Close

সোমবার, ১১ মার্চ, ২০২৪

বইনোট: ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহ || লেখক- শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী

বইনোট: ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহ || লেখক- মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী

 বইনোট: ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহ
লেখক- শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী
(১৯৮৫ সালে রাজশাহী মহানগরীর দায়িত্বশীল পর্যায়ের কর্মীদের নিয়ে শব্বেদারীতে প্রদত্ত বক্তব্য পরবর্তীতে বই আকারে প্রকাশ করা হয়। তৎকালীন রাজশাহী মহানগরী আমীর ছিলেন অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।)

লেখক পরিচিতি:
শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী(রহ.)।
১৯৪৩ সালের ৩১ মার্চ পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার মনমথপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা লুৎফুর রহমান। মাতা মোমেনা খাতুন। তিনি ১৯৭০-৭১ দুই সেশন নিখিল পাকিস্তান ছাত্র সংঘের কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে ৩০ সেপ্টেম্বর জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন। ১৯৮৮-২০০০ সাল পর্যন্ত সেক্রেটারী জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ থেকে ২০১০ সালে গ্রেফতার হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০১৬ সাল পর্যন্ত স্ব-পদে বহাল ছিলেন। ১৯৯১ সালে জামায়াতে ইসলামীর হয়ে পাবনা-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে চার দলীয় জোটের হয়ে পাবনা-১ আসন থেকে ২য় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের ১০ অক্টোবর থেকে ২০০৩ সালের ২২মে পর্যন্ত অত্যন্ত সফলতার সাথে বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৩ সালের ২৫ মে থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
মাওলানা নিজামীর ৪ ছেলে ও ২ মেয়ে। তিনি ২০১০ সালের জুন মাসে গ্রেফতার হন এবং ২০১৬ সালের ১১ মে রাত ১২টা ১০ মিনিটে আওয়ামী ট্রাইবুনালের ভিত্তিহীন অভিযোগে ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমে শাহাদাত বরণ করেন।

ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহ

ইনফাকের অর্থ:
ইনফাকের শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ: ইনফাক শব্দটির মূল ধাতু (نفق) যার অর্থ সুড়ঙ্গ। যার একদিক দিয়ে প্রবেশ করে আর একদিন দিয়ে বের হওয়া যায়।
মুনাফিক এবং নিফাক শব্দদ্বয়ও এই একই ধাতু থেকে গঠিত। অর্থের দিক দিয়ে মোটামুটি একটা সামঞ্জস্য আছে। নাফাকুন থেকে ইনফাক গঠিত হয়েছে। 
শাব্দিক অর্থের আলোচনায় আমরা ইনফাকের দুটো দিক পেয়ে থাকি। 
এক. এ পরিমাণ খরচ করতে হবে যাতে অর্থ-সম্পদ সঞ্চয়ের সুযোগ না আসে। বা দাতার মনে সঞ্চয়ের ধারণা বদ্ধমূল হওয়ার সুযোগ না আসে।
দুই. ভরণ-পোষণ বা খোরপোষের অর্থের তাৎপর্য হল দাতা যার জন্যে দান বা খরচ করবে তার প্রয়োজন পূরণ করার মত অর্থ অবশ্যই ব্যয় করবে।

ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহর অর্থ:

ইনফাকের অর্থ এবং ফি সাবিলিল্লাহর অর্থ একত্রে মিলালে ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহর অর্থ দাঁড়ায়: জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ বা আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রয়োজন পূরণ, এর উপায়-উপকরণ যোগাড় ও এই মহান কাজটি পরিচালনার জন্যে সর্বাত্মক সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্যে অর্থসম্পদ খরচ করা। চাঁদার মনোভাব নিয়ে অর্থ দান করার মাধ্যমে এর হক আদায় হতে পারে না। তাই ইসলামী আন্দোলনের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ব্যাপারে চাঁদার পরিভাষা ব্যবহার না করে 'এয়ানাত'-এই আরবী শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ সহযোগিতা দান।

ইনফাকের তাৎপর্য:
আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার খাতে আমাদেরকে মাল সম্পদ খরচ করতে হবে কেন?
আল্লাহর তাআলা তাঁর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্যে তাঁর পথে জিহাদের যে আহবান দিয়েছেন তার মধ্যেই উপরিউক্ত প্রশ্নটির উত্তর রয়েছে। আল্লাহ তাআলার ঘোষণাঃ "তোমরা জিহাদ কর আল্লাহর পথে মাল দিয়ে এবং জান দিয়ে।" অর্থাৎ দ্বীন প্রতিষ্ঠার এই জিহাদে বা সংগ্রামে মালের কোরবানী এবং জানের কোরবানীর প্রয়োজন আছে। এই দুটো জিনিসের কোরবানী দেয়ার মত একদল মর্দে মুমিন, মর্দে মুজাহিদ তৈরি হলেই আল্লাহর দ্বীন কায়েমের সংগ্রাম বিজয় হবে যেমন বিজয়ী হয়েছিল রাসূলে পাক (সা.)-এর নেতৃত্বে সাহাবায়ে কেরামের (রা.) মালের কোরবানী ও জানের কোরবানীর বিনিময়ে। আল্লাহর দ্বীন কায়েমের এই মহান সংগ্রাম দাবী করে যে এ সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী সৈনিকদের কাছে তাদের নিজের জান ও মালের তুলনায় তথা ইহ জাগতিক যাবতীয় স্বার্থ ও লোভ-লালসার তুলনায় আল্লাহর রহমত ও সন্তোষই হতে হবে অধিকতর প্রিয়।


ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহর ক্ষেত্রে রাসূল (সা.) এর ভূমিকা:

আমরা জানি, নবুওয়াতের ঘোষণা আসার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত মুহাম্মদ (সা.) আরবের একজন অন্যতম ধনী ব্যক্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধনী খাদিজাতুল কুবরার (রা.) ব্যবসায়ে অংশগ্রহণের মাধ্যমেই তিনি এ অবস্থায় উন্নীত হন। তাছাড়া হযরত খাদিজার সম্পদ ব্যবহারের তাঁর সুযোগ এসেছিল। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, নবুওয়াতের ঘোষণা আসার পর থেকে দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার মুহূর্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে তাঁর সম্পদ আর বিন্দু পরিমাণও বৃদ্ধি পায়নি। বরং তিলে তিলে সব আল্লাহর পথে নিঃশেষ হয়েছে।

ইনফাকের ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরামগণের ভূমিকা:

আল্লাহর শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর নেতৃত্বে আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরামগণের (রা.) ভূমিকা দুনিয়ার ইতিহাসে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁরা আল্লাহর রাসূলের ডাকে সাড়া দিয়ে মালের ও জানের কোরবানী পেশের ক্ষেত্রে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁদের এই ভূমিকার জন্যে স্বয়ং আল্লাহ্ সার্টিফিকেট দিয়ে বলেছেন, "তাদের প্রতি আল্লাহ্ খুশি হয়েছেন আর তাঁরাও আল্লাহর প্রতি খুশি হয়েছে।"

  • হযরত খাদিজাতুল কুবরার (রা.)
  • হযরত আবু বকর (রা.)
  • হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব (রা.)
  • হযরত উসমান (রা.)
  • আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.)
  • মুহাজির ও আনসারগণ।

যে সকল সাহাবায়ে কেরাম রা: ভূমিকা রেখেছেন:

বর্তমান যুগে ইসলামী আন্দোলনের প্রতিপক্ষ ও তাদের প্রস্তুতি:

ইসলামী আন্দোলনের যথার্থ প্রস্তুতি নিতে হলে বর্তমান যুগ-সন্ধিক্ষণে এ আন্দোলনের প্রতিপক্ষ সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে হবে। তাদের প্রস্তুতিরও যথার্থ মূল্যায়ন করতে হবে।
ইসলামী আন্দোলন বর্তমান বিশ্বে যে দেশেই পরিচালিত হোকনা কেন তার প্রধান প্রতিপক্ষ দুই পরাশক্তি-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত রাশিয়া। দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রতিপক্ষ হল তাদের প্রভাব বলয়াধীন রাষ্ট্রশক্তি ও রাজনৈতিক শক্তিসমূহ। বাংলাদেশের জন্যে ঐ দুই প্রধান প্রতিপক্ষের সাথে আর একটি বাড়তি প্রতিপক্ষ হিসাবে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে আমাদের নিকট প্রতিবেশী একটি পাতি বৃহৎ শক্তি। এই প্রতিপক্ষ সার্বিক পরিকল্পনার ভিত্তিতে দুনিয়ার সর্বত্র ইসলামের পুনর্জাগরণ ঠেকানোর জন্যে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। তাদের পারস্পরিক স্বার্থের, দ্বন্দ্বের কারণে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে মতপার্থক্য থাকলেও ইসলামের ইস্যুতে প্রায় সর্বত্র তারা এক ও অভিন্ন ভূমিকা পালন করে আসছে। গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজির কারণে কোথাও কোথাও কিছুটা ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা পরিলক্ষিত হলেও সেটা বাহ্যিক ব্যাপার মাত্র। মূলে ইসলামী পুনর্জাগরণ ও আন্দোলনকে ঠেকানোর ব্যাপারে তাদের কোন শৈথিল্য নেই। তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যে তাঁরা বিশ্বের প্রচার মাধ্যমসমূহ ইহুদীদের সহায়তায় ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে বিশ্ব-জনমতকে প্রভাবিত ও বিভ্রান্ত করার প্রয়াস চালাচ্ছে।

মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে চিন্তার বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্যে রীতিমত Intelectual and cultural Agression চালাচ্ছে। (বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন) বুদ্ধিজীবী ও নেতৃস্থানীয় লোকদেরকে তাদের মানসিক গোলামে পরিণত করছে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নামে প্রশাসনকে পর্যন্ত ব্যবহার করছে। এনজিওদের জাল বিস্তার করে সামাজিকভাবে প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টার পাশাপাশি আমাদের স্বকীয় মূল্যবোধ ধ্বংসের অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। সেই জালে বুদ্ধিবৃত্তিক ও বস্তুগত সহযোগিতা দিয়ে তাদের পক্ষে রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। এবং তাদের মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলনের উপর সরাসরি আঘাত হানার ব্যবস্থা করছে।

ইসলামের অর্থ ব্যয়ের বিভিন্ন দিক:

ইসলাম ও ঈমানের মূল দাবীই যেহেতু আল্লাহর কাছে জান ও মাল সোপর্দ করার। ইসলামের বাস্তব কাজ যেহেতু আল্লাহর এবাদত এবং বান্দাদের সেবা করা, সেহেতু মুসলিম সমাজের বিভিন্ন দিকে ও বিভাগে অর্থ ব্যয়ের প্রবণতা ঐতিহ্যগতভাবেই প্রাধান্য পেয়ে আসছে। 'নদী মরে গেলেও রেখা থাকে' এই প্রবাদ বাক্যের মতই মুসলিম সমাজ তার নিজস্ব মূল্যবোধ প্রায় হারিয়ে ফেললেও তাদের অর্থ ব্যয়ের প্রবণতা বা ঐতিহ্য একেবারে নিঃশেষ হয়ে যায়নি।

ইসলাম অর্থ-সম্পদের কোরবানীর দু'ধরনের ব্যবস্থা রেখেছে। একটা বাধ্যতামূলক যেমন- যাকাত। অপরটি স্বেচ্ছামূলক। যেমন- গরীব, নিকট আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে দুঃস্থ অসহায় মানুষের সাহায্য-সহযোগিতা করা। কোন সামাজিক প্রতিষ্ঠান যেমন- মসজিদ, মাদ্রাসা প্রভৃতি কায়েমের কাজে অর্থ ব্যয় করা। স্বেচ্ছায় নিঃস্বার্থভাবে অর্থ ব্যয়ের মন-মানসিকতা তৈরির ক্ষেত্রে অবশ্য বাধ্যতামূলক দান যাকাতের একটা ভূমিকা আছে। বরং সত্যি বলতে কি, প্রতিদানের আশা ছাড়া, কোন বৈষয়িক স্বার্থ ছাড়া মানুষ অর্থ ব্যয়ে অভ্যস্ত হোক এটা যাকাতের একটা অন্যতম উদ্দেশ্য।

যাই হোক, বাধ্যতামূলক দান অর্থাৎ যাকাতের যে আটটি খাত আছে তার মধ্যেও ফি সাবিলিল্লাহর একটা খাত আল্লাহ্ রেখেছেন। মানুষ স্বেচ্ছামূলকভাবে যে বিভিন্ন খাতে অর্থ ব্যয় করে থাকে, তার-মধ্যেও ফি সাবিলিল্লাহর খাতে বা আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অর্থ ব্যয়ের সুযোগ আছে। শুধু সুযোগ আছে তাই নয় বরং আল্লাহর কোরআন এবং রাসূলের হাদীসের আলোকে বিচার করলে দেখা যায়, আল্লাহর পথে জিহাদ হলো সর্বোত্তম আমল। অতএব এই সর্বোত্তম আমলের জন্যে অর্থ ব্যয় হবে সর্বোত্তম খাতে অর্থ ব্যয়- এটাই স্বাভাবিক।

যেই দেশে আল্লাহর দ্বীন কায়েম নেই সেখানে যাকাতের আটটি খাতের মধ্য থেকেও ফি সাবিলিল্লাহর খাত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আল্লাহর দ্বীন কায়েম না হলে যাকাতের উদ্দেশ্যেই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। অনুরূপভাবে সর্বাবস্থায় সর্বক্ষেত্রে দানের সকল দিক ও বিভাগের তুলনায় আল্লাহর দ্বীন কায়েমের সংগ্রামে দান করাই সর্বোত্তম দান। যে কোন দানের তুলনায় এ কাজের দানে সওয়াব হবে সবচেয়ে বেশি। ইসলামের এই শিক্ষাটা আমরা ভুলতে বসেছি বলেই আজ ইসলামী আন্দোলনের কাজে পয়সা দেওয়াকে অনেকে রাজনৈতিক দলে চাঁদা দেয়ার শামিল মনে করে। সর্বোত্তম সওয়াবের কাজতো দূরের কথা, আদৌ সওয়াব হয় কিনা এ সম্পর্কেই সন্দেহ-সংশয় পোষণ করেন। 

ইনফাকের ক্ষেত্রে ইসলামী আন্দোলনের ঐতিহ্য:

ইসলামী আন্দোলনের বিভিন্নমুখী ঐতিহ্য সৃষ্টিতে প্রধানতঃ অবদান রেখেছেন আম্বিয়ায়ে কেরামগণ (আ.)। এরপর আল্লাহর সেইসব বান্দাদের ভূমিকা স্মরণযোগ্য যাদেরকে আল কোরআনে সিদ্দিকীন, সালেহীন এবং শোহাদা নামে অভিহিত করা হয়েছে। তাঁদের ভূমিকা আমাদের জন্য প্রেরণার উৎস হওয়া সত্ত্বেও মনের কোণে প্রশ্ন জাগতে পারে। নবীদের ব্যাপার তো আলাদা, সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর ব্যাপার তো আরো ব্যতিক্রম। নবীদের সাথী-সঙ্গীদের ব্যাপারও আলাদা। কাজেই দূর অতীতের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পাশাপাশি নিকট অতীতের বা আজকের সমসাময়িক বিশ্বের ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাস-ঐতিহ্যই এ ক্ষেত্রে বেশি ফলপ্রসূ হতে পারে।

নিকট অতীতে আমাদের উপমহাদেশে হযরত সৈয়দ আহাম্মদ শহীদ ব্রেলভী পরিচালিত মুজাহিদ আন্দোলনের কথা আমাদের মোটামুটি জানা থাকার কথা। এই আন্দোলনে বাংলার তৌহিদী জনতা যেমন পায়ে হেঁটে যোগদানের রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন, তেমনি অকাতরে এই আন্দোলনের জন্যে আর্থিক সহযোগিতাও করেছেন। বাংলাদেশের যেসব অঞ্চলে মুজাহিদ আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট লোকজনের বসবাস ছিল সেইসব অঞ্চলের লোকদের মধ্যে এখনও ওশর দান থেকে শুরু করে বিভিন্ন দ্বীনি খেদমতে স্বতস্ফূর্তভাবে দানের রীতি চালু দেখা যায়। আজকের বিশ্বের দু'টি আন্তর্জাতিক মর্যাদা সম্পন্ন ইসলামী সংগঠন জামায়াতে ইসলামী ও জামায়াতে ইখওয়ানুল মুসলেমিনের প্রতিষ্ঠাতা ও এর সাথে জড়িত ব্যক্তিরা সাহাবায়ে কেরামগণের জানের কোরবানী ও মালের কোরবানীর ঐতিহ্য পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়াস পাচ্ছেন। সাহাবায়ে কেরামগণ ঈমানের ঘোষণা দিয়ে যেভাবে জুলুম-নির্যাতনের সম্মুখীন হয়েছেন, ইসলামী আন্দোলনে শরীক লোকেরা দুনিয়ার বিভিন্ন স্থানে অনুরূপ জুলুম ও নির্যাতনেরই সম্মুখীন হচ্ছেন। তাঁরা যেভাবে অর্থ-সম্পদ এ পথে ব্যয় করতেন আজকের যুগের ইসলামী আন্দোলনের লোকেরাও অনুরূপ ত্যাগ, কোরবানীর প্রয়াস পাওয়ার চেষ্টা করছে। 
জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী (র.) তাঁর অসংখ্য বই-পুস্তকের আয় থেকে কোটিপতি হতে পারতেন কিন্তু তাঁর মধ্য থেকে মাত্র ২/৩টি বইয়ের আয় পরিবারের জন্যে রেখে বাদবাকী সমস্ত বইয়ের (যার অসংখ্য সংস্করণ ছাপা হচ্ছে। অসংখ্য ভাষায় যার অনুবাদ ও প্রকাশ হয়েছে) ইসলামী আন্দোলনকে ওয়াকফ করেছেন। তাঁর সাহচর্য লাভের সৌভাগ্য যাদের হয়েছে তাঁরা অনেকেই জীবনের ক্যারিয়ার এই আন্দোলনের জন্যে কোরবানী দিয়েছেন। 

নোট সংকলনে- আরমানের খেরোখাতা