মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৯
রবিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৯
নৈতিকতার অবক্ষয়ঃ এর হাত থেকে বাঁচার উপায়
বাংলাদেশের মানুষ কি দিন দিন চিরায়ত কৃষ্টি, সংস্কৃতি, নীতি-নৈতিকতা, পারিবারিক-সামাজিক মূল্যবোধ, ধর্মীয় বিধি-নিষেধ ও অনুশাসন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে? এ প্রশ্ন এখন খুব বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। এর কারণ দেশের বিভিন্ন জনপদে একের পর এক যেসব অনৈতিক ও অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে চলেছে, সেসব ঘটনা কোনোভাবেই আমাদের দেশের মানুষের আচার-আচরণের সঙ্গে মেলে না। আমাদের চিরায়ত বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে, আদব-কায়দা ও মায়া-মমতার মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করা। পরিচিত হোক আর অপরিচিত হোক, একের দুঃখে অপরের দুঃখিত হওয়া, সহমর্মীতা প্রকাশ করা, পাশে দাঁড়িয়ে সান্তনা দেয়া। তরুণদের কেউ বেয়াদবির পথে ধাবিত হলে, তাকে বারণ করা। সমাজে অসঙ্গতি দেখা দিলে, সামাজিকভাবে তা সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া, এমনকি পারিবারিক কলহ মিটাতেও এগিয়ে আসা।
বাংলাদেশের মানুষের বৈশিষ্ট্য তো এই যে, তারা সমাজ ও পরিবারে শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে সবসময়ই সচেতন। এমনকি অতিথিপরায়ণতার দিক থেকেও অতুলনীয় বৈশিষ্টের অধিকারী।
আমাদের সমাজে নৈতিক অবক্ষয়ের যে মহামারি চলেছে, তা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো ইসলাম। ইসলামের নীতি-আদর্শের মাঝেই রয়েছে নৈতিক মূল্যবোধের সমাহার। নৈতিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামের আলোকে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া জরুরি তা তুলে ধরা হলো।
ইসলামের আদর্শ ও মূল্যবোধ থেকে বিচ্যুতির কারণেই তরুণ ও যুব সমাজ নৈতিক অবক্ষয়ের চোরাবলিতে হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষের জীবনকে সার্থক ও সৌন্দর্যময় করে নৈতিক মূল্যবোধ। উন্নত মানুষ ও সুস্থ সমাজ গঠনে নৈতিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। নৈতিক মূল্যবোধ বলতে সততা, বিশ^স্ততা, ন্যায়নীতি, ধৈর্য-সহিষ্ণুতা, মায়া-মমতা, ক্ষমা, উদারতা, সহনশীলতা, সহমর্মিতা, সদাচরণ প্রভৃতি মানবীয় গুণাবলির সমষ্টিকে বোঝানো হয়। ইসলাম মানবজাতিকে এসব মহৎ গুণ অর্জনের জন্য উৎসাহিত করে থাকে। তবে ইসলামে নৈতিকতার মূল ভিত্তি হলো তাকওয়া বা আল্লাহভীতি। ইসলাম আল্লাহভীতি ও পরকালের চেতনা উপস্থাপন করে মানুষের ধ্যান-ধারণাকে এমন এক জগতের দিকে ঘুরিয়ে দেয়, যার কল্পনা মানুষকে যাবতীয় অপরাধ ও গোনাহ থেকে বিরত রাখে। জনমনে আল্লাহ তায়ালা ও পরকালের ভয় সৃষ্টি করা ছাড়া অপরাধ দমন করা সম্ভব নয়। তাই তরুণ প্রজন্মকে তাকওয়ার প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধকে জাগ্রত করতে হবে।
পরিবারের সবাইকে নামাজি হিসেবে অভ্যস্ত করে তোলা অভিভাবকদের দায়িত্ব। কারণ নামাজ সব অনাচার ও অশ্লীলতা থেকে বাঁচাতে পারে। এরশাদ হচ্ছে, ‘তুমি তোমার পরিবারের লোকদেরকে নামাজের আদেশ দাও এবং নিজেও এর ওপর অবিচল থকো।’ (সূরা ত্বাহা : ১৩২)। অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে, ‘নামাজ কায়েম করো। অবশ্যই নামাজ অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সূরা আনকাবুত : ৪৫)।
পারিবারিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, ইন্টারনেট ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে ভিনদেশিদের সিনেমা-নাটকের কুপ্রভাব তরুণ-তরুণীদের মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে। অশ্লীলতা সামাজিক অনাচার সৃষ্টি করে। এ জন্য অশালীন বেশভূষা, অশ্লীল পোশাক ও জেনা-ব্যভিচার ইসলাম কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। এটা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ।’ (সূরা বনি ইসরাইল : ৩২)।
সন্তানদের সঙ্গে অভিভাবকদের ঘনিষ্ঠতা বাড়তে হবে। সন্তানরা কাদের সঙ্গে ওঠবস ও মেলামেশা করছে অভিভাবকদের সেদিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রয়োজনে ভালো বন্ধু নির্বাচনে সহায়তা করতে হবে। ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’ এটি শুধু প্রবাদ নয় বরং বাস্তবতাও। ভাল বন্ধু নির্বাচন করা ইসলামের অন্যতম শিক্ষা। সৎ ও বিশ্বস্ত মানুষকে বন্ধু নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গী হও।’ (সূরা তওবা : ১১৯)।
বিচার কাজে পক্ষপাতিত্ব, বিচারহীনতার অপসংস্কৃৃতি ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাবে খুন ও ধর্ষণের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কাজেই অপরাধীদের অতি দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। অপরাধ বন্ধে এর কোনো বিকল্প নেই। অপরাধীদের কোনোভাবেই আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া চলবে না। ক্ষমতাবান বা প্রভাবশালী বলে কোনো অপরাধী যেন পার পাওয়ার সুযোগ না পায়, তা সুনিশ্চিত করতে হবে। ইসলাম ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। শত্রুতা বা স্বজনপ্রীতির কারণে বিচারে পক্ষপাত করার সুযোগ ইসলামে নেই। আল্লাহ তায়ালার এরশাদ, ‘কোন সম্প্রদায়ের শত্রুতার কারণে কখনও ন্যায়বিচার পরিত্যাগ করো না।’ (সূরা মায়েদা : ৮)। ‘সুবিচার কর, যদিও সে আত্মীয়ও হয়।’ (সূরা আনআম : ১৫২)। ন্যায়বিচারের ব্যাপারে মহানবীর দ্ব্যর্থহীন উক্তি ছিল, ‘আজ আমার মেয়ে ফাতেমাও যদি চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে যায় তবে আমি প্রথমে আমার মেয়ের হাত কেটে দেব।’ ‘অন্যায়কারী দলের লোক হোক বা যত বড় ক্ষমতাধর হোক ছাড়া পাবে না’ এটা ন্যায়বিচারের মূলনীতি হওয়া উচিত।
আমাদের সমাজে সততা ও নৈতিকতার দুর্ভিক্ষ চলছে। অন্যায়কে অপরাধ বলে বিবেচনা করা হয় না। নীতিভ্রষ্ট ও দুষ্ট মানুষদের অপরাধী বলে গণ্য করা হয় না। জীবনের লক্ষ্য ও উন্নতি বলতে বোঝানো হয় কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ও সম্পদ অর্জন। কিন্তু সে টাকা ও সম্পদ কোন পথে এলো তা নিয়ে কারও ভাবার সময় নেই। যে সন্তান তার বাবাকে অহরহ মিথ্যা বলতে দেখে, কাজে ফাঁকি দিতে দেখে, ঘুষ খেতে দেখে, অন্যের সম্পদ অবৈধভাবে গ্রাস করতে দেখে তার নৈতিক ভিত তো দুর্বল হবেই। তরুণরা দেখতে পায় যে, বড়রা বা ক্ষমতধররাই নিজেদের স্বার্থে সন্ত্রাসীদের লালন করছে। সন্ত্রাসীরা সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। তাই তারাও এই পথে অগ্রসর হতে উৎসাহবোধ করে।
সভ্যতা ও নৈতিকতা বিধ্বংসী যাবতীয় অনাচারের মূলোৎপাটনে ইসলাম কঠোর হতে বলেছে। অনুরূপভাবে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, সুদ, ঘুষ, প্রতারণা, শোষণ প্রতিরোধ ছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা আসবে না।
রাসুলুল্লাহ (সা.) সব ধরনের অন্যায় প্রতিরোধের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কাউকে অন্যায় কাজ করতে দেখে তাহলে সে যেন তার শক্তি দ্বারা তা প্রতিহত করে। যদি সে এতে অক্ষম হয়, তবে মুখ দ্বারা নিষেধ করবে। যদি সে এতেও অপারগ হয় তবে সে অন্তর দ্বারা ঘৃণা পোষণ করবে।’ (মুসলিম : ১৮৬)।
-সম্পাদকীয়
রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৯
সর্বশ্রেষ্ঠ সফল ব্যক্তিত্ব মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) -মুহাম্মদ ইয়াছিন আরাফাত
শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০১৯
"যা কিছু করেছি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করেছি" -প্রফেসর ডক্টর নাজমুদ্দিন এরবাকান
একজন প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী হিসেবে গড়ে ওঠা তুরস্কের ইসলামী আন্দোলনের প্রণেতা এবং সাবেক তার্কিশ প্রেসিডেন্ট হিসেবে খ্যাত সমগ্র মুসলিম উম্মাহর বুকে জায়গা করে নেয়া এক ব্যাক্তিত্বের নাম মুহম্মদ নাজমুদ্দিন এরবাকান। ৭০-৮০ এর দশকের দিকে তুরস্কের একের পর এক প্রজন্ম যখন তথাকথিত সেক্যুলারিজমের ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বেড়ে উঠছে,তিনিই সেই নেতা যিনি ইসলামের পতাকা হাতে সামনে এগিয়ে আসেন এক জিহাদের উদ্দেশ্যে। সেই জিহাদ নিঃসন্দেহে এক বিপ্লব সংঘটিত করেছিল যা আজও আধুনিক তুরস্কে বহমান। তাকে নিয়ে যতবারই পড়েছি,এখনও পড়ছি,ততবারই মুগ্ধ হয়েছি। অনেক ব্যাস্ততার মাঝে একটু ফুরসত পেয়ে তাকে নিয়ে কিছু লেখার মন:স্থির করলাম।
নাজমুদ্দিন এরবাকানের কর্মজীবন শুরু তৎকালীন জার্মানির সর্ববৃহৎ ইঞ্জিন ফ্যাক্টরি ডয়েজের লিওপার্ডো ট্যাংকের ইঞ্জিন বিষয়ক প্রধান ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। সেখানে কিছুকাল কাজ করার পর দেশে ফিরে আসেন এবং দেশে ফিরে স্থানীয়ভাবে ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তারই ধারাবাহিকতায় গড়ে তোলেন 'গুমুশ মোটরস' নামক তুরস্কের সর্বপ্রথম ইঞ্জিন কোম্পানি। এটা ছিল তার জীবনে একটা অনেক বড় সংগ্রাম এবং এজন্য তিনি অভ্যন্তরীণ ইয়াহুদি লবির ষড়যন্ত্রের শিকার হন। যদিও চড়াই উতরাই পার করে এই কোম্পানিকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। ইঞ্জিন কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করার সময় তিনি দেখতে পান যে,দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তাগণ যাতে কোনভাবেই অগ্রসর হতে না পারে সেজন্য সরকারি আমলাতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এক অদৃশ্য হাতের ইশারায় দেশীয় উদ্যোক্তাদের সাথে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করে যাচ্ছে। এর অবসানের জন্য তিনি এই প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করেন এবং অল্প সময়ের মধ্যে এর সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি সভাপতি হওয়ার পরপরই সেখানে সাম্য প্রতিষ্ঠার দিকে গুরুত্ব দেন যার কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই রাজনৈতিক শক্তির বলে তাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তিনি রাজনীতিতে আসার ঘোষণা দেন।
তুরস্কে ইসলামী আন্দোলনের পদযাত্রা শুরু হয় তারই রাজনৈতিক দল 'মিল্লি গুরুস' এর মাধ্যমে। তিনি বলতেন,'আমি রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত নই,জিহাদ দ্বারা প্রভাবিত'। মিল্লি গুরুস অর্থ হল জাতীয় ভিশন, এটি ছিল প্রতীকী শব্দ কারণ তুরস্কে ইসলামের নামে যে কোন ধরণের সংগঠন করা নিষিদ্ধ ছিল। যদিও তিনি মিল্লি গুরুস দ্বারা সমগ্র মুসলিম মিল্লাতের ভিশনকেই বুঝাতেন। মিল্লি গুরুসের অনেকগুলো উদ্দেশ্যের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ছিল-
আধ্যাত্মিক উন্নতি,অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বিতা এবং অনুগত কামালিস্ট ইউনিয়নের বদলে সাম্যবাদী ইসলামী ইউনিয়ন গড়ে তোলা। মিল্লি গুরুস প্রতিষ্ঠা করার পর তিনি প্রতিষ্ঠা করেন মিল্লি নিজাম পার্টি। কিন্তু অন্যান্য রাজনৈতিক দলের রোষানলে পড়ে মাত্র ১ বছরের ব্যবধানে দলটিকে নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর নাম বদলিয়ে গঠন করেন মিল্লি সালামত পার্টি। এই দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে কোয়ালিশন সরকার গঠন করার অনুমতি পায় এবং এরবাকান হন উপ-প্রধানমন্ত্রী। তার এই কোয়ালিশন সরকারের সময় ৬ হাজার মুসলিমকে মুক্ত করে দেয়া থেকে শুরু করে সাইপ্রাসকে গ্রিস থেকে মুক্ত করে তার্কিশ সাইপ্রাস গঠন করা,নতুন করে মাদ্রাসা শিক্ষা চালু করা,ব্যাপক কোরআন কোর্স চালু করা,মাদ্রাসার ছাত্রদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া,বিশ্ববিখ্যাত আলেম বদিউজ্জামান সাইদ নূরসীর রিসালায়ে নূরের উপর থেকে নিষধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা,সকল প্রতিষ্ঠানে মসজিদ নির্মাণ করা এবং অশ্লীলতা বেহায়াপনা দূর করার লক্ষ্যে আইন করাসহ তিনি অনেক কাজ করেন। এরপর ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৮০তে তুরস্কের কোনিয়াতে কুদস দিবসের সমাবেশ পালনের অভিযোগে ১২ সেপ্টেম্বর ১৯৮০ সালে সামরিক শাসকগণ ক্যু করে এই পার্টিকেও নিষিদ্ধ করে দেয়। এরবাকানকে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ এবং তাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়। অবশেষে ৮৩ সালে তার উপর যুলুম নির্যাতনের অবসান হয় এবং জেল থেকে বেরিয়ে গঠন করেন রেফাহ পার্টি। একাধিকবার তার রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধের পর এই পার্টিই অনেকদিন সংগ্রামে টিকে থাকে। ৮৪ সালে রেফাহ পার্টিতে যোগদান করেন বর্তমান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এবং সমগ্র বিশ্বের তুমুল জনপ্রিয় নেতা রেজেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ান। ১৯৮৭ সালে গণভোট করে এরবাকানের উপর থেকে রাজনৈতিক নিষধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় তিনি আবারো পূর্ণাঙ্গভাবে রাজনীতিতে আসেন এবং রেফাহ পার্টির সভাপতি নির্বাচিত হন। তার সভাপতিত্ত্বে রেফাহ পার্টি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। তারই ধারাবাহিকতায় ৯৪-তে এরদোয়ান রেফা পার্টি থেকে ইস্তাম্বুলের সিটি কর্পোরেশনে জয়লাভ করে। ১৯৯৬ সালে জাতীয় নির্বাচনে তার দল জয়লাভ করে। কিন্তু এই সরকার মাত্র ১১ মাস ক্ষমতায় টিকতে পারে। পরবর্তীতে এক পোস্ট মর্ডাণ ক্যূ করে তাকে ক্ষমতাচ্যূত করা হয়। এরবাকান তার ১১ মাসের শাসনামলে ইসলামকে সমৃদ্ধ করার জন্য একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তার মধ্যে সবথেকে বড় উদ্যোগ ছিল ৮টি মুসলিম দেশ নিয়ে D-8 সম্মেলন প্রতিষ্ঠা করা। এছাড়াও সুদের হার কমিয়ে আনা,সকলের বেতন বৃদ্ধি,শিল্পায়নে গতি ফিরিয়ে আনা এমন বেশ কিছু উদ্যোগ তিনি নিয়েছিলেন। কিন্তু যখনই তিনি রাজনীতিতে একটু আলোর মুখ দেখতেন,তখন থেকেই তার পুনরায় সংগ্রামের প্রহর গোনা শুরু হয়ে যেত। এবার তাকে প্রতারণার মুখে পড়তে হয়। তার উক্ত সফলতায় সেক্যুলাররা রেফাহ পার্টিকে নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে সকল প্রকার প্রোপাগান্ডা চালায় ও তার পার্টি শরিয়ত কায়েম করবে এমন অযুহাতে তাকে সরানোর জন্য সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করে। এই অবস্থায় এরবাকান প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে ইস্তফা দেয়ার ঘোষণা দেন,তবে শর্ত আরোপ করেন যে সে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিলে তার কোয়ালিশন পার্টির নেতা তানসু চিলারকে প্রধানমন্ত্রী করতে হবে। কিন্তু সেক্যুলারিস্ট ও ইহুদিদের তৎকালীন ক্ষমতাসীন নেতা সোলায়মান দেমিরেল বিশ্বাসঘাতকতা করে মেসুদ ইলমাজকে প্রধানমন্ত্রী করে এবং রেফাহ পার্টিকে নিষিদ্ধ করার নীলনকশার চূড়ান্ত পদক্ষেপটি নেওয়া হয় এরবাকানকে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে। এরপরে এরবাকান হুজার(শিক্ষকরুপে সম্বোধন করে হুজা বলত সবাই) রাজনৈতিক জীবনের পরিসর অল্প এবং কম গুরুত্বপূর্ণ। রেফাহ পার্টি নিষিদ্ধ হলে তারই দলের নেতা রেজাই কুতান ফাজিলত পার্টি গঠন করে যা '৯৯ এর নির্বাচনে মুখ থুবড়ে পড়ে। ৯৬ সালে ২২% ভোট পেয়ে কোয়ালিশনে আসতে পারলেও '৯৯ সালের নির্বাচনে সেই হার তলানিতে গিয়ে ঠেকে।
১৯৯৯-২০০১ সাল ছিল সম্ভবত তুরস্কের সবচেয়ে বাজে রাজনৈতিক সময়। সেই সময়ই তুরস্ক ইউরোপের রুগ্ন দেশ হিসেবে খ্যাতি লাভ করে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে কোয়ালিশনে থাকা দলগুলোর মধ্যকার কোন্দল, প্রাকৃতিক দূর্যোগ ভূমিকম্পে দেশে টালমাটাল অবস্থা এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার মতো সামর্থ্য ছিল না সরকারের। ২০০১ সালে এরবাকানের দলীয় নেতাদের মধ্যে মতানৈক্যের অভাব দেখা দেয়। দুইটি ধারার অনুসারীরা বিভক্ত হয়ে পড়ে। প্রবীণ নেতাসহ বেশ কিছু নেতারা গতানুগতিক প্রথা ধরে রাখার অনুসারী ছিল। তারা আবার নতুন নাম করে নতুন একটি দল গঠন করার চিন্তাভাবনা করছিলো। অপর দিকে নবীণ এবং প্রগতিশীল চিন্তাধারার নেতারা গত ২০-২৫ বছরের রাজনীতি পর্যালোচনা করে তাদের রাজনীতিতে ভিন্ন কিছু পলিসি ও বৈশিষ্ট্য আনার পক্ষপাতি ছিল। ট্রাডিশনাল ধারার নেতা ছিলেন এরবাকান এবং তাদের প্রবীণ অনুসারীরা। এবং নতুন ধারার অনুসারী ছিল এরবাকানেরই শিষ্য এরদোয়ান ও নতুন এবং উৎসাহী বেশ কিছু নেতা। যদিও তাদের মধ্যকার যেই মূল বিশ্বাস অর্থাৎ ইসলামপন্থী ও জিহাদের রাজনৈতিক আদর্শে কোন ছেদ পড়েনি। এরদোয়ান কনজারভেটিভ ডেমোক্রেসি আদর্শ সংযোজন করে একে পার্টি গঠন করেন এবং মূলধারার রাজনীতিতে এরবাকানের আদর্শ বহমান রাখেন। এরবাকান গঠন করেন সা'দাত পার্টি। ২০০২ সালের নির্বাচনে একে পার্টির ভূমিধস জয় হয়।আল্লাহর শুকরিয়া তখন থেকে এখনও পর্যন্ত এরদোয়ান সফলভাবে তাদের মিশন ও ভিশন চালু রাখতে সমর্থ হয়েছেন এবং আধুনিক তুরস্কে গণতন্ত্র ও কল্যাণকামী একটি সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
একে পার্টির উত্তরোত্তর সফলতায় এরবাকানের রাজনৈতিক অবদান ধীরে ধীরে ম্লান হতে থাকলেও শেষ পর্যন্ত তার আদর্শেরই জয় হয়েছে,তার আদর্শ পূর্ণতা পেয়েছে হোক তা তার শিষ্যের মাধ্যমে। আনুমানিক তার দীর্ঘ ৩০ বছরের সংগ্রামে তিনি যেভাবে তুরস্ক গঠন করতে চেয়েছিলেন বর্তমান তুরস্ক তেমনই হয়তোবা তার থেকেও সুন্দর। তার আদর্শ আজ প্রতিষ্ঠিত। শত ঘাত-প্রতিঘাতময় তার সংগ্রামী জীবন আমাদের এটাই শেখায় যে যতই বিপদ-বিপর্যয় আসুক,থেমে থাকা যাবে না। আল্লাহর কাছে সাহায্য ও শুকরিয়া আদায় করে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে যতক্ষণ চিত্তে প্রাণ থাকবে।
তার কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১- আধ্যাত্মিক উন্নয়নকে সরকারী কাজের মধ্যে অন্তর্ভুক্তিকরন
২- পুনরায় মাদ্রাসা স্থাপন
৩- ৫০০০ এর বেশী কুরআন কোর্স চালু করা
৪- সকল স্কুলে দ্বীন ও আখলাক দারস বাধ্যতামূলক করে দেওয়া
৫- মুসলিম দেশসমূহ থেকে পাশ করে আসা শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেটের স্বীকৃতি দেওয়া। (বর্তমান সময়েও যা নাই। কয়েকটি দেশের সার্টিফিকেটকে এখনো স্বীকৃতি দেওয়া হয় না)
৬- তুরস্ককে ওআইসির অন্তর্ভুক্তিকরন
৭- ইসলামীক ডেভলেপমেন্ট ব্যাংক গঠনে অগ্রনী ভূমিকা পালন
৮- তুরস্কে সুদ মুক্ত ব্যাংক চালু করা (বর্তমানে যেখানে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় অবস্থিত)
৯- ভারী শিল্প কারখানা স্থাপন করা। ২৭০ টির বেশি ভারী শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠা করেন।
১০- নতুন বৃহৎ তুরস্কের পরিকল্পনা
১১- ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য জাতির সামনে ১০০ বছরের বিস্তারিত ভিশন পেশ করা।
১২- তুরস্ক এবং ইরানের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং ডলারের পরিবর্তে স্থানীয় মুদ্রা দিয়ে ব্যবসা শুরু করা।
১৩- বসনিয়াকে স্বাধীন করার জন্য মুজাহিদ বাহিনী প্রেরণ এবং সেখানে অত্যাধুনিক অস্ত্র কারখানা প্রতিষ্ঠা করা।
মিল্লি সালামেত ও রেফাহ পার্টির শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত কারখানা-
১৮ টি সিমেন্ট ফ্যাক্টরি,
১৬ টি সার-কারখানা,
১৪ টি চিনির ফ্যাক্টরি...
২৩ টি সুমের ব্যাংক ফ্যাক্টরি
৬ টি উদ্ভিদ ফ্যাক্টরী
৭৭ টি বৃহৎ শিল্প সেবা প্রতিষ্ঠান
৬৩ টি organized industrial Zone
২৫৩ টি ছোট শিল্প-কারখানা,
৩২ টি বৃহৎ মেশিনারী ফ্যাক্টরী
৪ টি নৌ কারখানা
১০ টি ইঞ্জিন ফ্যাক্টরী
১১ টি ইলেক্ট্রো-মেকানিক্যাল শিল্প-কারখানা
৩ টি গবেষণা সেন্টার(প্রাকৃতিক সম্পদ)
৪ টি ইলেক্ট্রোনিক শিল্প-কারখানা এবং
সর্বশেষ Taksan প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যা ছিলো “ফ্যাক্টরী বানানোর ফ্যাক্টরী।” মানে অন্যান্য ফ্যাক্টরী বানাতে হলে যা সরঞ্জাম লাগবে তা এই ফ্যাক্টরি সরবরাহ করবে।
এতো কম সময়ে এরকম উৎপাদন আর কেউ করে দেখাতে পারে নি তার্কির ইতিহাসে।
৮৫ বছর বয়সে ২০১১ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারী সবাইকে কাঁদিয়ে মহান প্রভুর কাছে চলে যান মহান এই নেতা। তার জানাযায় এত পরিমাণে লোক হয়েছিল যে,তুরস্কের ৩০০০ বছরের ইতিহাসে এর আগে এত লোকের সমাগম হয় নি। অফিশিয়াল তথ্য মতে প্রায় ৩৫-৪০ লাখ লোকের সমাগম হয়েছিল তার জানাযায়। তিনি মৃত্যুর আগে বলেছিলেন,তার মৃত্যুর পর সরকার বিশেষ কোন সম্মানে যেন তাকে দাফন না করা হয়। অতঃপর তার দুই ছাত্র তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রেজেপ তায়্যিপ এরদোয়ান এবং আব্দুল্লাহ গুল লাশের খাটিয়া ধরে তার লাশ বহন করেন এবং সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে ভূষিত করা হয়।
তথ্যসূত্র: দাওয়াম:আমার সংগ্রাম; প্রফেসর ডক্টর নাজমুদ্দিন এরবাকান ও উইকিপিডিয়া
রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৯
২৮ অক্টোবর প্রেরণার উঁচু মিনার-মুহাম্মদ আবদুল জব্বার
শনিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৯
ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ ও ব্যবহারিক জীবন || ড. মোবারক হোসাইন
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমরা কি দেখ না আল্লাহ্ নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে, সবই তোমাদের কাজে নিয়োজিত করে দিয়েছেন এবং তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নেয়ামতসমূহ পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন।” (সূরা লুকমান : ২০) এ পৃথিবীতে আল্লাহ পাক যা কিছু সৃষ্টি করেছেন সবকিছু মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আর আল্লাহ পাকের গোটা সৃষ্টিজগৎ হলো পরিবেশ। পরিবেশ কথাটি আভিধানিক অর্থে ঠিকানা, অবস্থা এবং প্রকৃতিকে বোঝানো হয়া। আল্লাহ পাক কুরআনে পরিবেশের কথা বলেছেন নিম্নোক্তভাবে, যখন আমি ইবরাহিমকে বায়তুল্লাহর স্থান ঠিক করে দিয়েছিলাম যে, আমার সাথে কাউকে শরিক করো না। (সূরা হাজ : ২৬) তোমাদেরকে পৃথিবীতে ঠিকানা দিয়েছেন। (সূরা আরাফ : ৭৪) আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা বলেন, “যে নিজেকে শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয় এবং যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়।” (সূরা শামস : ৯-১০) ইসলাম ধর্ম হলো মানবতার জন্য বিশ্বজনীন এক ধর্ম। এ ধর্ম মানুষকে সর্বদা সুন্দর চরিত্র গঠনের শিক্ষা দেয় সিদ্দীকগণের আমলসমূহের ভেতর এটা সর্বোত্তম। যারা নিজেদের জীবনকে সুন্দর ও ঠিক রাখবে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী তাদের মর্যাদা ও সম্মান দুনিয়া এবং আখেরাত দুই জীবনে উন্নতি হবে। ইসলাম মানুষকে কিভাবে নীতি-নৈতিকতার দিকে পরিচালিত করবে সে ব্যাপারে রয়েছে কিছু বিশ্বাস ও নীতিমালা।
– পরিবেশ ব্যতীত কোন প্রাণী বাঁচতে পারে না।
– পরিবেশ অনুযায়ী লোক তৈরি হয় না।
– লোক অনুযায়ী পরিবেশ তৈরি হয় না।
– তাই মানুষ তৈরির জন্য পরিবেশ মৌলিক শর্ত।
– পরিবেশ যত ভাল ও উন্নত হয় ততই ভাল মানুষ তৈরি হয়। ব্যবহারিক জিন্দেগির বাস্তব প্রতিফলন ঘটে Practical life-এ.
– ব্যবহারিক জীবন সাধারণত পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রভাবে প্রভাবিত হয়- যেমন পরীক্ষার হলে নকল প্রবণতা
– মুখের কথার চেয়ে নবী ও সাহাবীদের ব্যবহারিক জীবন দেখে লোকজন বেশি আকৃষ্ট হয়েছে। হাদীস- “বুইসতু লিউতিম্মা মাকারিমাল আখলাখ।”
– একজন ঈমানদারের বাস্তব জীবন হবে রুচিসম্মত, সুন্দর, মার্জিত, অনুকরণীয়, আকর্ষণীয়
সংগঠনের উপাদান ৩টি
১. নেতৃত্ব
২. জনশক্তি
৩. কার্যবিধি
ইসলাম হলো :
ISLAM,
l S=Shall
l L=Love
l A=All
l M=Mankind
l I shall Love all mankind
ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম
ইসলাম একটি জীবন ব্যবস্থা
ইসলামী সংগঠন : যে সংঘ আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে তাকে ইসলামী সংগঠন বলে।
ইসলামী সংগঠনের উপাদান :
১. ইসলামী নেতৃত্ব
২. ইসলামী কর্মী বাহিনী
৩. ইসলামী পরিচালনা বিধি
পরিবেশ বলতে কী বুঝি?
(What is environment?)
The environment includes factors outside the organization which can lead to opportunities for or threats to the organization
– Oxford Dictionary তে বলা হয়েছে।
Surrounding and conditions in which people.অর্থ চতুর্পাশ্ব এবং তার অবস্থা যেখানে মানুষ বসবাস করে।
The sorrounding or condition in which a person or any things livees or oparates
– আমরা সাধারণত : আমাদের চার পাশে যা কিছু আছে তাকে পরিবেশ বলি।
– গোপালনাথ খান্না বলেন, “Environment as the sum of total effects the development and life of organism.”
ইসলামী সংগঠনের পরিবেশ :
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, কর্মসূচি ও কর্মপদ্ধতির আলোকে মানুষ যে কর্মতৎপরতা চালায় তাতে একটা অবস্থা সৃষ্টি হয় একেই বলে পরিবেশ।
তাওহিদ, রিসালাত ও আখেরাত বা ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হিসেবে লক্ষ্য উদ্দেশ্য, কর্মসূচি ও কর্মপদ্ধতির আলোকে যে কর্মতৎপরতা চালায় তাতে যে পরিবেশের সৃষ্টি হয় তাকে ইসলামী সংগঠনের পরিবেশ বলে।
নেতা ও কর্মীর মাঝে কাঙ্ক্ষিত গুণাবলি অর্জনের মাধ্যমে যে পরিবেশের সৃষ্টি হয় তাকে ইসলামী সংগঠনের পরিবেশ বলে। ইসলামে সাংগঠনিক পরিধি এবং তার অবস্থা যেখানে কর্মী, সাথী, সদস্য বা নেতা-কর্মী বসবাস করে।
সাংগঠনিকভাবে আমাদের চার পাশে আছে- সমর্থক, কর্মী, সাথী, সদস্য ও শুভাকাক্সক্ষী।
দায়িত্বশীল > কর্মী
কর্মী > দায়ীত্বশীল
দায়িত্বশীল ও কর্মী > সাধারণ এর সাথে। (সমর্থক, শুভাকাক্সক্ষী)।
ইসলামী পরিবেশ : ড. মাহমুদ সালেহ আদেলী বলেন, “মানবমণ্ডলীকে বেষ্টন করে আল্লাহ তায়ালার যে সমগ্র সৃষ্টিজগৎ তাকেই ইসলামী পরিবেশ বলা হয়া। v”
ইসলামী পরিবেশ নির্ভর করে :
নেতা দায়িত্বশীলের আচরণের ওপর।
কর্মীদের আচরণের ওপর।
নেতা ও কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর।
পরিবেশের গুরুত্ব : ইসলাম পরিবেশকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। মিসরের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন আল্লামা সাইয়েদ তানতাবী তাঁর এক বইয়ে লিখেছেন, আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনের মধ্যে পাঁচ শতবার পরিবেশ সংরক্ষণ এবং পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার জন্য উৎসাহিত করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানবজাতিকে বলেছেন, এই পৃথিবী তোমাদের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তোমরা একে আবাদ কর। তিনি বলেন : ‘তিনিই জমিন হতে তোমাদেরকে পয়দা করেছেন এবং তন্মধ্যে তোমাদেরকে বসতি দান করেছেন।’ (সূরা হুদ : ৬১) পরিবেশ সংরক্ষণের মাধ্যমে পৃথিবী আবাদ হতে পারে; মানুষের বসবাসের উপযোগী হতে পারে। আর পরিবেশ যখন সংরক্ষণ করা হবে না তখন এই দুনিয়া বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।
পরিবেশ প্রধানত দুই প্রকার :
অভ্যন্তরীণ পরিবেশ (internal environment) : internal environment includes the forces inside the organization that can influence the organization and its performance. সংগঠনের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ নির্ভর করে সংগঠনের নেতা ও কর্মীর পারস্পরিক প্রচেষ্টার ওপর। অভ্যন্তরীণ পরিবেশের জন্য সংগঠন এগিয়েও যেতে পারে, পিছিয়েও যেতে পারে। যেমন, সমর্থক, কর্মী, সাথী, সদস্য।
বাহ্যিক পরিবেশ(external environment): external environment includes the major forces outside the organization that influence the abilitiy to achive organizational goal. সংগঠনের বাইরের বিভিন্ন অবস্থা এবং পক্ষসমূহের কর্মকাণ্ড ও আচার-আচরণ যা সংগঠনের কার্যক্রমে প্রভাব বিস্তার করে।
বাহ্যিক পরিবেশ (external environment) : আবার দুই প্রকার
ক. কার্য পরিবেশ (Task environment) : বাইরের যে সকল পক্ষ সংগঠনের কাজের ওপর প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে তাকেই কার্য পরিবেশ বলে। যেমন, শুভাকাক্সক্ষী, অন্যান্য ইসলামী সংগঠন, অন্যান্য ছাত্রসংগঠন, সকল পেশার মানুষ, সাধারণ মানুষ ইত্যাদি
খ. সাধারণ পরিবেশ (Genaral environment) : Genaral environment is the part of external environment composed of forces that have a general influence on the organizationa. সাধারণ পরিবেশ হলো বাইরের পরিবেশের সমন্বয়ে সৃষ্ট শক্তিসমূহ যা সংগঠনের কাজের ওপর সাধারণ প্রভাব বিস্তার করে। যেমন ভৌগোলিক উপাদান, অর্থনৈতিক উপাদান, কারিগরি উপাদান, সামাজিক উপাদান, রাজনৈতিক উপাদান, আইনগত উপাদান, আন্তর্জাতিক উপাদান।
সাংগঠনিক পরিবেশ বলতে আমরা কোন পরিবেশকে বোঝাবো:
ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা।
সংগঠনের কর্মসূচি ও কর্মপদ্ধতির অনুকরণ করা।
ভারসাম্যপূর্ণ কর্মসূচি পালন।
পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বপূর্ণ পরিবেশ।
আদেশ আনুগত্যের ভারসাম্য রক্ষা করা।
বৈঠকের পরিবেশ :
Full concentration.
মতামত দেয়া এবং শুনা।
অনুমতি নিয়ে কথা বলা।
অনুমতি নিয়ে বাইরে যাওয়া।
নিজের মত (বাস্তবায়ন) সিদ্ধান্ত হিসেবে পেতে চৎবংংঁৎব না দেয়া।
যা সিদ্ধান্ত হবে, যার কথাই সিদ্ধান্ত হবে তা বাস্তবায়নে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়া।
জান্নাতি পরিবেশ : তিনটি
১. আখেরাতের কল্যাণের চিন্তা
২. দুনিয়াবি স্বার্থত্যাগের মানসিকতা
৩. সকল কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য
দ্বীনি পরিবেশ সংরক্ষণে প্রতিবন্ধকতা :
আকাশ সংস্কৃতির ব্যাপক প্রভাব।
মান আসার পূর্বে মানোন্নয়নের চেষ্টা করা।
সাবেক দায়িত্বশীলদের দুর্বলতা।
মানসম্মত ও সময় উপযোগী দায়িত্বশীল তৈরি না হলে।
দায়িত্বশীল ও জনশক্তির মাঝে দূরত্ব থাকলে।
কাক্সিক্ষত পরিবেশের জন্য নেতার গুণাবলি :
১. জ্ঞানগত যোগ্যতা
২. যথাযথ শৃঙ্খলা বিধানের যোগ্যতা
৩. পরিচালনার যোগ্যতা
৪. জনশক্তির মাঝে মধ্যমণি হওয়া
৫. কর্মীর প্রেরণার উৎস হওয়া
৬. সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের যোগ্যতা
৭. ঊর্ধ্বতন সংগঠনের যথাযথ আনুগত্য
৮. সার্বিক দিক থেকে সংগঠনের গতিশীল করা যোগ্যতা অর্জন
৯. সামগ্রিক কাজে ভারসাম্য রক্ষা : এর জন্য
সময়ের সদ্ব্যবহার
পরিশ্রমপ্রিয়তা
কম কথা বেশি কাজ
৫ ঘণ্টার বেশি ঘুমানো যাবে না
পরিবেশ বিনষ্টকারী বিষয়সমূহ :
আদেশের সুরে কথা বলা
গিবত
হিংসা-বিদ্বেষ
কুধারণা
চোগলখুরি
কানাকানি ও ফিসফিসানি
মেজাজের ভারসাম্যহীনতা
একগুঁয়েমি
সামষ্টিক ভারসাম্যহীনতা
সঙ্কীর্ণমনতা
পরিবেশ সংরক্ষণে সহায়ক বিষয় সমূহ :
দায়িত্বশীল কর্তৃক সকল জনশক্তিকে কাজে লাগানো।
গিবত মুক্ত পরিবেশ সংরক্ষণ করা।
কর্মসূচি পালনে কর্মপদ্ধতির অনুসরণ।
এহতেছাবের প্রচলন থাকা।
ইসলামী জ্ঞান অর্জনে প্রচুর বই পুস্তক থাকতে হবে।
কিছু ইসলামী স্কলারস তৈরি করা।
আমাদের ও সংবিধান অনুসরণ করা।
প্রাক্তন ভাইদের সাথে পরামর্শ করা।
দায়িত্ব পালনে সচেতন থাকা।
শহীদদের জীবনী জানা ও শাহাদাদের চেতনা।
দায়িত্বশীলদের উত্তম আমল ও উন্নত আচরণ।
পরিবেশ সংরক্ষণে আমাদের দুর্বলতা :
ধৈর্যের অভাব।
দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়া।
ইলম অনুযায়ী আমল না করা।
যোগাযোগের অভাব।
ভুল বুঝা বুঝি।
সময়ের অপচয়।
তত্তাবধানের নামে সীমা অতিক্রম করা। v br />দায়িত্বশীলের অদূরদর্শী মন্তব্য
সঙ্কীর্ণতার উর্ধ্বে উঠতে না পারা।
কর্ম বণ্টনে সুবিচার না করা।
দায়িত্বশীলদের লেন-দেন অপরিচ্ছন্নতা।
যথা সময়ে প্রোগ্রাম শুরু করতে না পারা।
সকল জনশক্তির ইনসাফপূর্ণ আচরণ করতে না পারা।
ইসলামী নীতি অনুসরণ না করা।
পরিবেশ সংরক্ষণ না হলে ক্ষতি :
সংগঠনের কাঠামো ভেঙ্গে পড়ে।
সংগঠনের গ্রহণ যোগ্যতা হ্রাস পায়।
জাতি সৎ, যোগ্য নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হয়।
সকলের মাঝে ইসলামী দাওয়াতের প্রসার কমে যায়।
প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়।
সাংগঠনিক সম্প্রসারণ বন্ধ হয়ে যায়।
বিরোধীদের অপপ্রচার বৃদ্ধি পায়।
নেতা দায়িত্বশীলের আচরণ বা ভূমিকা হবে :
বিনম্র্র ভাষায় নির্দেশ দিবেন।
নেতৃত্ব কর্মীদের সাথে আনুষ্ঠানিক আলাপ ও করবেন।
কোমলতা, উদারতা, ও ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন। আপনি বটবৃক্ষের মতো বিশাল হৃদয়ের অধিকারী হবেন। আপনার ছায়ায় ঘুমোবে, যাওয়ার সময় একটা ডালও ভেঙে নিয়ে যাবে।
সবাইকে সমান গুরুত্ব দেয়া ও সমান ভালোবাসা দেয়া। সবাইকে আপন করে নেয়া। Gift দেয়া; Wish করা, উৎসাহ দেয়া
প্রাপ্য অনুযায়ী মর্যাদা দেয়া।
সকল জনশক্তিকে প্রভাব বলয়ের মধ্যে রাখা।
জনশক্তির মানোন্নয়নের ধারাবাহিকতা ঠিক রাখা।
যে কোন সমস্যায় তাৎক্ষণিক সমাধান। এক্ষেত্রে যোগ্য ডাক্তারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া।
জনশক্তিদের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ রক্ষা করা। এটা যেন গিবতের পরিবেশ না হয়।
এহতেসাব বা গঠনমূলক সমালোচনা করা।
সকল ক্ষেত্রে সংগঠনের স্বার্থকেই প্রাধান্য দেয়া।
পরিবেশ বিনষ্টকারী গুণাবলি থেকে সংগঠনকে হেফাযত করা।
সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বিধানকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া।
দূরদৃষ্টি, যে কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পরবর্তী পরিস্থিতি অনুধাবন করতে পারা।
কর্মী, সদস্য বানানো, বাতিল বা স্থানান্তরের জন্য-
বৈঠকের সিদ্ধান্ত যথাযথ বাস্তবায়ন করা।
সিদ্ধান্ত কোনভাবেই যেন বাইরে না যায়।
পরামর্শভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
দায়িত্বশীল বাছাই করতে ভুল না করা।One man preparation
– Nursing not for one man but for a teamস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় দায়িত্বশীল বানাতে হবে।
আঞ্চলিক চেতনা কঠোর হাতে দমন করা।
কোন অভিযোগ শুনা মাত্র কমান্ড না করা।
জনশক্তির বক্তব্য ধীরস্থিরভাবে শুনা।
সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নিজের অগ্রণী ভূমিকা পালন করা।
ব্যবহারিক জীবন :
ব্যবহারিক জীবন হলো এমন মূল্যবোধ যে অনুযায়ী মানুষের আচরণ হওয়া প্রয়োজন। প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আব্দুল ওয়াদুদ মাকরূম বলেছেন, “ব্যবহারিক জীবন হচ্ছে আচরণের রীতি-নীতির সমষ্টি, যা মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রিত ও সংহত করে এবং যাকে চিন্তা ও আচরণের ক্ষেত্রে মানুষের অনুসরণ করা উচিত।” রাসূল (সা) এরশাদ করেছেন, “তোমরা সততা অবলম্বন গ্রহণ কর, কেননা সত্যবাদিতা পুণ্যের পথ দেখায় আর পূণ্য জান্নাতের পথ দেখায়, একজন লোক সর্বদা সত্য বলতে থাকে এবং সত্যবাদিতার প্রতি অনুরাগী হয়, ফলে আল্লাহর নিকট সে সত্যবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়ে যায়।” (মুসলিম)
ব্যবহারিক জিন্দেগির বিভিন্ন দিক
ব্যক্তিগত জীবন
সাংগঠনিক জীবন
পারিবারিক জীবন
সামাজিক জীবন
ব্যক্তিগত জীবন :
শৃঙ্খলাবদ্ধতা : সকল কিছু পরিপাটি সাজানো গুছানো থাকবে। খাওয়া, ঘুম, লিখাপড়া, বই পুস্তক, কাপড় চোপড়, রাখা টেবিল চেয়ার ইত্যাদির মধ্যে যেন কোন বিশৃঙ্খলা না থাকে।- সব কিছুতে সুশৃঙ্খল না হলে অনেক সময় ডায়েরি খুঁজতে চাবি নেই, চাবি খুঁজতে অমুক নেই ইত্যাদি। সবকিছু সুশৃঙ্খল হলে মন ভালো থাকে, সময়ের অপচয় হয় না।
ক্রোধ দমন করা : একটি ঘটনা জনৈক ব্যক্তির ছেলে সকাল থেকে তিন তলার ওপর কাজ করছে। সে তার ছেলেকে বার বার বলছে এত রৌদ্রে কাজ না করার জন্য। কুরআন : হামিম আস সাজদা- ৩৬ অর্থ : যদি শয়তানের পক্ষ থেকে আপনি কিছু কুমন্ত্রণা অনুভব করেন, তবে আল্লাহর শরণাপন্ন হন, নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। হাদীস : তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি বীর নয় যে কাউকে গায়ের জোরে হারিয়ে ফেলে বরং বীর ঐ ব্যক্তি যে রাগকে হজম করে। একবার হযরত আলী (রা) একজন লোকের বুকে ছুরি চালানোর সুযোগ পেয়েও বাদ দিলেন…..
ত্যাগী মনোভাব : আত্মত্যাগ, আর্থিক কোরবানি, আরাম আয়েশের কোরবানি, স্বভাব প্রকৃতির কোরবানি। কুরআন : সূরা হাসর : “এবং তারা নিজের ওপর অন্যদের অগ্রাধিকার দেয়, যদিও তারা রয়েছে অনটনের মধ্যে। হাদীস : অভাব-অনটনে আত্মত্যাগ : “একদিন রাসূলে করীম (সা) এর কাছে একজন ক্ষুধার্ত লোক এলো। তখন হযরতের গৃহে কোন খাবার ছিল না। তিনি বললেন : যে ব্যক্তি আজ রাতে এ ব্যক্তিকে মেহমান হিসেবে রাখবে, আল্লাহ তার প্রতি করুণা বর্ষণ করবেন। হযরত আবু তালহা লোকটিকে নিজ ঘরে নিয়ে গেলেন।…
সকালে রাসূলে করীম (সা) খেদমতে হাজির হলে তিনি বললেন, আল্লাহ তোমার এ সদাচরণে অত্যান্ত খুশি হয়েছেন; এবং এ আয়াত পড়ে শুনালেন।” জিহাদের ময়দানে আত্মত্যাগ : মুতার যুদ্ধ প্রথম-ষষ্ঠ ব্যক্তি পর্যন্ত নিজে পানি পান না করে অপরের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে সকলেই জীবন দিলেন।
কুরআন : “তোমরা একে অপরকে অগ্রাধিকার দান কর।” আরে ইমরান ৯২ : তোমরা কস্মিনকালেও কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যদি তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে ব্যয় না কর। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে আল্লাহ তা জানেন।
ইমরান ২০০ : হে ঈমানদারগণ ধৈর্যধারণ কর এবং মোকাবেলায় দৃঢ়তা অবলম্বন কর, আল্লাহকে ভয় করতে থাক যাতে তোমরা তোমাদের উদ্দেশ্য লাভে সমর্থ হতে পারো।
সবর ও তায়াক্কুল : সবরের কয়েকটি অর্থ : ইমরান ২০০ : ইয়া আইয়্যুহাল লাজিনা …
সূরা আসর তায়াক্কুল কঠিন থেকে কঠিন অবস্থায় আল্লাহর ওপর তায়াক্কুল করা। হিজরতের সময় গুহার ভেতর রাসূল (সা) এর অবস্থান। ইবরাহিম (আ) কে আগুনে ফেলার পর যখন ফেরেস্তা এসে সাহায্য করতে চেয়েছিল তখন ফেরেস্তার ওপর ভরসা না করে আল্লাহর ওপর ভরসা করেছিলেন।- ফেরাউন যখন মূসা (আ) কে দৌড়িয়ে নিয়ে সমুদ্রের ধার পর্যন্ত যাওয়ার পর আল্লাহর ওপর তায়াক্কুল করায় তা হাতের লাঠির ইশারায় সমুদ্রে ১২টি গোত্রের জন্য ১২টি রাস্তা হয়ে যায়।
দৃষ্টিশক্তির হেফাজত :
সূরা নূর- “মুমিনদের বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।” চোখের জেনার শাস্তি হচ্ছে : কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে চোখের জেনা করলে সীসাকে জ্বালিয়ে তার চোখে ছেঁকা দেয়া হবে।”
বাকশক্তি বা জবানের হেফাজত : হাদীস “তোমরা হয় ভালো কথা বল নতুবা চুপ থাক”, “তোমরা যদি ২টি জিনিসের জিম্মাদারি হও তবে আমি জান্নাতের জিম্মাদারি হবো। যৌনশক্তি ও বাকশক্তি।” রাসূল (সা) বলেন, “কোন কটুভাষী ও বদস্বভাববিশিষ্ট লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না। কোন মুসলমানকে গালি দেয়া ফাসেকি আর তার সঙ্গে লড়াই করা ফাসেকি।” একদা রাসূল (সা) মায়াজকে বিভিন্ন নসিহত করার পর নিজের জিহবা আঁকড়ে ধরে বললেন, “তোমার কর্তব্য হচ্ছে একে বিরত রাখা। তিনি জিজ্ঞেস করলেন হে আল্লাহর রাসূল, আমরা যা কিছু বলা-কওয়া করি সে সম্পর্কেও কি জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে? তিনি বললেন : জবানের কামাই ছাড়া আর কোন জিনিস মানুষকে দোজখের আগুনে নিক্ষেপ করবে?”
রিয়া বা অহঙ্কার মুক্ত মন : সূরা বনি ইসরাইল- ৩৭, লোকমান-৩ “জমিনে দাম্ভিকতার সাথে চল না”, নিশ্চয়ই তুমি ভূপৃষ্ঠকে কখনই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না।”
আড়ম্বরহীন জীবন : সূরা লোকমান-১৯ পদচারণায় মধ্যবর্তিতা অবলম্বন কর এবং কণ্ঠস্বর নিচু কর। নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।
আত্মসমালোচনা
আত্মপর্যালোচনায় অভ্যস্ত হওয়া
নিজেকে যাচাই করা
হাদীস : “তুমি নিজেকে এমনভাবে যাচাই কর যাতে অন্যের দিকে চাওয়ার সুযোগ না থাকে।”
পরিকল্পিত জীবন
কথা ও কাজের মিল :
মিল না থাকা মুনাফিকির লক্ষণ
ত্যাগের বক্তৃতা কাজে নাই
ঈমানদারের বাস্তব জীবন হবে কথা ও কাজের মিল
মুনাফিকের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম
সহযোগীদের সাথে ব্যবহার : তিনটি নেক কাজে পাপ কাজ মার্জনা হয়:
ক. সরল ব্যবহার
খ. প্রফুল্ল মন
গ. মিষ্টি ভাষণ
– শত ব্যস্ততার মাঝেও অপর ভাইকে দেখলে সালাম দেয়া হাত মেলানো, হাসিমুখে কথা বলা। কেউ রোগাক্রান্ত বা অভাবগ্রস্ত হলে দেখতে যাওয়া
সহনশীলতা ও উদারতা : সূরা ইমরান-১৫৯ আরাফ- ১৯৯। একটি ঘটনা : একজন লোক মসজিদে নববীতে প্রস্রাব করে চলে যাচ্ছিল।
যাচাই না করে শুনা কথার ওপর ধারণা না করা : বনি ইসরাইল-৩৬ জাকাত আদায়ের ঘটনা-
পারিবারিক জীবন :
মাতা-পিতার প্রতি ব্যবহার : হাদীস “আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) রাসূল (সা) কে জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর নিকট প্রিয় কাজ কোনটি? তিনি বললেন, নামাজ, আবার প্রশ্ন করলেন পর পর দুইবার বললেন মাতা-পিতার খেদমত ও জিহাদ করা।”
মায়ের পদতলে জান্নাত
তোমরা মাতা-পিতাকে গালি দিও না
দুনিয়ায় একমাত্র নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাস মাতা-পিতাকে
বিরোধী মাতা-পিতার জন্যও দোয়া কর। (আবু হুরাইরার ঘটনা)
আমাদের ব্যবহারে যেন পিতা-মাতার মন থেকে আহ শব্দও বের না হয়।
ভাইবোনদের প্রতি ব্যবহার :
আত্মীয়স্বজনদের প্রতি ব্যবহার :
সামাজিক জীবন
মন্দের মোকাবেলায় উত্তম আচরণ : Tit for tat ঈমানদারদের জন্য প্রযোজ্য নয়।
হামিম আস সাজদা : ৩৪-৩৫। ভালো ও মন্দ সমান নয়। জওয়াবে তাই বলুন যা উৎকৃষ্ট। তখন দেখবেন আপনার সাথে যে ব্যক্তির শত্রুতা আছে, সে যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু। এ চরিত্র তারাই লাভ করে, যারা সবর করে এবং এ চরিত্রের অধিকারী তারাই হয় যারা অত্যন্ত ভাগ্যবান।
প্রতিবেশীর সাথে ব্যবহার। হাদীস : “সেই ব্যক্তি মুসলমান যার হাত ও মুখ হতে প্রতিবেশী নিরাপদ, যারা মুসলমানদের কষ্ট দেয় তাদেরকে কেয়ামতের দিন পাকড়াও করা হবে।” “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস করে সে যেন প্রতিবেশীকে সম্মান করে।”
“যে ব্যক্তি বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহ করে না সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।”
সাহায্য চাইলে দেয়া
জানাজা পড়া
খোঁজ খবর নেয়া
বিয়ে শাদি অনুষ্ঠানাদিতে সাহায্য করা
চাকর-বাকরের প্রতি ব্যবহার : “তোমরা যা খাও ও পর চাকরদেরও তা খাইতে ও পরতে দাও।” একটি ঘটনাÑ হযরত উমর (রা) এর উট টেনে নিয়ে যাওয়া
বিরোধীদের সাথে ব্যবহার :
অন্যান্য
শিক্ষক-কর্মচারী
রোগীদের প্রতি
রিক্সাওয়ালা
ফকির বা সাহায্যপ্রার্থী
পশুপক্ষী
গাছপালা
লিও টলস্টয় ও মার্কিন তরুণীর দৃষ্টিতে : সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক লিও টলস্টয় যখন নিঃসঙ্গ অবস্থায় রাস্তার ধারে মৃত অবস্থায় পড়ে ছিলেন, সে সময় তার কোটের পকেট থেকে তার নিত্য সময়ের সঙ্গী যে বইটি পাওয়া যায়, সেটি ছিল আবদুল্লাহ সোহরাওয়ার্দী লিখিত ‘দ্য সেয়িংস অব প্রফেট মহাম্মদ (সা)। বাংলায় যার শিরোনাম ‘মহানবী (সা)-এর বাণী’ বইটির একটি হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, রাসূল (সা) বলেছেন ‘তুমি নিজের জন্য যা ভালো মনে করবে, অন্যের জন্যও তা ভাববে। আর যা নিজের জন্য মন্দ মনে করবে, অন্যের জন্যও তাই মনে করবে। (বুখারী ও মুসলিম)
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রফেসর আবদুর নূর ‘আয যিকর ওয়াল ফালাহ গ্রন্থে একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন : ‘এক মার্কিন তরুণী দীর্ঘ দুই বছর মেলামেশার পর, তার বাংলাদেশী পুরুষ বন্ধুকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য অনুরোধ জানায়। বন্ধুটি বলে যে, সে রক্ষণশীল পরিবারের সন্তান। তাই তাকে বিয়ে করতে মেয়েটিকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলিম হতে হবে। মার্কিন তরুণীটি ইসলাম ধর্ম কী, তা বুঝতে চাইলো। ছেলেটি তাকে আল্লামা আবদুল্লাহ ইউসুফ আলী কর্তৃক ইংরেজি অনূদিত পবিত্র কুরআন শরিফের একটি কপি দিয়ে বললো যে, এটি পড়লে ইসলাম সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে পারবে। দুই মাস কুরআন অধ্যয়নের পর মার্কিন তরুণীটি এসে জানালো, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমি ইসলাম গ্রহণ করবো। ইসলামের সৌন্দর্য ও সমন্বিত নীতিমালা আমাকে আকর্ষণ করছে। এ ব্যাপারে আমার মা-বাবার আপত্তি নেই। কিন্তু তোমাকে আর বিয়ে করতে পারব না। কারণ তোমার আচার-আচরণ লক্ষ্য করছি সম্পূর্ণ কুরআন-পরিপন্থী। রুশ দেশীয় লিও টলস্টয় ও মার্কিন তরুণী যা বুঝতে ও অনুধান করতে পারছেন, মুসলমানরা সেটা কতটুকু হৃদয়ঙ্গম করতে পারছে?
সমাজে তিন ধরনের মানুষ বসবাস করে তাই তাদের দাওয়াত দিতে হলেও তিন ধরনের কৌশল গ্রহণ করতে হবে। এই তিন ধরনের ব্যক্তিরা হলেন
1. First Mover 2. First Flower 3. Late Mover
1. First Mover যারা তারা প্রথম শ্রেণীর লোক। তারা সবকিছু আগে শুনে করে। তাদের কাছে দাওয়াত দিতে হলে দায়ীকে সেভাবেই চিন্তা করতে হবে।2. First Flower যারা কোনকিছু আবিষ্কার হওয়ার সাথে সাথে অনুসরণ করে। 3. Late Mover যারা তারা সবকিছু ধীরে ধীরে গ্রহণ করে। পর্যায়ক্রমে তাদের দাওয়াত দিতে হবে।
জীবনে চলার পথে ধ্রুব সত্য :
স্বার্থবাদী এক অক্ষরবিশিষ্ট শব্দ I এড়িয়ে চলুন সন্তুষ্টজনক দুই অক্ষরবিশিষ্ট শব্দ We সর্বদা ব্যবহার করুন, তিন অক্ষরবিশিষ্ট দূষিত শব্দ Ago ধ্বংস করুন বহুল ব্যবহৃত চার অক্ষরবিশিষ্ট শব্দ Love মুল্যায়ন করুন আনন্দদায়ক পাঁচ অক্ষরবিশিষ্ট শব্দ Smile সর্বদা ধারণ করুন দ্রুতবেগে ছড়ানো ছয় অক্ষরবিশিষ্ট শব্দ Rumour অবজ্ঞা করুন শ্রমসাধ্য সাত অক্ষরবিশিষ্ট শব্দ Success অর্জন করুন ঈষার্ধ উদ্রেককারী আট অক্ষরবিশিষ্ট শব্দ Jealousy দূরে থাকুন সবচেয়ে শক্তিশালী নয় অক্ষরবিশিষ্ট শব্দ Knowledge অধিকার করুন সবচেয়ে দরকারি দশ অক্ষরবিশিষ্ট শব্দ Confidence বিশ্বাস করুন
সুতরাং আগামী দিনে ইসলামী বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করতে হলে মানুষের পরিবেশ ও মেজাজ বুঝে সাংগঠনিক কাজ করতে হবে এবং বুদ্ধিবৃত্তিক অনেক ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। পৃথিবীর সকল প্রাণীর ওপর মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কাজেই আখলাকে হাসানার উপাদানগুলো অর্জনের মাধ্যমে একজন মানুষ তার শ্রেষ্ঠত্বকে ধরে রাখতে পারে।
লেখকঃ-
ড. মোবারক হোসাইন
এমফিল গবেষক ও সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি