Close

Friday, August 22, 2025

বইনোট : শিক্ষাব্যবস্থার ইসলামী রূপরেখা | অধ্যাপক গোলাম আযম (রাহি.)

বইনোট : শিক্ষাব্যবস্থার ইসলামী রূপরেখা | অধ্যাপক গোলাম আযম (রাহি.)

১) ভূমিকা ও প্রেক্ষাপট

১৯৫৬–৬১ সালে পাকিস্তানের শিক্ষা কমিশনকে ঘিরে লেখকের গবেষণা ও প্রবন্ধ থেকে বইটির সূত্রপাত। বারবার আলোচনা ও পরিমার্জনের পর এটি ২০০৪ সালে প্রথম বই আকারে প্রকাশিত হয়। লেখকের অভিযোগ, নীতিমালায় নৈতিকতা ও ইসলামী চেতনা অনুপস্থিত।

সারাংশ: বইটি দীর্ঘ আলোচনার ফসল; মূল সমস্যা—ইসলামী ভিত্তির অভাব।


২) বইয়ের উদ্দেশ্য

বাংলাদেশে শিক্ষা দুই মেরুতে—মাদ্রাসা বনাম আধুনিক শিক্ষা। কোনোটিই একা যথেষ্ট নয়। বইটির উদ্দেশ্য: ইসলামী আদর্শে ভিত্তিকৃত সমন্বিত শিক্ষার রূপরেখা দেওয়া।

সারাংশ: সমন্বিত ইসলামী-আধুনিক শিক্ষা দরকার।


৩) চারটি মৌলিক প্রশ্ন

শিক্ষাব্যবস্থা সাজাতে আগে নির্ধারণ করতে হবে:

১) শিক্ষা কী?

২) মানুষ কে?

৩) জাতীয় আদর্শ কী?

৪) বিদ্যমান শিক্ষার সমস্যা কোথায়?

সারাংশ: কাঠামোর আগে দর্শন জরুরী


৪) শিক্ষা কী

শিক্ষা হলো—“পরিকল্পিত ব্যবস্থায় মানুষের মধ্যে গুণাবলি ও জ্ঞান বিকাশ।” অন্য প্রাণীরা স্বভাবত শিখে, কিন্তু মানুষের জন্য কৃত্রিম/সচেতন আয়োজন দরকার।

সারাংশ: শিক্ষা = পরিকল্পিত মানবিক বিকাশ।


৫) মানুষ কে?

মানুষ দেহ–আত্মার সমন্বয়ে গঠিত নৈতিক জীব। শুধু জ্ঞান বা প্রযুক্তি নয়, নৈতিকতা ছাড়া শিক্ষা ব্যর্থ। দেহ বাহন, আত্মা পরিচালক।

সারাংশ: মানুষ নৈতিক-সত্তা, দেহ–আত্মা ভারসাম্য জরুরি।


৬) দেহ–আত্মার দ্বন্দ্ব

শুধু ভোগবাদ (দেহ) বা শুধু বৈরাগ্য (আত্মা) অমানবিক। ইসলাম মধ্যপথ নির্দেশ করে—প্রবৃত্তি ও বিবেকের সমন্বয়।

সারাংশ: শিক্ষা হবে প্রবৃত্তি–বিবেকের ভারসাম্যপূর্ণ।


৭) মানুষের উপযোগী শিক্ষা

কেবল ভৌত বা কেবল আধ্যাত্মিক শিক্ষা যথেষ্ট নয়। নৈতিক সীমার ভেতরে আধুনিক জ্ঞান প্রয়োগ করতে শেখায় এমন শিক্ষাই সঠিক।

সারাংশ: উপযোগী শিক্ষা = নৈতিকতা + জ্ঞান।


৮) জাতীয় আদর্শ ও শিক্ষা

প্রতিটি রাষ্ট্র শিক্ষায় নিজস্ব আদর্শ প্রতিফলিত করে। আদর্শ ছাড়া শিক্ষা অর্থহীন।

সারাংশ: শিক্ষা গড়ে আদর্শের মানুষ।


৯) বাংলাদেশের জাতীয় আদর্শ—ইসলাম

পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ইতিহাস, সংবিধান ও জনমত অনুযায়ী জাতীয় আদর্শ ইসলাম। সেক্যুলার ধারাকে জনগণ ও আইন প্রত্যাখ্যান করেছে।

সারাংশ: জাতীয় আদর্শ ইসলাম।


১০) শিক্ষাব্যবস্থার লক্ষ্য

ইসলামী মূল্যবোধে গড়ে তোলা নাগরিক, যারা আধুনিক জ্ঞানে দক্ষ হবে।

সারাংশ: আধুনিক দক্ষতা + ইসলামী নৈতিকতা।


১১) প্রধান অন্তরায়: দ্বিমুখী শিক্ষা

মাদ্রাসায় আধুনিক জ্ঞানের ঘাটতি, আধুনিক ধারায় ইসলামী চেতনার ঘাটতি। সমাধান: মেলবন্ধন।

সারাংশ: বিভক্ত শিক্ষা একতা ভাঙে।


১২) সংস্কারচেষ্টার সীমাবদ্ধতা

পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ—বিভিন্ন কমিশন ধর্মকে কেবল “বিষয়” বানিয়েছে, পূর্ণ দর্শন নয়। ফলে বাস্তবায়ন হয়নি।

সারাংশ: কমিশন রিপোর্ট আছে, পরিবর্তন হয়নি।


১৩) আধুনিক শিক্ষার গলদ

পাশ্চাত্য দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে জ্ঞান শেখানো হয়, পরে দীনিয়াত যোগ করলে তা বেমানান লাগে।

সারাংশ: সেক্যুলার কোর + ধর্মীয় অ্যাড-অন = দ্বিধা।


১৪) ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা কী চায়?

শুধু নামাজ–রোজা নয়; অর্থনীতি, রাজনীতি, বিজ্ঞান—সবকিছুতে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি যুক্ত শিক্ষা।

সারাংশ: ইসলাম = পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা


১৫) ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য

১) দীন–দুনিয়া মিলিত।

২) সব জ্ঞান ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে।

৩) ইসলামী পরিবেশ।

৪) উচ্চশিক্ষায় তুলনামূলক শ্রেষ্ঠতা।

৫) কুরআন–হাদিস–ফিকহে দক্ষতা।

সারাংশ: বিষয়বস্তু + পরিবেশ + উৎসে দক্ষতা।


১৬) বাস্তব রূপ (ক) দীন–দুনিয়া একীভূত

ধর্মীয়–পার্থিব আলাদা নয়। সব কাজ ইসলামী সীমায় হলে ইবাদত।

সারাংশ: শিক্ষা-জীবন একক ব্যবস্থা।


১৭) বাস্তব রূপ (খ) পরোক্ষ পদ্ধতি

শিক্ষায় সরাসরি নীতিশিক্ষা নয়; বিষয়ভিত্তিক উদাহরণে ইসলামী নীতি শেখানো। যেমন: সুদের অঙ্ককে যুলুম হিসেবে উপস্থাপন।

সারাংশ: বিষয়ভিত্তিক ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি।


১৮) বাস্তব রূপ (গ) পরিবেশ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নামাজ, পর্দা, নৈতিকতা—এসব অনুশীলন থাকতে হবে।

সারাংশ: পরিবেশ গড়ে চরিত্র।


১৯) বাস্তব রূপ (ঘ) উচ্চশিক্ষা

উচ্চশিক্ষায় ইসলামী বনাম পাশ্চাত্য দর্শনের তুলনা—ইসলামের যুক্তিগত শ্রেষ্ঠতা প্রমাণ করা।

সারাংশ: উচ্চশিক্ষায় ইসলামী কোর অপরিহার্য।


২০) উৎসে দক্ষতা

কুরআন–হাদিস–ফিকহে গভীর জ্ঞান থাকা জরুরি।

সারাংশ: উৎসে দক্ষতা ছাড়া শিক্ষার গভীরতা আসে না।


২১) শিক্ষকের ভূমিকা

শিক্ষকই আদর্শ। বইয়ের চেয়ে শিক্ষকের চরিত্র বড়।

সারাংশ: শিক্ষকই আসল কারিকুলাম।


২২) আধুনিক শিক্ষা-বিজ্ঞান ব্যবহার

আধুনিক টুলস (টেকনোলজি, গবেষণা) ইসলামী শিক্ষায় কাজে লাগাতে হবে।

সারাংশ: আধুনিক টুলস ইসলামী নীতিতে কাজে লাগান।


২৩) উপসংহার

পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সম্ভব, তবে ছোট ছোট মডেল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। “ইসলামই বাঁচিয়েছে, ইসলামই বাঁচাবে”—এই আশাবাদে সমাপ্তি।

সারাংশ: ছোট মডেল থেকে জাতীয় রূপায়ণ।


পুরো বইয়ের সামারি:

সমস্যা: দ্বিমুখী শিক্ষা ও আদর্শশূন্য দৃষ্টি।

সমাধান: ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিতে দীন–দুনিয়া একীভূত শিক্ষা, পরিবেশ-নির্ভর চরিত্রগঠন, উৎসে দক্ষতা ও আধুনিক টুলসের সৃজনশীল ব্যবহার।


সংকলনে: আরমানের খেরোখাতা

0 Comments: