Close

শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০২২

ইসলামী রাজনীতিতে গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ : মু. ইমাম হোসাইন

গনতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থা পশ্চিমাদের আবিস্কৃত, তাই এটি জায়েজ না জায়েজ এবং হালাল-হারামের পক্ষ বিপক্ষ দলীল যুক্তি থাকতে পারে।
যেহেতু এই ব্যবস্থা নব্যআবিষ্কৃত, তাই উম্মাহর আলেমদের একটা অংশ গনতন্ত্রকে হারাম বললেও ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে শরিয়াহর মানদণ্ডে আধুনিক ইসলামী রাজনীতি তত্ত্বে প্রচলিত নির্বাচন ব্যবস্থাকে ক্ষমতা পরিবর্তনের মাধ্যম হিসেবে এটিকে জায়েজ পর্যায়ে ঘোষণা করে। 
এছাড়া দেশ এবং উম্মাহর কল্যানে ইসলামি রাজনীতিতে মনোনয়ন প্রাপ্ত প্রার্থীদের ভোট প্রদানে ইসলামী দলগুলো উৎসাহ দিয়ে থাকে এইজন্যে যে, তারা ইসলাম বিরোধীদের তুলনায় ইসলামের পক্ষেরই শক্তি।
 
বর্তমান আলেমদের যে অংশ গনতান্ত্রিক পন্থায় গনতন্ত্রের সমস্ত কর্মসূচিকে যারা হারাম ঘোষণা দিচ্ছে তাদের ব্যাপারে আমাদের কথা হচ্ছে, আপনারা প্রচলিত ইসলামি রাজনীতির বিপরীতে উম্মাহর সামনে কোন বিকল্প উপস্থাপন করেছেন?
খেলাফত প্রতিষ্ঠায় প্রচলিত ইসলামি রাজনীতি সুন্নাহ পদ্ধতি না হলে তাহলে আপনারা সুন্নাহর পদ্বতি পেশ করুন।
আদৌ কি করেছে? না।
 
আমার জানামতে সুন্নাহ পদ্ধতির যে দুটি প্রক্রিয়া হতে পারে তা হলো:
✅প্রথমত: হয় আপনি প্রতিষ্ঠিত এই সরকার এবং দেশের প্রচলিত সংবিধানের বিপক্ষে গিয়ে নিজের ইসলামি খেলাফত ঘোষনা করুন এবং মুসলিম উম্মাহকে আপনার আনুগত্যের আহবান করুন। যেমনটা আগেকার ইসলামি খেলাফতে (আম) হয়ে আসছে। যেমনঃ আব্বাসীয় এবং উসমানিয়দের খেলাফত এভাবেই ঘোষণা হয়েছে।

✅দ্বিতীয়ত: রাসুল (স) মদিনার নওমুসলিমদের আকাবার বাইয়াতের শপথে আশ্বস্ত হয়ে মদিনায় আগমন করলে, মদিনাবাসী রাসুল(স.) কে সর্বজনীন গ্রহন করলে রাসুল (স.) ইসলাম রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন।
এখন আপনি বাংলার মুসলিমদের নিকট থেকে সমর্থন নিয়ে ইসলামি রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা করুন। আর এই আধুনিক এই জীবন ব্যবস্থায় সমস্ত জনগণ অথবা বোদ্ধা নাগরিকদের ইসলামী রাস্ট্র সম্পর্কে সমর্থন নিতে একটি সুন্দর বিকল্প প্রদান করুন। আর না হয় সরাসরি রাসুল(স.) এর পদ্ধতিতে গ্রহন করতে আপনি কোন আনুষ্ঠানিক এবং সামগ্রিক প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন।

✔খেলাফতে রাশেদার ক্ষমতা গ্রহনের কোন পদ্ধতি এইদেশে ফলো হবেনা। কারণ, খেলাফতে রাশেদা মূলত রাসুল(স.) এর রাষ্ট্রীয় স্থলাভিষিক্ততা বা খেলাফত।
খেলাফতে রাশেদার পদ্ধতি অনুসরণ করতে হলে আগেই ইসলামি রাস্ট্র বা ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হতে হবে কারন খেলাফতে রাশেদার পদ্ধতি ইসলামী রাস্ট্রের অভ্যন্তরে খলিফা নির্বাচন ছিলো। আর বাংলাদেশে প্রথমে ইসলামি রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা তারপর খেলাফত নির্বাচন।
উম্মাহর সামনে কোন কর্মসূচি না রেখে গড়বাধা নিজের সংকীর্ণ চিন্তা থেকে কোন একটা পদ্ধতিকে হারাম ঘোষণা হলো উম্মাহর সাথে গাদ্দারি বা উম্মাহর বিনাশ সাধন।

পশ্চিমাদের ইংরেজি হারাম ঘোষনা দেওয়া যেমন জাহালত ছিলো, তেমনি ক্ষমতা পরিবর্তনে ইসলামি রাজনীতিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণকেও হারাম ঘোষনা হলো জাহালত ছাড়া কিছুনা। 
দ্বীন বিজয়ে দাওয়াহ’র কাজে আল্লাহ প্রদত্ত আয়াতে যে ‘হিকমত’ শব্দ ব্যবহার করেছেন তারই আলোকে শরিয়ত হারাম করেনা এমন যেকোন বিষয় উম্মাহর বৃহত্তর কল্যানে ব্যবহার করা শুধু জায়েজই নয় বরং উত্তম পদ্ধতি হতে পারে। [তবে পুরো গনতন্ত্র মতবাদের সাথে কোন ইসলামী দলই একমত নয়]

একটা অংশ তালেবানদের ক্ষমতা গ্রহনকে এর ফরমুলা হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়, আমার মনে হয় তারা তালেবানদের সম্পর্কে জানেই না।
মুলত ৯৫তে তালেবানরা নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসে। পরবর্তীতে আমেরিকার হস্থক্ষেপে তাদের পতন হলে তারা সশস্ত্র জিহাদে লিপ্ত হয় তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধির নেতৃত্বে। এবং বিশবছর পর তারা তাদের হারানো ক্ষমতা ফিরে পায়।
তাহলে আগেতো জনগনের সমর্থনে ক্ষমতায় আসতে হবে তারপরইতো ইসলামী রাস্ট্র রক্ষায় যাবতীয় প্রস্তুতি এবং সশস্ত্র জিহাদ। যেখানে নিজেদের রাস্ট্র নাই অবস্থা নাই দলাদলি-মারামারি আর সেখানে উনি আসছে কুফর ফতুয়া দিতে।

এরা উম্মাহর বড় গাদ্দার, এরা উম্মাহকে আবহমানকালের ধারাবাহিকতায় কিছু দিতে পারেনাই পারবেওনা। শুধু বড় কিতাবের জ্ঞান থাকলেই যে ফতুয়া দেওয়া যায় তেমন না তাকে সামগ্রিক প্রেক্ষাপট অবস্থা বাস্তবতা থেকেই আইন দিতে হবে।
....যেখানে পৃথিবী বিখ্যাত আলেম ড. ইউসুফ আল কারজাবী, তাক্বী উসমানিরা জায়েজ বলেছে আর উনি এখানে খানকাহর ফাঁকা আওয়াজে শুধু ফতুয়া বিলাচ্ছে।


লেখক:
মু. ইমাম হোসাইন
ইসলামী চিন্তাবিদ ও সংগঠক
(https://www.facebook.com/profile.php?id=100012718592294 )