Close
সাম্প্রতিক লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
সাম্প্রতিক লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৩

বইনোট | সুবহে সাদিক : আধ্যাত্মিক ও আত্মোন্নয়ন ভাবনা | আল্লামা খুররম জাহ্ মুরাদ

বইনোট  সুবহে সাদিক : আধ্যাত্মিক ও আত্মোন্নয়ন ভাবনা  আল্লামা খুররম জাহ্ মুরাদ
বইনোট 

সুবহে সাদিক : আধ্যাত্মিক ও আত্মোন্নয়ন ভাবনা 
আল্লামা খুররম জাহ্ মুরাদ


লেখক পরিচিতি

আল্লামা খুররম জাহ্ মুরাদ উপমহাদেশের ইসলামি পুনর্জাগরণে এক প্রবাদ পুরুষ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার এই মনীষী ১৯৭০ সালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, ঢাকা কেন্দ্রের সচিব ছিলেন। তাঁর সাহচর্যে সমৃদ্ধ হয়েছেন ইসলামি পুনর্জাগরণে নিবেদিত অনেক দায়িত্বশীল, যারা আজ এই উপমহাদেশে এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ইসলামি জাগরণে ভূমিকা রাখছেন। তাঁর প্রকাশিত বেশ কয়েকটি বই ইতোপূর্বে বাংলায় অনূদিত হয়েছে এবং ব্যাপক পাঠক প্রিয়তা লাভ করেছে। মসজিদুল হারাম কমপ্লেক্স পুননির্মাণে অবদানের জন্য তাঁর সম্মানে হারাম শরিফে একটি গেটের নাম দেয়া হয়েছে ‘বাবে মুরাদ'।

বর্তমান গ্রন্থটি তাঁর ১৯৯৩ সালে যুক্তরাজ্যে তরুণ শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রদত্ত কতকগুলো ভাষণের সংকলন।

অনুবাদক পরিচিতি

ড. আবু খলদুন আল-মাহমুদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি, ঢাকার বারডেম একাডেমি থেকে এমফিল এবং মালয়েশিরার ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স মালয়েশিয়া থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকার ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজে বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। চিকিৎসা বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে এ পর্যন্ত তাঁর বিশটিরও বেশি মৌলিক গবেষণা মূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া ইসলাম সম্পর্কে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা সাতটি।

ড. শারমিন ইসলাম মাহমুদ ২০০৮ সালে ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স মালয়েশিয়া থেকে মেডিকেল এথিক্স এ পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্নাস ও মাস্টার্স পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য তিনি দুটো স্বর্ণপদকে ভূষিত হন। বর্তমানে তিনি নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। Ethics এর উপর তাঁর মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ IIIT, USA থেকে প্রকাশিত হয়েছে।


মূল বই

প্রথম অধ্যায়: আত্মোউন্নয়নের পদ্ধতি

জীবনের লক্ষ্য
জান্নাতের লক্ষ্যে প্রথম পদক্ষেপ
আপনার মিশন
তাযকিয়া অর্জনের পূর্বশর্ত;
১.তাযকিয়া-আপনার ব্যক্তিগত দায়িত্ব
২.নিখাদ প্রচেষ্টা 
৩.সুদৃঢ় ইচ্ছাশক্তি
৪.আল্লাহ তায়ালার উপর নির্ভরতা 
৫.সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার 
৬.তাযকিয়া-একটি সার্বিক প্রক্রিয়া 
আশীর্বাদ ও সুফল

প্রথম অধ্যায়ের সারসংক্ষেপ

একজন মুসলমানের জন্য জীবনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বেহেশত অর্জন। আর এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী, আজীবন স্থায়ী প্রক্রিয়া যা যে কোনো মুহূর্তেই শুরু করা যায়। এই লক্ষ্য অর্জনের দৃঢ় ইচ্ছাই এই কাজের উপায় বাৎলে দেয় এবং লক্ষ্য অর্জনে গতি সঞ্চয় করে।

আত্মউন্নয়নের লক্ষ্যে আপনার আদর্শ হচ্ছে স্বয়ং রসুল মুহাম্মদ সা.। আর এই লক্ষ্যে এগুতে হলে আপনার দায়িত্বশীল আপনাকেই হতে হবে। আপনার মাঝে প্রচণ্ড ইচ্ছা শক্তি জাগ্রত করতে হবে। আপনার দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হতে এবং প্রয়োজনীয় চেষ্টা নিয়োজিত করতে হবে। আপনার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে জীবনের সব কাজে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। আরও মনে রাখতে হবে যে আল্লাহ তায়ালার সন্তোষ অর্জনের লক্ষ্যে নিবেদিত প্রতিটি বৈধ কাজই তাযকিয়া অর্জনের মাধ্যম। আল্লাহ তায়ালা তাঁর ক্ষমার গুণে আমাদের ছোট-ছোট ভুলগুলোকে মাফ করে দিতে পারেন এবং আল্লাহ তায়ালার এই দয়া বা ক্ষমালাভ আমাদের বেহেশত গমনের পূর্বশর্ত।

আর যে লোক নিজের খোদার সম্মুখে দাঁড়ানোর ভয় করেছিল এবং প্রবৃত্তির খারাপ কামনা-বাসনা হতে বিরত থেকেছিল, জান্নাতই হবে তার ঠিকানা (সূরা নাযিয়াত, ৭৯ ৪০-৪১)।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাঁর সফল এবং পরিশুদ্ধ বান্দাদের মাঝে শামিল হওয়ার তৌফিক দান করুন কেন না, প্রকৃত পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধি তো আল্লাহ তায়ালা যাকে চান তাকেই দান করবেন (যারা এই পবিত্রতা ও শুদ্ধি পায় না) তাদের প্রতি এক বিন্দু পরিমাণ জুলুম করা হয় না (সুরা নিসা, ৪:৪৯ ) ।

আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ এবং তাঁর দয়া যদি তোমাদের উপর না থাকতো তাহলে তোমাদের মধ্যে কেউই পাক পবিত্র হতে পারতো না। বরং আল্লাহ তায়ালাই যাকে চান পরিশুদ্ধ করে দেন। আর আল্লাহ তায়ালাই সর্ব-শ্রোতা সর্বাধিক শুনেন ও সর্বাজ্ঞে (সুরা নূর, ২৪ : ২১)।


দ্বিতীয় অধ্যায়: জিকিরপূর্ণ জীবন

জিকিরের তাৎপর্য জিকিরের অর্থ
জিকিরের পদ্ধতি
সদা-সর্বদা আল্লাহ তায়ালার স্মরণ
জিকিরের ব্যক্তিগত ও সামাজিক কর্মসূচি
জিকিরের ব্যক্তিগত পন্থা
সালাত (নামাজ)
মনস্তাত্বিক ও মানসিক প্রস্তুতি
শারীরিক প্রস্তুতি
সঠিক নিয়মে নামাজ আদায়
তাহাজ্জুদ নামাজ
সিয়াম (রোজা)
আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা পূরণ
ইচ্ছাশক্তি
শয়তান থেকে আত্মরক্ষা
কুরআন তেলাওয়াত/অধ্যয়ন
 কুরআন অধ্যয়নের পদ্ধতি
কুরআন : আপনার নিত্যসাথী
সামষ্টিক জিকিরের পন্থাসমূহ
সত্যপন্থীদের সঙ্গ অনুসন্ধান
মানবতার সামনে সত্যের সাক্ষ্য হওয়া
আপনার জিকিরকে সংগঠিত করুন

দ্বিতীয় অধ্যায়ের সারসংক্ষেপ

আপনার চূড়ান্ত সাফল্য ও মুক্তি নির্ভর করছে আপনার আত্মার পরিশুদ্ধির উপর। আত্মার পরিশুদ্ধির চাবিকাঠি হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার জিকির।
আপনি একদিকে সার্বক্ষণিক এবং অব্যাহতভাবে অন্তরে আল্লাহ তায়ালা সচেতনতা জাগ্রত করে প্রতিদিনের সকল কথা এবং কাজকে নিয়ন্ত্রিত করুন। অন্তরে এই চেতনা বদ্ধমূল করুন যে, আল্লাহ তায়ালা সব সময় আমাদের দেখছেন, সকল কথা কাজ এবং চিন্তার খবর রাখছেন, আমাদের সকল সম্পদ আসলে তাঁরই মালিকানাভুক্ত, তিনি এর সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন এবং সর্বোপরি আপনাকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে জবাবদিহির জন্য। অপরদিকে আপনি ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক পর্যায়ে কিছু সুনির্দিষ্ট পন্থা অবলম্বন করুন। এই পন্থাগুলোর নিয়মিত সুসংগঠিত এবং আন্তরিক চর্চা ইনশাআল্লাহ আপনাকে সার্বক্ষণিক আল্লাহ তায়ালার স্মরণসম্পন্ন এক জীবন উপহার দেবে ।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রায়ই বেশি বেশি করে তার স্মরণ করার তৌফিক দিন। আমাদের অন্তর আল্লাহ তায়ালার স্মরণে প্রশান্তি লাভ করুক।


তৃতীয় অধ্যায়: আল্লাহ তায়ালার সাথে সম্পর্কিত হওয়া

আল্লাহ তায়ালাকে দৃঢ়ভাবে ধারণের বৈশিষ্ট্য
আল্লাহ তায়ালার শুকুরগুজার হওয়া
আল্লাহ তায়ালার ইবাদত
ইবাদতে আন্তরিকতা 
আল্লাহ তায়ালার প্রেম
আল্লাহ তায়ালার পথে হানিফ হওয়া
জিহাদ-আল্লাহ তায়ালার পথে সংগ্রাম
আল্লাহ তায়ালার রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করার পথে বাধা সমূহ:
ক. অহংকার
খ. মোনাফেকি
গ. হতাশাবাদ
ঘ. অনিয়ন্ত্রিত ক্রোধ
ঙ. জিহবার অপব্যবহার
চ. যৌন লালসা

তৃতীয় অধ্যায়ের সারসংক্ষেপ

সহজ সরল পথে (সিরাতুল মুস্তাকিম) চলার জন্য কুরআন কিছু দিক নির্দেশনা দিয়েছে। এর মধ্যে প্রথম হচ্ছে, দৃঢ়ভাবে আল্লাহ তায়ালার রজ্জুকে ধারণ করা।

আল্লাহ তায়ালার রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করার মানে হচ্ছে আপনি আপনার সকল অর্জনের জন্য শুধুমাত্র তাঁরই হামদ ও শুকর করবেন, শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদত করবেন, পৃথিবীর সবকিছুর চাইতে আল্লাহ তায়ালাকে বেশি ভালোবাসবেন, শুধুমাত্র তাঁর জন্য সংগ্রাম করবেন এবং হানিফ হতে চেষ্টা করবেন।

একই সাথে আল্লাহ তায়ালার রজ্জু ধারণের বাধা গুলোর কথা খেয়াল রাখবেন, এগুলো হচ্ছে গর্ব, শঠতা, হতাশা, অনিয়ন্ত্রিত রাগ, জিহ্বার (কথা) অসংযত ব্যবহার এবং অননুমোদিত যৌন লালসা।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের হেদায়াতের পথে চালিত করুন, কারণ তিনি যাকেই চান তাকেই হেদায়াতের পথে চালিত করেন ( সুরা ইউনুস, ১০ : ২৫)।


চতুর্থ অধ্যায়: আল্লাহর রসুলের সা. সাথে সম্পর্কিত হওয়া

মু'মিনের জীবনে সুন্নাহর গুরুত্ব
রসুল সা.-এর মিশন
সুন্নাহ অধ্যয়নে দিক-নির্দেশনা
পশ্চিমা সমাজের প্রেক্ষাপটে সুন্নাহ
সুন্নাহ শব্দের প্রকৃত অর্থ
আপনার মিশন

চতুর্থ অধ্যায়ের সারসংক্ষেপ

আমাদের জীবনে অনুকরণীয় মডেল হিসেবে রসুলকে সা. সবার আগে এবং সবার উপরে স্থান দিতে হবে। আমাদের সকল ভালোবাসা সবার উপরে আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর রসুলের জন্য নির্দিষ্ট রাখতে হবে।

মানুষের সামনে আল্লাহ তায়ালার খলিফা হিসেবে তাঁর শেষ নবির সা. বাণী পৌঁছে দেওয়া আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। আমাদের কথা, কাজ, কর্তব্যনিষ্ঠা, দয়া ও ভালোবাসার গুণের মাধ্যমে আমাদের সকল সহকর্মী, প্রতিবেশীকে বুঝাতে হবে ইসলাম কি? এবং রসুল সা.-এর মিশন কি?

অবএব এই কাজে রসুল সা.-এর দয়ার গুণ অনুসরণে আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। তাঁর গুণ অর্জনের মাধ্যমে আমরা নতুন প্রজন্মকে প্রকৃত সুন্নাহ্ শেখাতে সক্ষম হবো। তখনই সম্ভবত আমাদের এই পৃথিবীর জীবন শুধুমাত্র মুসলমান সমাজের জন্য নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য কল্যাণকর হয়ে দেখা দিবে।


পঞ্চম অধ্যায়: আল্লাহ তায়ালার পথে ব্যয়

দরিদ্র মানুষের জন্য ব্যয়
ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য অর্থ ব্যয়
ছোট-ছোট দান
দানের ধরন
দুনিয়াপ্রীতি
অন্যদের ক্ষমা করা

পঞ্চম অধ্যায়ের সারসংক্ষেপ

আপনি যাই খরচ করতে পারেন তা খরচ করুন আপনার পরিবারের ভরণপোষণে এবং দরিদ্রদের কল্যাণে। ইসলামের প্রয়োজনে দান করতে আরও উদার ও মুক্তহস্ত হোন। মনে রাখবেন ইসলামের পথে খরচের এখনই সময়। আপনার হাতের সব ধরনের সম্পদের ব্যবহার করুন; আপনার সময়, মনোযোগ, হৃদয়, মন, বাচনভঙ্গি, লেখনি, যুক্তি, বুদ্ধি, যা কিছু আল্লাহ তায়ালা আপনাকে দিয়েছেন তা তাঁরই দ্বীন প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত করুন। দুনিয়ার প্রেম যেন আপানাকে গ্রাস না করে, আল্লাহ তায়ালার দয়া ও ভালোবাসা পেতে চাইলে মানুষকে ক্ষমা করতে শিখুন, তাদের প্রতি দয়ালু হোন।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের এই দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হতে নয় বরং দুনিয়াপ্রীতি থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করুন। তিনি আমাদের যে নেয়ামত বা সম্পদ দিয়েছেন তা তাঁর পথে ব্যয় করার তৌফিক দিন।

ষষ্ঠ অধ্যায়: আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির সাথে সম্পর্ক

আমলের রেজিস্ট্রার
পরিবারের প্রতি দায়িত্ব
সন্তানের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য
পিতা মাতার প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য
মুসলিম ভাই-বোনদের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য
মালিক ও শ্রমিকের পরস্পরের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য প্রতিবেশীদের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য
জীবজন্তুর অধিকার

ষষ্ঠ অধ্যায়ের সারসংক্ষেপ

সকল সৃষ্টজীব আল্লাহ তায়ালার পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তায়ালা তাদের ভালাবাসেন যারা তাঁর পরিবারের সদস্যদের দয়া ও সেবা করেন। অন্যের প্রতি মামাদের দায়িত্ব বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই জন্য যে, ব্যক্তির হক নষ্ট করার কোনো ক্ষমা নেই।

আপনার নিজের প্রয়োজন পূরণের পর আপনার প্রথম দায়িত্ব আপনার পরিবারের প্রতি। বস্তুত আল্লাহ তায়ালার পর আপনার উপর সবচাইতে বড় দায়িত্ব আপনার পিতা-মাতার প্রতি। আপনার স্ত্রী/স্বামীর প্রতি আপনার দায়িত্ব পূরণ করুন এবং আবেগ ও ভালোবাসা দিয়ে আপনার সন্তানদের যত্ন নিন। আপনার পার্শ্ববর্তী মুসলিমের প্রতি দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে মনে রাখবেন যে, ইমানের সর্বোচ্চ বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে কাউকে শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ভালোবাসা । উদ্যোক্তা (মালিক) হিসেবে সব সময় মনে রাখবেন যে আপনার অধীনস্থ কর্মচারীর উপর আপনার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। একইভাবে কর্মচারী (শ্রমিক) হিসেবেও আপনার দায়িত্ব হচ্ছে আপনার কাজ দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে করা।

আখেরাতে আপনার ভাগ্য আরও নির্ধারিত হবে এটার ভিত্তিতে যে মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে আপনার প্রতিবেশীর উপর দায়িত্ব আপনি কীভাবে পালন করেছেন। রসুল সা. অমুসলিমদের প্রয়োজনের দিকে সবসময় বিশেষ খেয়াল রাখতেন, এমনকি মুসলিম সমাজের দারিদ্র সত্ত্বেও।

জীব-জানোয়ারেরও অধিকার আছে, কারণ তারাও আল্লাহ তায়ালার পরিবারভুক্ত। আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করুন সেই সব প্রাণীর স্বার্থের বিষয়ে যারা কথা বলতে পারে না। তাদের উপর আরোহন করুন যখন তারা সুস্থ এবং তাদের গোশতও খাবেন যখন তারা সুস্থ্য। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাঁর পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালনে সক্ষম ও সচেতন করুন।

সপ্তম অধ্যায়: আল্লাহ তায়ালার সাথে সাক্ষাৎ

জীবনের লক্ষ্য
পরকালের বাস্তবতা
মৃত্যু নিশ্চিত ও অনিবার্য 
মানুষের পরকাল ভুলে যাওয়ার প্রবণতা
আল্লাহ তায়ালার দয়া অন্বেষণ
আল্লাহ তায়ালার ক্ষমা অনুসন্ধান
আত্মসমালোচনা
মৃত্যুভয় জয় করা
 
সপ্তম অধ্যায়ের সারসংক্ষেপ

আমাদের জীবনের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হওয়া উচিত আল্লাহ তায়ালার সাথে সাক্ষাতের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করা। এটা হচ্ছে এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত যা আমাদের আজই এবং এখনই নিতে হবে। এই একটি সিদ্ধান্ত আমাদের গোটা জীবনের চলার দিক ও লক্ষ্যের নির্দেশনা দেবে। যে পথের কথা বলা হয়েছে কুরআনে, যে পথে চলার উদাহরণ রেখে গেছেন মহানবি হজরত মুহাম্মদ সা.।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের যে জ্ঞান দিয়ে ধন্য করেছেন তাই হবে আমাদের এ পথে চলার সহায়ক। আমাদের মিশন যখন সফল হবে তখন আমরা দেখবো আমাদের দোয়ার জবাব আল্লাহ তায়ালা দিচ্ছেন, আমাদের প্রয়োজনে তাঁর সাহায্য ও মদদ পাচ্ছি ঠিক যেমনটি তিনি বলেছেন :

হে প্রশান্ত আত্মা, তোমার প্রভুর দিকে প্রত্যাবর্তন করো সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে। আমার অনুগত বান্দাদের মধ্যে শামিল হও আর আমার বেহেশতে প্রবেশ করো (সুরা ফজর, ৮৯ : ২৭-৩০)।



(পূর্ণাঙ্গ নোট চলমান)

শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০২২

ইসলামী রাজনীতিতে গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ : মু. ইমাম হোসাইন

গনতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থা পশ্চিমাদের আবিস্কৃত, তাই এটি জায়েজ না জায়েজ এবং হালাল-হারামের পক্ষ বিপক্ষ দলীল যুক্তি থাকতে পারে।
যেহেতু এই ব্যবস্থা নব্যআবিষ্কৃত, তাই উম্মাহর আলেমদের একটা অংশ গনতন্ত্রকে হারাম বললেও ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে শরিয়াহর মানদণ্ডে আধুনিক ইসলামী রাজনীতি তত্ত্বে প্রচলিত নির্বাচন ব্যবস্থাকে ক্ষমতা পরিবর্তনের মাধ্যম হিসেবে এটিকে জায়েজ পর্যায়ে ঘোষণা করে। 
এছাড়া দেশ এবং উম্মাহর কল্যানে ইসলামি রাজনীতিতে মনোনয়ন প্রাপ্ত প্রার্থীদের ভোট প্রদানে ইসলামী দলগুলো উৎসাহ দিয়ে থাকে এইজন্যে যে, তারা ইসলাম বিরোধীদের তুলনায় ইসলামের পক্ষেরই শক্তি।
 
বর্তমান আলেমদের যে অংশ গনতান্ত্রিক পন্থায় গনতন্ত্রের সমস্ত কর্মসূচিকে যারা হারাম ঘোষণা দিচ্ছে তাদের ব্যাপারে আমাদের কথা হচ্ছে, আপনারা প্রচলিত ইসলামি রাজনীতির বিপরীতে উম্মাহর সামনে কোন বিকল্প উপস্থাপন করেছেন?
খেলাফত প্রতিষ্ঠায় প্রচলিত ইসলামি রাজনীতি সুন্নাহ পদ্ধতি না হলে তাহলে আপনারা সুন্নাহর পদ্বতি পেশ করুন।
আদৌ কি করেছে? না।
 
আমার জানামতে সুন্নাহ পদ্ধতির যে দুটি প্রক্রিয়া হতে পারে তা হলো:
✅প্রথমত: হয় আপনি প্রতিষ্ঠিত এই সরকার এবং দেশের প্রচলিত সংবিধানের বিপক্ষে গিয়ে নিজের ইসলামি খেলাফত ঘোষনা করুন এবং মুসলিম উম্মাহকে আপনার আনুগত্যের আহবান করুন। যেমনটা আগেকার ইসলামি খেলাফতে (আম) হয়ে আসছে। যেমনঃ আব্বাসীয় এবং উসমানিয়দের খেলাফত এভাবেই ঘোষণা হয়েছে।

✅দ্বিতীয়ত: রাসুল (স) মদিনার নওমুসলিমদের আকাবার বাইয়াতের শপথে আশ্বস্ত হয়ে মদিনায় আগমন করলে, মদিনাবাসী রাসুল(স.) কে সর্বজনীন গ্রহন করলে রাসুল (স.) ইসলাম রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন।
এখন আপনি বাংলার মুসলিমদের নিকট থেকে সমর্থন নিয়ে ইসলামি রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা করুন। আর এই আধুনিক এই জীবন ব্যবস্থায় সমস্ত জনগণ অথবা বোদ্ধা নাগরিকদের ইসলামী রাস্ট্র সম্পর্কে সমর্থন নিতে একটি সুন্দর বিকল্প প্রদান করুন। আর না হয় সরাসরি রাসুল(স.) এর পদ্ধতিতে গ্রহন করতে আপনি কোন আনুষ্ঠানিক এবং সামগ্রিক প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন।

✔খেলাফতে রাশেদার ক্ষমতা গ্রহনের কোন পদ্ধতি এইদেশে ফলো হবেনা। কারণ, খেলাফতে রাশেদা মূলত রাসুল(স.) এর রাষ্ট্রীয় স্থলাভিষিক্ততা বা খেলাফত।
খেলাফতে রাশেদার পদ্ধতি অনুসরণ করতে হলে আগেই ইসলামি রাস্ট্র বা ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হতে হবে কারন খেলাফতে রাশেদার পদ্ধতি ইসলামী রাস্ট্রের অভ্যন্তরে খলিফা নির্বাচন ছিলো। আর বাংলাদেশে প্রথমে ইসলামি রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা তারপর খেলাফত নির্বাচন।
উম্মাহর সামনে কোন কর্মসূচি না রেখে গড়বাধা নিজের সংকীর্ণ চিন্তা থেকে কোন একটা পদ্ধতিকে হারাম ঘোষণা হলো উম্মাহর সাথে গাদ্দারি বা উম্মাহর বিনাশ সাধন।

পশ্চিমাদের ইংরেজি হারাম ঘোষনা দেওয়া যেমন জাহালত ছিলো, তেমনি ক্ষমতা পরিবর্তনে ইসলামি রাজনীতিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণকেও হারাম ঘোষনা হলো জাহালত ছাড়া কিছুনা। 
দ্বীন বিজয়ে দাওয়াহ’র কাজে আল্লাহ প্রদত্ত আয়াতে যে ‘হিকমত’ শব্দ ব্যবহার করেছেন তারই আলোকে শরিয়ত হারাম করেনা এমন যেকোন বিষয় উম্মাহর বৃহত্তর কল্যানে ব্যবহার করা শুধু জায়েজই নয় বরং উত্তম পদ্ধতি হতে পারে। [তবে পুরো গনতন্ত্র মতবাদের সাথে কোন ইসলামী দলই একমত নয়]

একটা অংশ তালেবানদের ক্ষমতা গ্রহনকে এর ফরমুলা হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়, আমার মনে হয় তারা তালেবানদের সম্পর্কে জানেই না।
মুলত ৯৫তে তালেবানরা নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসে। পরবর্তীতে আমেরিকার হস্থক্ষেপে তাদের পতন হলে তারা সশস্ত্র জিহাদে লিপ্ত হয় তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধির নেতৃত্বে। এবং বিশবছর পর তারা তাদের হারানো ক্ষমতা ফিরে পায়।
তাহলে আগেতো জনগনের সমর্থনে ক্ষমতায় আসতে হবে তারপরইতো ইসলামী রাস্ট্র রক্ষায় যাবতীয় প্রস্তুতি এবং সশস্ত্র জিহাদ। যেখানে নিজেদের রাস্ট্র নাই অবস্থা নাই দলাদলি-মারামারি আর সেখানে উনি আসছে কুফর ফতুয়া দিতে।

এরা উম্মাহর বড় গাদ্দার, এরা উম্মাহকে আবহমানকালের ধারাবাহিকতায় কিছু দিতে পারেনাই পারবেওনা। শুধু বড় কিতাবের জ্ঞান থাকলেই যে ফতুয়া দেওয়া যায় তেমন না তাকে সামগ্রিক প্রেক্ষাপট অবস্থা বাস্তবতা থেকেই আইন দিতে হবে।
....যেখানে পৃথিবী বিখ্যাত আলেম ড. ইউসুফ আল কারজাবী, তাক্বী উসমানিরা জায়েজ বলেছে আর উনি এখানে খানকাহর ফাঁকা আওয়াজে শুধু ফতুয়া বিলাচ্ছে।


লেখক:
মু. ইমাম হোসাইন
ইসলামী চিন্তাবিদ ও সংগঠক
(https://www.facebook.com/profile.php?id=100012718592294 )

রবিবার, ১ মার্চ, ২০২০

ওজন কমাতে ডা. জাহাঙ্গীর কবীরের জরুরী পরামর্শ

সময় পরিক্রমার সাথে তাল মিলিয়ে দেখা দিচ্ছে নানা ধরনের রোগ। তাই সুস্থ থাকতে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন শরীরের ওজন ঠিক রাখার। কিন্তু অনেক সময় ওজন কমানোরা জন্য আমার ব্যয়ামসহ অনেক কিছু করি, না খেয়ে থাকি। এরপরও  কমে না ওজন। ওজন সমস্যা নিয়ে ইদানিং প্রায় সকল মানুষ ই পেরেশানির মধ্যে থাকতে দেখা যায়। এই ওজন সমস্যা দূর করতে ডা. জাহাঙ্গীর কবির নিয়ে আসছেন অভিনব ফমূলা। যা ইতিমধ্যে অনেকের ভালো কাজ দিয়েছে।
তাই অতিরিক্ত ওজন কমাতে ও সুস্থ থাকার জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন ডা. মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবীর। যা নিয়মিত পালনে মিলবে কাঙ্ক্ষিত ফল।

সকালের নাস্তা  কেমন হবে :
খুব সকালে খাওয়ার অভ্যাস থাকলে আটটা বা সাড়ে আটটার দিকে দুধ চিনি ছাড়া এক কাপ চা (আদা, লেবু সামান্য লবণ দেয়া যেতে পারে) খেয়ে নিন। কুসুম গরম পানির সাথে অ্যাপেল সিডার বা কোকনাট ভিনেগার খেতে পারেন এবং কুসুম গরম পানির সাথে লেবু চিপে খেতে পারেন। আর যারা দেরিতে নাস্তা করেন তারা এগারোটার দিকে নাস্তা করবেন এবং দুপুরের খাবার আড়াইটা তিনটায় খাবেন। আর সকাল আটটায় নাস্তা খেলে দেড়টার ভেতর দুপুরের খাবার খেতে হবে।

দুপুরের খাবার কেমন চাই:
দুপুরের খাওয়ার আগে অবশ্যই অ্যাপেল সিডার ভিনেগার এক চামচ এক গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে খাবেন। এতে করে গ্যাসের সমস্যা হবে না এবং চর্বি কাটতে সাহায্য করবে। শাক, সবজি অবশ্যই এক্সট্রা ভার্জিন অলিভয়েল দিয়ে রান্না করবেন এবং মাছ ভাজলে (ডিপ ফ্রাই থেকে বিরত থাকবেন এতে খাদ্যগুণ নস্ট হয়) বা রান্না করলে এই তেল দিয়েই করবেন।
সবজি যতটুকু সম্ভব কম সেদ্ধ করবেন। যেন সবজির গুণগত মান ঠিক থাকে। ডিম কুসুমসহ ঘি বা মাখন দিয়ে ভেজে খাবেন। এক দিনে সর্বোচ্চ ছয়টা ডিম কুসুমসহ খেতে পারবেন কোন সমস্যা নেই। কারণ ডিম প্রোটিন এবং ভালো ফ্যাটের উৎস। তবে একবার ফ্যাট এ্যাডাপটেশন হয়ে গেলে চাইলেও এত খেতে পারবেন না। দেশি মুরগি খেতে পারেন, এক দুই টুকরো অথবা উল্লিখিত গরুর মাংস। মাছ খেলে মাংস খাবেন না। মাংস খেলে মাছ খাবেন না।
প্রবাসীরা ফার্মের মুরগি এক টুকরো করে খেতে পারেন। কারণ আমার জানা মতে সেখানে ফার্মের মুরগিকে আদর্শ খাবার খাওয়ানো হয় (যদিও ফার্মের মুরগি ব্যায়াম করে না যেটা দেশি মুরগি করে)। দুম্বা, উট, ভেড়ার, মাংস খেলে এক টুকরোর বেশি নয়। দুপুরের ম্যানুতে শাক, সবজি মাছ অথবা মাংস, ঘি’এ ভাজা ডিম, বাদামের সাথে বাটার রাখতে পারেন। অবশ্যই শসা বা শসার সালাদ রাখবেন সঙ্গে টমেটো, গাজর।

বিকেলে হালকা নাস্তা  যেমন হওয়া দরকার:
বিকেলে ক্ষুধা লাগলে উপরে উল্লেখিত চা, বাটার কফি এবং যে কোনো প্রকার মাখন বা ঘি দিয়ে ভাজা বা মেশানো বাদাম খাবেন।

রাতের খাবার যেমন হওয়া দরকার:
রাতের খাবারের পূর্বেও ভিনেগার মিশ্রিত এক গ্লাস পানি খেয়ে নিবেন এবং রাতের খাবার দুপুরের অনুরূপ খাবেন। আইটেম দুই একটা কম বেশি হলেও কোনো সমস্যা নেই। রাত আটটার আগেই সমস্ত খাবার শেষ করুন। এরপর আর পানি ছাড়া কিছুই খাবেন না।

যে সব খাবার খাওয়া যাবে না :
১. চালের তৈরি সব কিছু। যেমন- ভাত, চাউলের রুটি এবং চাল দিয়ে বানানো অন্যান্য খাবার।
২. গম দিয়ে তৈরি করা খাবার। যেমন- রুটি, পাওরুটি, যে কোন প্রকার বিস্কুট এবং গম দিয়ে বানানো অন্য খাবার।
৩. যে কোনো প্রকার ডাল।
৪. আলু, মিষ্টি আলু, গাছ আলু বা আলু সাদৃশ্য অন্যান্য আলু, যা শর্করা জাতীয় সবজি যেমন- মূলা।
৫. চিনি এবং চিনি দিয়ে বানানো সব ধরণের খাবার।
৬. দই, টক দই, দুধ এবং সরাসরি দুধ দিয়ে তৈরি করা খাবার।
৭. মধু এবং মিষ্টি ফলমূল খাওয়া যাবে না।
৮. সয়াবিন তেল, সূর্যমুখী তেল, রাইস ব্যান ওয়েন, ক্যানোলা ওয়েল এবং সাধারণ কোনো তেলে রান্না করা কিছু খাওয়া যাবে না।
৯. ফ্রার্মের মুরগি, যে মুরগি গুলো টেনারির বর্জ্য থেকে উৎপাদিত খাদ্য খাওয়ানো হয়।
১০. ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে মোটা তাজা করা হয় এমন গরু বা খাসির মাংস।

যেগুলো খাওয়া যাবে :
১. সবুজ শাক, সবজি। তবে গাজর ও কচি সবুজ মিষ্টি কুমড়া অল্প পরিমাণে খাওয়া যাবে।
২. টক জাতীয় ফল। যেমন- জলপাই, আমলকি। এছাড়াও একটি কচি ডাবের পানি।
৩. যে কোন প্রকার মাছ খেতে পারবেন। তবে তৈলাক্ত দেশিয় মাছের ভেতর পাংগাশ, বোয়াল, ইলিশ, সরপুঁটি, ব্রিগেড, গ্রাসকার্প, বাইম (তৈলাক্ত বা সাগরের মাছ হলে আরো ভালো)।

৪. শুধুমাত্র ঘাস, লতা পাতা বা খড় কুটো খেয়েছে এমন গরু-খাসির মাংস খাওয়া যাবে (বেশি পরিমাণে না)। এছাড়া গরু বা খাসির পায়া খাওয়া যাবে। যেটা খাওয়া এই সময়ে খুবই উপকারি এটাও অল্প পরিমাণে খেতে হবে।
৫. মুরগির ডিম (ফার্ম হলে সমস্যা নেই তবে ওমেগা ৩ বা দেশি মুরগি বা হাঁস হলে বেশি ভালো)। এছাড়া সম্ভব হলে মাছের ডিমও খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
৬. ঘি, অর্গানিক বাটার, এক্সট্রা ভার্জিন অলিভয়েল, MCT ওয়েল, অর্গানিক Extra Virgin Cold Pressed কোকোনাট ওয়েল।
৭. যে কোনো প্রকার বাদাম। চিনাবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তা বাদাম, অন্যান্য বাদাম যা আছে চাইলে বাদাম ব্লেন্ড করে সাথে উপরে উল্লেখিত নারকেল তেল দিয়ে বানাতে পারেন পিনাট বাটার যেটা খেতে তুলনাহীন। তবে অল্প খাবেন।
৮. দুধ চিনি ছাড়া রং চা বা কফি। সবুজ চায়ের সাথে লেবু, আদা, সামান্য লবণ মেশাতে পারেন। কফির সাথে, MCT ওয়েল, মাখন বা ঘি এবং অর্গানিক কোকোনাট অয়েল মিশিয়ে বাটার কফি বানিয়ে খেতে পারেন। এতে ভালো কাজ হবে।

রবিবার, ৫ জানুয়ারী, ২০২০

সেন্টমার্টিন ভ্রমণঃ জেনে নিন ভ্রমণের আদ্যোপান্ত

সেন্টমার্টিন

সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ, এটি বাংলাদেশের মূলভূখন্ডের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত। কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে ১৭ বর্গ কিলোমিটারের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ সেন্টমার্টিন। স্থানীয় ভাষায় সেন্টমার্টিনকে নারিকেল জিঞ্জিরা বলেও ডাকা হয়। অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত এ দ্বীপটি বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন স্থান হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে। অসীম নীল আকাশের সাথে সমুদ্রের নীল জলের মিতালী, সারি সারি নারিকেল গাছ এ দ্বীপকে করেছে অনন্য, যা ভ্রমণ পিয়াসী মানুষকে দুর্নিবার আকর্ষনে কাছে টেনে নেয়।

ভ্রমণ প্রস্তুতিঃ
-

ব্যাগ প্যাকিং : সঙ্গে কি কি নিবেন তা নির্ভর করবে আপনি কতদিন থাকবেন তার ওপর। অবশ্যই ব্যাগের ওজন যত কম রাখা সম্ভব তার দিকে মন দিতে হবে। তবে যেখানেই যান না কেন ব্যাগ ভর্তি জিনিস না নিয়ে দেখেশুনে দরকারি জিনিস নেয়াই উত্তম। একটা ভারী ব্যাগপ্যাক আপনার ভ্রমণ আনন্দ মাটি করে দিতে পারে। তাই ব্যাগ গোছানোর সময় ভেবে দেখুন আপনার একান্ত কি কি জামাকাপড় লাগতে পারে? সেগুলোর বাইরে সর্বাধিক একটি কিংবা দুটি জামা বেশি নিতে পারেন। টুথপেস্ট, ব্রাশ, আন্ডারওয়ার, গামছা বা তোয়ালে, ক্যাপ, জুতা, বেল্ট ইত্যাদি ছাড়াও অনুসাঙ্গিক আর কি কি প্রয়োজন হতে পারে তার একটা লিস্ট করুন। লিস্ট ধরে ঠিক চিহ্ন দিয়ে একটা একটা জিনিস ব্যাগে ঢুকান, এতে করে দরকারি কোনো কিছু ভুলে ফেলে যাবেন না। তবে যাই লাগেজে ঢোকান না কেন একটা জিনিশ মনে রাখবেন, এই লাগেজ কিন্তু আপনাকেই বহন করতে হবে। প্রয়োজনীয় জামাকাপড়, জুতা, কসমেটিকস আলাদা করে প্যাক করুন, যাতে স্থান সঙ্কুলান হয় আবার জিনিসপত্র এলোমেলো হবে না।

ভ্রমণের পোশাক : শীতকালে গাঢ় রঙের মোটা তাপনিরোধক কাপড়ের তৈরি জামা পরিধান করুন। তবে খেয়াল রাখবেন শীতের কাপড়ের ওজন যত সম্ভব যেন কম হয়। তা না হলে আপনার ব্যাকপ্যাক ভারী হবে শীতের পোশাকে। ঠাণ্ডা থেকে বাঁচার জন্য সঙ্গে করে মাফলার, মোজা, গ্লাভস, হুডসহ কাপড় পরিধান করতে পারেন। জামার রং অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা আমরা ভ্রমণে বের হওয়ার সময় লক্ষ্য রাখা উচিত। উজ্জ্বল রঙের কাপড়ে ছবি সুন্দর হয়। তবে পাহাড় বা বনাঞ্চলে ভ্রমণের সময় অবশ্যই উজ্জ্বল কোনো রঙের জামা পরিধান করা উচিত নয়। প্রচুর হাঁটতে হবে এমন ট্যুরে সাদা রঙের জামাই শ্রেয়।

দরকারী ডিভাইস : বেড়াতে যাবার আগে দেখে নিন আপনার প্রয়োজনীয় ডিভাইসগুলো সঙ্গে নেয়া হয়েছে কিনা। আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের চেকলিস্টের সঙ্গে মিলিয়ে নিন। মোবাইল ফোন ছাড়া বর্তমানে জীবন কল্পনা করা যায় না তাই শহর থেকে দূরে গেলেও সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে মোবাইল ফোন নিয়ে নিন। রওনা দেয়ার আগে পুরো চার্জ দিয়ে নিন। সঙ্গে করে ফোনের চার্জার নিতে ভুলবেন না। আপনার বেড়ানোর সুন্দর স্মৃতিগুলো ধরে রাখার জন্য চেষ্টা করবেন একটা ভালো ক্যামেরা সঙ্গে নিতে। আর তার সঙ্গে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যেন ক্যামেরার ব্যাটারির চার্জ ফুল থাকে। সঙ্গে করে নিতে পারেন এক্সট্রা ব্যাটারি।

ভ্রমণে রোগবালাই ও ওষুধ : শীতে সর্দি-জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি, নাকের প্রদাহ, চোখ ওঠা, ডায়রিয়া, আমাশয়, নিউমোনিয়া প্রভৃতি রোগ হয়ে থাকে। সম্ভব হলে প্রয়োজন মতো সঙ্গে ওষুধ রাখুন। জ্বর, পেট খারাপ, অ্যাসিডিটি, বমি, মাথা ধরার ওষুধ নিয়ে নিন। আরও নিন ব্যান্ড এইড, অ্যান্টিসেপটিক, পরিমাণ মতো তুলা ও গজ। এগুলো সঙ্গে থাকলে অনেক বড় বিপদ থেকেও রক্ষা পাওয়া সম্ভব। সঙ্গে নেয়া এসব ওষুধপত্রের একটি তালিকা আগেভাগেই তৈরি করে রাখতে পারেন। প্রেশার, ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো সমস্যা থাকলে প্রেসক্রিপশনের প্রয়োজনীয় ওষুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে নিয়ে নিন। এই শীতে ভ্রমণের সময় ত্বক ও হাত-পা, চুলের বিশেষ যতœও নেয়া প্রয়োজন। সানপ্রোটেক্ট লোশন ও ক্রিম সূর্যের আলোতে বের হওয়ার আধা ঘণ্টা আগে ব্যবহার করুন। ভ্রমণে যদি প্রচণ্ড গরম অনুভব হয় তবে প্রচুর পরিমাণ পরিষ্কার বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। বাচ্চাদের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

টাকা পয়সা : ভ্রমণে কত টাকা খরচ করবেন, সে ব্যাপারটি আগে থেকেই হিসাব করে ঠিক করে নিন। তারপর বাজেট অনুসারে খরচ করুন। পর্যাপ্ত টাকা-পয়সা নিয়ে যাওয়া ভালো। একটা আনুমানিক তালিকা করে ধারণাকৃত অঙ্ক থেকে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি প্রস্তুতি থাকা ভালো। টাকা বহনে ভালো না লাগলে সাবধানতার সহিত কার্ড বহন করতে পারেন। বিকাশ একাউন্ট বা মোবাইলে টাকা লেনদেন করা যায় এমন কোনো একাউন্ট থাকলেও খুব কাজে লাগবে। বিভিন্নভাবে ভাংতি টাকার ব্যবস্থা রাখবেন সবসময়, ছোট একটা বিষয় অনেক সময় আমাদের বিপদে ফেলে দিতে পারে। মোবাইলে ব্যালেন্সও বেশি করে নিয়ে নেবেন।

ভ্রমণের খাদ্য : টুরিস্ট রেস্টুরেন্টগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো। যেখানে বেড়াতে গিয়েছেন সেখানে আশপাশে ঘুরে, লোকাল বসবাসকারীরা যেখানে খায় সেখানে খাওয়া-দাওয়া সারবেন। খরচটা কমবে উল্লেখযোগ্যভাবে। ভ্রমণের খাবার-দাবারের ব্যাপারে প্রথমে যে জিনিসটি সবার মাথায় রাখা উচিত তা হল হাইজেনিক ফ্যাক্টর। আপনি যে খাবারটি খাচ্ছেন তা স্বাস্থ্যসম্মত কি না তা যাচাই করে নেয়া উচিত।

যাতায়াতঃ-

যেভাবে যাবেন
সেন্টমার্টিন যেতে হলে প্রথমে কক্সবাজার জেলার টেকনাফে আসতেই হবে। টেকনাফ থেকে জাহাজে অথবা ট্রলারে করে সেন্টমার্টিন যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে যেতে চাইলে সরাসরি বাসে টেকনাফ গিয়ে সেখান থেকে জাহাজে/ট্রলারে করে সেন্টমার্টিন যাওয়া সুবিধাজনক। কক্সবাজার ভ্রমণ পরিকল্পনায় থাকলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার হয়ে তারপর টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন। সেন্টমার্টিন যাওয়ার সাম্ভাব্য সকল উপায় নিচে বিস্তারিত দেওয়া হলোঃ

ঢাকা থেকে টেকনাফ

ঢাকা থেকে বাসে করে সরাসরি টেকনাফে যেতে পারবেন। ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ থেকে শ্যামলী, সেন্টমার্টিন পরিবহন, ঈগল, এস আলম, মডার্ন লাইন, গ্রীন লাইন ইত্যাদি বাস সরাসরি টেকনাফ যায়। ১০-১২ ঘন্টার এই ভ্রমণ ভাড়া বাস ও ক্লাস অনুযায়ী সাধারণত ৯০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। যদি শুধু সেন্টমার্টিন যেতে চান তাহলে ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে টেকনাফ চলে যাওয়াটাই সবচেয়ে ভালো। রাত ৮-১০ টার মধ্যে বাসে রওনা দিয়ে সকাল ৮টার মধ্যে টেকনাফ পৌঁছে যায়।

ঢাকা থেকে কক্সবাজার হয়ে টেকনাফ

ঢাকা থেকে প্রথমে কক্সবাজার এসে তারপর কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে প্রতিদিনই গ্রীন লাইন, সোহাগ, টিআর ট্রাভেলস, শ্যামলী, হানিফ, সৌদিয়া, ঈগল, এস আলম, সিল্ক লাইন, সেন্টমার্টিন ইত্যাদি অনেক বাস কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে, বাস ভেদে ভাড়া সাধারণত ১০০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে। এছাড়াও ঢাকা থেকে বিমানে সরাসরি কক্সবাজার যাওয়া যায়।

কক্সবাজার থেকে টেকনাফ : কক্সবাজার থেকে লোকাল বাস/মাইক্রো/জিপ/সিএনজি ভাড়া করে টেকনাফ যাওয়া যায়। কক্সবাজার হতে টেকনাফ যাওয়ার বাস ভাড়া ১৫০ টাকা ও সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ২৫০ টাকা। টেকনাফ যেতে অবস্থা ভেদে সময় লাগে প্রায় দুই ঘন্টা। আর সকালের জাহাজ ধরতে চাইলে কক্সবাজার থেকে ভোরে (৬টার মধ্যে) টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে ।
চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ

চট্টগ্রামের সিনেমা প্যালেস থেকে এস আলম এবং সৌদিয়া বাস রাত ১২ টায় টেকনাফের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এছাড়া জিএসই গরিবুল্লাশাহ মাজার ও দামপাড়া থেকেও কিছু বাস চট্টগ্রাম-টেকনাফ রুটে চলাচল করে।

টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন

নভেম্বর-মার্চ মাস পর্যন্ত টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে প্রতিদিন সকাল থেকে আসা-যাওয়া করে কেয়ারী সিন্দাবাদ, কেয়ারি ক্রুজ, এম ভি ফারহান, আটলান্টিক ইত্যাদি জাহাজ। জাহাজে করে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যেতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা থেকে আড়াই ঘন্টা। জাহাজের শ্রেনীভেদে যাওয়া ও আসার টিকেট ভাড়া ৫৫০-১৫০০ টাকা। জেটি ঘাট থেকে প্রতিদিন জাহাজগুলো সকাল ৯.০০-৯.৩০ মিনিটে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং সেন্টমার্টিন থেকে ফেরত আসে বিকাল ৩.০০-৩.৩০ মিনিটে। তাই সময়ের আগে জেটি ঘাটে উপস্থিত না হতে পারলে জাহাজ মিস হবার সম্ভাবনা বাড়ে। আর এমন ক্ষেত্রে ট্রলারে করে ফেরা ছাড়া উপায় নেই যা অনেকটা বিপদজনক। সেন্টমার্টিন যাওয়ার শীপের টিকেট সাধাণত যাওয়া ও আসা সহ হয়ে থাকে। টিকেট করার সময় কবে ফিরবেন তা উল্লেখ করতে হবে।

নভেম্বরের ১ তারিখ থেকে টেকনাফ – সেন্টমার্টিন সমুদ্রপথে জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে

সধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ/এপ্রিল এই পাঁচ মাস জাহাজ চলে। এই সময় ছাড়া অন্য সময়ে গেলে ট্রলার কিংবা স্পিডবোট দিয়ে যেতে হবে। শীত মৌসূম ছাড়া বাকি সময় সাগর উত্তাল থাকে, তাই এই সময়ে ভ্রমণ নিরাপদ নয়। যদিও আপনি এ্যাডভেঞ্জার প্রিয় হলে উত্তাল সাগরে ট্রলার যোগে ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিতে পারেন। টেকনাফ নামারবাজার ব্রিজ বা জেটি ঘাট থেকে ট্রলার, স্পিডবোট ও মালবাহী ট্রলার ছাড়ে। সিজনের সময় জাহাজ ঘাটের পাশ থেকে ও ট্রলার ছাড়ে। সাধারণত ট্রলার ও মালবাহী বোট ১৫০-২৫০ টাকা নেয়। এটা সিজন ও যাত্রীভেদে কম বেশি হয়ে থাকে। সময় লাগে প্রায় ৩ ঘন্টা।


খাওয়া ও থাকা

কি খাবেন ও কোথায় খাবেন


সেন্টমার্টিনের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ জিনিস হল ডাব যা একাধারে মিষ্টি ও সুস্বাদু। সেন্টমার্টিনে গেলে অন্তত একটা ডাব টেস্ট করা উচিত। যারা মাছ খেতে পছন্দ করেন তাদের জন্য সেন্টমার্টিন কোরাল, সুন্দরী পোয়া, ইলিশ, রূপচাঁদা, লবস্টার, কালাচাঁদা ইত্যাদি নানান ধরনের ও স্বাদের বাহার নিয়ে অপেক্ষা করছে। নিজের মত করে মাছ পছন্দ করে কিনে বারবিকিউ করার সুযোগ থাকে সব হোটেলেই। এছাড়া রিসোর্ট গুলোতেও নিজস্বভাবে বারবিকিউ করার ব্যবস্থা থাকে। আর যদি সুযোগ হয় তবে কুরা খেয়ে দেখতে পারেন (দেশী মুরগিকে কুরা বলে ডাকা হয়)। এখানে আরো রয়েছে অফুরন্ত লইট্টা, ছুড়ি, রূপচাঁদা, কাচকি ইত্যাদি জানাঅজানা শুঁটকি মাছের ভান্ডার।

এছাড়াও যেসব হোটেল ও রেস্তোরাঁতে গিয়ে খেতে পারেন তার কয়েকটি হল কেয়ারি মারজান রেস্তোরাঁ, বিচ পয়েন্ট, হোটেল আল্লার দান, বাজার বিচ, আসাম হোটেল, সি বিচ, সেন্টমার্টিন, কুমিল্লা রেস্টুরেন্ট, রিয়েল রেস্তোরাঁ, হাজী সেলিম পার্ক, সেন্টমার্টিন টুরিস্ট পার্ক, হোটেল সাদেক ইত্যাদি। তবে অবশ্যই একটু যাচাই করে নিবেন।

থাকবেন কোথায়

সেন্টমার্টিনে রাতে থাকার জন্য বেশ কিছু উন্নতমানের কয়েকটি হোটেল ও কটেজ রয়েছে। এছাড়াও অনেক বাড়িতে পর্যটকদের জন্য থাকার সুব্যবস্থা আছে।


ঘুরাঘুরিঃ-

কি করবেন ও কি দেখবেন

যারা দিনে গিয়ে দিনেই সেন্টমার্টিন থেকে ফিরে আসবেন তারা পরবর্তীতে আফসোস করতে পারেন তাই সবচেয়ে ভালো হয় অন্তত একদিন সেন্টমার্টিনে অবস্থান করা। এতে যেমন পুরো দ্বীপ ঘুরে দেখতে পারবেন তেমনি এই আনন্দময় ভ্রমণ আপনাকে সবসময় মোহিত করবে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপে আসলে হ্যামকে শুয়ে সমুদ্র দেখে দেখেই কয়েকদিন পার করে দেয়া সম্ভব। আর করতে চাইলেও অনেক কিছু করার আছে। কয়েকটি নিচে দিলাম। পরবর্তীতে আরেকটি বিস্তারিত আর্টিকেল লিখবো এ ব্যাপারে।

১. সমুদ্র সৈকত দেখা। অগভীর স্বচ্ছ নীলাভ সমুদ্রের পানিতে না নামলে তো সেন্টমার্টিন দেখাই বৃথা। নামার আগে অবশ্যই নিরাপদ জায়গা কোথায় শুনে নিবেন, জেটির পাশে নামবেন না।

ঘণ্টা চুক্তিতে পারে চালাতে পারেন সাইকেল।

২. সাইকেল চালানো। আপনি যদি সাইকেল চালাতে পারেন, তবে পুরো দ্বীপ সাইকেলে ঘুরে দেখতে পারেন। খরচ প্রতি ঘন্টা ৪০/৫০ টাকা নিবে। সবখানেই সাইকেল ভাড়া পাবেন।

৩. ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণ। সেন্টমার্টিনের দক্ষিণে বিচ্ছিন্ন অংশটুকুকে ছেঁড়া দ্বীপ বলে। নৌকা ভাড়া করে, হেঁটে বা স্পিড বোটে ছেঁড়া দ্বীপ ঘুরে আসতে পারবেন।

৪. স্কুবা ডাইভিং। প্রতিবছর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেন্টমার্টিনে স্কুবা ডাইভিং করা যায় । প্রশিক্ষণসহ খরচ পড়ে ৩৫০০ থেকে ৪০০০ টাকার মতো।


ছেঁড়া দ্বীপ

ছেঁড়া দ্বীপ হলো বাংলাদেশের মানচিত্রে দক্ষিণের সর্বশেষ বিন্দু। দক্ষিণ দিকে এর পরে বাংলাদেশের আর কোনো ভূখণ্ড নেই।প্রবাল দ্বীপে ইউনিয়ন সেন্ট মার্টিন্স থেকে ছেঁড়া দ্বীপ প্রায় আট কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। দক্ষিণের এই বিচ্ছিন্ন দ্বীপে রয়েছে প্রচুর প্রাকৃতিক পাথর। দ্বীপের প্রায় অর্ধেকই জোয়ারের সময় সমুদ্রের পানিতে ডুবে যায়। এই এলাকাটি সরকারের ঘোষিত একটি ‘পরিবেশ-প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা’।

ডে লং ট্রিপ: যারা সময়ের অভাবে ডে লং ট্রিপে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যাবেন তারা জাহাজ থেকে নেমে সময় নষ্ট না করে ভ্যান নিয়ে সরাসরি চলে আসুন পশ্চিম বীচ বা মেইন বীচে। এর জন্য আপনাকে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা ভ্যান ভাড়া গুণতে হবে। এখানে হেঁটে আসতে ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় লাগে তবুও ডে লং ট্রিপে সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না। এই জায়গাটা পানিতে নামার জন্য ভালো তাই বীচে এসে চাইলে সচ্ছ পানিতে গা ভেজাতে পারেন। যাই করেন না কেন অবশ্যই মাথায় রাখবেন আপনাকে ২ টার আগে ফ্রি হতে হবে নইলে খাওয়ার সময়টুকুও পাবেন না। আর অবশ্যই ৩ টার আগেই আপনাকে জাহাজে পৌঁছাতে হবে। হাতে সময় থাকলে মেইন বীচের কাছে হুমায়ূন আহমেদের কটেজ দেখে আসতে পারেন। সেন্টমার্টিন ভ্রমণে এই ধরণের ট্রিপ আপনাকে সময়ের প্রতি সীমাবদ্ধ করে রাখবে তাই অন্তত এক দিনের প্ল্যান নিয়ে সেন্টমার্টিন আসুন।

১ দিনের প্ল্যান: যারা এক দিনের প্ল্যান নিয়ে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে আসবেন তারা জাহাজ থেকে নেমে হোটেলে উঠে পড়ুন। দুপুরের খাবার খেয়ে হালকা বিশ্রাম নিয়ে চলে আসতে পারেন ছেঁড়া দ্বীপ। চেষ্টা করবেন ৪ টার আগে আগেই রওনা দিতে তাহলে ছেঁড়া দ্বীপে সূর্যাস্ত দেখে ফিরতে পারবেন। ছেঁড়া দ্বীপের সূর্যাস্ত অসাধারণ তবে সূর্যাস্তের পরে বেশি দেরি করবেন না। সন্ধ্যায় মূল দ্বীপে ফিরে বাজারের জেটিতে আড্ডা দিতে পারেন কিংবা পশ্চিম বীচের যে কোন জায়গায় বসাতে পারেন গানের আসর। রাতে বার-বি-কিউ করার ক্ষেত্রে রিসোর্টে করতে পারেন। রিসোর্টে মাছের দাম একটু বেশি নিলেও মাছগুলো ফ্রেশ থাকে। অথবা আশেপাশের হোটেলে পছন্দমত মাছ বারবিকিউ করে খেতে পারবেন। পরদিন সকালের সময়টা চারপাশে হেঁটে কাটিয়ে দিন অথবা আগের দিন ছেঁড়া দ্বীপে না গিয়ে থাকলে সকাল সকাল ছেঁড়া দ্বীপ থেকে ঘুরে আসুন। দুপুরের আগেই ফিরে আসুন, গোসল করে দুপুরের খাবার খেয়ে আস্তে ধীরে ২ টা ৩০ এর মধ্যে নির্ধারিত জাহাজে উঠে পড়ুন।


খরচাপাতিঃ-
সেন্টমার্টিন ভ্রমণ খরচ

যে কোন ভ্রমণে খরচ কত হবে তা সম্পূর্ণই আপনার উপর নির্ভর করবে। আপনি কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, কি খাবেন ও কি করবেন সেইসব বিষয়ের সাথে কোন সময় যাচ্ছেন তার উপরেও খরচ নির্ভর করে। পিক সিজন (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) বা ছুটির দিন গুলোতে থাকা খাওয়া সহ অন্যান্য খরচ একটু বেশিই হবে। কম খরচে ও মোটামুটি মানের হোটেলে ১ রাত থাকা ও খাওয়া সহ ঢাকা থেকে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে কত খরচ হবে তার একটা ধারণা দেবার জন্যে খরচের তালিকা দেওয়া হলো। যা থেকে আপনি কিছুটা হলেও খরচ সম্পর্কে ধারণা করতে পারবেন।

যাতায়াত খরচ
শিপ/জাহাজ ভাড়া – যাওয়া ও আসা সহ ৬০০-৮০০ টাকা (ওপেন ডেক), ১০০০-১৬০০ টাকা (এসি)।
ছেড়া দ্বীপ – ট্রলারে যাওয়া আসা ২০০ টাকা।
লোকাল যাতায়াত – সেন্টমার্টিনের বাজারে কিংবা আশেপাশে যাওয়ার ভ্যান ভাড়া ১৫০-২০০ টাকা।
অন্যান্য খরচ – ২০০টাকা।

খাবার খরচ
যাত্রার দিন – যাত্রা বিরতিতে রাতের খাবার ১০০-২০০ টাকা।
১ম দিন – নাস্তা ৬০-১০০ টাকা, দুপুরের খাবার ১২০-২২০ টাকা ও রাতের খাবার/বার বি কিউ ২০০-৩০০ টাকা।
২য় দিন – নাস্তা ৬০-১০০ টাকা, দুপুরের খাবার ১২০-২২০ টাকা।
ফিরে আসার দিন – যাত্রা বিরতিতে রাতের খাবার ১০০-২০০ টাকা।

চাইলে আরও কম খরচে খাওয়া দাওয়া করা সম্ভব। বাজারের ভিতরের দিকে হোটেল গুলোতে গিয়ে সাধারণ খাবার খেলে খরচ অনেক কমে যাবে।

থাকার খরচ
স্ট্যান্ডার্ড হোটেল/রিসোর্ট রুম বা ডাবল বেড ১৫০০-২৫০০ টাকা। বাজারের দিকে মোটামুটি মানের হোটেল ৮০০-১২০০ টাকা। খুবই পিক সিজন আর সরকারি ছুটির দিনে ভাড়া আরও একটু বেড়ে যাবে। এক রুমে কয়েকজন মিলে থাকলে খরচ ভাগ হয়ে কমে যাবে। পিক সিজন ও ছুটির দিন ছাড়া গেলে খরচ আরও কম হবে। এছাড়া আরও কম খরচে থাকতে চাইলে স্থানীয় মানুষদের বাড়িতে অল্প টাকায় থাকতে পারবেন, এ জন্যে একটু খুঁজে ও কথা বলে দেখতে হবে।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা
  • সেন্টমার্টিন আমাদের দেশের সম্পদ, তাই প্রকৃতির ক্ষতি হয়ে এমন কিছু করবেন না।
  • রোহিঙ্গাজনিত সমস্যার কারণে সেন্টমার্টিনে মোবাইল ফ্রিকোয়েন্সি কম থাকে। কথা বলতে সমস্যা হতে পারে। তবে টেলিটক তুলনামূলক ভাল কাজ করে।
  • বর্তমানে নিয়মিতভাবে সেন্টমার্টিনে বিজিবি টহল দেয়৷ তারা অনেক সময় রাত ১২টার পর পর্যটকদেরকে বীচ বা জেটি এলাকায় থাকতে নিষেধ করে।
  • সঠিক জায়গায় ময়লা আবর্জনা ফেলবেন। দয়া করে প্লাস্টিক/পলিথিন কিছু সৈকতে ফেলে আসবেন না।
  • কম খরচে সেন্টমার্টিন থাকা ও খাওয়ার জন্যে ছুটির দিন গুলোতে না গিয়ে অন্যান্য দিনে যেতে পারেন।
  • বর্তমানে সেন্টমার্টিনে অনেক হোটেল ও কটেজ গড়ে উঠেছে, থাকার জায়গায়র অভাব তেমন হয় না।
  • পর্যটন এলাকায় যে কোন কিছুর জন্যে দরদাম করবেন কেনাকাটায়।
  • মানুষ বেশি হলে আগেই শিপের টিকেট কেটে রাখতে পারেন।
  • দালালদের খপ্পরে পড়বেন না। নিজেই সবকিছু করুন।
  • চাইলে কক্সবাজার বিভিন্ন এজেণ্ট থেকে সেন্টমার্টিন এর প্যাকেজ কিনে নিতে পারবেন।
  • সেন্ট মার্টিন যাওয়া আসার সময় জাহাজের ডেক থেকেই সবচেয়ে সুন্দর ভিউ দেখতে পাবেন।
  • সমুদ্রে নামার সময় সতর্ক থাকুন।