Close

শনিবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৩

সন্তানসমূহ হীরার খন্ড না হয়ে পাথরের নুড়ি হচ্ছে : মাওলানা ইমাম হোসাইন

কারণ: আমাদের সমাজের অধিকাংশ পিতামাতা গুলো সন্তানাদির ব্যাপারে অনেকটা ভরসা করে যে তারা আমাদের বৃদ্ধ বয়সের খুঁটি হবে, আর্থিক নিশ্চয়তার বাহন হবে। যারপরনাই তারা সন্তানাদিকে ছোট বয়স থেকে অনেকটা সেভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করে। পিতামাতা সন্তানাদির সত্যিকার উন্নতি শিক্ষা, মেধা, নৈতিক উৎকর্ষতাকে যতটা না গুরুত্ব দিচ্ছে তার চেয়ে বেশী সন্তানের আর্থিক সচ্ছল হওয়াটাকে বেশী সাপোর্ট দিচ্ছে। 

যে সন্তানাদিগুলো শিক্ষাদীক্ষা বা নৈতিক উৎকর্ষতার দিকে যাচ্ছে কিন্তু আর্থিক সাপোর্ট আশানুরূপ করতে পারছে না তখন তার প্রতি পিতামাতা, পরিবার এবং এই সমাজের মানুষগুলো তুচ্ছ অবজ্ঞা দৃস্টিতে তাকাচ্ছে যে এই সন্তানগুলো তাদের বোঝা। ফলে একটা সময় এরা তাদের পড়াশোনা বা নৈতিক উৎকর্ষতা থেকে বের হয়ে  আর্থিক সচ্ছলতার জন্য তাদের সারাজীবনের আদর্শিক শিক্ষাটা কে ঘুষ, দুর্নীতির কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। মুলত এই সমাজ পরিবার তাদেরকে অনেকটাই বাধ্য করছে। কারণ জাহল সমাজ তাকে মুল্যায়ন বা তুলনা করছে সমাজের ঐ শ্রেনীটার সাথে যে সমাজে নৈতিকভাবে বিপর্যস্ত, শিক্ষা দীক্ষার নিম্নস্তরে জাহল কিন্তু ধনবান। পরিবারে তুলনামুলক তাকেই গুরুত্ব দিচ্ছে যে আর্থিক সাপোর্ট বেশী দেয় পরিবার মনে করছে আমার সেই সন্তান যেমন হোক তার আর্থিক সাপোর্টই মুল। তখন সমাজের শিক্ষিত সেই শ্রেনীটা হতাশার জায়গা থেকে বিচ্যুত পথ বেচে নেয়।

আজকে যদি আমাদের সকল পিতামাতাগুলো নিজেদের জীবনের সকল পর্যায়ে ভরসা করতো আল্লাহর উপর তাহলে তাদের বৃদ্ব বয়সে আর্থিক সাপোর্ট নিরাপত্তা আল্লাহ নিজ কুদরতে করতেন। কিন্তু যখনই তারা সন্তানাদির উপর ভরসা করে, তখনি তারা বৃদ্ধ বয়সে ঐ সন্তানাদি দ্বারা লাঞ্চিত হচ্ছে। মুলত পিতামাতা সমুহ যদি সন্তানাদি গুলোকে সত্যিকারার্থে আল্লাহর জন্য এবং উম্মাহর কল্যানের জন্য ওয়াকফ করতে পারতো দেখা যেত আল্লাহ তায়ালা এই সন্তানগুলো তাদের চক্ষু শীতলকারী এবং নিরাপত্তার বাহন হিসেবে তৈরী করে দিতো।

পিতামাতাসমুহের আরো একটি হিপোক্রেসি চিন্তা এবং তাদের জীবনের লক্ষ্য করে তাহলো সন্তানাদির ভবিষ্যৎ জীবনের আর্থিক, বাস্তুসংস্থানিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ফলে তারা যেকোন পর্যায়ে হালাল-হারাম বিবাচনা না করে সন্তানদের জন্য টাকা আয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে তাদের হালাল অর্থের সাথে হারাম অর্থ মিশ্রিত হয়ে আয়কৃত সকল অর্থই হারামে রূপান্তরিত হয়। আর এই হারাম উপার্জিত টাকাগুলো যে সন্তানাদির ভবিষ্যৎ সুন্দর জীবনের জন্য সঞ্চয় হয়েছিলো তখন ঐ সন্তানাদি গুলো এই টাকা দিয়ে মদ, জুয়া, ব্যাভিচারসহ নৈতিক পদস্থলের নিম্নে গিয়ে পৌছে যাচ্ছে। এবং সুন্দর জীবনের পরিবর্তে তাদের কুৎসিৎ জীবন হচ্ছে।

মুলত পিতামাতা যদি সন্তানাদির রিযিকের ব্যাপারে আল্লাহর তাকদীরের উপর বিশ্বাস করতো এবং নিজেরা অল্প তুস্টে হালাল ইনকামের মধ্যে থাকতো দিনশেষে দেখা যেতো তাদের সন্তানাদিগুলো হালাল উপার্জন ভক্ষনের মাধ্যমে এরা যুগের গাজ্জালি, তাইমিয়াহ, ইবনে কাসিরের মতো তৈরী হতো। হাজারবর্ষ পরেও মানুষ ঐ পিতামাতাগুলোকে পড়তো আর সম্মান করতো। কিন্তু আমাদের পিতামাতাগুলো নগদ লাভের আসায় তাদের হিরার খন্ড সন্তানগুলোকে পাথরের নুড়িতে পরিণত করছে।

আল্লাহ আমাদের সকল পিতামাতা সমূহকে তাদের সন্তানের ব্যাপারে সঠিক চিন্তা করার তাওফিক দান করুক, আমীন।


লিখেছেন:
খতীব, দক্ষিণ মন্দিয়া পূর্বপাড়া জামে মসজিদ
ছাগলনাইয়া, ফেনী।

1 Comments:

মেহেরাজ শোভন বলেছেন...

অসাধারণ লিখেছেন।