১৯৬৩ সালে লাহোরে নিখিল পাকিস্তান জামায়াতের সম্মেলনে সরকারি গুন্ডা বাহিনীর গুলিবর্ষনের মুখে)

-আবুল 'লা মওদূদী

 

মৃত্যুর ফয়সালা যমীনে নয়, আসমানে হয়ে থাকে

(১৯৫৩ সালের ১১ই মে সামরিক আদালতে মাওলানার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা হলে সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাইতে বললে)

 


একনজরে মাওলানা প্রনীত গ্রন্থাবলি:

কুরআন

তরজমায়ে কুরআন মাজীদ পৃ: ১২৪৮

তাফহীমুল কুরআন -১৯ খণ্ড পৃ: ৪১৬৫

তাফহীমুল কুরআনের বিষয়সূচি পৃ: ৫৪০

কুরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা পৃ: ১১৯

কুরআনের মর্মকথা৷ পৃ: ৪৮


হাদিস/ সুন্নাহ

সুন্নাতে রাসুলের আইনগত মর্যাদা পৃ: ৩৩৬

হাদিসের আলোকে কুরআনের মহত্ত্ব মর্যাদা পৃ: ১৩৩


ইসলামি জীবন দর্শন

ইসলাম পরিচিত পৃ: ১১২

তাওহীদ রিসালাত আখিরাত পৃ:৪৪

১০ ইসলামের জীবন পদ্ধতি পৃ: ৫৫

১১ একমাত্র ধর্ম ইসলাম পৃ: ৪৫

১২ শান্তির পথ পৃ: ২৭

১৩ ইসলামী সংস্কৃতির মর্মকথা পৃ: ২৭৯

১৪ নির্বাচিত রচনাবলি - খণ্ড পৃ: ১৩৪৪

১৫ আল জিহাদ পৃ: ৫৯২

১৬ ইসলাম জাহিলিয়াত পৃ: ৪৮

১৭ ইসলাম পাশ্চাত্য সভ্যতার দ্বন্দ্ব পৃ: ২২৮

১৮ ইসলামি জীবন ব্যবস্থার মৌলিক রূপরেখা পৃ: ৩৮৪

১৯ ইসলামি দাওয়াতের দার্শনিক ভিত্তি পৃ: ৩২

২০ ইসলামের নৈতিক দৃষ্টিকোণ পৃ: ৩২

২১ ইসলাম জাতীয়তাবাদ পৃ: ১১৯

২২ ইসলাম সামাজিক সুবিচার পৃ: ২৪

২৩ ইসলামে শক্তির উৎস পৃ: ৬৭

২৪ কুরবানীর শিক্ষা পৃ: ৪৮

২৫ ইমানের হাকিকত পৃ: ৪৮

২৬ ইসলামের হাকিকত পৃ: ৪৪

২৭ নামায রোজার হাকিকত পৃ:৬৫

২৮ হজের হাকীকত পৃ: ৪৮

২৯ যাকাতের হাকীকত পৃ: ৫৮

৩০ জিহাদের হাকীকত পৃ: ২৮

৩১ তাকদীরের হাকীকত পৃ: ১০২

৩২ শিক্ষা ব্যবস্থা : ইসলামী দৃষ্টিকোণ পৃ: ১৩৩


আইন, রাজনীতি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা

৩৩ ইসলামী আইন পৃ: ৬৩

৩৪ ইসলামী রাষ্ট্র পৃ: ৭০০

৩৫ খেলাফত রাজতন্ত্র পৃ: ২৯৪

৩৬ ইসলামের রাজনৈতিক মতবাদ পৃ: ৬৩

৩৭ উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন মুসলমান -খণ্ড পৃ:৮৭৭

৩৮ ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রনয়ণ পৃ: ৮৬

৩৯ ইসলামী শাসনতন্ত্রের মূলনীতি পৃ: ৮৬

৪০ মৌলিক মানবাধিকার পৃ: ৩২

৪১ ইসলামি রাষ্ট্রে অমুসলিমদের অধিকার পৃ: ৫০

৪২ দক্ষিণাত্যের রাজনৈতিক ইতিহাস পৃ: ২৮৬

৪৩ কুরআনের রাজনৈতিক শিক্ষা পৃ:

৪৪ জাতীয় ঐক্য গণতন্ত্রের ভিত্তি পৃ:২৪

৪৫ মুরতাদের শাস্তি পৃ: ৬৮


ইসলামি আন্দোলন সংগঠন

৪৬ ইসলামী দাওয়াত কর্মনীতি পৃ: ৪৭

৪৭ ইসলামি রেনেঁসা আন্দোলন পৃ: ১২২

৪৮ জামায়াতে ইসলামির উদ্দেশ্য ইতিহাস কর্মসূচী পৃ: ৮০

৪৯ আল্লাহর পথে জিহাদ পৃ: ৩২

৫০ ইসলামি আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি পৃ: ৬২

৫১ ইসলামি আন্দোলন সাফল্যের শর্তাবলী পৃ: ৬৪

৫২ মুসলমানদের অতীত, বর্তমান ভবিষ্যতের কর্মসূচী পৃ: ৭৮

৫৩ ইসলামি বিপ্লবের পথ পৃ: ৫৬

৫৪ ইসলামি আন্দোলনের ভবিষ্যত কর্মসূচী পৃ: ১৩৪

৫৫ আন্দোলন সংগঠন কৰ্মী পৃ: ২২৪

৫৬ দায়ী ইলাল্লাহ দাওয়াত ইল্লাল্লাহ পৃ: ৪২

৫৭ ভাঙ্গা গড়া পৃ: ৩২

৫৮ একটি সত্যনিষ্ঠ দলের প্রয়োজন পৃ:২৩

৫৯ শাহাদতে হুসাইন (রা:) পৃ: ১৬

৬০ বিশ্ব মুসলিম ঐক্যজোট আন্দোলন পৃ: ৪৩

৬১ সত্যের সাক্ষ্য পৃ:৪০

৬২ আজকের দুনিয়ায় ইসলাম পৃ: ৪২

৬৩ জামায়াতে ইসলামীর ২৯ বছর পৃ: ৫৪


অর্থনীতি ব্যাংক ব্যবস্থা

৬৪ ইসলামী অর্থনীতি পৃ: ৩২৮

৬৫ অর্থনৈতিক সমস্যার ইসলামী সমাধান পৃ: ৩৮

৬৬ কুরআনের অর্থনৈতিক নির্দেশিকা পৃ: ৫০

৬৭ ইসলাম আধুনিক অর্থনৈতিক মতবাদ পৃ: ১২৬

৬৮ ইসলামী অর্থব্যবস্থার মূলনীতি পৃ: ৩১

৬৯ সুদ আধুনিক ব্যাংকিং পৃ: ৩০২

৭০ ভুমির মালিকানা বিধান পৃ: ৯৬


দাম্পত্য জীবন নারী

৭১ পর্দা ইসলাম পৃ: ২৮০

৭২স্বামী স্ত্রীর অধিকার পৃ: ১৫১

৭৩ ইসলামের দৃষ্টিতে জন্মনিয়ন্ত্রণ পৃ: ১৩১

৭৪ মুসলিম নারীর নিকট ইসলামের দাবি পৃ: ২৪


তাযকিয়ায়ে নফস

৭৫ হিদায়াত পৃ: ৫৫

৭৬ ইসলামের বুনিয়াদী শিক্ষা পৃ: ২৭৪

৭৭ ইসলামী ইবাদতের মর্মকথা পৃ: ৮৮

৭৮ আত্মশুদ্ধির ইসলামী পদ্ধতি পৃ: ৪৮


সীরাত

৭৯ সীরাতে সরওয়ারে আলম - খণ্ড পৃ: ১২৭৬

৮০ খতমে নবুওয়াত পৃ: ৭৫

৮১ নবীর কুরআনী পরিচয় পৃ: ৪০

৮২ আদর্শ মানব পৃ: ৩২

৮৩ সাহাবায়ে কিরামের মর্যাদা পৃ: ৪০


সামগ্রিক

৮৪ রাসায়েল মাসায়েল - খন্ড পৃ: ১৬৭৯

৮৫ যুবসমাজের মুখোমুখি মাওলানা মওদূদী পৃ: ৪৫০

৮৬ যুগ জিজ্ঞাসার জবাব - খণ্ড পৃ: ৪৪৮

৮৭ বিকেলের আসর - খণ্ড পৃ: ২৫০

৮৮ পত্রাবলী - খন্ড পৃ: ৪৫৫

৮৯ বেতার বক্তৃতা

৯০ মাওলানা মওদূদীর সাক্ষাৎকার পৃ: ৪০০

৯১ খুতবাতুল হারাম পৃ: ৩৮

৯২ পত্রালাপ মাওলানা মওদূদী মরিয়ম জমিলা পৃ: ২০০

৯৩ কাদিয়ানী সমস্যা পৃ: ৭০

 

 

 

মাওলানা মওদূদী সম্পর্কে বাংলাভাষায় কয়েকটি বই

        বইয়ের নাম                              লেখকের নাম

. বিশ্বের মনীষীদের দৃষ্টিতে মাওলানা মওদূদী - আব্বাস আলী খান সম্পাদিত

. মাওলানা মওদূদী - আব্বাস আলী খান

. আলেমে দ্বীন মাওলানা মওদূদী - আব্বাস আলী খান

. ইসলামের পুনরুজ্জীবনে মাওলানা মওদূদীর অবদান - অধ্যাপক গোলাম আযম

. জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাস - আব্বাস আলী খান

.জামায়াতে ইসলামীর কার্যবিবরণী- ১ম খণ্ড

. জামায়াতে ইসলামীর কার্যবিবরণী- ২য় খণ্ড

. সত্যের আলো - মাওলানা বশীরুজ্জামান

. কুরআনের দেশে মাওলানা মওদূদী - মুহাম্মদ আসেম

১০. মাওলানা মওদূদীর বহুমুখী অবদান - আব্বাস আলী খান

১১. জামায়াতে ইসলামীর বিরোধিতার অন্তরালে - আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ

১২. আজাদী আন্দোলনে আলেম সমাজের ভূমিকা - জুলফিকার আহমদ কিসমতী

১৩. ছোটদের মওদূদী - শেখ আনসার আলী

১২. মাওলানা মওদূদীর বিরুদ্ধে অভিযোগের জবাব - মাওলানা আবদুল হাকীম

১৫. মাওলানা মওদূদীর বিরুদ্ধে অভিযোগের তাত্ত্বিক পর্যালোচনা - মুফতী মুহাম্মদ ইউসুফ

১৬. খৈলাফত রাজতন্ত্র গ্রন্থ সম্পর্কে অভিযোগের জবাব - বিচারপতি মালিক গোলাম আলী

১৭. মাওলানা মওদূদীকে যেমন দেখেছি - অধ্যাপক গোলাম আযম

 

 

 

তথ্যসূত্র সংগৃহীত-

০১. সংক্ষেপে মাওলানা মওদূদী – মু. সাইয়্যেদ আজম মওদূদী

০২. মাওলানা মওদূদী: একটি জীবন একটি ইতিহাস - আব্বাস আলী খান


সংকলনে: আরমানের খেরোখাতা